বিষুবরেখার এপারে এখন রোদ্দুরের তেজ বাড়ছে প্রতিদিন, একটু একটু করে বাড়ছে দিনের দৈর্ঘ্য। প্রকৃতির এই পালাবদল জানান দিচ্ছে–বৈশাখ আগত ওই।আর বৈশাখ মানেই তো গ্রীষ্মেরপ্রথম ডাকহরকরা।গ্রীষ্ম মানে ঝকঝকে ভোর আর সারাদিন রোদ্দুরের আগুনে নিঃশ্বাস; গ্রীষ্ম মানে- অলস তৃষ্ণার্ত দুপুর আর গোধূলিস্নানের এক আকাশ তৃপ্তি ,সেই সঙ্গে গ্রীষ্ম মানে বাংলা বছরের শুভ মঙ্গলময় সৃচনাও।বর্ষারম্ভের বিশেষ ক্ষণকে স্বাগত জানবার জন্যে এ -বছরও দুই বাংলার বাঙালির উৎসাহ ও উদ্দীপনার শেষ নেই।সবাই বৈশাখকে মনের অমল আকুতি দিয়ে আহ্বান করে বলতে চাইছে–“এসো হে বৈশাখ, এসো এসো ” পয়লা বৈশাখ বা পহেলা বৈশাখ (বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ) বাংলা সনের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও এই উৎসবে অংশ নিয়ে থাকে। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন লোকউৎসব হিসাবে বিবেচিত। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৪ই এপ্রিল অথবা ১৫ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। আধুনিক বা প্রাচীন যে কোন পঞ্জিকাতেই এই বিষয়ে মিল রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর ১৫ই এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। এছাড়াও দিনটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ছুটির দিন হিসেবে গৃহীত। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা দিনটি নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ হিসেবে বরণ করে নেয়।
বাংলা দিনপঞ্জীর সাথে হিজরী এবং খ্রিস্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরী সন চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিস্টীয় সন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এ কারণে হিজরী সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় আকাশে নতুন চাঁদ দৃশ্যমান হওয়ার পর আর খ্রিস্টীয় সনে নতুন দিন শুর হয় ইউটিসি±০০:০০ অনুযায়ী। পহেলা বৈশাখ রাত ১২ টা থেকে শুরু না সূর্যোদয় থেকে শুরু এ নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে, ঐতিহ্যগত ভাবে সূর্যোদয় থেকে বাংলা দিন গণনার রীতি থাকলেও ১৪০২ সালের ১ বৈশাখ থেকে বাংলা একাডেমী এই নিয়ম বাতিল করে আন্তর্জাতিক রীতির সাথে সামঞ্জস্য রাখতে রাত ১২.০০টায় দিন গণনা শুরুর নিয়ম চালু করে।
পহেলা বৈশাখের সেরা কিছু কবিতা ও শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে সাজানো আমাদের এই বিশেষ সংকলনে আপনাকে স্বাগত জানাই।
মহীতোষ গায়েন
নীলদিগন্তে দীপ্ত মেঘের ডানায় ভাসে
কষ্টকল্পিত জীবনের অভিপ্রেত,জীবন
অঙ্কের হিসেব মেলাতে মেলাতে সমস্ত
সুপ্ত আকাঙ্ক্ষায় আসে অশনিসংকেত।
নিদারুণ গুমোটে দিশেহারা চরাচর-
উজান ভাটির টানে স্বপ্ন চুরি যায়…
গ্রীষ্মের দাবদাহ ম্লান,উৎস-মানুষের
বাউল সুরে প্লাবিত হয় সমূহ সমাজ।
উদভ্রান্ত হিমেল শিহরণ জাগে,বৃষ্টি-
মেঘের আলিঙ্গনে উদাসী মন সিক্ত
হয়,ইমনকল্যাণ রাগে আত্মা বিহ্বল।সযত্নে রক্ষিত যৌবনের জলতরঙ্গে
সমর্পিত বর্ষালিপির ধারাপাত,মননে
সংগ্রামে ক্লান্ত অতন্দ্র সৈনিকেরা সব
বিশ্রাম চায়,প্রত্যয়ী তাই বৈশাখী রাত।ভ্রমান্ধ সময়ে বিদ্ধ কোমলগান্ধার
মুক্তির আনন্দের প্রতীক্ষায় থাকে,
সৃষ্টি দিনে উৎকলিকা বৈশাখী নীল
নীলিমার সোনালী ভবিষ্যৎ আঁকে।
নতুন স্বপ্নের হাতছানিতে
ইমরান খান রাজ
চৈত্রের রাত্রি কাটিয়ে
ফসলের মাঠ ফাটিয়ে
বৈশাখ আসে নতুন ধানের সাথে
কৃষকের উঠোন জুড়ে।
আম-কাঁঠাল পাকিয়ে
নদীর পানি শুকিয়ে
বৈশাখ আসে তীব্র গরমে
ঝড়-বৃষ্টির বার্তা নিয়ে।
পান্তা ইলিশ ভোজনে
বর্ষবরণ আয়োজনে
বৈশাখ আসে বাঙালির ঘরে
নতুন স্বপ্নের হাতছানিতে।
নবান্ন এলো
ইমরান খান রাজ
কৃষকের ঘরে নতুন ধান
গৃহস্থের মুখে হাসি,
নবান্ন এলো বাংলার ঘরে
আনন্দ রাশি রাশি।
আম, কাঠাল আর তরমুজে
আজ বাজার সয়লাব,
কবির কলমে ফুটে উঠেছে
বৈশাখী আলাপ।
মাঝিরা কন্ঠে গান ধরেছে
রূপসী বাংলার নামে,
মৌমাছিরা ছুটছে দেখো
বাহারী ফুলের ঘ্রাণে।
গ্রাম-গঞ্জে সুখের পরশ
বৈশাখী মেলার জন্য,
সবুজ মাঠ আর ফল-ফসলে
বাঙালিরা হয় ধন্য৷
বদলে গেছে বৈশাখ এখন
দালান জাহান ।
কোথায় গেল গুড়ের পায়েস
মুড়ি-মড়কি খই
পান্তা-ভাতে শুকনো মরিচ
টক-মিষ্টি দই ।
কোথায় গেল কাঁচের চূড়ি
মণ্ডা-মিঠাই ভাঁজা
জরি-ফিতে কদমা-আপেল
ভিন্ন স্বাদের খাজা ।
কোথায় গেল ষাঁড়ের লড়াই
বলীখেলার দিন
মহাজনের খাজনা আদায়
আম-কৃষকের ঋণ।
কোথায় গেল যাত্রাপালা
জারি-সারি গান
সার্কাসেতে পুতুল নাচন
প্রাণ ছুঁয়ে যায় প্রাণ ।
কোথায় গেল একতারা আর
বাউলা ঘুড়ির বেলা
পালাগানে মুর্শিদী আর
মারফতিদের মেলা ।
বদলে গেছে বৈশাখ এখন
চাষাভূষার সন
গরীব-ধনীর রসিকতায়
ইলিশ কিনে ডন ।
ধূসর পান্ডুলিপি
দিল মুহাম্মদ
বৈশাখ এলে,- স্মৃতির পাতা উড়ে,
নড়েচড়ে জোড়া কইতর
তোমায় মনে পড়ে, পথের আলপনা করে
চোখে ভাসে সাদা লালের শাড়ি আর পাঞ্জাবি।
হাত ধরে পাশাপাশি হেঁটে বেড়ানো পথের গলি
বসে বসে বাদামের খোসা ছাড়ানোর গাল-গল্প
নাগরদোলা, হুক ফেলা রিক্সায় হাসাহাসির দৃশ্য।
বৈশাখ এলে আলতা পায়ের নূপুর বাজে কানে
জাহিদুলের গানে হৃদয় নাচে, পথের ধ্বনি শুনি।
বৈশাখ এলে,- এলেবেলে, এলেবেলে
তোমার জন্য হৃদয় জ্বেলে
শুকনো পাতার মরমরে হৃদয় মরে!
বৈশাখ এলে, – মনে হয় তুমি এলে।
এক-একটি বৈশাখ আসে-
আমি তোমার পদচারণের অপেক্ষায় প্রহর গুনি।
কান-দুটো টান টান করে থাকি-
এই বুঝি শুনছি পদধ্বনি,
পদধূলি উড়ছে বাতাসের ঘ্রাণে
কী যেন এক সঞ্চার প্রাণে, প্রাণে, প্রাণে!
বৈশাখ এলে, – আমার দুচোখ দুপায়া পথ
অপলক চেয়ে থাকে; বটতলা, প্রভাতফেরি
টিএসসির মোড়, আর, আর,-
আরও অগণিত পায়ের চিহ্ন
স্বপ্নের শাখাপ্রশাখা, ধূসর পান্ডুলিপি।
রঞ্জনা বসু
বোশেখ আসবে বলে
দখিন হাওয়া গাছের পাতায়
নানারকম সূচী বানায়,
পাখির ডাক কাছে এনে
নিমন্ত্রণ লিপিখানি সাজায় যত্নে।
চৈত্র শিউরে ওঠে
বিদায়ের সুর শুনে একাকী মগ্ন হয়
ঋতুর নামতা পড়ে,শেখায় ফুলেদের
বাতাসের সাথে হয় ভাব বিনিময়।
সূর্য ওঠে, চাঁদ হাসে
চৈত্রকে ডেকে বলে এসো,
জাগায় খুশির শিস
সমস্ত সবুজ ঘাসে জমে ওঠে সুখ।
বোশেখ আসতেই দরজা শব্দ করে ওঠে
জল পড়া পাতারা উঠলো নড়ে
নতুন বছর যেন আলো নিয়ে এলো
নতুন দিনের গায়ে রং ঝরে পড়ে
চৈত্র এসে মিশে গেল বৈশাখী প্রেমে
সবখানে ছড়ানো যে চৈত্রের কথা
পুরোনো অক্ষরে রয়েছে সে লেখা।
উড়ে যাবে ছাই এই বৈশাখে
মৌসুমী চট্টোপাধ্যাায় দাস
এই বৈশাখ প্রথম নিদাঘ নয়,
এই বৈশাখে হত হল যত মত
শুকোবে কখনও সেই সব বিক্ষত?
এই বোশেখের অনেক অনেক আগে
ফুলকি জ্বলেছে, দাবালন তবু বাকি,
শাল মহুলের সবুজ ছাতার নীচে
হাঘর বেঘর বিবর্ণ আর খাকি
যত পাতা সব জমা হয়েছিল ভুঁয়ে,
জমা হয়েছিল পুড়ে মরবার শীতে,
এই বৈশাখে কালবোশেখীর বেগে
উড়ে যাবে ছাই, দূরে যাবে কি না ভেবে
ঠুলি খুলে হু হু সূর্যে পেতেছি চোখ,
নৈঃশব্দেও তুফানের বেগ লাগে৷
নববর্ষ এসেছে
অন্তর চন্দ্র
কে বল ভাই রঙিন প্রভাত মাঝে
নিরব চোখে তাকিয়ে দেখে দিপ্তি যেন হাসে
গুঞ্জনে সুর মধুর বিহঙ তাথৈ তাথৈ নাচে ।
অরুন প্রাতে তরুণ জাগে পুষ্প ফুটে ডালে
নতুনত্বের জোয়ার আসে বাঙালির ওই মনে ।
রঙিন হয়ে রাঙা পায়ে যায় কিশোরী হেঁটে
ছন্দে ছন্দে রঙের মাঝে বোশেখ ছুটে আসে।
ও কালো মেঘ ওমন করে দেখিস না চেয়ে
বসন্তের ওই বিদায় বেলা রাঙিয়ে দিয়ে যা রে ।
সবার সুখে রব পাশে দুঃখ ঘুচে যাবে
মিলন মেলা গায়ের মাঠে চলছে প্রেমীর সনে ।
জীবন ধারার গভীর স্রোতে ভাষিয়ে দিল মোরে
সত্যে চল সাম্যের সাথে পথে পিদিম জ্বলে ।
চল চল ভাই ক্লান্ত দিনে বট গাছটির তলে
জানান দিল নক্ষত্রেরা আকাশ আলো করে ।
সকল কাজে সকল মাঝে খুশির খবর আসে
মরুভূমি তপ্ত বালু আনন্দেতে ঝিকিমিকি করে।
নদীর জলে জোৎস্না পড়ে জোয়ার ওঠে বেগে
নতুন সাজে নববর্ষ এলো রে ভাই বাঙালির সনে ।
মন মাতানো গানের সুরে ভুবন দেখ হাসে
বাংলার ঘরে ঘরে নতুন জীবন সাজে।
প্রকৃতিতে নতুন ভাবে প্রেমের জোয়ার আসে
প্রখর রৌদ্রে ঝড়ের দিনে বোশেখ কাছে আসে।
নতুন বছর নতুন সুরে নববর্ষের আগমনে
বোশেখ জুড়ে ভুবন মাতে স্বপ্ন রঙিন হয়ে।
পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা
ইলিশ মাছের ৩০কাঁটা বোয়াল মাছের দাড়ি
.!!! বৈশাখ মাসের ১ তারিখে আইসো আমার বাড়ি.!!!
ছেলে হলে পানজাবি মেয়ে হলে শাড়ি.!!
করব বরন বন্ধু তোমায় আইসো আমার বাড়ি.!!!
পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা রইল.
চৈএ মাস পরে গেলো__সামনেই বৈশাখ;;সকলে মন ভোরে কেনাকাটা করুন।। পহেলা বৈশাখের জন্য অগ্রিম শুভেচ্ছা।।ওই দিনটি তে ঘরে আলপনা দিন__। বাঙালি য়ানায় সাজুন:; আর ভালো ভালো রান্না করে আমাকে নিমন্ত্রণ করুন।।।ভুলবেন না কিন্তু।।
চৈএ মাস পরে গেলো__সামনেই বৈশাখ;;সকলে মন ভোরে কেনাকাটা করুন।। পহেলা বৈশাখের জন্য অগ্রিম শুভেচ্ছা।।ওই দিনটি তে ঘরে আলপনা দিন__। বাঙালি য়ানায় সাজুন:; আর ভালো ভালো রান্না করে আমাকে নিমন্ত্রণ করুন।।।ভুলবেন না কিন্তু।।
চিনি আছে সেমাই আছে
না আসলে খবর আছে,
আমার পক্ষ থেকে সবাইকে পহেলা বৈশাখের অগ্রিম শুভেচ্ছা