পেটে জ্বালা? গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডিটি নাকি অন্য কিছু?

পেটে জ্বালা? গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডিটি নাকি অন্য কিছু?

আমরা বাঙালিরা সাধারণত পেট পাতলা জাতি নামে পরিচিত। বারো মাস এই জাতির পেটে সমস্যা, সেটি বাহ্যিকভাবে হোক আর ভেতরের দিকেই হোক। পেটে গন্ডোগোল থাকবেই। কিন্তু এই পেটের সমস্যা মাঝেমধ্যে বয়ে নিয়ে আসে বড় কোন রোগের উপসর্গ। যেমনঃ কিডনিতে সমস্যা, লিভার বিপর্যয়, আলসার, কোলন ক্যান্সারের বার্তাও থাকে এই পেটের গন্ডোগোলে। কিন্তু এই লেখায় আমরা আলোচনা করেছি, গ্যাস্ট্রিক সম্পর্কে। অ্যাপনি জানলে অবাক হবেন, তেলে-ভাজা প্রিয় এই জাতির সবচেয়ে ক্রয়কৃত পছন্দের ওষুধটি গ্যাস্ট্রিকের। তাই চলুন  জানা যাক গ্যাস্ট্রিকের উপসর্গগুলো কি কি। আর কেমন পেটে ব্যাথা কোন রোগের বার্তা নিয়ে আসে?

গ্যাস্ট্রিক কি?
পেটের মধ্যে ফোলাভাব, গ্যাস, বদহজম, অ্যাসিডিটি এবং আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। সাধারণত নাভির ওপরে পেটে ব্যথা হবে। খালি পেটে কিংবা ভোররাতের দিকে ব্যথা তীব্র হয়।গলা-বুক-পেট জ্বলে, টক ঢেঁকুর ওঠে। ঝাল-তেল-মসলাজাতীয় খাবারে ঝামেলা বেশি করে।প্রায়ই গুরুতর না হলেও, ক্রমাগত গ্যাস্ট্রিক সমস্যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

কী কী লক্ষণ দেখা দিতে পারে?
এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হল পেট জ্বালা করা এবং ব্যথা। এই ব্যথা কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে এই ব্যথা এতটাই কম থাকে যে বুঝতে পারা যায় না। আবার অপরদিকে এই সমস্যার কারণে মানুষ রাতেরবেলা ঘুমাতেও পারেন না, এমন উদাহরণও রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যথা হলে মানুষ অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধ খেয়ে নেন। এরফলে সমস্যা সাময়িকভাবে কমে যায়। তবে ফের একটা সময়ে চাগার দেয় এই সমস্যা। এছাড়া আলসারের চিকিৎসা ঠিকমতো না হলে দেখা দিতে পারে বড় সমস্যা। তাই প্রতিটি মানুষকেই থাকতে হবে সর্তক।

গ্যাস্ট্রিক হওয়ার কারণ-
গ্যাস্ট্রিক হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
1. অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, অনিয়ন্ত্রত খাদ্যগ্রহণ।
2. উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, মশলাদার খাবার এবং কার্বনেটেড পানীয় এই সমস্যাগুলিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
3. তেলে ভাজা খাবার খাওয়া
4. খালি পেটে থাকা গ্যাসের অন্যতম সমস্যা।

  • গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে যে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে-
    নিম্নলিখিত খাদ্য পরিবর্তনগুলি যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে:
    1. ফলমূল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য গ্রহণ হজমে সাহায্য করতে পারে
    2. চর্বিযুক্ত এবং মশলাদার খাবার কমানো
    3. অতিরিক্ত খাওয়া পরিহার করা
    4. ভাল-হাইড্রেটেড থাকা
    কিভাবে পেটে গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধ করবেন?
    বেলচিং বা ঢেকুর , গ্যাস এবং ফোলা এড়াতে এখানে কিছু টিপস দেওয়া হল:
    1. খাওয়ার সময় কথা বলা এড়িয়ে চলুন
    2. ছোট খাবার খান
    3. খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে নিন
    4. কার্বনেটেড পানীয় এড়িয়ে চলুন
    5. ধূমপান এড়িয়ে চলুন

গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যার ঘরোয়া প্রতিকার-
বেশ কিছু ঘরোয়া প্রতিকার উপশম দিতে পারে।
1.আদা চা, পেপারমিন্ট তেল এবং ক্যামোমাইল চা রয়েছে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য এবং পেট প্রশমিত করতে সাহায্য করে।
2.ঠাণ্ডা দুধ, বাটারমিল্ক এবং লেবু পানির মতো পানীয় পেটে জ্বালাপোড়া কমাতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক এর চিকিৎসা
খাদ্য জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসকের দেয়া প্রেসক্রিপশনের ওষুধগুলি উপসর্গগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে। যদি গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণগুলি ক্রমাগত থাকে, তাহলে জটিলতা প্রতিরোধ করতে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

 

এক্ষেত্রে এই সমস্যা থেকে সেরে ওঠার জন্য ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে দ্রুত সেরে ওঠার জন্য এই কয়েকটি বিষয় মেনে চলুন-

  • মদ্যপান করবেন না।
  • ঝাম-মশলা এড়িয়ে চলুন।
  • দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য মাইন্ডফুলনেস করুন।
  • ধূমপান ছেড়ে দিন।
  • বেশি বেশি পানি খান
  • পরিমিত ঘুমান
  • হাটুন
  • শরীরচর্চা করলে গ্যাস্ট্রিক থাকে না

গ্যাস্ট্রিক শারিরিক মিলনেও ব্যাঘাত ঘটায়। পেটে গ্যাস্ট্রিক, পেটে জ্বালা  থাকলে সেটি আরামদায়ক হয় না। পেতে জ্বালা থাকলে তা যৌনজীবনকেও নানাভাবে প্রভাবিত করে। তাই গ্যাস্ট্রিকের বিষয়ে সচেতন হোন। পেটে অতিরিক্ত সমস্যা হলে, বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে সাক্ষাৎ করুন।

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
চিরন্তন বাংলাদেশের গল্প

চিরন্তন বাংলাদেশের গল্প

আশিক মাহমুদ রিয়াদ একটি নিকশ কালো রাত, বাতাসে ভেসে বেড়ায় ষড়যন্ত্রের ফিসফিস- কুমন্ত্রণার তোড়জোড় নির্লিপ্ত স্বরযন্ত্রের কড়াল গর্জন, রাস্তায় বের হয় শ’খানেক জলপাই রঙা ট্যাংক। ...
তবু বিশ্বাস করি I কবিতা I সাপ্তাহিক স্রোত

তবু বিশ্বাস করি I কবিতা I সাপ্তাহিক স্রোত

Iমৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস   প্রতিনিয়ত অবদমিত ইচ্ছেরা মরতে মরতে একদিন জেদ-পাখা পেল৷ পাখনা মেলা জেদ পৌঁছে দিল এক রঙিন সূর্যোদয়ে৷ সে সূর্যোদয়ের নাম স্বনির্ভরতা৷ হাজারটা ...
বিপন্ন বিস্ময়

বিপন্ন বিস্ময়

কষ্টের কবিতা – অরবিন্দ মাজি   মনের বদল প্রতিটি মুহূর্তে, যেমন বদলায় দৃশ‍্যপট…  সূর্য-কুয়াশার লুকোচুরি খেলা- সেখানেও  পরিবর্তনের মেলা…    ইদানিং প্রিয়জনের চোখেও – পরিবর্তনের ...
অমৃত লোভায়

অমৃত লোভায়

|শুক্লা গাঙ্গুলি    মনবাউল দিনশেষে মাধুকরিতে প্রণিপাত হাটুমুডে- –     মহাভিক্ষু  দাও অহংকার ভিক্ষা-    সুদীর্ঘ তাপদাহ শেষে মৃদু মন্থর বাতাসে  থাকুক আমন্ত্রণ   ...
গরিব চাষি

গরিব চাষি

সেকেন্দার আলি সেখ   আগুন জ্বলে ক্ষেত খামারে গরিব চাষির বুকে পায়ে ফেলে মাথার ঘাম নেইকো কৃষক সুখে আগুন জ্বলে গ্রাম ছাড়িয়ে রুক্ষ মাঠের শেষে ...
া (আ-কার)

া (আ-কার)

আ-কার (া) আ-কার হলো স্বরবর্ণের একটি সংক্ষিপ্ত রূপ। অ-ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণের সাথে ব্যাঞ্জনবর্ণের সংযুক্তি হলে পূর্ণরূপের বদলে সংক্ষিপ্ত রূপ ধারণ করে। স্বরবর্ণের এ ধরণকেই কার ...