ডঃ সুবীর মণ্ডল
১৯৭১-মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-এর আত্মপ্রকাশ।ধর্ম অভিন্ন হলেও পাকিস্তানের থেকে বেরিয়ে এসে বাংলা ভাষার ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র গঠনের বর্ণময় ইতিহাস নিশ্চিত ভাবে প্রমাণ করে মুক্তকন্ঠের অধিকার। স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ আসলে ছিল মুক্তকন্ঠের অধিকার রক্ষার এক সাহসী প্রচেষ্টা। ১৯৫২-তে ভাষা আন্দোলনের পটভৃমি ও স্মৃতি মুক্তিযুদ্ধের ভিত হিসেবেই প্রস্তুত করে দিয়েছিল বাঙালি জাতিসত্তাকে।
(১)১৯৫৩-র ২১ ফেব্রুয়ারির বর্ণিল ইতিহাস আমরা সকলেই জানি। এ নিয়ে প্রচুর পরিমাণে গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে, সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়েছে অমর একুশ-এর ঘটনাবলী। বাংলা রাষ্ট্র ভাষা হবে, এই স্বপ্ন বুকে আঁকড়ে রেখেছিল অগণিত বাঙালি। ১৯৭১-এ বাংলা একাডেমীতে একুশে-র অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন—–‘আমি ঘোষণা করছি আমাদের হাতে যেদিন ক্ষমতা আসবে সেদিন থেকেই দেশের সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালু হবে, সে হবে না। পরিভাষাবিদেরা যত খুশি গবেষণা করুন, আমরা ক্ষমতা হাতে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ভাষা চালু করে দেব,সে বাংলা যদি ভুল হয়,তবে ভুলই চালু হবে, পরে তা সংশোধন করা হবে। ‘
(২) ১৯৭৪-এ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাংলাভাষাকে আন্তর্জাতিক স্তরে স্থাপন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু কথা রেখেছিলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে তাই –‘প্রজাতেন্ত্রর রাষ্ট্র ভাষা বাংলা। ‘
(৩) ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলনের ৪৭ বছর পর ১৯৯৯-তে ১৭ই- নভেম্বর ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রূপে উদযাপনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়,ঘোষণার মাধ্যমে। এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে বাঙালির কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যময় ও গর্বের, অতীত ইতিহাসের প্রতি বিনম্র থাকার একটি চিরস্মরণও বটে।আগামী প্রজন্মের কাছে ঐতিহাসিক দলিল হয়ে উঠবে বলে আমার নিজস্ব বিশ্বাস।
এই প্রস্তাবটির মূল উদ্যোক্তা ছিল ‘মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লার্ভাস অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড। ‘ যদিও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিষয়টি বাস্তবায়িত হয় অবশেষে। এ-বিষয়ে ‘অমর একুশে সুবর্ণজয়ন্তী সংখ্যা ‘২০০২-এ প্রকাশিত ‘মাতৃভাষা দিবস ‘কীভাবে অর্জিত হয়েছিল ‘লেখাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দলিল। এই তথ্য ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থাকবে চিরকালের জন্য । প্রত্যেকটি জাতির কাছেই তার মাতৃভাষা সবচেয়ে বড় মাধ্যম আত্মপ্রকাশের। বাংলা ভাষার জন্য রক্তক্ষয়ের ইতিহাস পৃথিবীর মর্যাদা আদায় করে নিয়েছে বাংলাদেশ। পৃথিবীতে বহু ভাষা হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে। ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে আনুমানিক ছয় হাজারের মতো ভাষা রয়েছে। যার মধ্যে আড়াই হাজার ভাষা বিলুপ্তির পথে। এক সময় কত ভাষা ছিল, সে ভাষায় কথা বলার একজনও আর আজ বেঁচে নেই। হারিয়ে গেল ভাষা, হারিয়ে গেল জন-জাতির উত্থানের বর্ণময় ইতিহাস। ।আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের বাংলা ও ইংরেজি তারিখ নিয়ে নানান ধরনের বিতর্ক আছে। একটা প্রশ্ন বারবার ফিরে আসে যে,২১শে ফেব্রুয়ারি কেন, ৮ই ফাল্গুন হিসেবে মনে রাখা হবে না—-এই বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সর্বজন ভাবনার স্বীকৃতি এইভাবেই ঘটেছে এবং মান্যতা লাভ করেছে, আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের ক্ষেত্রে ইংরেজি ক্যালেন্ডারের অনুসরণ করা হয়েছে, তা নাহলে বিশ্ববন্দিত হতে পারত না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
(৪) বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা–এমন এক স্বপ্নের দিকে পৃথিবীর সমগ্র বাঙালি জাতি যেমন তাকিয়ে থাকে, তেমনি এপার বাংলার কোটি কোটি বাঙালিও তাকিয়ে থাকে দেশটির দিকে বাঙালি সত্তার ভাষাতাত্ত্বিক রাষ্ট্রনির্মাণের অতীত ইতিহাসের কাছে নতজানু হয়ে। ভারতের তথা অবিভক্ত বঙ্গের ইতিহাস কখনো সম্পূর্ণ হতে পারে না বর্তমানের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রসঙ্গ ছাড়া। ১৯৪৭-এ পৃথক একটি রাষ্ট্রের ভিতরে যখন এই ভূ-খণ্ডটি চলে যায়, তখন মাটিই শুধুমাত্র দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল এমন নয়,ভাগ হয়েছিল বাঙালি জাতিসত্তা ও বাঙালি সমাজ-সংস্কৃতি ও সামগ্রিকতা। সেই সব মানুষ যারা দেশভাগ দেখেনি, ভাষা আন্দোলন দেখেনি , দেখেনি অমর একুশের অলৌকিক ভোর,প্রভাতফেরী। মুক্তিযুদ্ধের ও ভাষা আন্দোলনের সময় যারা নেহাতই সদ্যজাত অথবা শৈশবের আঙিনায়–তখন তাদের একমাত্র আশ্রয় ইতিহাসের পাতা এবং সাহিত্যে প্রতিফলিত সময়। ফেলে আসা সময়ের পাতা উল্টে তারা দেখেছে, কবিতা, নাটক, গান, উপন্যাসের পাতায় শুধুমাত্র সময়ের ইতিহাস নেই, একটা প্রজন্মের পথ হাঁটার ইতিহাস লেখা হয়ে যায় সেই সঙ্গে।
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানোএকুশেফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি?” – আবদুল গফফর চৌধুরী
বাংলা ভাষা আন্দোলন হচ্ছে বাংলা ভাষার অধিকার রক্ষাকে কেন্দ্র করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)-এ সংঘটিত হওয়া একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক গণ প্রতিরোধের আন্দোলন। ১৯৫২-র ২১শে ফেব্রুয়ারিতে এই আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও অনেক আগে থেকেই এর বীজ বপন শুরু হয়েছিল। ১৯৪৭সালের ১৫ই আগস্ট ‘দ্বিজাতিতত্ত্বের’ ভিত্তিতে অখণ্ড ভারতবর্ষ দ্বিখণ্ডনের মাধ্যমে ভেঙে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। আবার পাকিস্তানও ছিল ভৌগোলিকভাবে পূর্বপাকিস্হানে ও পশ্চিম পাকিস্তানে বিভক্ত । সাংস্কৃতিক দিক থেকেও দুটি অঞ্চলের মধ্যে ছিল বিস্তর ব্যবধান। ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, যে ১৯৪৭সালের করাচিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষাসম্মেলনের ঘোষণাপত্রে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি মুদ্রা ও ডাকটিকিট থেকেও বাংলা অক্ষর লোপ করা হয়।এটা ছিল জাতীয় চরম লজ্জা ও অপমান। কোন জাতি মেনে নিতে পারে না। এর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় পূর্বপাকিস্হানে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং ১৯৪৭ সালের ৮ই ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে আয়োজন করা হয় বিরাট ছাত্র -ছাত্রীদের সমাবেশ। এই সমাবেশ থেকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে রাজপথে বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ভাষার মর্যাদা ও মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার সাহসী দাবি। আন্দোলন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ল সারা দেশে । স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ সহ নানা প্রতিষ্ঠান ক্লাস ও কাজ বয়কট শুরু হল।সামিল হল দলে দলে বুদ্ধিজীবীরা। সেই সঙ্গে বিভিন্ন পেশার মানুষজন।এই আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন শামসুল হক,শেখ মুজিব রহমান, আলি আহাদ,শওকত আলীর মতো বিখ্যাত মানুষেরা। পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মহম্মদ আলি জিন্না এই সময়ে ঢাকায় এসে ২৬শে মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দেন ।তাঁর বক্তব্যে ভাষা আন্দোলনকে মুসলিম সমাজের মধ্যে একটা বিভেদ সৃষ্টি করে। তিনি কোন আলোচনা ছাড়াই উর্দুকে পাকিস্হানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন। এর ফলে মানুষের মধ্যে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয় , সারা দেশে প্রতিবাদ -আন্দোলন তীব্রতর হয়ে ওঠে ।১৯৫২সালের ২৭শে জানুয়ারি তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকার পল্টন ময়দানে ভাষণ দেন এবং উচ্চ কন্ঠস্বরে উর্দুর সপক্ষে জোরালো সওয়াল করেন।ক্রুদ্ধ ছাত্র -ছাত্রীরা পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে এসে উপস্থিত হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে তৎকালীন শাসকগণ ১৪৪ধারা ঘোষণা করে। নিরস্ত্র ছাত্র ছাত্রীদের উপর গুলি চালিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করা বাংলা ভাষার দাবিতে আসা নাম জানা আর না জানা বহু ভাষা প্রেমিক মানুষ, তাদের মধ্যে ছিল বহু কৃতি ছাত্র। ঘটনাস্হলে মারা যায় আবদুল সালাম,বরকত, রফিক সহ অনেকেই। এরপর আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে সারাদেশ।২২শে ফেব্রুয়ারি সরকারের দমননীতির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকেও। সীমাহীন অত্যাচারে মাথা নত করেননি বাঙালি জাতি। অবশেষে ভাষা আন্দোলন চরম সাফল্য লাভ করে ১৯৫৪সালের ৭ই মে ।সেদিন মুসলিম লিগের সমর্থনে বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়।
‘একুশের’ ভাবনার কিছু কথা:— বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছর অতিক্রান্ত হবে ২০২১শের-২১ শে ফেব্রুয়ারি ।১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে সম্মানিত করে’মাতৃভাষার অধিকারের’ বিষয়ে আরো বহুমাত্রিক সচেতন ও অধিক দায়িত্বশীল হতে ইউনেস্কো এই দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ‘হিসেবে পালনের কথা ঘোষণা করেছে। ফলে এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের কাছে দিনটির মহিমা ও গুরুত্ব অনেক খানি তাৎপর্যময় হয়ে উঠেছে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির বা ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের স্বায়ত্তশাসন, সাংস্কৃতিক আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও আত্ম মর্যাদা এবং বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্ব রক্ষার বহু রক্তাক্ত স্মৃতি জড়িত থাকলেও, একথা আজ সর্বজনবিদিত যে,এই নিরন্তর সংগ্রামের পরিণতিতেই ” বাংলাদেশ “নামের ভাষাভিত্তিক একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম। ভাষিক বিচারে এই রাষ্ট্রের অধিবাসীদের একমাত্র পরিচয় ‘বাঙালি ‘আর রাষ্ট্রিক মর্যাদায় তাঁরা ‘বাঙলাদেশী’। পৃথিবীর তাবৎ বাঙালির কাছেই ২১শে ফেব্রুয়ারি একটি অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। এইদিনকে নিয়ে অনেক দেশাত্মবোধক গান, কবিতা, নাটক, উপন্যাস লেখা হয়েছে এবং হচ্ছে অবিরত। বহু কালজয়ী উপন্যাস ও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। যে গুলো ঐতিহাসিক দলিল হয়ে উঠবে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। মুনীর চৌধুরির,’কবর’, শামসুর রাহমানের ‘ বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা ‘ আল মাহমুদের’একুশের কবিতা ‘ উপন্যাস,’একুশে ফেব্রুয়ারি ও ‘আরেক ফাল্গুন ‘ ( জহির রায়হান), ‘যাপিত জীবন’ (সেলিনা হোসেন),পুলিশও শিমূলের গল্প’ আবু রুশদের ‘ ডোবা হল দীঘি, শওকত ওসমান,’ আর্তনাদ ‘ ‘এই সময়ের বিশ্বস্ত দলিল হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয় এগুলি ভাষা আন্দোলনের চেতনা বীজ। এই ভাষা আন্দোলনই ১৯৭১সালের স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের প্রস্তুতিপর্ব হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৯৯সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আসলে ফেব্রুয়ারি মাস বাংলাদেশের ‘ভাষার মাস’হিসেবে পরিচিত। দুই বাংলার লক্ষ লক্ষ ছাত্র ছাত্রীরা বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাবে ভাষা-সৈনিকদের প্রতি। করোনার প্রতিকূলতা অতিক্রম করে এ বছরও কোলকাতা ও ঢাকা মহানগর জুড়ে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। বাঙালি জাতি ভুলে যেতে পারে না ‘একুশ‘কে।একুশ কোন সংখ্যা নয়,একটা জাতীয় আবেগ। বাংলা ভাষার নিবিড় চর্চার মাধ্যমে অমর একুশে বেঁচে থাকবে দুই দেশের বাঙালির হৃদয়ে ও মননে। ভাষার মর্যাদা রক্ষায় লক্ষ লক্ষ মানুষের আত্মদানের কথা স্মরণ করার জন্য এই দিনটিকে বিশেষ ভাবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তবে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্নতর। মাতৃভাষাতেই শিশুর প্রথম বোল ফোটে কিন্তু আধুনিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত মানুষ সারা বছর যথাযথ ভাবে মাতৃভাষার চর্চা ও মর্যাদা রাখতে পারছে না অনেক খানি। এপার বাংলায় আছো বাংলাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয় নি। নিজভূমে বাংলা ভাষা উপেক্ষিতও ব্রাত্য। ই ঘটনা ভীষণ ভাবে পীড়া দেয় মনে। আনন্দের বিষয় বাংলাদেশের সবত্রই বাংলার গুরুত্ব বেড়েছে। । তাই এই বিশেষ দিনটি পালন করা হয় যাতে প্রতিটি বাঙালি ও বাংলা ভাষী মানুষ নিজ নিজ মাতৃভাষা ও সাহিত্যকে বিশেষ ভাবে স্মরণ করতে পারে। এই দিনটি যথাযথ ভাবে পালন করার মাধ্যমে প্রতিটি বাঙালি ও বাংলা ভাষী মানুষ নিজ নিজ মাতৃভাষার প্রতি দায়িত্বশীল করে তোলার একটি শুভ প্রচেষ্টা নিহিত আছে। শুধু একটি দিনই নয়, সারা বছরব্যাপী মাতৃভাষার চর্চা ও ব্যবহার এবং আন্তরিক অনুশীলন যথাযথভাবে করতে হবে। মাতৃভাষায় সাহিত্য, গান, কবিতা ও নাটক চর্চা এবং ছোট গল্পের নিরাবিচ্ছিন্ন নিবিড় মেধাবী পাঠ আরো বাড়ানো দরকার। নিজের মাতৃভাষা নয়,অন্যান্য ভাষার প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন। তবেই এই দিনটির পালন যথার্থ হবে আমর নিজস্ব বিশ্বাস। আমাদের সকলের আগামী দিনের ভাবনা হোক
” ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
দুপুর বেলার অশ্রু অক্ত
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায়?
বরকতের রক্ত।
হাজার যুগের সূর্যতাপে
জ্বলবে এমন লাল যে,
সেই লোহিতেই লাল হয়েছে
কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে !
প্রভাত ফেরী মিছিল যাবে
ছড়াও ফুলের বন্যা
বিষাদগীতি গাইছে পথে
তিতুমীরের কন্যা ।
——————‘‐———-–
প্রভাতফেরী, প্রভাতফেরী
আমায় নেবে সঙ্গে ,
বাংলা আমার বচন,
আমি জন্মেছি এই বঙ্গে ।”
( একুশের কবিতা, কবি আল মাহমুদ)