নগ্নগন্ধ [পর্ব-০৬]

নগ্নগন্ধ [পর্ব-০৬]

আশিক মাহমুদ রিয়াদ

গত পর্বের পর থেকে । গত পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

শিমুল গাছটার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো এসে পরেছে। গাছের নিচে বসেছে। একঝাক মানুষের আড্ডা। এরা কেউ কাউকে চেনে না। একটা ছেলে গান গাইছে। তার গিটার টিউনিং ভালো নেই। গিটার বাজাতেও পারে না ঠিকঠাক। তমালের পাশে বসা প্রীতি। প্রীতির বেসুরে গানে মন দিতে পারছে না দেখে মোবাইলে কি যেন করতে ব্যস্ত। এখানে অতভালো নেটওয়ার্কও পাওয়া যায় না।



তমালের অবশ্য আনকোরা লাগছে নিজেকে। প্রীতি যেহেতু তার পাশে বসা এবং তার গায়ে সাহেবী জামা-কাপড়। রিসোর্টের কামড়া থেকে বেরোনর আগে সে অবশ্য নিজেকে আয়নায় দেখেছিলো একবার। চুলগুলোকে পরিপাটি আর গায়ে জেন্টস পারফিউম সব মিলিয়ে তমালের মনের মধ্যে আলাদা একধরণের আত্মবিশ্বাস কাজ করছে।

তমাল গিটার বাজানো ছেলেটিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,

-ব্রো, ক্যান আই গেট দিস?

ছেলেটি গান থামিয়ে বলে, হোয়্যাট?

-গিটার।

তমালের ফোনে গিটার টিউনের অ্যাপস আছে। ফোনটাও ভাজ্ঞ্যেস কিনেছিলো ক’দিন আগে। আগে যে ফোনটি ছিলো তা দিয়ে লোক-সমাজে যাওয়ার কোন উপায় ছিলো না। এই ফোনটি কিনতে তাকে সাহায্য করেছে..তার বন্ধু রুবেল। যাকে সে নিগ্রো রুবেল বলে ডাকে। যার প্রধান কারন, রুবেলের ঠোট আফ্রিকার পুরুষের মতো। রুবেলকে অবশ্য সে কথা বললে, রুবেল বলে….আমার ঠোট দিয়ে কি করবি? চুষবি? এখানে রুবেল থাকলে অন্য একধরণের সাপোর্ট পেতো তমাল।




গিটারটাকে ঠান্ডা মাথায় টিউন করানো শেষে…কর্ডসে আঙুল চেপে গিটার বাজানো শুরু করে শুরু করে। এবং কিছুক্ষণ পরে গিটার টিউন লো করে গান ধরে তমাল। তমালের গানের গলা ভালো।ভার্সিটি লাইফে বন্ধুদের সাথে কত গান গেয়েছে সে। চেয়েছিলো একটা ব্যন্ড দাড় করতে, সে হবে লিড ভোকালিস্ট। তমালের গানের সাথে সাথে প্রীতি মোবাইল ফেলে তমালের মুখের দিকে তাকায়, গালে হাত দিয়ে। মৃদু হাসিতে তমালও প্রীতির চোখের দিকে তাকিয়ে গান ধরে,

 

প্রতিটি স্পন্দনে আমি তোমায় চেয়েছি,

মাঘের শেষে ফাল্গুনের উৎসবে।

তুমি কি আমায় শুনছো?

আমি তো ভালোবেসেছি

শুধু তোমাকেই, হ্যাঁ তোমাকে।

 

এটি তমালের নিজের লেখা গান। সেই গানে যেন সর্বচ্চো সুর তুলে তমাল কিছুক্ষণ জটপাকানো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিলো। গান শেষ হওয়ার সাথে সাথে কড়তালি পরে গেলো ছোটখাট একটা। একজন বলে উঠলো, ওয়ান মোর প্লিজ। তমাল আরও একটি গান ধরলো। পুরোটা গানে সে প্রীতির চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। প্রীতি গালে হাত দিয়ে সেই মিষ্টি হাসি হেসে রইলো, যে হাসিতে বার বার বধ হয়েছে তমাল।

রাতে খেয়েদেয়ে শোবার আগে প্রীতি তমালকে বললো, তুই খাটে শুয়ে পড়। আমি ঐ কাউচটাতে শুয়ে পড়ব।

তমাল চুষে চুষে কি একটা ড্রিংসে চুমুক দিচ্ছিলো তখন, তমাল প্রথমবার কথাটি কানে না নিলেও পরে বললো, তা হবে কেন? তুমি বিছানায় শোও। আমি ওখানে যাচ্ছি।

প্রীতি হেসে বললো, না তা হবে কেন? তুই এখানে শুয়ে পড়। একটা বালিশ নিয়ে প্রীতি ঘরের কোণে কাউচটাতে শুতে গেলো।



কাউচটাতে আধশুয়ে তমালের দিকে তাকিয়ে প্রীতি আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করলো, তমাল-তুই কখনো কারও প্রেমের পরিস নি?

-তমাল আত্মবিশ্বাসের স্বরে বললো, পড়েছি।

-কার প্রেমে? জিজ্ঞেস করলো প্রীতি!

-সেটা তো বলা যাবে না।

তমাল এবার পালটা প্রশ্ন করে বসলো প্রীতিকে…তুমি কখনো কারও প্রেমে পড়েছো?

  • প্রীতি বিষণ্যতার অন্ধকার আড়াল করে বলে, না! ঘুমিয়ে পড়।

প্রীতি চোখ বুজে শুয়ে আছে, সে ঘুমে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে আছে। বিড়বিড় করে বলছে, তমাল তোর কি সেদিনের কথা মনে আছে? যেদিন আমরা প্রথম চুমু খেয়েছিলা। তমালের তখনো কান সজাগ! চোখ খুলে অন্ধকারচ্ছন্ন ঘরে বাইরের জ্যোৎস্না আলো এসে পড়েছে। প্রীতিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে, খোলা সিল্কি চুলগুলো যেন আকর্ষণ করছে বাইরের সব ঘুটঘুটে অন্ধকারে আলো জ্বালানো জোণাকিদের। তমাল উঠে প্রীতির কাছে গেলো সন্তাপর্ণে। হাটুগেড়ে বসে প্রীতির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো, তখনো প্রীতি বিড়বিড় করছে। তমাল হাত রাখে প্রীতির গালে, পৃথিবীর সব মায়া যেন এখানে এসে জমেছে। একি! মেয়েটির গা অসম্ভব গরম! শীতে কুচো হয়ে শুয়ে আছে। তমাল প্রীতিকে কোলে নেয়, বিছানায় নিয়ে আসে। ব্ল্যাঙ্কেট দিয়ে ঢেকে দেয় প্রীতির শরীর, নিজে যখন পা বাড়িয়ে শুতে যায় কাউচটার দিকে তখন প্রীতির বিভোর ঘুম ঢুলো শরীরের হাত তমালের হাতকে টেনে ধরে। কাছে টেনে নেয় এক অদ্ভুত অপ্রত্যাশিত ঘোরে। তমাল প্রীতির পাশে শোয়, তমালের হাতকে টেনে নিয়ে প্রীতি বুকের মধ্যে  ভীষণ যত্নে রাখে। তমাল প্রীতির কপোলের চুল শরীয়ে প্রীতির ফর্সা কপালে একটি স্নিগ্ধ চুমু দেয়। পৃথিবীর সব মায়াটুকু জমেছে প্রীতির কপোলটাতে। তমাল প্রীতিকে বাহুডোরে জড়িয়ে ঘুম দেয়।



আসলে প্রীতি তখনো ভীষণ জ্বরে ঘুমায়নি। সে এতক্ষণ শুয়ে তমালের কার্যক্রম অবজার্ভ করছিলো। তমাল যখন প্রীতিকে জড়িয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন। প্রীতি তখন চোখের চলে তমালের হাত ভিজিয়ে ফেলে। ঘুরে তমালের চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে তমালের ঠোটে লম্বা একটি চুমু দেয়। যে চুমুতে মিশে আছে প্রীতির সারাজীবনের আক্ষেপ।

 

পরের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

[আপনার সামান্য উৎসাহ আমাদের অনেক বড় করে তুলবে। সাবস্ক্রাইব করুন – ছাইলিপির ইউটিউব চ্যানেল]

নগ্নগন্ধ [পর্ব-০৬]

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের সম্যক বিচার

সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের সম্যক বিচার

| রহমতুল্লাহ লিখন    সাহিত্য কথাটার আগমনের সূত্র টানতে একজন বুজুর্গ ব্যক্তির নাম আনি। তাঁর নাম পাণিনি। পাণিনি বলেছেন,”সাহিত্য শব্দ হতে হতে বাংলায় সাহিত্য শব্দটি ...
বেহেস্ত- শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়।

বেহেস্ত- শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়।

  শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়   সন্ধ্যা নেমে এসেছে বেশ খানিকক্ষণ আগে। পূর্ণিমার তারাগুলো যেন ঝলমল করছে মর্মর সৌধের বুকে। প্রধান ফটকের ভেতর দিয়ে এগিয়ে গেলাম। সামনে ...
কবিতা - জললীলা

কবিতা – জললীলা

আদ্যনাথ ঘোষ জোয়ারে একা নামতে নেই জোয়ার পাগলামী জানে, চোখ ফুলে হয়ে যায় নদী। শ্রাবণের কান্নার ঢল, সন্নাসী চোখ, সন্ধ্যামাঠ, নৃত্যপাগল মন। তবু তার বৃষ্টির ...
এক শিশুর স্মৃতিতে ১৫ আগস্ট

এক শিশুর স্মৃতিতে ১৫ আগস্ট

তাসফীর ইসলাম (ইমরান) সেদিন ছিলাম মাত্র ৯ বছরের শিশু। কিন্তু ওই দিনের প্রতিটি স্মৃতি মনে একেবারে স্পষ্ট হয়ে গেঁথে আছে। চাইল্ড সাইকোলজিস্টরা বলেন, শিশুদের মনে ...
সাঁঝদুয়ারি (১৮+)

সাঁঝদুয়ারি (১৮+)

 আশিক মাহমুদ রিয়াদ  সন্ধ্যে নামার আগেই গাঢ় অন্ধকারে ডুবে গেছে চারপাশ। বুনো মশার বুন বুন শব্দ। বারান্দায় নামাজ পড়ছেন আব্বা। সুর করে সূরা পড়ছেন। দাদীর ঘরে ...
অচিনপুরের দেশে: দশম পর্ব

অচিনপুরের দেশে: দশম পর্ব

পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় এবং গৌতম সরকার পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় হ্যাঁ, গত সন্ধ্যার রবীন্দ্র স্মরণ শুরু হয়েছিল “আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্ব” দিয়ে তার পরিণাম কি ...