বইয়ের REKKA কে টেক্কা দিতে পারলো ওয়েবসিরিজ?

বইয়ের REKKA কে টেক্কা দিতে পারলো ওয়েবসিরিজ?

পর্যালোচনা- আশিক মাহমুদ রিয়াদ

[স্পয়লারথাকতেপারে]

হুড়েঝুড়ে নেগিটিভ রিভিউ পড়ার পরেও বেশ ক্ষাণিকটা শক্তি আর ধৈর্য্য নিয়ে রবীন্দ্রনাথে খেতে গিয়েছিলাম। মানে ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি’ নামক রেস্তোরায়। সেখানে গিয়ে খেলাম মুশকান জুবেরি’স স্পেশাল ডিশ। বাট খাওয়ার পরে আমার মনে হলো মুশকান এখানে ঠিক বইয়ের মুশকানের মতো খাবারটা জমাতে পারেননি। টক, ঝাল, মিষ্টির কম্বিনেশনটা জিহ্ববে তেতো লেগেছে। স্বাদে চোখ বুঝতে পারিনি।

বইয়ের REKKA কে টেক্কা দিতে পারলো ওয়েবসিরিজ?
বলছিলাম সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া হইচইয়ের ওয়েবসিরিজ-রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেনির সংক্ষিপ্ত সারাংশটুকু। রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেনি যেটাকে সংক্ষেপে রেক্কা (REKKA) বলে লিখি। বাংলাদেশী থ্রিলার লেখক মোহাম্মাদ নাজিম উদ্দিনের উপন্যাস -” রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি “অবলম্বনে ভারতীয় স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম হইচইয়ে মুক্তি পাওয়া “ওয়েবসিরিজ”টি (একই নাম) পরিচালনা করেছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। যিনি নিজেও থ্রিলার নির্মানে বেশ দক্ষ৷ শুরুতে বাংলাদেশী অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে সিরিজ নির্মানের কথা থাকলেও কোভিড সিচুয়েশনের কারনে সেটি সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। সিরিজটিতে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশী অভিনেত্রী আজমেরী হক বাধন। এছাড়াও অভিনয় করেছেন রাহুল বোস, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় সহ অনেকে। বাংলাদেশী থ্রিলার পাঠকদের মতে, র’বীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি’ উপন্যাসটি দুইবাংলায় সমান পরিমানে জনপ্রিয় একটি উপন্যাস। শুরুতে সৃজিত মুখোপাধ্যায় সিরিজটি নির্মানের ঘোষণা দিলে থ্রিলার পাঠকরা দারুণ খুশি হয়। তবে কাস্টিং দেখে কিছুটা নিরাশও হয়। তবে থ্রিলার নিয়ে এত সহজে হাল ছাড়ার কথা না। এবার মূল রিভিউতে প্রবেশ করি।

বইয়ের REKKA কে টেক্কা দিতে পারলো ওয়েবসিরিজ?

পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় – দুর্দান্ত সিনেমা নির্মাণ করে চলেছেন । অটোগ্রাফ সিনেমা নির্মাণের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে নির্মাতা হিসেবে প্রবেশ করেন । ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখে নির্মাণ করেছেন- গুমনামি, বাইশে শ্রাবণ, দ্বিতীয় পুরুষ, উমা, চতুষ্কোণ সহ আরো অনেক সিনেমা ।

‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেনি ‘ পড়েছিলাম গত ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে। যে কারনে এত শক্তপোক্ত ধাচের একটি থ্রিলার উপন্যাসের ঘ্রাণ আমার মস্তিষ্কে এখনো ভেসে বেড়াচ্ছে। উপন্যাসটি পড়ে কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। বাংলাদেশীও দুর্দান্ত থ্রিলার উপন্যাস রচনা হয় ভেবে। নেগিটিভ রিভিউ পড়ার পরে হইচইয়ের ওয়েবসিরিজ দেখতে শুরু করে কিছুটা অদূর দূরে আশার বাতিঘর দেখে। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের কোন কাজ আমি কখনো টেনে দেখিনি।
বইয়ের REKKA কে টেক্কা দিতে পারলো ওয়েবসিরিজ?
মুশকান জুবেরী চরিত্রে অভিনয় করেছেন আজমেরী হক বাধন। যিনি সম্প্রতি খেল দেখিয়েছেন। মুশকান জুবেরী চরিত্রে তিনি কতটা ফুটে উঠতে পেরেছেন? আজমেরী হক বাধনের অভিনয় সত্ত্বা নিঃসন্দেহে দারুণ। তার লুক এক্সপ্রেশন সবকিছুই দুর্দান্ত লেগেছে ‘রেক্কায়’। তবে পাঠকরা মুশকান জুবেরী চরিত্রকে হৃদয়ে যেভাবে স্কেচ দিয়েছে। সেই স্কেচকে যেন কিছুটা বিমর্শ করেছেন বাধন। স্ক্রিণে মুশকান জুবেরী চরিত্র হিসেবে দেখতে তাকে পাঠক হিসেবে ততটা ভালো লাগেনি। সেই সাথে তিনি যতক্ষণ স্ক্রিণে ছিলেন ততটুকুই যেন স্ক্রিণ নিষ্প্রাণ হয়ে গিয়েছিলো। অথচ হওয়ার কথা ছিলো ভিন্ন। মুশকানকে বাস্তবিক চরিত্রে স্ক্রিণে স্ব-শরীরে দেখতে চাওয়া পাঠকরা অনেকটা নিরাশই হবেন এ বেলায়। তবে বাঁধন যেন মুশকানকে ছাড়িয়ে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন।সহজ কথায় বইয়ের মুশকানকে পর্দায় এভাবে দেখে কিছুটা আশাহত হয়েছি। অনেকেই এ ব্যপারে বলতে পারেন যে বইয়ের পাতার কল্পনার সাথে সিনেমায় অভিনয় করা চরিত্রের সংমিশ্রন কখনো এক হতে পারে না। তবে এক্ষেত্রে এতটুকু বলতে চাই, সামঞ্জস্যতা তো থাকতেই পারে।

বইয়ের REKKA কে টেক্কা দিতে পারলো ওয়েবসিরিজ?

মোহাম্মাদ নাজিম উদ্দিনকে বাংলাদেশী থ্রিলার সম্রাট হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয় । ইতিমধ্যেই তিনি লিখেছেন দুর্দান্ত সব বাংলা থ্রিলার ।বেশ কিছু ইংরেজী বই অনুবাদ লেখার মধ্য দিয়ে তিনি বাংলায় থ্রিলার লেখার আগ্রহ বোধ করেন । তারই ধারাবাহিকতায় লিখেছেন- কন্ট্রাক্ট,নেমিসিস রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি  সহ আরো অনেক জনপ্রিয় থ্রিলার । তিনি থ্রিলার লেখক হিসেবে দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয় । 

বইয়ের REKKA কে টেক্কা দিতে পারলো ওয়েবসিরিজ?
ঠিক একই ভাবে আশাহত হয়েছে নূরে ছফার ক্ষেত্রেও। উহু নূরে ছফা নয়, নিরুপম চন্দ। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাহুল বোস। এর আগে রাহুল বোসের একটি সিনেমা দেখে তার অভিনয় এটিটিউড মনে ধরেছিলো ভীষণ। তবে রেক্কায় তিনি টেক্কা দিয়ে পারেননি বইয়ের নূরে ছফাকে। পরিচালক ক্যারেক্টরের নাম পরিবর্তন করলেও পাঠক যে নূরে ছফাকে হৃদয়ে একেছে তার থেকে যেন ঢের পিছিয়ে স্ক্রিণের নিরপম চন্দ। তবে এখানেও ঐ এক কথা বলবেন অনেকে, বই আর সিনেমা মিলে গেলে তো খেলা হয় না। ঠিক! তবে কোথাও কোথাও রাহুল বোসের অভিনয় দেখে ভীষোন বোর হয়েছি। তবে একজন স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশ অফিসার হিসেবে তার অভিনয় সত্যিও দারুণ ছিলো। তবে তিনি বইয়ের নূরে ছফা হতে পেরেছেন কি না সেটি আদৌ সন্দেহ। একটা দৃশ্যে যখন আতর আলীকে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে তখন তিনি যেভাবে আতর আলীকে বাঁচাতে মাটি সরিয়েছেন, সেটি দেখে কিছুটা বিরক্ত হয়েছি। এখন বলতে পারেন মেসি আর নেইমার যখন লাল কার্ড খেলো, তাহলে খেলা দেখে কি লাভ? তাহলে বসুন! খেলা এখনো বাকি আছে।
বইয়ের REKKA কে টেক্কা দিতে পারলো ওয়েবসিরিজ?
আতর আলি চরিত্রে অনির্বাণ ভট্টাচার্য আলো ছড়িয়েছেন। অনেকেই অনির্বাণ কে নূরে ছফা/নিরুপম চন্দ হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। তবে পাঠকদের এই কথা রাখলে রেক্কা দেখে ততটাও নিরাশ হতে হতো না। অনির্বাণ বরাবরই ভালো অভিনয় করেন। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন,রেক্কায়। আতর আলী চরিত্রে তিনি ফাটিয়ে দিয়েছেন। তার বাংলা উচ্চরণে কিছুটা কলকাতার বাংলার স্পর্শ থাকলেও শুনতে সেটিকে বাংলাদেশের বাংলা উচ্চরণ মনে হয়েছে। রেক্কায় শুধু তার অভিনয়ই ভালো লেগেছে ।

ঠিক এখানেই যেন ভালোলাগার স্টাটিটিক্সটা মুষড়ে পড়েছে অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের বেলায়। কেন যেন তাকে ঠিক পুলিশ অফিসার হিসেবে মানালো না। সেই সাথে তার ডায়লগ ডেলিভারিতেও কিছুটা দূর্বলতার ছাপ পাওয়া যায়। শেষ দৃশ্যে এমন ভ্যাগাবন্ডের মতো দুই পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড দেখে কিছুটা না অনেকটাই নিরাশ হয়ে হেসেছিলাম।

‘রেক্কায়’ সিনেমাটোগ্রাফির খেল ততটা দেখতে পাইনি।তবে চোখের প্রশান্তি দিয়েছে এই যা। কোথাও কোথাও মনে হয়েছে গ্রাফিক্সটা আরেকটু উন্নত হতে পারতো। তবে ভালো লেগেছে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। এসএফএক্স মধ্যম পর্যায়ের ভালো লাগা।

সবশেষে বলতে চাই, রেক্কা দেখুন একজন দর্শক হিসেবে। নিজেকে উপন্যাসের পাঠক হিসেবে রেক্কা দর্শনে আপনি বেশ নিরাশ হতে পারেন। সেই সাথে আপনার সময় নষ্ট হয়েছে বলে নিজেকে দোষটোষ দিতে পারেন। তারচে বরং দর্শক হিসেবেই দেখুন। ‘রবীন্দ্রনাথ কখনো খেতে আসেননি’ এক দুর্দান্ত ওয়েবসিরিজ বটে!

(একজন স্বাধীন দর্শক হিসেবে সিরিজটির রিভিউ লিখলাম। রিভিউতে কোন বানান কিংবা তথ্যবিভ্রাট থাকলে আন্তরিক ক্ষমাপ্রার্থী)

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
কিভাবে মগ ডাকাতদের রাজধানী হলো ভোলা জেলা | Bhola District History

কিভাবে মগ ডাকাতদের রাজধানী হলো ভোলা জেলা | Bhola District History

ভোলা, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি সমৃদ্ধশালী জেলা, এ জেলার পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে কালোবাঁদর, মেঘনা; যমুনা, ব্রহ্মপুত্রের মতো বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সব নদী, শুধু কিন্তু তাই নয়। ...
জিহাদি

জিহাদি

গৌতম সরকার কালো রঙের বি.এম.ডব্লিউ গাড়িটা এয়ারপোর্ট এক নম্বরে এসে দাঁড়ালো। কলকাতার লোকের কাছে এসব গাড়ি অনেকদিন চোখ সয়ে গেছে, তবুও গাড়িটা উপস্থিত অনেকেরই চোখ ...
 অণুগল্প- পিতৃস্নেহ | আহমেদ সুমন

 অণুগল্প- পিতৃস্নেহ | আহমেদ সুমন

|আহমেদ সুমন     বিষন্ন মনে, বস্তির পাশে বেড়ে ওঠা বটতলায় বসে আছে মতিন মিয়া। হঠাৎ পাঁচ বছরের মেয়ে লতা এসে, গলায় জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী ...
গল্প শুনিও

গল্প শুনিও

 টুলটুল দেবনাথ (শিপ্রা) তুমি আমায় একটি সবুজ মাঠের গল্প শুনিও তখন যদি সন্ধ্যা নেমে আসে আর সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত দুচোখের পাতা জুড়ে ঘুম যদি করে ভর বাঁধা ...
খারাপ মেয়ের গল্প

খারাপ মেয়ের গল্প

তসলিমা নাসরিন এখানেই আমার দাঁড়াবার কথা ছিল। ইঞ্জিনিয়ারস ইন্সটিটিউটের ঠিক উলটো দিকের গেট দিয়ে ঢুকে হাতের ডান দিকে প্রথম যে নারকেল গাছটি পড়বে, সেই গাছের ...