লোকটি মুক্তিযোদ্ধা ছিল
লোকটি প্রথম এসেছিল আমাদের গাঁয়ে ১৯৭১ এ।
বিধ্বস্ত চেহারা উসকো খুসকো চুল- হাতে একটি আর্জেজ গ্রেনেড।
তখন খুব ছোট্ট ছিলাম বুঝিনি যুদ্ধ কী?
শুধু এটুকু জানতাম অত্যাচারী পাকিস্তানি হানাদার
আমাদের উপর জুলুম আর নির্যাতন করছে-
আমাদের নেতা বঙ্গবন্ধু – স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন
অতএব আবাল বৃদ্ধ বণিতা ঝাপিয়ে পড়েছে
দেশমাতৃকার অস্তিত্বের লড়াইয়ে।
বাতবিলেবুর গাছটির নীচে একটু জিরিয়ে নেয়
লোকটি।
অদূরের একটি গ্রাম দাউ দাউ করে জ্বলছে তখনো।
অঞ্জলি ভরে পানি খায় লোকটি-
উঠে পড়ে, ক্ষিপ্ত বাঘের মত গর্জে উঠে
মন্ত্রমুগ্ধের মত তাঁর স্বরে আমরাও বলিঃ জয় বাংলা!
এরপর গ্রামে ঢুকে মিলিশিয়া আর্মি- সাথে আক্কু রাজাকার ও তার দল।
আমরা ভয়ে জড়োসড়ো – মিলিশিয়া অফিসার
ধমকের সুরে বলেঃ ‘ আগার তুম জয়বাংলা বুলা, হাম সবলোগোকো মার ডালেঙ্গে। ‘
সবাই নিস্তব্ধ, নিথর!
হাজী দাদার সাথে তুমুল বিতর্কের পর একসময় চলে যায় ওরা।
রাতের আকাশ বিদীর্ণ হয় কান্নায় –
জোকা ও ধোপাইটাইলের অধিকাংশ ঘরই পুড়ে নিঃশেষ।
কিছুদিন পর খবর আসে বুরোর চরের এক সম্মুখ যুদ্ধে একটি লোক শহীদ হয়- ওর নাম মোতালেব কমাণ্ডার, যে আমাদের গাঁয়ে প্রথম ঢুকেছিল;
যার হাতে একটি আর্জেজ গ্রেনেড ছিল।