আবু সাঈদ ইমন
পাখির কিচিরমিচির শব্দ কানে শুনতে পাচ্ছি। এই বুঝি সকাল হল।দুচোখ মেলতেই জানালার ফাঁক দিয়ে রোদের চিকন আলো চোখে এসে পড়ছে। ওঠে ফ্রেশ হলাম। নাস্তা শেষ না হতেই মা এসে হাজির।পাশের টেবিলে বসল।বলল,তোর খালার বাড়ি চল।আমি বললাম,হঠাৎ কেন? আরে আজ রিজন এর জন্মদিন। প্রতিবছর এই দিনটিতে তো তুই খালার বাড়ি যাস।এবারও দাওয়াত দিলো।কোন কিছু বুঝিনা তোর যেতেই হবে।না হয় তোর খালা রাগ করবে..বুঝলি? আমি রাজি হয়ে গেলাম মাকে বললাম,ঠিকআছে যাব।তাছাড়া, রিজন আমার খালাতো ভাই। খালার একমাত্র ছেলে। মা আর ছোট বোন আনিয়া রেডি হয়ে গেল দশটার দিকে।একটু দূরের পথ। খালার বাড়ি যেতে ঘন্টা কয়েক লাগে।খালার বাড়ি পর্যন্ত যাবে এমন একটা গাড়ি ঠিক করে রওনা দিলাম। অবশেষে পৌঁছে গেলাম এক ঘন্টা বিশ মিনিটে।রাস্তায় জ্যাম ছিলনা বলে তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারলাম। এদিকে খালার বাড়ি লোকে ভরপুর।মা আর আনিয়া ভেতরে গেল।আমি সামনের রুমেই চুপচাপ বসে রইলাম। কোন একটা মেয়ে এসে নাস্তা দিয়ে গেল।চিনিনা জানিনা।তবে মনে কেমন জানি লাগল তাকে দেখার পর। মনে হল বহুবছরের চেনা।
আমি থমকে দাঁড়ালাম-কিছু সামনে গিয়ে মেয়েটিকে দেখতে চাইলাম।কোথাও মেয়েটির নিশানাও ফেলাম না।হয়তো রান্নাঘরের এদিকে গেছে।খালাদের ঘর অনেক বড়।চারিদিকে দরজা।কোনদিক দিয়ে যে গেল বুঝতে পারলাম না। আমি ব্যর্থ মনে ফিরে এলাম।আবার চুপচাপ বসে রইলাম সামনের রুমের সোফায়।এদিকে চা ঠান্ডা হয়ে গেল। তাই আর চায়ের কাপে হাত বাড়ালাম না।একটু পর হঠাৎ……
মেয়েটি এসে….এই মা আপনি এখনো চা খান নি? চা তো দেখি ঠান্ডা হয়ে গেল! আমাকে দিন গরম করে নিয়ে আসি।
আমি বললাম,থাক আর লাগবেনা।শুধু শুধু কষ্ট করবেন কেন।
-না কষ্ট কেন হবে?আমি এখুনি করে আনছি।আপনি বরং একটু অপেক্ষা করুন। এই বলে চায়ের কাপ নিয়ে চলে গেল।
এদিকে আমার মনে তো বসন্তের হাওয়া বয়ে চলেছে।ফেনের পাখার মতো মনের ভেতরটা ঘুরতে থাকল সেই অচেনা মেয়েটিকে ভেবে ভেবে।নীল শাড়ী, নীল চুড়ি, কপালে লাল ঠিপ পরা মেয়েটির চেহেরা আমার চোখে ভাসতে থাকলো।মুখের ভেতর গুণগুণ করে গাইতে থাকলাম লতা মঙ্গেশকারের গাওয়া সেই গানটি…..আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব,
হারিয়ে যাব, আমি তোমার সাথে। সত্যিই যেন তার সাথে হারিয়ে যেতে মন চাইছে।সে চা নিয়ে আসার অপেক্ষা করতে থাকলাম………….
প্রায় দশমিনিট পর…..
এই নিন আপনার জন্য গরম গরম চা।চায়ের কাপ নিয়ে তার হাতটি আমার দিক এগিয়ে দিল।
দরুন — আমি আমার হাত বাড়িয়ে তার হাত থেকে চায়ের কাপ নেওয়ার সময় তার হাতের আঙ্গুলের স্পর্শ ফেলাম।গা শিউরে ওঠল।শরীরের ভেতরটা কাঁপুনি দিল।মনে হল আমি মরুভূমিতে হেঁটে যাওয়া পথহারা পথিক।হঠাৎ যেন পানির একটা নদী পেলাম সামনে। তার চোখে চেয়ে আছি।আমি তার হাত থেকে চায়ের কাপটা নেওয়ার সময় গরম একটুখানি চা হাতে পড়ল।আমি সামান্য ব্যথা অনুভব করলাম।মনে হল পুড়ে যাচ্ছিল।হাতটা নাড়াতে থাকলাম।সে এই অবস্থা দেখে… সাথে সাথে নীল শাড়ীর আঁচল তুলে ধরে আমার হাতটি মুছে দিল।আহ…….এবার শান্তি পাচ্ছি।
সে বলল….
ঠিকমতো ধরবেন না।তাহলে তো হাতে চা পড়তো না ব্যথাও পেতেন না।এবার খেয়ে নিন।আমি…হুহুহু করতে থাকলাম।
অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম তার চেহেরাটা।
মায়াভরা রূপ তার।চাঁদের মতো গোলাকার চেহেরা।লম্বা চুল বেনি বাধা।ঠোঁটের উপর একটা তীল।কি মিষ্টি! আমার স্বপ্নের সেই রাণীটা হয়তো এই মেয়ে। তাকে ছাড়া যেন মন মনের ঘরে থাকছেনা।চিরকাল তার সাথে থকার ইচ্ছে জেগে উঠলো মনে—
মনে মনে বললাম-
কাছেই থেকো,যেওনা দূরে, বাড়ে জ্বালা,
এক সুরে গাথঁব দু’জন বিনি সুতোয় মালা।
মেয়েটি বলে উঠল আপনার চা খাওয়া শেষ।
হ্যা……আপনার নাম?
থাক তা আর জানার দরকার নেই।
এই বলে চলে গেলো।
আমার খালাতো ভাই রাজন কে ডেকে জিগ্যেস করলাম–নীল শাড়ী পড়া মেয়েটির নাম কি?
ওওও… ভাইয়া ওনার নাম বিদিশা আপু।আমাদের পাশের বাড়িতে থাকেন।
অদ্ভুত! পাশের বাড়িতে থাকে আমি চিনতাম না।রাজন বলল-ওরা আগে বাইরে থাকতো।এ বছর থেকে এখানেই থাকছে।
ওও আচ্ছা তুই যা।
সবশেষে বিকাল চারটার দিকে রওনা দিলাম বাড়ির দিকে।
বাড়ি এসে ভাবতে থাকলাম তার সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো।সব যেন এখন স্মৃতি।
ভালোবাসার হাওয়া বয়ে গেল মনে।না বলা ভালোবাসা মনে মনে রাখলাম “বিদিশার জন্য”।পরের বার দেখা হওয়ার অপেক্ষায় আছি।
কাছাকাছি আসা হবে।ভালোবাসি বলা হবে।
জানিনা আদৌ তাকে আবার কাছে পাব কিনা।তবে পাওয়ার আশায় বুক বাধি।
ততদিন পর্যন্ত না হয় জমা থাক
“বিদিশার জন্য” ভালোবাসা।