বিসর্জন

বিসর্জন

জোবায়ের রাজু

আপন গতিতে ট্টেন ছুটে চলছে। আতিক ট্টেনে বসে আছে। সে গ্রামের বাড়ি গৌরীপুর যাবে। আগামী সপ্তাহে আতিকের বড় ভাই শওকতের বিয়ে। বিয়েটা কোথায় হচ্ছে আতিক তার কিছুই জানে না। ফোনে এত কিছু জানার সময় কোথায় !
ভায়ের বিয়ে উপলক্ষে সে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে। প্রায় ছয় মাস পর আজ বাড়ি যাচ্ছে আতিক। মাকে প্রতিদিন ফোন করা হয়। মায়ের কাছ থেকে বাড়ির খবরাখবর জানে সে। সাবরিনাকেও রোজ ফোন করে আতিক। মেয়েটি প্রচন্ড ভালোবাসে আতিককে। পাশের গ্রামের ফখরুল মাষ্টারের মেয়ে সাবরিনা। আতিকের সাথে তার ছয় বছরের প্রেম। কেউ তা জানে না। আতিক টুকটাক চিঠি লিখতো সাবরিনাকে। সাবরিনা তেমন সাড়া দিত না। সাড়া না পেয়ে আতিক আবারো চিঠি লিখতো। কিন্তু সাবরিনা হ্যাঁ না কিছুই বলতো না। বিরক্ত হয়ে এক সময় আতিক তাকে চিঠি লেখা বন্ধ করে দেয়। প্রায় অনেকদিন পর সাবরিনা একদিন আতিককে চিঠি লিখে। চিঠি পড়ে আতিক জানতে পারে সাবরিনা তাকে জীবন দিয়ে ভালোবাসে।
চাকরির সুবাদে আতিক শহরে চলে আসার পর সাবরিনা বেশ কষ্ট হয়। আগের মত আর দেখা হবে না। কলেজের নাম করে চটগাছা রেল স্টেশনের পাশে দুজনে মন ভরে কথা বলতে পারবে না। কিন্তু ফোনে দুজনের ঠিকই কথা হয়।
স্টেশন থেকে নেমে সোজা বাড়ি চলে আসে আতিক। ঘড়ির কাঁটা তখন দুপুর আড়াইটা। অনেক দির পর ছেলেকে দেখে নিলুফা বেগমের মন জুড়ে যায়। মায়ের এই মিষ্টি মুখটা দেখলে আতিকের মন ভরে যায়।


২. মা ভাত বেড়ে দিচ্ছে। অনেকদিন পর মায়ের হাতের রান্না খাচ্ছে আতিক। নিলুফা বেগম ছেলের সাথে নানান বিষয় নিয়ে কথা বলছে।
-আতিক, শওকতের বিয়েতো মোটামুটি পাকা হয়ে গেছে। মেয়ের বাবা রাজি আছে। তোর আব্বাকে চিনতো। তোর আব্বার নাম বলতেই তিনি রাজি হয়ে গেলেন। শওকতকেও দেখলেন না।
-ভাইয়া তো বিয়ে করবেন না বলে এতদিন তোমার সাথে ঝামেলা করতো। বয়সওতো বত্রিশ পার হয়ে গেছে। এখন রাজি হলেন কিভাবে। ?
-মেয়েকে দেখে শওকত এক বাক্যে রাজি। মেয়েটা আসলেই দেখতে দারুণ। নাম সাবরিনা। আমাদের পরের গ্রামের ফখরুল মাষ্টারের মেয়ে।
মায়ের কথা শোনে আতিকের মাথায় যেন আকাশ ভেক্সেগ পড়ে। একি শুনছে সে। সেও তো সাবরিনাকে ভালোবাসে। তাদের ছয় বছরের প্রেম।
-শুনবি আতিক, শওকত আরো কি বলেছে জানিস ? সে বলেছে এই মেয়েকে না পেলে সে আর বিয়েই করবে না। হাঃ হাঃ হাঃ… !



৩.এই অবেলায় বিছানায় শুয়ে আছে আতিক। তার পৃথিবীটা কেবল কাঁপছে। বড় ভাই শওকতের কথা সে ভাবছে। সেই অনেক আগে বাবার মৃত্যুর পর শওকত এই সংসারের হাল ধরেছে। জীবনে বহু কষ্ট, অভাব, অনটনের দিন কাটিয়ে বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছে শওকত। বিধবা মায়ের কষ্ট আর এক মাত্র ভাই আতিকের লেখা পড়ার খরচ জোগাতে তাকে যে কত কষ্ট করতে হয়েছে। বড় ভাই শওকতকে বাবার মত সম্মান করে আতিক। কখনো চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে না। সংসারের উন্নতির কথা সর্বদাই ভাবতো শওকত। বিয়ের বয়স পার হয়ে যাওয়া স্বওে ও শওকত কখনো বিয়ের চিন্তা করেনি। যেখানে মা ও ভায়ের খরচ চালাতে তাকে হিমসিম খেতে হয়, সেখানে নতুন মানুষ এনে তাকেও কষ্ট দেওয়ার কোন মানে হয় না।



বাবার রেখে যাওয়া জমিগুলিতে সবজী ও ফল মুলের চাষ করে শওকত সংসার থেকে অভাব নামের বলাইটা দূর করতে থাকে। ততদিনে তার বয়স এিশ ছাড়িয়ে গেছে। নিলুফা বেগমের অনেক অনুরোধ থাকা স্বওেও শওকত বিয়ে করবে না বলে মাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে।
সেই ভাই এখন সাবরিনাকে দেখে সংসার পাতবার বাসনা করেছে। না, তার ভায়ের স্বপ্নকে সত্যি করতেই হবে। প্রয়োজনে আতিক নিজের প্রেমকে বিসর্জন দিবে। তবুও তার পিতৃতুল্য ভায়ের বিয়ে হতেই হবে। এ তো ভাই নয়, তার বাবা। তাই কোন ভাবেই এই মানুষটাকে কষ্ট দেয়া যাবে না। তার ভায়ের বিয়ে হবে। সাবরিনার সাথেই হবে। আজ থেকে আতিক জানবে , সে কোন সাবরিনাকে চিনতো না। ভায়ের জন্যে সে তার প্রেমকে বিসর্জন দিয়ে দিয়েছে।

 

 

আমিশাপাড়া, রাজু ফার্মেসী, নোয়াখালী।

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
দুঃখস্রোতের নদী ।আযাদ কামাল (অধ্যাপনা)

দুঃখস্রোতের নদী ।আযাদ কামাল (অধ্যাপনা)

।আযাদ কামাল (অধ্যাপনা) থইথই পানিতে ঘর-বাড়ি ভাসে ভাসে খড়কুটো হয়ে… পানিবন্দি মানুষেরা কত অসহায়,কত কষ্টে আছে! পানিতে ডুবে গেছে অগণিত স্বপ্ন ও ফসলি জমি… ভেসে ...
বনলতা সেন  : কবিতাচূড়ামণি

বনলতা সেন  : কবিতাচূড়ামণি

 সুজিত রেজ বহুপঠিত , বহুচর্চিত , বহুকূটভাষিত , বহুবিতর্কিত , বহুফলিত , বহুনন্দিত  কবিতা জীবনানন্দের ‘ বনলতা সেন ‘ পুনর্পর্যালোচনার ইচ্ছাবেগ হাঁড়িকাঠে গলা সেঁদিয়ে আত্মহত্যাপ্রবণ ...
এই গ্রাম - সেই গ্রাম

এই গ্রাম – সেই গ্রাম

আশিক মাহমুদ রিয়াদ   আমার শৈশবের খুব কম সময়ে কাঁটিয়েছি আমার গ্রামের বাড়িতে। গ্রামের নাম টেংরাখালী। এই গ্রামের নাম টেংরাখালী কেন- সে ব্যাপারে আমার জানাশোনা না ...
একাকি এবং অতঃপর

একাকি এবং অতঃপর

পার্থসারথি ফজরের আজান কানে ভেসে আসতেই হাজী আহম্মদ মিয়া রোজকার মতো বিছানা ছাড়েন। তিনি পারতঃপক্ষে নামাজ কখনও বাদ দেন না। ঘুম থেকে উঠেই বদনার পানি ...
ঈদের শুভেচ্ছা ভিডিও ২০২৪

ঈদের শুভেচ্ছা ভিডিও ২০২৪

ঈদ মোবারক! ঈদের অগ্রিম অথবা ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা ভিডিও নিয়ে আমাদের এই বিশেষ আয়োজন। এই আয়োজনে আপনারা পাবেন সেরা ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা ভিডিও এর দুর্দান্ত ...
প্রিয়তমার রেকর্ড ভাঙবে রাজকুমার

প্রিয়তমার রেকর্ড ভাঙবে রাজকুমার

সিনেমানামা প্রিয়তমার মতো রাজকুমার সিনেমার প্রথম গানটিও দর্শকদের মধ্যে ব্যপক সারা ফেলেছে। মুক্তির পর পরই সিনেমাটির প্রথম গান ও টাইটেল ট্র্যাক ‘তোমার রাজকুমার’ শিরোনামের গানটি ...