Uncategorizedকবিতাপ্রথম পাতাবৃষ্টির কবিতাসর্বশেষসাপ্তাহিক সংখ্যা

জোড়া কবিতা

রঞ্জিত সরকার 

 

ব্রহ্মপুত্র

আদি পৃথিবীর আদি নদী এক
বৈতরণী কিংবা অলকনন্দা নয়
আমার প্রাণের প্রবাহ ছোঁয়ে উৎসারিত নদী
ব্রহ্মপুত্র।  প্রাণের স্পন্দন তোলে
ভাঙতে
          ভাঙতে
                     ভাঙতে
নদী যায় নিরবধি।  ভাঙা – গড়ার খেলায়
অনাদি নদীর কলধ্বনি শুনি।
ঘন কৃষ্ণ মেঘ কপিলা গাভীর ওলানের ধার
বেয়ে বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে অজস্র ধারায়।
জলকে জীবন ভেবে ধীবরের নাও ভেসে যায়
স্রোতের উজান ঠেলে,  স্বপ্নে তার খেলা করে
ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ। নদীর প্রবাহ ধরে জীবনেরও
জোয়ার – ভাটা আসে এখানে।
কামারের হাপরের মতো উঠা – নামা এই জীবনের
রথের চাকার আর
ধূসর পটভূমি জুড়ে কতো স্বপ্নের আঁকিবুঁকি আঁকা।
কতো জনপদ কতো সভ্যতা পাললিক মাটির
ইতিকথা পার হয়ে এসে অবশেষে
নদীও একা হয়
একা থাকে একা একা যায়।
হাজার নদীর বেদনা – ধারায় মিশে একা
একাই কষ্ট পোহায়
শ্বাপদের হিংস্র নখরের নিচে
ছিন্নভিন্ন নদীর আত্মায় ক্ষত হয় নীল,
বিপন্ন মাটি,  ধর্ষিতা নদীর বুকের কোমল বিস্ময়।
যুগে যুগে মানুষের সঞ্চিত পাপ নিজের শরীর
পেতে ধরে রাখে নদী।
ফোঁটা ফোঁটা ঝরে পড়া সন্ধ্যা শিমুলের ফুলে
কতো যে বৃষ্টির জলছবি আঁকে।
বারোমাসি গান জুড়ে নদীর বাঁকে বাঁকে কতো না
জন্মকথা লিখা থাকে! কতো ইতিহাস বারোয়ারি
মানুষের দুঃখ – কথা, কংস কুমারী সোনাই,
বেহুলা – ভাসান,  বিদ্রোহী বেনে চাঁদ সদাগরের
বীরত্বগাথা, মৃত জোছনার চাঁদ কুড়াতে যেয়ে
কবি চন্দ্রাবতীর নরসুন্দার স্রোতে ভেসে যাওয়া
ফুল্ল শরীর ,  যূথবদ্ধ মানুষের জীবন
সংগ্রাম, শঙ্খনাদে সমূহ উত্থান। শালবৃক্ষের ছায়ার
আসনে পাতা মানুষের আজন্ম বসতি দুর্মর কেঁপে
কেঁপে ওঠে,  মাদলের তালে তালে রক্তে কাঁপন
তোলে সুপ্ত ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকা জুড়ে।
.
.
.
.

দুই.

বৃক্ষস্বভাব

ষড়ঋতু আঁকা থাকে বৃক্ষের শরীর জুড়ে
উল্কি আঁকার বিন্যাসে
বৃক্ষেরা বৃক্ষ – স্বভাবজাতেই ষড় ঋতু সন্ধানী।
প্রথম বৃষ্টির ফোঁটায় ভিজে মাটির মৈথুন ভেঙে
বীজের আত্মা থেকে জন্ম নেয় কোমল বৃক্ষ শিশু
পাতার প্রকরণে সাজায় সংসার
সবুজের সুষমায়।
বৃক্ষের ত্বকের নিচে কান পেতে শোনা যায়
সংবাহী জালিকার অন্তঃসলিলা অজস্র
ফোয়ারার ধ্বনি
জলে ও পাতায় বাজে যুগল সিম্ফনি।
বৃক্ষেরা আপন স্বভাবে বাড়ে যৌথ জীবন গড়ে
সংগীত পিয়াসী পাখিদের সাথে
বৃক্ষদের কোন জাত – পাত নেই
পতিত – পতিতা নেই।
শেকড়ে প্রোথিত তবু সন্ন্যাসী স্বভাব
বুদ্ধের মতো ধ্যানী,  পরার্থকামী।
বৃক্ষেরা বৃক্ষ – স্বভাবেই কষ্ট কুড়ায়
হলুদ শিরায় ঝরে যাওয়া পাতায়
বেদনার বাণী লিখে যায়।
ময়মনসিংহ।।
এই লেখাটি শেয়ার করুন
ছাইলিপির ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

ছাইলিপির কথা

লেখালিখি ও সৃজনশীল সাহিত্য রচনার চেষ্টা খুবই সহজাত এবং আবেগের দুর্নিবার আকর্ষণ নিজের গভীরে কাজ করে। পাশাপাশি সম্পাদনা ও প্রকাশনার জন্য বিশেষ তাগিদে অনুভব করি। সেই প্রেরণায় ছাইলিপির সম্পাদনার কাজে মনোনিবেশ এবং ছাইলিপির পথচলা। ছাইলিপিতে লিখেছেন, লিখছেন অনেকেই। তাদের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। এই ওয়েবসাইটের প্রতিটি লেখা মূল্যবান। সেই মূল্যবান লেখাকে সংরক্ষণ করতে লেখকদের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। কোন লেখার মধ্যে বানান বিভ্রাট থাকলে সেটির জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। ছাইলিপি সম্পর্কিত যে কোন ধরনের মতামত, সমালোচনা জানাতে পারেন আমাদেরকে । ছাইলিপির সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। ছাইলিপির নতুন সংযোজন ছাইলিপির ইউটিউব চ্যানেল Chailipi Magazine। সাবস্ক্রাইব করার আহ্বান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করা থেকে বিরত থাকুন ! বিশেষ প্রয়োজনে ইমেইল করুন [email protected]