ড. গৌতম সরকার
“আচ্ছা, বৃষ্টির শব্দের মধ্যে তুমি সুর খুঁজে পাও?”
“সুর? কিসের সুর?”
“কেন গানের…তানের, একেকটা বৃষ্টি একেক রকমের রাগ-রাগিনী হয়ে পৃথিবীর বুকে ঝরে পড়ে….”
“রাতবিরেতে কি সব আবোলতাবোল বকছো! ঘুমিয়ে পড়”৷
পুরুষটি কিছুক্ষণ আগেই মত্ত-প্রমত্ত হাতির আক্রোশে নারীটিকে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলছিল। এখন রতিক্লান্ত শরীরে একশো কাছিমের ক্লান্তি। বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে কিছুক্ষণ। ক্লান্তির সাথে বৃষ্টির মধুরস মিলেমিশে ঘুমের দেশের নিশি ডাকাত ডাক পাঠিয়েছে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়তে পড়তে নারীটির উদ্দেশ্যে কয়েকটা অস্পষ্ট শব্দ উচ্চারিত হল, তারপর সব চুপ।
একেলা শুয়ে শুয়ে বৃষ্টির শব্দ শুনে যেতে লাগল নারীটি। আজই তারা এই পাহাড়ি শহরে এসেছে। পাহাড়ের বৃষ্টির সরগম আবার অন্যরকম। বৃষ্টির জল পাহাড়ের আনাচ-কানাচ দিয়ে শত-সহস্র ঝর্ণা হয়ে ঝরে পড়ে। বাইরে বৃষ্টি বাড়ল, ফোঁটাগুলো যেন কোন ধৈবতে তান ধরে জানলার কাঁচের উপর আছড়ে পড়ছে। পাশের কামিনী গাছ থেকে ভিজে যাওয়া চড়ুইগুলোর আর্ত আওয়াজ ভেসে আসছে। নিরাবসন শরীরটা শির শির করে উঠলো মেয়েটির। ওর কাছে উত্তাপের চেয়ে এই শিরশিরানিটা অনেক বেশি আন্তরিক মনে হয়। আসলে উত্তাপের জন্য সবসময় দুটি শরীরের প্রয়োজন হয়, সেখানে অনেকসময়ই মনের ভূমিকা থাকে গৌণ; কিন্তু শরীরে শীত নিয়ে আসতে হলে নিজেকে মনের অনেক গভীরে হাঁটাতে হবে। সেই গমন বড়ই রমণীয়, সেই রমণ মনকে শান্তি দেয়, সেই আচমন আত্মাকে শুদ্ধ করে। বৃষ্টির শব্দ শুনতে এতটুকু ক্লান্তি নেই নারীটির। অনেক সময় পার হয়ে যায় সেই অন্ধ প্রকোষ্ঠের অণু-পরমাণুতে, মাঝরাত পার করে আস্তে আস্তে উঠে বসে নারীটি। পায়ের কাছে বসন গুটিয়ে পাকিয়ে পড়ে আছে। সেদিকে না তাকিয়ে ঘর পেরিয়ে বারান্দায় চলে এল। এই বৃষ্টিবিধুর রাত্রে সে ছাড়া গোটা পৃথিবী ঘুমোচ্ছে। তাই খুব সহজেই নিরাবরণ সেই নারী বারান্দার পাঁচিলে দুহাতে ভর দিয়ে মুখ উঁচু করে বৃষ্টির ভিজে গন্ধ শুঁকতে লাগল। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো কার্নিশে ধাক্কা খেয়ে হাল্কা ফোয়ারায় তাকে ভিজিয়ে দিতে লাগলো। বৃষ্টির সেই নিবিড় স্পর্শ গায়ে মাখতে মাখতে নারীটির নিঃশ্বাস ঘন হয়ে উঠল, নিবিড় আশ্লেষে সেই বৃষ্টি সারা গায়ে, বুকে, পায়ে, শরীরের আরও কত জ্যামিতিক-ত্রিকোনোমিতিক কোণে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। কেউ দেখলে ভাবতো দীর্ঘদিন পর ঘুমভাঙা ক্ষুধার্ত কোনো সাপিনী ক্রুদ্ধ আক্রোশে সারা বারান্দা জুড়ে তার বিষ বাষ্প ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বৃষ্টি মাখতে মাখতে একসময় নারীটি বসার মুদ্রা নিল, মুদ্রাভঙ্গে বসা অবস্হা থেকে শুয়ে পড়ল, তারপর সেই অপ্রশস্ত একান্ত বারান্দায় একক শঙ্খ লাগলো নারী শরীরে। সাক্ষী রইল এক থোক অন্ধকার, আর তারাহীন অন্ধ আকাশ।
পর্ব-২
“ভাবতে পারো গরমের সময় আমরা এই নদী পায়ে হেঁটে পারাপার করি!” ছেলেটি আর মেয়েটি বসে আছে নদী থেকে কিছুটা দূরে একটা আমলকি গাছের নিচে। প্রতিমুহূর্তে নদীর পাড় ভাঙার শব্দে ছেলেটি চমকে চমকে উঠছে, আর মেয়েটি খিলখিল করে হেঁসে উঠছে। সামনের এই দিগন্ত প্রসারিত রাক্ষুসী নদীর তীব্র গজরানি ছেলেটির বুকে ভয়ানক জয়ঢাক বাজিয়ে চলেছে। কলেজের শেষ দুটো ক্লাস বাঙ্ক করে মেয়েটি যখন ছেলেটিকে নদী দেখাতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিল, ছেলেটি বিনা বাক্যব্যয়ে হ্যাঁ বলেছিল। ছেলেটি নরমসরম, তার কাছে নদী মানে নারী। লাজুকলতা, এক চঞ্চল কিশোরী, যে মনে দোলা দেবে, ভয় ধরাবে না। আর গল্প উপন্যাসে, সিনেমার পর্দায় সততই দেখা যায় আসল প্রেম জমে নদীর তীরে। সে উদাস মুখে ঘাস ছিঁড়তে ছিঁড়তে নায়ক-নায়িকার নদীর দিকে উদাসমুখে চেয়ে থাকাই হোক, বা হালকা হাওয়ায় মেঘের আঁচল উড়িয়ে লতা মঙ্গেশকর, বা আরতি মুখোপাধ্যায়ের গলায় বাংলা গান গেয়েই হোক। কিন্তু এখানে আসা ইস্তক নদীর এই অবাঙালি রূপ দেখে ছেলেটির সবকিছু চমকে গেছে। সে তৎক্ষনাৎ পালাবার ধান্দা করছিল, কিন্তু মেয়েটি ছেলেটির হাত ধরে টেনে এনেছে নদীর ধারে। আমলকী গাছের নিচে ঘাসের বিছানায় বসতে বসতে বলেছে, “যাকে নিয়ে আগামীদিনের রঙিন স্বপ্ন আঁকছ, তার জীবনের সাদা-কালো ছবিগুলোও তো দেখতে হবে বাবু! এই নদী আমার আরেক প্রেমিক। এর সাথে ভাগাভাগি করে আমাকে নিতে পারলে ভালো, তা নাহলে তোমায় কিন্তু নদীকে মল্লযুদ্ধে হারিয়ে আমাকে জিতে নিতে হবে…পারবে!” মেয়েটির সব কথা ছেলেটির মাথায় সেঁধোয় না৷ এখানে আসার পর থেকে সে কেমন যেন ব্যোমকে গেছে। এরমধ্যে আবার সারা আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে ফেলেছে। এতক্ষণ একটা জলে ভেজা মোলায়েম হাওয়া বইছিল, সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। চারদিকে কেমন এক গুমোট ফোঁসফোসানি ভাব, যেন একটা লণ্ডভণ্ড খেলা শুরু করার আগে সাময়িক বিরতি চলছে। ছেলেটির বুক ভয়ে ধুকপুক করতে লাগলো। মেয়েটির এসবে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই, এসবকিছু তার যেন আগে থেকেই জানা। সে একটা কাঠির দিয়ে নরম মাটিতে আঁচড় কাটতে কাটতে নিজের মনে কত কথাই বলে চলেছে– তার ছেলেবেলার কথা, তার বকুলফুল আর অন্য বন্ধুদের কথা। তার পিসীমার বাড়ির কালিগাইয়ের কথা, শরৎকালে নদীগর্ভ কাশফুলে ভরে উঠলে বিকেলের হাওয়ায় তারা কিরকম একে অপরের গায়ে ঢলে পড়ত সেই কথা, পয়লা পৌষ তাদের গ্রামে মেলা বসে, অন্ধ এক বৈরাগী তাদের বাড়ি গান শুনিয়ে ভিক্ষে করতে এলে তাকে মা মা বলে ডাকে, আরও কত কথা। হঠাৎ কথা থামিয়ে ছেলেটির দিকে উজ্জ্বল চোখে তাকিয়ে বলে ওঠে, “এই, এক জায়গায় যাবে?” ছেলেটি এই জায়গা থেকে পালাতে পারবে ভেবে বলে ওঠে, “কোথায়?” উত্তরের অপেক্ষা না করে উঠে দাঁড়িয়ে প্যান্টের ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বলে, “চলো যাই”। মেয়েটিও উঠে দাঁড়ায়, ছেলেটির হাত ধরে মারে এক টান, তারপর দুজনে হাতধরাধরি করে ছুট লাগায়। মাঝপথেই আকাশভাঙা বৃষ্টি নামে। বৃষ্টি শুরু হতেই হাত ছেড়ে দিয়ে মেয়েটি দৌড় লাগায় পদ্মদীঘির দিকে। পদ্মদীঘিকে ঘিরে অজস্র তালগাছ, সেই তালবীথির অপরিসরে দুটো হাত আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা ধরতে চেয়ে এক অপরূপ শরীর বিভঙ্গে নৃত্যের তালে তালে গেয়ে ওঠে,
“এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়।
এমন দিনে মন খোলা যায়
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরোঝরে, তপনহীন ঘন তমসায়।”
ছেলেটি কি করবে বুঝতে না পেরে হতভম্ব হয়ে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। অসহায় আর্ততার ছবি সারা মুখে, দুটো হাত দিয়ে মাথা বাঁচানোর অক্ষম চেষ্টা করে চলেছে। মেয়েটি এরমধ্যে নাচতে নাচতে দুহাত বাড়িয়ে ছেলেটির উদ্দেশ্যে ডাক পাঠায়, তাকে তার নাচের সঙ্গী হতে ইশারা করে৷ মেয়েটি গেয়ে চলে…….
“সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারি ধার।
দুজনে মুখোমুখি গভীরে দুখে দুঃখী,
আকাশে জল ঝরে অনিবার—
জগতে কেহ যেন নাহি আর।।”
ছেলেটি মেয়েটির বালখিল্যতায় সাথ দেবে, না রেগে উঠবে বুঝে উঠতে পারেনা। তার গায়ের শার্ট ভিজে জবজবে হয়ে গেছে। বাড়ি ফিরে জ্বরে পড়লে আর রক্ষা থাকবে না। সে হাত বাড়িয়ে মেয়েটিকে ফিরে আসতে বলে। কিন্তু জানে এসব বৃথা। মেয়েটি কখনও অন্যের নির্দেশে কিছু করেনা। সব যে আবার নিজের ইচ্ছেয় করে তাও নয়…মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় ওর মধ্যে আরেকজন আছে, যার কথা ও মেনে চলে, তার অঙ্গুলি লেহনেই সে মাঝে মাঝে এমন সব কাজ করে ফেলে যেগুলো সাধারণের বিস্ময়ের উদ্রেক ঘটায়। ছেলেটি মেয়েটির সাথে ছমাস মিশছে , এখনও মেয়েটিকে এককনাও চিনে উঠতে পারেনি। বৃষ্টির দেওয়াল পেরিয়ে ভেসে আসছে…..
“সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব।
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব–
আঁধারে মিশে গেছে আর সব।”
সহসা চারদিক আলোর ঝলকানিতে চারদিক চমকে দিয়ে ভয়ঙ্কর শব্দে কাছেই কোথাও একটা বাজ পড়ল….মুহূর্তের মধ্যে চোখ ধাঁধিয়ে গেল, কান ভন ভন করতে লাগলো, ছেলেটি আর কোনো দিকে না তাকিয়ে প্রানপনে দৌড় লাগাল, বাঁচার দৌড়, যে দৌড় একাই দৌড়তে হয়, যে দৌড়ে সঙ্গীর কি হল না ভেবে, শুধু নিজেকে বাঁচানোর তাগিদে দৌড়তে হয়। পিছনে পড়ে রইল ঝুম ঝুম ঘুঙুরের তালে তালে বৃষ্টির ফোঁটায় ভিজতে থাকা সেই মেয়েটি আর রবীন্দ্রনাথ……
“ব্যাকুল বেগে আজ বহে যায়,
বিজুলি থেকে থেকে চমকায়।
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজই যেন বলা যায়—
এমন ঘনঘোর বরিষায়।”
মেয়েটি চোখ বন্ধ করে গভীর আশ্লেষে দুহাত বাড়িয়ে তার প্রেমিককে খুঁজতে থাকে।
পর্ব-৩
বাবা ছাপোষা সরকারি কেরানি, মা গৃহবধূ। এরকম বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়েটি কিভাবেএত স্বপ্ন নিয়ে জন্ম নিল সেটাই বিস্ময়ের। তবে সেই নীল স্বপ্নের সাথে ফ্যাকাশে হলুদ বাস্তবের কখনও সংঘাত লাগতে দেয়নি মেয়েটি। ছোটবেলা থেকেই সে তার স্বপ্নগুলোকে লুকিয়ে রাখতে শিখেছিল, আর গরীব বাবা-মা যে স্বপ্নগুলো পয়সা দিয়ে মেটাতে পারতো না, সেগুলো সে মিটিয়ে নিত অসীম আকাশ, উন্মুক্ত মাঠ, নদীর জল, কাশবন, বনকলমির ঝোপ, লতার দোলনা, স্হলপদ্মের সৌন্দর্য্য, শিউলির শিশিরস্পর্শ, মাঝনদীতে একা মাঝিভাইয়ের ভাটিয়ালি সুর থেকে। কখনো কোনো আবদার, বায়না করেনি, ক্ষোভ-বিক্ষোভ, নালিশ কিছু ছিলনা তার জীবনে; এইভাবে অভাবে-অনটনের সংসারে রাজ-রাজেন্দ্রানীর মত হেঁসে-খেলে মেয়েটা বাবা-মায়ের চোখে চোখে বড় হয়ে উঠতে লাগল। সেই মেয়ে জীবনে একবার মাত্র আবদার জানিয়েছিল বাবা-মায়ের কাছে। সেই আবদার মেটানোর ক্ষমতা কেরানি বাবার ছিলোনা। তাঁরা ভেবেছিলেন, তাদের
বুঝদার মেয়েকে বুঝিয়ে বললে জিদ ছেড়ে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু সেবার বাবা-মা নিরাশ হলেন। মান-অভিমান-কান্নাকাটি-রাগ- জেদ-কথাবন্ধ-খাওয়া বন্ধ ইত্যাদি পর্ব পেরিয়ে গরীব বাবাকে শুধু পুরী যাওয়ার ট্রেনে টিকিট কাটতে হলোনা, সমুদ্রের একেবারে সামনে, সমুদ্রমুখী ব্যালকনিওয়ালা বেশ দামি হোটেলও বুক করতে হল।
স্কুলে মেয়েটির তেমন বন্ধু ছিলনা। তার জন্য বন্ধুদের দোষ দেওয়া যায়না। মেয়েটির মধ্যে যে একটা খামখেয়ালি পাগলামি আছে তার সাথে অন্যরা খাপ খাওয়াতে পারেনা। যখন তখন মেয়েটি কেমন বদলে যায়, ওদের ভয় করে। বন্ধু বলতে তার ওই একজনই- বিশাখা। একই গ্রামে বাড়ি, আর বিশাখারাও ওদের মতই গরীব। সেদিন স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার পথে বিশাখা অনেক কথা বলে চলছিল, মেয়েটি ছিল একদম নিশ্চুপ। কিছুক্ষণ পর ব্যাপারটা খেয়াল করে বিশাখা পিছন ফিরে ওকে জিজ্ঞাসা করে, “হ্যাঁ রে, তোর কি হয়েছে রে? স্কুলে টিফিন পিরিয়ডের পর থেকেই দেখছি তুই হঠাৎ চুপ হয়ে গেলি। ক্লাসে পড়া না শুনে উদাস মুখে জানলার দিকে তাকিয়ে বসেছিলি। সময়মতো সাবধান না করে দিলে দীপিকা ম্যাডামের শাস্তি থেকে কেউ তোকে বাঁচাতে পারতোনা। এখনও তুই কোনো কথা না বলে চুপ করে আছিস। কি হয়েছে তোর?” মেয়েটি তবু চুপ করে থাকে। কোনো কথার উত্তর না পেয়ে বিশাখা রাগ করে এগিয়ে যায়। কিছুটা চলার পর মেয়েটি পিছন থেকে এসে বিশাখার একটা হাত ধরে। বিশাখা রাগ করে হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলে মেয়েটি আরও শক্ত করে বন্ধুর হাত ধরে টান মারে, এবার চোখাচুখি হয়ে যেতেই দুজনে হেঁসে ফেলে। তারপর পাখির ডানায় ভর করে দুই কিশোরী মাঠ-ঘাট ভেঙে দৌড় লাগায় নদীর দিকে। শরৎ সবে পড়েছে, প্রকৃতি এবার বদলাতে শুরু করবে। শিউলি ফুটবে, কাশ ফুটবে, ঘাসের বুকে ভোর রাতে শিশির পড়বে। এখন তন্বী নদী অষ্টাদশী কিশোরীর বুকের শাড়ির মতো একফেরতা হয়ে বালির বুকে পড়ে আছে৷ এই সময় নদী কেউ পারাপার হয়না তাই বশিরচাচার নৌকাটা বালির ওপর পড়ে আছে। কিশোরী দুজন নৌকার পাটাতনের ওপর উঠে বসে। কাঁধের ভারী ব্যাগগুলো পাশে নামিয়ে রাখে। বিশাখা চঞ্চল মেয়ে, সে ইতিমধ্যেই কয়েকটা ইঁটের টুকরো জোগাড় করে ফেলেছে। নদীর জল লক্ষ্য করে ইঁটের টুকরোগুলো ছুঁড়তে ছুঁড়তে মেয়েটির উদ্দেশ্যে বলে, “এবার তো বল কি হয়েছে?” পাখির মত চোখ তুলে, হাঁটুতে থুঁতনি রেখে নদীর দিকে গভীর তাকিয়ে মেয়েটি বলে ওঠে, “আমি সমুদ্র দেখতে যাবো”। হাতের ইঁটের টুকরো হাতেই থেকে যায়, অবাক বিস্ময়ে বন্ধুর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো বিশাখা। কিছুক্ষণ নির্বাক থেকে বলে, “সমুদ্র দেখতে যাবি! মানে! সমুদ্র কি এখানে?” এবার বিশাখার কাছে মেয়েটির হঠাৎ চুপচাপ হয়ে যাওয়ার কারণটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আজ টিফিন পিরিয়ডে ক্লাসের ফার্স্টগার্ল, তাদেরই স্কুলের অনুরাধা ম্যাডামের মেয়ে রাধিকা পুরী বেড়ানোর গল্প জুড়েছিল। গরমের ছুটিতে ওরা পুরী গিয়েছিল, পুরীতে কত সব মজা করেছে, সব ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বলছিল। বিশাখাও অবাক হয়ে শুনছিল। কিন্তু মেয়েটি তো তখন শেষ বেঞ্চে বসে হাইবেঞ্চে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছিল। পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দির, পান্ডা, নুলিয়া, বিশাল বিশাল ঢেউ, সমুদ্রস্নানের মজা, সাথে উদয়গিরি, খণ্ডগিরি, নন্দনকানন, কোনারক, গল্প আর থামতেই চাইছিল না। শেষে টিফিন শেষের ঘন্টা পড়ায় আজকের মত গল্প মুলতবি রয়ে গেছে। সেই গল্প তাহলে পিছনে বসে সবটা শুনেছে মেয়েটা, শুধু শোনেইনি, এরমধ্যে ঠিকও করে ফেলেছে সেও পুরী যাবে। মেয়েটির জন্য বিশাখার খারাপ লাগতে লাগলো। একটু পাগলী, কিন্তু মনটা খুব সরল। একটু বোকাও বটে! তাদের মত পরিবারে যেখানে দুবেলা দুমুঠো খাবার জোটানোটাই একটা বড়সড় চ্যালেঞ্জ, সেখানে বেড়াতে যাওয়ার বিলাসিতা একধরনের পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কি! বিশাখাকে চুপ থাকতে দেখে মেয়েটি উত্তেজিত হয়ে নৌকোর খোলে উঠে দাঁড়ায়, “কি হল তুই আমাকে বিশ্বাস করলি না?” বিশাখা ‘হ্যাঁ’, নাকি ‘না’ উত্তর দেবে বুঝতে না পেরে ইতস্ততঃ করে। মেয়েটি নৌকার খোল থেকে লাফিয়ে বালিতে নামে। তারপর “পুরী আমি যাবোই, পুরী আমি যাবোই, দেখে নিস”, বলতে বলতে পিঠের ব্যাগ সামলাতে সামলাতে বাড়ির দিকে দৌড় দিল। পিছনে ভ্যাবলার মত চোখ বড় বড় করে বসে রইল বিশাখা।
জীবনে বাবা-মায়ের সাথে ওই একবারই বেড়াতে গিয়েছিল মেয়েটি, আর বাবা-মায়ের জীবনে ওই প্রথম আর ওই শেষ। মেয়ের মুখে হাঁসি দেখে প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে লোন নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার কষ্ট দূর হয়ে গিয়েছিল বাবার। মেয়েটি এমন জেদ জীবনে ওই একবারই করেছিল। সে জানত, তার আবদার রাখতে বাবার খুব কষ্ট হবে। তবে তার কিছু করার ছিলোনা। রাধিকার মুখে শুনছিল, সমুদ্রের কিনারায় হোটেলের ঘর থেকে তারা কেমন ঢেউয়ের শব্দ শুনতে পেত, দিনের বেলায় বিছানায় শুয়ে শুয়ে নীল সমুদ্রের ঢেউ গুণত। মেয়েটি শুধু আর একটা জিনিস চায়, যাওয়া ঠিক হওয়ার পর থেকেই সে মনে মনে ভগবানের কাছে প্রার্থনা জানিয়ে চলেছে- শুধু একটা বার, একবার শুধু সমুদ্রে বৃষ্টি এনে দিও ঠাকুর।
পুরীতে বৃষ্টি এল তৃতীয় দিন দুপুরের পর। প্রথমদিন পৌঁছেই মায়ের তাড়নায় জগন্নাথদেব দর্শন হয়ে গেছে, আর গতকাল সাইট-সিয়িংয়ে ধবলগিরি, উদয়গিরি, খণ্ডগিরি, নন্দনকানন আর কোনারক মন্দির ঘুরে এসেছে। আজ সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। সকাল থেকে সূর্যদেব একবারও তাঁর মুখ দেখাননি। সমুদ্রও আজ অন্যরকম, সৈকতে ভিড় কম। দুয়েকজন অতিসাহসী ছাড়া ফুঁসে ওঠা সমুদ্রের সাথে কুস্তি লড়ে আজ কেউ স্নান করছে না। মেয়েটি সকালেই বাবা-মাকে বলে দিয়েছে, আজ সে কোথাও যাবেনা। আজ তার সমুদ্রের সাথে একান্তে কাটানোর দিন। আজ সমুদ্রকে সে উল্টেপাল্টে দেখবে। কখনও দেখবে মেরিন ড্রাইভ রোড পেরিয়ে বালির সমুদ্রে দাঁড়িয়ে, আবার কখনও হোটেলের ছাদ থেকে দিগন্তকে সাক্ষী রেখে, কখনোবা হোটেলের ব্যালকনির নিজস্ব উষ্ণতার সান্নিধ্যে বসে। দুপুরে খাওয়ার পর বাবা-মা বিশ্রামে গেলে মেয়েটি উঠে আসে ব্যালকনিতে। পাগলা হাওয়ার দাপট শুরু হয়েছে, ঘোলা মেঘের দল দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে পূব থেকে পশ্চিমে, ঈশান কোনে বিদ্যুতের চমক আর বজ্রের গর্জন শুরু হয়েছে, তারপর আশপাশ চমকে দিকে বড় বড় ফোঁটায় চড় বড় শব্দে বৃষ্টি নেমে এল। মুহূর্তের মধ্যে আকাশভাঙা বৃষ্টির তোড়ে আশপাশ সাদা হয়ে গেল। মেয়েটির হৃদয়ের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে একদিকে আলী আকবর খানের সেতার, অন্যদিকে বিসমিল্লাজীর সানাই বেজে উঠল। নূপুরও ছন্দে রিনি ঝিনি নয়, এ যেন ডাকাতের মতো বৃষ্টিবর্শা হা রে রে রে ডাক ছেড়ে আশপাশ লুন্ঠন চালাতে চালাতে ছুটে এল। তুমুল বৃষ্টির শিকল ছিঁড়ে আকাশ-বাতাস মথিত হল,
“আজি হৃদয় আমার যায় যে ভেসে
যার পায় নি দেখা তার উদ্দেশে।।
বাঁধন ভোলে, হাওয়ায় দোলে,
যায় সে বাদল-মেঘের কোলে রে
কোন সে অসম্ভবের দেশে।।
সেথায় বিজন সাগরকূলে
শ্রাবণ ঘনায় শৈলমূলে।
রাজার পুরে তমালগাছে নূপুর শুনে ময়ূর নাচে রে
সুদূর তেপান্তরের শেষে।”
আগুনে ঘৃতাহুতি হল। ব্যালকনি ছেড়ে মেয়েটা পায়ে পায়ে ঘুমন্ত বাবা-মাকে পেরিয়ে নেমে এল নিচে। বৃষ্টির প্রাবল্যে সবাই নিজ ঘরের একান্ত আশ্রয়ে সেঁধিয়েছে। এমনকি লবিতেও কেউ নেই। রিসেপশনে সকালের দেখা মেয়েটা মুখ নিচু করে কম্পিউটারে কাজ করে চলেছে। সামনে মেরিন ড্রাইভ রোড, রাস্তা পেরিয়েই সমুদ্র। এখন বালিয়াড়ি জলের তলায়, সমুদ্রের দানবীয় ফোঁসানিতে সমুদ্র অনেক এগিয়ে এসেছে। সকলের অগোচরে রাস্তা পেরিয়ে ভিজে বালিতে উঠে আসে মেয়েটি। পা বালিতে আটকে যাচ্ছে, কিন্তু সেই বৃষ্টিমেয়ের গতি রুধবে কে? জল এসে পা স্পর্শ করছে, আস্তে আস্তে সালোয়ার ডুবে যাচ্ছে জলের তলায়। মেয়েটি যেন একটা ঘোরের মধ্যে পা টেনে টেনে এগিয়ে যাচ্ছে। কোমর জলে এসে দুই হাত আর শরীরী বিভঙ্গে একই সাথে মেয়েটি বৃষ্টিজল আর সমুদ্রজল শুষে নিতে লাগল। এখন যে কেউ তাকে দেখলে মনে করবে সে একটা সামুদ্রিক জীব। ভীমগর্জনে ঘোলাতে থাকা ঢেউয়ের মধ্যে অতি স্বাভাবিকতায় বিভিন্ন ছন্দে-বিভঙ্গে ভেঙে পড়তে লাগলো কুমারী শরীর, বজ্র বিদ্যুতের সাথে কাটাকুটি খেলতে থাকা কালো আকাশে ধ্বনিত হল……..
“নৃত্যের তালে তালে, নটরাজ, ঘুচাও ঘুচাও ঘুচাও সকল বন্ধ হে…
সুপ্তি ভাঙাও, চিত্তে জাগাও মুক্ত সুরের ছন্দ হে।
তোমার চরণপবনপরশে সরস্বতীর মানসসরসে
যুগে যুগে কালে কালে সুরে সুরে তালে তালে
ঢেউ তুলে দাও, মাতিয়ে জাগাও অমলকমলগন্ধে হে।”
একসময় বৃষ্টি কমে আসে, হাওয়ার দাপট শান্ত হয়। উন্মত্ত ঢেউগুলিও ধীরে ধীরে ফিরে যায় মাঝ সমুদ্রে। মেরিন ড্রাইভ রোডের উপর বালির বিছানায় পরে থাকে চটিজুতো, গাছের ভাঙা ডাল, মলিন ভেজা কাপড়ের টুকরো, শামুক-ঝিনুকের খোল, আরও কত ফেলে দেওয়া, হারিয়ে যাওয়া বর্জ্য-অবর্জ্য ঘর-গেরস্থালি। আর কিছুটা দূরে বালির বিছানায় মৎস্যকন্যা হয়ে শুয়ে থাকে মেয়েটি। তার নীল চোখে খেলে বেড়াচ্ছে আকাশী সমুদ্রের সামিয়ানা। কারোর চোখে পড়লনা, এমনকি ঘুমিয়ে থাকা তার মা-বাবার চোখেও নয়।
পর্ব-৪
এই মফস্বল শহরে নয় নয় করে চল্লিশটা বছর কেটে গেল। চোখের সামনে কত বদলই না ঘটে গেল। চাকরির দশবছর পর মানুষটা কলকাতা থেকে তিরিশ কিলোমিটার দূরে এই অঞ্চলে জমি কিনে বাড়ি বানিয়েছিলেন, তখন ছেলের বয়স পাঁচ। তারপর ছেলে বড় হল, লেখাপড়া শিখল, মানুষটা কাজ থেকে অবসর নিল। ছেলের চাকরির একবছরের মাথায় টুক করে ঘুমের মধ্যে চলে গেলেন। পাশে শুয়ে তিনি সারারাত্রি টেরও পেলেননা। যাওয়ার সময় হাত বাড়িয়ে মানুষটা তাকে ডাকেনি পর্যন্ত। তারপর অনেক খুঁজে পেতে ছেলের বিয়ে দিলেন। চাকরি পাবার পর ছেলে যত্ন নিয়ে দোতলাটা বানিয়েছিল, এখন ছেলে-বৌ নিয়ে ওপরেই থাকে।
এখন এই শহর বাড়ি-ঘর, রাস্তা, দোকান-রেস্তোরাঁ-শপিং মল নিয়ে কলকাতা শহরকে টেক্কা দেবে। ইতস্ততঃ দুটো-একটা দোতলা-তিনতলা বাড়ি ব্যতীত সব জায়গা জমিই প্রমোটারের করাল গ্রাসে ধরা পড়েছে। সেইসব বাক্স বাড়িতে একসাথে অনেক মানুষের বাস। ছাদে উঠলে আকাশজুড়ে সেই সব বাড়ি দেখে শহরটাকে কোনোভাবেই আর পুরোনো শহরটার সাথে মেলাতে পারেননা। যখন ওঁরা প্রথমে এলেন তখন এই অঞ্চলে মাটির রাস্তা, পুকুর-ডোবায় হাঁস চরে বেড়াত, রিকশা- ভ্যানগাড়ি চলতো, বাস খুব কম। আর অটোরিকশার জন্ম তো এই সেদিন। তা মানুষটা যাবার পর ছেলের বিয়ে, নাতির জন্ম, অন্নপ্রাশন, ঠাকুরঘর, রবীন্দ্রনাথ নিয়ে একরকম আছেন। ছেলের বউ আধুনিক মেয়ে, খুব বেশি বনে না, তবে সংঘাতও লাগেনা কারণ উনি কখনোই কাউকে জোর করে কিছু চাপিয়ে দেননা। দোতলা জুড়ে বৌমার সংসার। খাওয়া ছাড়া ওনার জীবন কাটে একতলায় নিজের ঘরে আর তিনতলার ছাদে। হ্যাঁ ছাদটা তাঁর খুব প্রিয়।
সকাল থেকে আকাশের মুখ ভার। কি একটা ছুটির কারণে আজ ছেলে অফিস যায়নি। বৃষ্টি আসার সম্ভাবনায় আজ দুপুরে মেন্যু ছিল, খিচুড়ি আর ইলিশমাছ ভাজা। দুপুরে খেতে বসেও বৃষ্টির দেখা কেউ পায়নি, তবে খাওয়াটা হয়েছে জব্বর৷ বাইরে ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে, দোতলার সবাই দিবানিদ্রার সুখ নিচ্ছে। আকাশ ডাকতে শুরু করা মাত্র পায়ে পায়ে উনি ছাদে উঠে এলেন। ঈশান কোনে বিদ্যুতের চমক, মানে অঝোরে বৃষ্টি আসবে। এটা ওনার ছোটবেলার বিশ্বাস। এবার বিশ্বাস সত্যি করে দূর আকাশ সাদা করে বৃষ্টি ধারাগুলো দস্যুসর্দারদের মতো হা রে রে রে করে ঝাঁপিয়ে পড়লো গোটা ছাদে। দুটো হাত ওপরে এক অপরূপ মুদ্রায় ভাসিয়ে বৃষ্টির ধারাস্নানে মেতে উঠলেন প্রৌঢ়া। পায়ে ঘুঙুরের অভাবটা খুব টের পেলেন, তবে নৃত্যের জাদু তো তাঁকে ছেড়ে যায়নি। আকাশ থেকে কোনো মেঘবালক তাঁকে ডাক পাঠিয়েছে। তা তা থই থই নৃত্যের তালে হাত, আঙুল, পা, কোমরের ভঙ্গে-বিভঙ্গে তিনি সেই মেঘবালককে ছন্দে ছন্দে উত্তর পাঠাচ্ছেন। বৃষ্টি যত বাড়ছে, প্রৌড়ার শরীর থেকে ধীরে ধীরে খসে পড়ছে জড়ত্ব, ক্লান্তি, রোগ-শোক, মেদ, পৃথুলতা। বৃষ্টির সফেদ পর্দা ভেদ করে নেচে চলেছে যেন তন্বী, অষ্টাদশী। সামনে প্রান্তর জুড়ে কালো দীঘি বা গ্রামের সেই হলুদ নদী। যে দীঘির কালো জলে আর নদীর পাড় ভাঙা বিস্তারে কিশোরী মেয়েটা ভাসতে ভাসতে ইঁটকাঠ, ধোঁয়া-ধুলো ভরা শহরের চিত্রাঙ্গদা হয়ে একতলার অন্ধ প্রকোষ্ঠে লুকিয়ে থাকে। হঠাৎ সবকিছুকে চমকে দিয়ে একটা রিনরিনে শিশুর চিৎকার ছাদের সিঁড়ি ভেঙে উঠে এল, “মা বৃষ্টি! দেখো কত বৃষ্টি!” সিঁড়িতে আরও অনেক পায়ের শব্দ। প্রৌঢ়া সব মুদ্রা ভেঙেচুরে ছাদের মেঝেয় হাঁটু মুড়ে বসে পড়লেন। বাম হাত পিছনে, ডান হাত ছাদ স্পর্শ করেছে, মুখ নিচু। চোখ জ্বালাজ্বালা করে উঠলেও বৃষ্টির ধারা বুঝতে দিলনা সে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এল কিনা। বহুদিন পর নিজের নামটা মনে পড়ল। এ নাম তার প্রানের চেয়েও প্রিয়, এই নামে শুধু বাবা তাকে ডাকতেন- বৃষ্টি।