বৃষ্টি সিম্ফনি

বৃষ্টি সিম্ফনি

আশিক মাহমুদ রিয়াদ

মুষলধারে বৃষ্টি নামল। ঝমঝম শব্দ করে বৃষ্টি পড়ছে৷ বৃষ্টি বেগ যেন বাড়ছেই। কখনো দমে যায় আবার কখনো নামে আকাশ ভেঙে৷সাথে পাগল করা আউলা বাতাস। চারদিকে শুনশান নিরাবতার মধ্যে ঝমঝম করে বৃষ্টি নামলে ভয় লাগে। কী যেন আসছে ছুটে! খুব করে। যেন আমাদের গিলে খাবে! আকাশেরই বা দোষ কিসে! এখন শ্রাবণ মাস।

গভীর রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে৷ জেগে আছে কিছু নিশাচর। তাদের রাত জাগতে ভালো লাগে৷ গভীর রাতে একধরনের নিশঃব্দতা খেলা করে। অনূভূতিতে কড়া নাড়ে অদ্ভুত এক শিহরণ।

“অ্যাই তুমি এখনো জেগে আছো?”, হাই তুলতে তুলতে বেলকুনি তে আসলো নীরা৷ আমি খানিকিটা চমকে উঠলাম ওর কথায়৷ কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম। আচমকা নীরার গলা শুনে ফিরলাম অনূভুতি থেকে৷ নীরা আমার সামনে দাঁড়ানো। বাচ্চা মেয়ের মতো লাগছে ওর মুখটা৷ কোমরে হাত দিয়ে আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ আমি শ্লমা জড়ানো গলায় বললাম,” তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে নীরা।ঘুম থেকে উঠে পড়লে কেন? দূঃস্বপ্ন দেখেছো?। নাকি সুস্বপ্নে ঘুম ভেঙেছে। হাহাহাহা! “

“দূঃস্বপ্ন তো এখন দেখছি। এত রাতে আমাকে ফাঁকি দিয়ে সিগারেট খাওয়ার কিছু নেই। আমি জানি তুমি আমাকে সহ্য করতে পারো না৷ আমি তোমাকে বকি। কালকে থেকে আমার জন্যেও সিগারেট নিয়ে আসবে। দুজন একসাথে সিগারেট খাবো। না আনলে বাসায় ঢুকতে দিব না। “,বলল নীরা। আমার দিকে তাকিয়ে থেকো না। সিগারেট টানো। টেনে টেনে নিজের ফুসফুসটাকে শেষ করে দাও। আমি অকালে বিধবা হয়ে যাই “

নীরার চোখ ভিজে গেলো। আমার নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হলো। নীরার মুখ আর শ্রাবণ মাসের আকাশটা যেন একরকম হয়ে আছে৷ কে জানে এখনি কেঁদে ফেলবে কি না৷ আমি আধখাওয়া সিগারেটটা অ্যাশ ট্রেতে রেখে নীরা কে বললাম,
-আমার মন ভালো নেই। সারারাত ঘুমাতে পারিনি৷ আজ কেন জানি সিগারেট খেতে ইচ্ছে হলো। তাই নিচে গিয়ে সিগারেট নিয়ে আসলাম। সরি!
-এত রাতে আমাকে একা বাসায় ফেলে সিগারেট আনতে গেলে? তখন একা একা জেগে গেলে আমার কি হতো? এত বড় বাসায় দিনের বেলায় একা একা থাকতেই কেমন ভয় ভয় লাগে৷ তুমি এমনটা করলে?,বলল নীরা।

-সরি! আমি বুঝতে পারিনি।সরি! সরি! সরি!

-দারোয়ান বেরুতে দিলো এতরাতে।বাইরে তো প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। এরমধ্যে বেরুলে কিভাবে?
-দারোয়ানের কাছ থেকেই সিগারেট এনেছি৷
-তুমি তো ব্রান্ড ছাড়া খাও না। আজ কীভাবে খেলে?
-দারোয়ান মাসের শুরুতে বেন্সন খায়৷ মাসের শেষে বিড়ি খায়। কি অদ্ভুত গোঁজামিল। আমি দারোয়ানকে বলেছি সিগারেট নিয়ে আসতে। সে ছাতা নিয়ে বেরিয়ে গিয়ে সিগারেট নিয়ে এসেছে৷ বকশিশও দিয়েছি কিছু।

আমি বকবক করে গেলাম বেশ কিছুক্ষণ। নীরা এসবের কিছুই শুনতে পেলো না বোধয় সে চুপ করা বসে রইলো আমার পাশে। তাকে বৃষ্টির মোহে ধরেছে। আমি কিছু না বলে বাইরে আকাশের দিকে তাকালাম। বৃষ্টি এখনো পড়ছে। বৃষ্টির ফোটা এসে আমার গায়ে পড়ছে৷ নীরা আমার হাত ধরলো।

আমি এবার চুপ করে বসে রইলাম। মনটা হঠাৎ করেই বিষিয়ে উঠেছিলো। ওঠার কথা।

“মন খারাপ কী জন্য? আমার বরকে মন খারাপে একদমই মানায় না। কী হয়েছে বলবে আমাকে?”
-আমি নীরাকে সত্যটা লুকিয়ে বললাম,”মন খারাপ না। অনেক দিন পরে রাতের মুষল ধারে বৃষ্টি দেখতে ভালোই লাগছে৷ ব্যাচেলর লাইফে এরকম বৃষ্টি দেখতাম আর সিগারেট টানতাম। আমার কাছে সিগারেট না থাকলে বড় ভাইদের প্যাকেট থেকে চুরি করে নিতাম। “,বললাম আমি।

“তুমি তো চোর একটা।”,বলল নীরা।
” নিজের স্বামীকে চোর বললে। আচ্ছা যাও রাগ করলাম। “
“আমার মনটা চুরি করে নিয়েছো যে। তাই আমি চোর বলতেই পারি।”
“আচ্ছা তাই বুঝি। আচ্ছা আসো দেখি আমার বুকের মধ্যে৷ চুরির জিনিস দূরে দূরে রাখতে নেই। “

নীরাকে আলিঙ্গন করলাম৷ বৃষ্টি নামলো আরো জোরে। যেন ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সবকিছু। নিক না তাতে আমার কি? আমার পৃথিবীতো আমার পাজরে।

*
সকাল বেলা ঘুম ভাঙলো। আজ শুক্রবার।অফিস নেই৷ নীরাকে দেখছিনা। রান্নাঘরে নাশতা বানাচ্ছে হয়তো৷ আমি উঠে বাথরুমের দিকে হাটলাম। নীরা সামনে এলো। নীরাকে বললাম-
“গুড মর্নিং সুইটহার্ট”
নীরা বললো,”গুড মর্নিং গুডহাব্বি”

আমার চোখ আয়নার দিকে৷ হতবম্ব হলাম। নাক থেকে রক্ত পড়ছে৷ ঠোট বেয়ে দাড়ি বেয়ে রক্তের ফোটা পড়ছে বেসিংয়ে। আমার বুক ফেটে কাশি এলো। কাশি দিতে গিয়ে মুখথেকে রক্তবমি হলো।মাথা ঝিম ধরে গেলো। আবার আয়নায় তাকালাম। চোখের নীচে কালোদাগ পড়েছে৷

দরজার ওপাশ থেকে নীরার ডাক শোনা যাচ্ছে,”অ্যাই তোমার ফ্রেশ হতে এতক্ষণ লাগে? টেবিলে একা একা বসে আছি৷ তাড়াতাড়ি বের হও৷ নীরার গলার শব্দ যেন হারিয়ে গেলো।চারদিকে সবকিছু ঘুরছে৷ সময় যেন থমকে গেছে।

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে টেবিলে বসে আছি৷ চোখে মুখে একরাশ আতংক আর ভয়৷ একটু আগে আমার সাথে যা ঘটে গিয়েছে সেটা আমার মাথার ভিতরে ঘুরপাক খাচ্ছে৷ নীরাকে এ ঘটনা কিছুতেই জানতে দেওয়া যাবে না৷ নীরা আমার সামনে পরোটা ডিম আর ভাজি নিয়ে বসে আছে৷ আমার দৃষ্টি গ্লাসটার দিকে৷ নীরা কি যেন বলছে সেদিকে আমার নজর নেই৷

– “উফফ! অ্যাই তোমার কি হয়েছে বলতো? এতক্ষণ এতগুলো কথা বললাম তোমার কোন রেসপন্সই পাচ্ছি না৷ “, বলল নীরা।

-” হ্যা.. কী যেন বলছিলে?”
-“থাক শুনতে হবে না তোমার। তুমি থাকো অন্যমনষ্ক হয়ে৷ বিয়ের পরে বউয়ের দিকে ভালোভাবে নজরও দাও না৷ অথচ বিয়ের আগে কত্ত লুতুপুতু কথা শুনিয়েছো৷আর এখন দিন দিন তোমার কি যেন হয়েছে৷ কোন মেয়ের কথা ভাবো কে জানে”

নীরা কথা বলে চললো একনাগাড়ে। আমি আমাকে কন্ট্রোল করতে পারছিনা৷ আমার দৃষ্টি এখন টেবিল ক্লথের দিকে৷ কী একটা অজানা ভয়ে ডুবে গিয়েছি৷ যে ভয় আমাকে কুড়ে কুড়ে খাবে আর এই ভয়ের মধ্যেই আমি ডুবে যাবো দেখে আরো ভয় লাগছে৷

টং টং শব্দে আমার বিভ্রম ভাঙল৷ নীরা চামচ দিয়ে গ্লাসে আঘাত করছে। “তোমার কি হয়েছে বলবে একটু আমাকে? সকালবেলা থেকেই অন্যমনস্ক হয়ে থাকছো৷ এই যে আমি তোমার সামন্য এত সুন্দরী একটা মেয়ে বসে আছি। সেদিকে তোমার লক্ষ্য নেই৷ কী জানি! কোন মেয়ের কথা ভাবছো৷ “

নীরা রেগে গিয়েছে৷ আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না৷ আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না৷ সবকিছু আবারো ঘুরছে৷ খুব খারাপ লাগছে৷ আমার চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে এলো৷ চেয়ার থেকে ধপ করে পড়ে গেলাম মেঝেতে।
*

সকাল বেলা ঘুম ভাঙলো। আজ শুক্রবার।অফিস নেই৷ নীরাকে দেখছিনা। রান্নাঘরে নাশতা বানাচ্ছে হয়তো৷ আমি উঠে বাথরুমের দিকে হাটলাম। নীরা সামনে এলো। নীরাকে বললাম-

“গুড মর্নিং সুইটহার্ট”
নীরা বললো,”গুড মর্নিং গুডহাব্বি”

আমার চোখ আয়নার দিকে৷ হতবম্ব হলাম। নাক থেকে রক্ত পড়ছে৷ ঠোট বেয়ে দাড়ি বেয়ে রক্তের ফোটা পড়ছে বেসিংয়ে। আমার বুক ফেটে কাশি এলো। কাশি দিতে গিয়ে মুখথেকে রক্তবমি হলো।মাথা ঝিম ধরে গেলো। আবার আয়নায় তাকালাম। চোখের নীচে কালোদাঁগ পড়েছে৷ দরজার ওপাশ থেকে নীরার ডাক শোনা যাচ্ছে,”অ্যাই তোমার ফ্রেশ হতে এতক্ষণ লাগে? টেবিলে একা একা বসে আছি৷ তাড়াতাড়ি বের হও৷ নীরার গলার শব্দ যেন হারিয়ে গেলো।চারদিকে সবকিছু ঘুরছে৷ সময় যেন থমকে গেছে।

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে টেবিলে বসে আছি৷ চোখে মুখে একরাশ আতংক আর ভয়৷ একটু আগে আমার সাথে যা ঘটে গিয়েছে সেটা আমার মাথার ভিতরে ঘুরপাক খাচ্ছে৷ নীরাকে এ ঘটনা কিছুতেই জানতে দেওয়া যাবে না৷ নীরা আমার সামনে পরোটা ডিম আর ভাজি নিয়ে বসে আছে৷ আমার দৃষ্টি গ্লাসটার দিকে৷ নীরা কি যেন বলছে সেদিকে আমার নজর নেই৷

– “উফফ! অ্যাই তোমার কি হয়েছে বলতো? এতক্ষণ এতগুলো কথা বললাম তোমার কোন রেসপন্সই পাচ্ছি না৷ “, বলল নীরা।

-” হ্যা.. কী যেন বলছিলে?”
-“থাক শুনতে হবে না তোমার। তুমি থাকো অন্যমনষ্ক হয়ে৷ বিয়ের পরে বউয়ের দিকে ভালোভাবে নজরও দাও না৷ অথচ বিয়ের আগে কত্ত লুতুপুতু কথা শুনিয়েছো৷আর এখন দিন দিন তোমার কি যেন হয়েছে৷ কোন মেয়ের কথা ভাবো কে জানে”

নীরা কথা বলে চললো একনাগাড়ে। আমি আমাকে কন্ট্রোল করতে পারছিনা৷ আমার দৃষ্টি এখন টেবিল ক্লথের দিকে৷ কী একটা অজানা ভয়ে ডুবে গিয়েছি৷ যে ভয় আমাকে কুড়ে কুড়ে খাবে আর এই ভয়ের মধ্যেই আমি ডুবে যাবো দেখে আরো ভয় লাগছে৷

টং টং শব্দে আমার বিভ্রম ভাঙল৷ নীরা চামচ দিয়ে গ্লাসে আঘাত করছে। “তোমার কি হয়েছে বলবে একটু আমাকে? সকালবেলা থেকেই অন্যমনস্ক হয়ে থাকছো৷ এই যে আমি তোমার সামন্য এত সুন্দরী একটা মেয়ে বসে আছি। সেদিকে তোমার লক্ষ্য নেই৷ কী জানি! কোন মেয়ের কথা ভাবছো৷ “

নীরা রেগে গিয়েছে৷ আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না৷ আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছি না৷ সবকিছু আবারো ঘুরছে৷ খুব খারাপ লাগছে৷ আমার চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে এলো৷ চেয়ার থেকে ধপ করে পড়ে গেলাম মেঝেতে।

*
ছোটবেলায় বাবা মা হারিয়েছে ঈশাত। ঈশাতের যখন ৭ বছর বয়স তখন তার বাবা মা সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। সেই থেকে ঈশাত তার চাচা-চাচির কাছে বড় হয়।ঈশাতের চাচা-চাচির ছেলে মেয়ে না থাকার কারণে ঈশাতকে তারা তাদের সন্তানের স্নেহ দিয়ে বড় করেন। ভার্সিটিতে ওঠার পরে মারা যান ঈশাতের চাচি। আর তারপর ভার্সিটি শেষ পর্যায়ে এসে ঈশাতের চাচাও মারা যান৷ ঈশাত একা হয়ে পড়ে। নীরা ঈশাতের ভার্সিটর ফ্রেন্ড শুধু ফ্রেন্ড না ওরা ছিলো বেস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু এই ফ্রেন্ড বেস্টফ্রেন্ডের সম্পর্কটা শুধু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি৷ একসময় এই সম্পর্ক রূপ নেয় ভালোবাসায়৷ নীরা ঈশাতের এই করুণ জীবন দেখে ঈশাতকে বিয়ে করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম দিকে মেয়ের এরকম সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করলেও ছেলেটার জীবনের করুণ দশার কথা শুনে নীরার বাবা ই দুজনের বিয়ে ঠিক করেন৷ কিন্তু, তিনি একটা শর্ত জুড়ে দেন। ঘর জামাই হয়ে থাকতে হবে ঈশাতকে। নীরার বাবার এমন প্রস্তাবকে ঈশাত এক কথায় না করে দেয়৷ একপর্যায়ে নীরার বাবা সবকিছু মেনে দেয়। নীরা এবং ঈশাতের বিয়েও হয় ধুম ধাম করে৷ শুরু হয় ওদের সংসার জীবন৷ ভালোবাসায় বেধে রাখে দুজন দুজনকে ।
.
ঈশাতের জ্ঞান ফিরেছে৷ ডাক্তার সাহেব ঈশাতের চোখের পাতা টেনে টেনে দেখছে৷ নীরাকে ভীষন চিন্তিত দেখাচ্ছে৷ নীরা ঈশাতের হাত ধরে বসে আছে৷ ডাক্তার সাহেব নীরাকে বললেন আপনি একটু এদিকে আসুন। নীরা উঠে চলে গেলো ডাক্তারের সাথে৷ ঈশাত তাকিয়ে রইলো ছাদের কোণে। সেখানে একটি টিকটিকি পোকা খাচ্ছে৷ দেখতে ভালোই লাগছে।
.
দেখুন পেশেন্টের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়৷ আমরা মেডিকেল বোর্ড বসাচ্ছি৷ ক্রিটিক্যাল কন্ডিশন। আপনি বিভ্রান্ত হবেন না৷ আমরা সর্বচ্চো চেষ্টা করছি। নীরার মুখ শুকিয়ে এলো। করুন গলায় ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলো ঈশাতের কি হয়েছে৷ ডাক্তার কিছুটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন,”আপনার হাজবেন্ডের ক্যান্সার ধরা পড়েছে ! ” নীরার চোখে মুখে নেমে এলো ঘন কালো অন্ধকার ! ডাক্তার ভরসার কন্ঠে বললো, উনাকে ক্যামো দেওয়ার পরে উনি সুস্থ হতে পারেন । তবে উনার ক্যান্সারের ভ্যারিয়েশনটা খুবই ক্রিটিক্যাল ।

ডাক্তার চলে গেলো, নীরা বসে রইলো হসপিটালের করিডোরে । ততক্ষণে আকাশে কালো মেঘ ঘনিয়েছে । মেঘে মেঘে পাড় হলো অনেক বেলা ।

*
ছোটবেলায় বাবা মা হারিয়েছে ঈশাত। ঈশাতের যখন ৭ বছর বয়স তখন তার বাবা মা সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। সেই থেকে ঈশাত তার চাচা-চাচির কাছে বড় হয়।ঈশাতের চাচা-চাচির ছেলে মেয়ে না থাকার কারণে ঈশাতকে তারা তাদের সন্তানের স্নেহ দিয়ে বড় করেন। ভার্সিটিতে ওঠার পরে মারা যান ঈশাতের চাচি। আর তারপর ভার্সিটি শেষ পর্যায়ে এসে ঈশাতের চাচাও মারা যান৷ ঈশাত একা হয়ে পড়ে। নীরা ঈশাতের ভার্সিটর ফ্রেন্ড শুধু ফ্রেন্ড না ওরা ছিলো বেস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু এই ফ্রেন্ড বেস্টফ্রেন্ডের সম্পর্কটা শুধু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি৷একসময় এই সম্পর্ক রূপ নেয় ভালোবাসায়৷ নীরা ঈশাতের এই করুণ জীবন দেখে ঈশাতকে বিয়ে করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম দিকে মেয়ের এরকম সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করলেও ছেলেটার জীবনের করুণ দশার কথা শুনে নীরার বাবা ই দুজনের বিয়ে ঠিক করেন৷ কিন্তু, তিনি একটা শর্ত জুড়ে দেন। ঘর জামাই হয়ে থাকতে হবে ঈশাতকে। নীরার বাবার এমন প্রস্তাবকে ঈশাত এক কথায় না করে দেয়৷ একপর্যায়ে নীরার বাবা সবকিছু মেনে দেয়। নীরা এবং ঈশাতের বিয়েও হয় ধুম ধাম করে৷ শুরু হয় ওদের সংসার জীবন৷ ভালোবাসায় বেধে রাখে দুজন দুজনকে ।
.
ঈশাতের জ্ঞান ফিরেছে৷ ডাক্তার সাহেব ঈশাতের চোখের পাতা টেনে টেনে দেখছে৷ নীরাকে ভীষন চিন্তিত দেখাচ্ছে৷ নীরা ঈশাতের হাত ধরে বসে আছে৷ ডাক্তার সাহেব নীরাকে বললেন আপনি একটু এদিকে আসুন। নীরা উঠে চলে গেলো ডাক্তারের সাথে৷ ঈশাত তাকিয়ে রইলো ছাদের কোণে। সেখানে একটি টিকটিকি পোকা খাচ্ছে৷ দেখতে ভালোই লাগছে।
.
দেখুন পেশেন্টের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়৷ আমরা মেডিকেল বোর্ড বসাচ্ছি৷ ক্রিটিক্যাল কন্ডিশন। আপনি আশাহত হবেন না৷ আমরা সর্বচ্চো চেষ্টা করছি।সৃষ্টিকর্তার প্রতি সমার্পন হোন। নীরার মুখ শুকিয়ে এলো। করুন গলায় ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলো ঈশাতের কি হয়েছে৷ ডাক্তার কিছুটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন,”আপনার হাজবেন্ডের ক্যান্সার ধরা পড়েছে ! ” নীরার চোখে মুখে নেমে এলো ঘন কালো অন্ধকার ! ডাক্তার ভরসার কন্ঠে বললো, উনাকে ক্যামো দেওয়ার পরে উনি সুস্থ হতে পারেন। তবে উনার ক্যান্সারের ভ্যারিয়েশনটা খুবই ক্রিটিক্যাল ।

ডাক্তার চলে গেলো, নীরা বসে রইলো হসপিটালের করিডোরে । ততক্ষণে আকাশে কালো মেঘ ঘনিয়েছে। মেঘে মেঘে পাড় হলো অনেক বেলা।

*
মধাহ্ন গড়িয়েছে, শেষ বিকেলে বৃষ্টি নেমেছে। ওদিকে সূর্য ডুবে গোধূলীর আলোয় টকটকে লাল চারপাশ। ঈশাতের ঘুম ভেঙেছে ক্ষাণিক আগে। তার ক্যান্সারে ট্রিটমেন্ট চলছে! তাকে আজকাল আলাদা রুমে থাকতে হয়। নীরা বেশিরভাগ সময় থাকে ঈশাতের ঘরে । ঈশাত বিছানা থেকে উঠে, ধীর পায়ে নীরার ঘরে গেলো। একদিনে চেনা এ মুখ ভীষণ অচেনা হয়েছে। মেয়েটা রোগা হয়েছে, চোখের নিচে কালশিটে দাঁগ। নীরা তখন শেষ বেলায় অঘোরে ঘুমোচ্ছিলো। ঈশাত তাকিয়ে রইলো নীরের মুখের দিকে। তাকে বড্ড ছুঁতে ইচ্ছে করছে তার। ইচ্ছে করছে আদর করতে৷ তবে সেটি সম্ভাব না, ঈশাতের সে শক্তি দিন দিন লোপ পাচ্ছে। বিরক্তিকর অনুভূতির পাহাড় বাড়ছে। ঈশাত বিছানায় বসে ডান হাত বাড়িয়ে দিলো নীরার গালের দিকে। আলতো করে স্পর্শ করলো নীরার মসৃণ তক। নীরা চমকে উঠলো। ঘুমের থেকে জাগ্রত হয়ে উঠে বসলো। ঘুম কাতুরে গলায় ঈশাতকে বললো, তুমি কখন উঠেছো? তুমি ঘুমাচ্ছিলে দেখে আমি এ রুমে এসে ঘুমালাম।

ঈশাত মৃদু হাসছে, বেশ কিছুদিন পরে সে হাসছে। নীরাকে সে বললো, য়্যাম সরি নীরা। তোমাকে জাগালাম। আমি স্যো স্যরি।
নীরা কিছুটা বিব্রত গলায় বললো, আহা! এমন করে বলছো কেনো? আমি এমনিতেই জাগতাম এখন। তোমার কি ক্ষুধা লেগেছে? খাবে কিছু?
ঈশাত বললো, হ্যাঁ ক্ষুধা লেগেছে। কিছু খেতে ইচ্ছে করছে।
নীরা বললো, তাহলে তুমি বসো। আমি তোমার জন্য কিছু বানিয়ে আনি।
ঈশাত বললো, না না। তুমি এখানে বসো। আমি তোমার জন্য কিছু বানিয়ে আনছি। অনেকদিন কিচেনে যাই না।
ঈশাতের বাড়িবাড়িতে নীরা কিছুটা বিব্রত হলো। একই সাথে তার ভীষণ মণ খারাপ হলো। অসময়ে ঘুম ভেঙেছে। মেজাজ খিট খিটে হয়ে আছে।

ঈশাতের এই ক্ষাণিক বাড়াবাড়ি ভালো হলো না। পাস্তা রান্না করার এক পর্যায়ে তার মনে হলো সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। সে হুট করেই নিজের শরীরের ভার হারিয়ে মেঝেতে পড়ে যায়। নীরা দৌড়ে আসে। দেয়ালের সাথে ভীষণ জোরেসোরে আঘাত খেয়েছে। মাথা থেকে ব্লেডিং শুরু হয়েছে। নীরা কোন মতে নিজের ওড়না দিয়ে ঈশাতের মাথা পেচিয়ে দিলো। দৌড়ে গিয়ে ফোন করে ডাক্তারের ব্যবস্থা করলো। সে দিন লাল আভার বৃষ্টি ঝরা দিনে ওদের দুজনের আর পাস্তা খাওয়া হলো না। ঈশাতকে নিয়ে ছুটতে হলো হাসপাতালের দিকে।

*
ঈশাতের বাড়াবাড়ি আজকাল দুর্দান্ত বেড়েছে। নীরা ঈশাতকে নিয়ে ভীষণ বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে আজকাল। ঈশাতের মাথায় যা আসছে সেগুলো বলছে। সেদিন দুপুরের কথা। নীরা ভীষণ সুন্দর করে সেজেছে। আজ একটি বিশেষ দিন। আজ ওদের বিবাহবার্ষিকী। হাতে হাত রেখে দুজনে পার করেছে তিনটি বছর। সুখে শান্তিতে নিজেরা নিজেদের ভাগিদার হয়েছে।

প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে ঈশাতের সাথে ভীষণ ঝগড়া হয়েছিলো নীরার। বিবাহ বার্ষিকীর আগের দিনের ঘটনা, ঝগড়া করে রাত আটটায় ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো ঈশাত। নীরাও ভীষণ রাগ জমিয়ে বসেছিলো, আর কয়েকঘন্টা পার হলেই ওদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী।
১২ টা বাজলে কেক কাটার কথা৷ অথচ দুজনার রাগারাগিতে কেকটেক আনা হয়নি। নীরার মুখটুখ ভার হয়ে আছে। ভীষণ দুঃখ চেপে আছে। রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। আর আধাঘন্টা পরেই বিবাহবার্ষিকীর প্রহর বইবে৷

“একটা ফালতু মানুষকে বিয়ে করেছি! এমন ছ্যাঁচড়া মানুষকে বিয়ে করা আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। বিবাহবার্ষিকীর আগের রাতে সে বউকে বাসায় একা রেখে কোন রাজরানীর ঘরে গিয়ে উঠেছে কে জানে। “, বিড়বিড় করে বলেছে নীরা। এই অভিমান একটু বাদেই নামলো চোখের জলে। ফুঁপিয়ে ফু্ঁপিয়ে কাঁদলো সে। বারোটা বাজতে আর মাত্র দশ কিনিট বাকি। পাঁচ মিনিট আগেই কলিংবেলের শব্দ শোনা গেলো। নীরা রাগ হয়ে উঠে গিয়ে দরজা খুলগে গেলো না। রাগী গলায় বললো, উঁহ আমার ঠ্যাকা পড়েছে এখন গিয়ে এত রাতে ওনার জন্য দরজা খুলবো। ঠিক দু মিনিট আগে অভিমান বিসর্জন দিয়ে নীরা গিয়ে দরজা খুললো। দরজা খুলতেই একরাশ মুগ্ধতা তাকে ঘিরে ধরলো। এপার্টমেন্টের সবাই মিলে তাকে উইশ করতে এসেছে।ছেলে বুড়ো কচিকাচা। উইশ করতে এসেছে তার ভার্সিটি লাইফের বন্ধু- বান্ধবীরা৷ তবে এত কিছুর ভীড়ে তার চোখ খুঁজছে একটি মানুষকে। তার কথা ভাবতে না ভাবতেই চমকে দিয়ে হাজির হলো সে।সবার সামনে আবার মুগ্ধ করলো নীরাকে। ঠিক বারোটা বাজতেই হাটু গেড়ে নীরার হাতের আঙুলে আঙটি গুজে দিয়ে মৃদু কন্ঠে বললো, হ্যাপি এনিভারসেরি নীরা, য়্যাম সো সরি। নীরা ঈশাতকে বসা থেকে উঠিয়ে জড়িয়ে ধরলো। হাত তালি আর জাগরণে কম্পিত হলো গোটা এপার্টমেন্ট। নীরাকে আরো চমক দেওয়া বাকি। গোটা এপার্টমেন্টে রাত বারোটার সময় ছোটখাট একটা মেলা বসেছে। আইস্ক্রিম আর চকলেটের দোকানে বাচ্চাদের সাথে ভীড়ের নীরার অদ্ভুত সুন্দর চেহারা দেখে ঈশাতের মনে হয়েছিলো, সে নীরাকে পেয়ে এই পৃথিবীর সবচে ভাগ্যবান পুরুষ।
*
যাপিত জীবনের জাগতিক মোহ জীবনের এক পর্যায়ে এসে কেটে যায়। মানুষ স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে। তাকে স্বপ্নের জন্যই বাঁচতে হয়। স্বপ্ন, আশা ভরসার মিশ্র অনুভূতি নিয়েই মানুষ জীবনের শেষ প্রান্তের দিকে ছুটে যায়৷ ঐশ্বরিক কেউ যদি কখনো বলে, আজই আপনার শেষদিন। আপনি আজ মারা যাচ্ছেন? তাহলে আপনি কি করবেন? আপনার হাতে আর মাত্র কয়েক ঘন্টা সময় আছে। সময় ফুরালেই, নিশ্বাস থেমে যাবে। মানুষের জীবন একটি সার্কাস।
স্বপ্নের মধ্যে কখনো দুঃস্বপ্ন হানা দেয়। ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর অদ্ভুত এক বিরক্তি। মানুষের জীবনও স্বপ্নের মতো। দুঃস্বপ্ন আর ভালো স্বপ্নের মিশ্রিত কিছু সময়ের ট্রাঞ্জেকশন।

এ কদিনে বেশ রোগা হয়েছে ঈশাত৷ হওয়ারও কথা। এদিকে নীরার চেহারা সৌন্দর্যের ছাপ ঢেকেছে ঈশাতের রোগের কালো গ্রহণে। আজকাল নীরা বেশ বিষণ্য থাকে। তবে ঈশাত বেশ চুপ চাপ থাকে। তার কথা বলতে ইচ্ছে হয় না। ভাবতে ভালো লাগে, বেশিরভাগ সময়ই সে চোখ বুজে থাকে। রাতে ঘুমায় না। ওষুধের কড়া ডোজ চলছে তার শরীরে। রাতে ভালোভাবে ঘুম হয় না। বিবাহবার্ষিকীর দিনে শেষবার নীরাকে অসুস্থ শরীর নিয়ে জড়িয়ে ধরতে পেরেছিলো। এরপর আর তাকে জড়িয়ে ধরা হয়নি। মাঝেমধ্যে ভীষণ জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হয় নীরাকে। তবে সেসব আজকাল হয়ে ওঠে না৷ এভাবে কেটে গেলো কতদিন। ঈশাতের খোঁজ খবর নিতে অনেকেই আসে। নীরার বাবাও এসেছিলো কয়েকদিন আগে। ঈশাত নীরার বাবার মুখের দিকে তাকাতে পারে না। তার চোখেমুখে একরাশ বিষণ্যতা। যেন ছাই দিয়ে চাপা রেখেছে ক্রোধের আগুন। ঈশাত বুঝতে পারে, নীরাকে বিয়ে করে এত বড় অসুখে পড়াটা নীরার সংসারিক জীবনের জন্যে মোটেও মঙ্গল বয়ে আনেনি। তবে অসুখ তো আর কারো হাতের না। ঈশ্বর প্রদত্ত!

জীবনের একটি পর্যায়ে নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবান মনে হয়। ভাগ্য জীবনের খুবই একটি বড়সড় ব্যপার। অনেকে ভাগ্যে বিশ্বাস করেন না, বাস্তবতায় বিশ্বাস করেন। সেই কথাও কোথাও না কোথাও গিয়ে একটি বিন্দুতে মিলে যায়। মানুষের জীবন বাস্তবতারও। বাস্তবতাকে আপনার মেনে নিতেই হবে৷

হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গোনা ঈশাতের জীবনটাও ভাগ্য-দুর্ভাগ্যের সংমিশ্রণে গড়া। খুব ছোটবেলায় বাবা মাকে হারিয়েও সে পেয়েছিলো তার চাচা-চাচীকে। চাচা-চাচীর সন্তান না থাকায় তারা ঈশাতকে বড় করে তুলেছেন নিজেদের ছেলের মতো করে। ঈশাতও ঠাই পেয়েছে। একটি চৌকাঠ ধরে বাঁচতে পেরেছে। সেসব মসৃণ দিনের কথা ভেবে ঈশাতের চোখ থেকে জল গড়ায়। ভীষণ কান্না পায় আজকাল। তবে ঐ যে ছোটবেলায় একটা শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। ছেলেদের চোখে কান্নার জল নয়।

খুন ছোটবেলায় ঈশাত একবার আম গাছে উঠেছিলো। সেই আমগাছে ডালে বসেছিলো একটি বিষধর সাপ। আম পাড়তে গিয়ে সাপের ছোবল খেয়ে মাটিতে পড়ে হাত ভেঙেছিলো। এদিকে বিষ ছড়িয়ে গিয়েছিলো গোটা শরীর জুড়ে। তবে সেদিন সে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলো।

ঈশাতের মনে পড়ে কলেজ জীবনের কথা। কলেজ জীবনে সে একটি মেয়েকে ভালোবাসতো। যাকে একপাক্ষিক ভালোবাসা বলে। মেয়েটিও জানতো ঈশাতের ব্যাপারে। তবে সাহস করে কখনো সেই মেয়েটকে বলা হয়নি, ভালোবাসি এ কথাটি। তবে কলেজ জীবনের শেষের দিকে গিয়ে মেয়েটির কথা ভীষণ মনে পড়তে থাকে ঈশাতের। সামনে পরিক্ষা এরকম হরহামেশাই মেয়েটির কথা মনে পড়লে পড়ায় মন বসে না। সে সময় রাত বারোটার সময় রাস্তা ধরে হাটতে হাটতে মেয়েটির বাসার সামনে গিয়ে দোতালায় হুমড়ে চুমড়ে কোনভাবে উঠে জানলার ফাক দিয়ে তাকিয়ে মেয়েটিকে দেখেছিলো ঈশাত। এ ঘটনা কখনোই

তব্যে এই ভাগ্যের কড়াল ছোবলে, সে একটি পরিপূর্ণ জীবন পেয়েও আজ মৃত্যু শয্যায়। এ কথা কখনোই নীরাকে বলেনি ঈশাত। নীরাকে সে আর কি কথা বলেনি? ঈশাত মনে করলো! অনেক কথাই গোপন রেখেছে নীরার কাছ থেকে। ভার্সিটির শুরুর দিকে একটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক হলো। মেয়েটির সাথে প্রণয়ের জল এত দূর গড়ালো যে সেই জল পরিনত হলো ভালোবাসার এক অপার সমুদ্রে। মেয়েটির সাথে শারিরিক সম্পর্ক হলো ঈশাতের। কিছুদিন বাদেই মেয়েটি অজানা কারনে আত্মহত্যা করে মারা গেলো। ঈশাতের তখন পাগল প্রায় অবস্থা। বন্ধুদের সহায়তায় কোন মতে নিজেকে ফিরিয়ে এনেছিলো আত্মহত্যার পথ থেকে। মাঝেমধ্যে এসব কথা ভেবে ঈশাতেরও ভীষণ খারাপ লাগতো। খারাপ লাগতো নীরাকে মিথ্যে কথা বলতে। ভার্সিটির মাঝামাঝি সময়ে এসে ঈশাত পেলো নীরাকে। ক্যাম্পাসে এত সুন্দরী একটি মেয়ে। ঈশাত নীরার থেকে দু ব্যাচ সিনিয়র। সেই সুন্দরী মেয়েটার সাথেই ঈশাতের প্রণয় হলো। ঈশাত জীবন পেলো আরো একবার। পেলো কাউকে জড়িয়ে ধরে বাঁচার সুখ।

তবে নীরাকে সে ভীষণ ভালোবাসে। নিজের জীবনের থেকেও বোধয় বেশি ভালোবাসে। আচ্ছা, নীরা কি কখনো ঈশাতের কাছ থেকে কোন কিছু লুকিয়েছে? কোন অভিমান, অভিযোগ। নীরাকে মাঝেমধ্যেই সে দেখতো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদে। রাতে কোন এক ছেলের নাম ধরে ঘুমের মধ্যে কেঁদে ওঠে। তবে ঈশাত এ ব্যপারে নীরাকে কখনোই কিছু বলেনি। ঈশাত চেয়েছে নীরা বলুক, তার লুকানো কথা। নীরাকে কি কখনো ঈশাত কোন কারনে সন্দেহ করেছে? নীরার চেহারা শারিরিক গঠন দেখে যে কোন পুরুষ নীরার দিকে দৃষ্টি দিতে আগ্রহী হবে। তবে ঈশাত কখোনই নীরাকে সন্দেহ করেনি। বরং বার বার নীরাকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছে। মৃত্যুশয্যায় শুয়েও সে নীরার হাত ধরে আর কয়েকটা বছর বাঁচার স্বপ্ন দেখে।

সোমবারের মেঘলা আকাশের দিন৷ ফুটপাত ধরে হাটতে হাটতে বাসায় ফিরছিলো নীরা।বাজারে গিয়ে কিছু কেনাকাটা করেছে। রাস্তার ঐ পাড়ে একজোড়া প্রেমিক-প্রেমীকা হাত ধরে হাটতে হাটতে যাচ্ছে। মেয়েটা খিল খিল করে হাসছে। প্রেমিক -প্রেমিকারা হাটছে, মেয়েটি হাসছে আর হাত দিয়ে মারছে ছেলেটিকে। এই মারার মধ্যে আর হাসার মধ্যে এক ধরণের অদ্ভুত মিষ্টি সুখ আছে। যে সুখ মেয়েরাই জানে। নীরার হাটতে হাটতে মনে পড়ে যায় অতীতের সেসব রঙিন দিনের কথা। ঈশাতকে নিয়ে কত হেটেছে ফুটপাতে। সেসব মধুর দিনগুলো সহজেই চলে গেলো। নীরার বুক ভারী হয়ে গেলো। সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রাস্তা পাড় হওয়ার জন্যে রাস্তার মাঝখানে এসেই তার কোন না কোন কারনে হিসাব গুলিয়ে গেলো। এই হিসাব সময়ের হিসাব। সে রাস্তার এপার থেকে ওপারে পাড় হয়ে যাচ্ছে, অথচ একটিবারও দুপাশে চেয়ে দেখেনি। একটি ব্যস্ত সড়ক। হঠাৎ করেই নীরার মনে হলো একটি গাড়ি ধেয়ে আসছে তার দিকে। নীরা গাড়িটির দিকে তাকালো আর ঠিক তখনই গাড়িটি………..!
*

গাড়িটি তার সামনে দাঁড়ালো। হার্ড ব্রেক করায় তীক্ষ্ণ একটি শব্দে চারপাশটা হাফ ছেড়ে বাঁচলো। গাড়িটি রাস্তার পাশে পার্ক করে। গাড়ির ভেতর থেকে নেমে এলো এক ভদ্রলোক।সে নীরাকে ধমকের কন্ঠে, চোখে দেখতে পান না? কোন দিক চেয়ে রাস্তা পাড় হন? কি হতো যদি এখন আমার গাড়ীর নিচে পড়তেন? নীরা ভীষণ লজ্জিত তার কাজে। সে মাথা নিচু করে বললো, আমি ভীষণ দুঃখিত। ওটা আসলে আমারই ভুল ছিলো।
লোকটি আরো কিছু কথা শোনাতে গিয়ে চুপ করে গেলো। চেহারায় পুরনো কাউকে নতুন করে চেনার ভাব এনে বললো, নীরা রাইট?
নীরা নিচে তাকিয়ে ছিলো, মুখ উঠিয়ে লোকটিকে উত্তর দিলো, হ্যাঁ। কিন্তু আপনি কে?
লোকটির ঠোটের কোণে বাধ ভাঙা হাসি, আরে আমাকে চিনতে পারছো না?
গালে হাত দিয়ে স্টাইলিশ ভঙ্গিতে তাকিয়ে নীরাকে বললো, আচ্ছা এবার দ্যাখো তো আমায় চিনতে পারছো কি না?
নীরা মনে করার মতো ভাব করে বললো, না আপনাকে ঠিক চিনতে পারছি না। কে আপনি?
লোকটি বললো, আরে আমি রাশেদ৷ সেই যে তোমার বেইলি রোডের দেশ উৎখাত করা ছেলেটি। চিনতে পারছো না আমায়?
নীরা লোকটিকে না চেনার ভান করে দাঁড়িয়ে রইলো। সে আসলেই লোকটিকে চিনতে পারেনি।
লোকটির হাস হঠাৎ করেই মিইয়ে গেলো। চট করে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে কলেজ জীবনের পুরনো ছবি বের করে নীরাকে দেখালো। নীরা ছবিটি দেখে কিঞ্চিত হাসি মাখামুখে উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বললো, ও….. তুমি…দেখেছো। তোমার চেহারা আমি সত্যিই চিনতে পারিনি। কেমন আছো রাশেদ?

রাশেদের সাথে প্রায় বেশ কিছু বছর পরেই নীরার দেখা হয়েছে৷রাশেদের প্রস্তাবে নীরা রাশেদের গাড়িতে করেই বাসায় ফিরছে। গাড়ি জ্যামে দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘ জ্যাম! এই জ্যাম ঠেলে এত সহজে বের হওয়া যাবে না। মাথার উপরে উত্তপ্ত রোদ। তবে গাড়ির কন্ডিশন এবং হাইফাই রেঞ্জের মডেল হওয়া সে রোদের উত্তাপ তারা দুজন বুঝতে পারছে না।

-তোমাকে কত বছর পর দেখলাম বলতে পারবে নীরা? , বলল রাশেদ।
-ঠিক কত বছর সেটা বলতে পারবো না। তবে তোমার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিলো ২০১৬ সালে। তারপর তো তুমি হারিয়ে গেলে। তোমাকে আর খুঁজে পেলাম না।, দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাশেদের কথার উত্তর দিলো নীরা।
রাশেদ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। রাশেদকে অনুতপ্ত দেখালো। কিছুক্ষণ পরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাশেদ বললো, আমি দুঃখিত নীরা। সেদিন তোমাকে না বলেই হারিয়ে গিয়েছিলাম।
নীরা খুব মনে মনে বলছে, অভিমান চেপে বলছে। তুমি চলে গেলে দেখেই আমার আজ এই অবস্থা রাশেদ। তুমি আসলেই একটা কাপুরুষ। পরক্ষণেই নীরার মনে হলো রাশেদের সাথে দীর্ঘ কয়েকবছর পরিচয় না থাকার কারনে নীরা রাশেদকে ভুলে গিয়েছে। এই ভুলে থাকার পিছনে আছে করুণ এক প্রেমের কাহিনী। নীরা আর রাশেদ পাশাপাশি বাসায় থাকতো। ছোটবেলা থেকেই দুজন দুজনার সংস্পর্শে বড় হয়েছে। একদিন দুজনারই মনে হলো তারা দুজন দুজনকে ভীষণ ভালোবাসে। তবে সেই ভালোবাসা গড়ায় পারিবারিক ব্যাপারে। রাশেদের পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় রাশেদকে নিয়ে কানাডায় চকে যাবে। রাশেদ তখন সবে মাত্র ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছে।

এদিকে দুজনার প্রেমও বেশ জমে উঠেছিলো। ভীষণ ভালোবাসতো আবেগী সেই নির্ঘুম কাতুরে প্রেমের রাত্রীগুলোয়। নীরার পরিবারও রাশেদের পরিবার এবং নিরার এই কর্মকান্ডে ভীষণ বিব্রত বোধ করে। নীরাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় চট্টগ্রামে তার চাচার বাসায়। নীরা ফিরে এসে রাশেদকে পায়নি। কয়েকবছর পর পর রাশেদের বাবা মা বাড়িতে ফিরে এলেও রাশেদ ফিরে আসেনি।

রাশেদ দুঃখ চাপা অনুতপ্ত গলায় নীরাকে বললো, য়্যাম সরি নীরা। ঐসব দিনে আমি একা কিছু করতে পারতাম না। আমার ফ্যামিলির বাইরে আমি যেতে পারতাম না। আর তখন আমাদের বয়সই বা কত?

আমি অনেক চেষ্টা করেছি কানাডা থেকে বাংলাদেশে আসতে। বিশ্বাস করো ফেসবুকে তোমায় অনেকবার খুঁজেছি। ইভেন তোমায় খুঁজে পেয়ে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টও পাঠিয়েছি। কিন্তু তুনি সারাদাও নি। এরপর অভিমান চেপে আমিও দূরে সরে গিয়েছে।

দুজনার অভিমানের কথা শেষে কিছুক্ষণ নীরাবতা বয়ে গেলো। ব্যস্ত শহরের মধ্যেও দামি গাড়ির এসির বাতাসের সাথে ওদের প্রেম প্রণয়ের বিয়োগ বেদনার নিস্তব্ধতা ছুঁয়ে গেলো দুজনার শিরদাঁড়ায়। রাশেদ নিজেকে শক্ত করে বললো, আমি সর‍্যি নীরা। আচ্ছা যাই হোক বাদ দাও।
আঙ্কেল আন্টি কেমন আছে?
নীরা শান্ত গলায় জবাব দিলো, ভালো আছেন।
রাশেদ প্রশ্ন করলো, তুমি এখন কি করছো?
নীরা বলল, কিছু করছি না।
নীরা! তুমি কিছু মনে না করলে তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
– করো!
– তোমার কি বিয়ে হয়েছে?
– হ্যাঁ। আমার বিয়ে হয়েছে। পাঁচ বছর আগে।
– কংগ্রাচুলেশনস। আমি অবশ্য ফেসবুকে তোমাদের দুজনার ছবি দেখেছি। (বলতে গিয়েও মনের মধ্যে কথা রেখে দিলো রাশেদ।) নীরা রাশেদকে কিছু জিজ্ঞেস করলো না। নিরাবতা কাটাতে রাশেদ জিজ্ঞেস করলো-
– তোমার হাজবেন্ড কোথায়?
– উনি হাসপাতালে। ক্যান্সারের সাথে লড়ছেন দু মাস ধরে। রাশেদ নীরার কথা শুনে আহত হলো বেশ। নীরা কে বললো, য়্যাম সরি নীরা। আসলে….!
– নীরা হঠাৎ করেই কঠিন গলায় বলে উঠলো, এত কথা কেন বলছো? সমস্যা কি তোমার?

ওদের মধ্যে আরো কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতা বয়ে গেলো। এই নিস্তাব্ধতার মধ্যে রাশেদ শুনতে পেলো সমুদ্রের গর্জন, বৃষ্টির ঝম ঝম শব্দ কিংবা পতিত ঝর্ণার শব্দ।
নীরা বললো, এ জ্যাম বোধয় আজ আর ছাড়বে না। আমি হেটেই বাসায় যাচ্ছি। রাসেল খপ করে নীরার হাত ধরে ফেললো। ঠিক সে সময়ই লাল থেকে সবুজ বাতি জ্বলে উঠলো ট্রাফিক লাইটে। গাড়িটা সামনে এগোল। এগিয়ে গেলো রাস্তায় দাঁড়ানো গাড়ি, এম্বুলেন্স, রিকশা, সিএনজি নামের ছোট ছোট গল্পের বাক্সগুলো।


ই কাঠাল গাছের সাথে গলায় দড়ি দিয়ে আত্নহত্যা করলো ছেলেটা। নীরাকে আর রাখা হলো না নানাবাড়িতে। নীরা চলে এলো ঢাকায়। রহিমের ঘটনা রয়ে গেলো অগোচরে। কয়েকজন মানুষ নিয়ে দাফন হলো। কবর দেওয়া হলো আসরের নামাজের আগে। কবরে পানি জমে একাকার অবস্থা। মানুষের মৃত্যু কত সহজ।



মৃত্যু শয্যায় জীবন-মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে ঈশাত। গত দুদিন ধরে কোমায়, লাইফ সাপোর্টে আছে। লাইফ সাপোর্টে যাওয়ার আগে নীরাকে সে একটা আবদারের কথা বলেছিলো। নীরা যে একটা কালো রংয়ের শাড়ী কপালে কালো টিপ ঠোটে লাল লিপস্টিক দিয়ে তার সামনে আসে। ঈশাত বুঝতে পেরেছে সে আর কথা বলার শক্তিতে থাকতে পারবে না। নীরা ঈশাতের কথা রাখলো। কালো শাড়ি পড়ে ঈশাতের কাছে এলো। সেদিন ঘোরতর বৃষ্টি, ডিসেম্বরের কনকনে ঠান্ডা৷

ঈশাত নীরাকে দেখে সেদিন বিকালেই বাকরুদ্ধ হয়ে কোমায় চলে গেলো। আজ দুদিন হলো সে কোমায়। লাইফ সাপোর্টে৷ নীরা এখনো কালোশাড়ি পড়ে আছে। বাইরে বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। নীরার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে রাশেদ। বৃষ্টির ঠান্ডা জল আর ঝোড়ো হাওয়ায় ভিজছে শহরের পথঘাট। গোধূলির আলোর আভায় আলোকিত হয়েছে বর্ণিল অট্টালিকা গুলো। শহর জুড়ে ঝরছে বৃষ্টি, পশ্চিম আকাশে সূর্য ঠলে পড়েছে। আজ খেকশিয়ালের বৃষ্টি হবে না। নীরা ঐ অস্তডোবা সূর্যের দিকে তাকিয়ে ভাবলো কিছু একটা এই সূর্য অস্ত যাবে আরো কিছুক্ষণ। বৃষ্টির তোড়জোড় বাড়তে থাকলো। বৃষ্টির ঝমঝমজ সিম্ফনিতে কলোরিত হলো গোটা শহর।

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
মাতৃভাষা বাংলা ও ইসলাম

মাতৃভাষা বাংলা ও ইসলাম

ইমরান হাসান   এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন (হচ্ছে): আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের বিভিন্ন ভাষা ও বর্ণসমূহের মধ্যকার তারতম্য। এতে জ্ঞানীগণের জন্য ...
বিদ্রোহী বুলবুল

বিদ্রোহী বুলবুল

|বিপুল কুমার ঘোষ   তোমার উদয় ধূমকেতু যে কাব্যাকাশে ভাসে, রক্তলেখায় লেখা সে নাম বাংলার ইতিহাসে ।   অগ্নিবীণার ঝঙ্কার তুলে জাগালে দেশবাসী, শিকলভাঙার গানে ...
 প্রতীক্ষিত- জান্নাতুল ফেরদৌস 

 প্রতীক্ষিত- জান্নাতুল ফেরদৌস 

জান্নাতুল ফেরদৌস  সব কিছু ঠিক হবে এ আমার বিশ্বাস। আর ঠিক হয়ে গেলেই,আমি পাহাড়ে ছুটে যাবো। সুউচ্চ পাহাড়ে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য প্রান ভরে নিজের ভেতরে ...
হৈমন্তিকা

হৈমন্তিকা

অশোক কুমার পাইক হেমন্তেরই পরশ আজি লাগলো বুঝি গায়ে প্রকৃতিটা জাগলো হেসে রঙিন রাঙা পায়ে, শিউলি ফুলের গন্ধে ভরে ধরার ধুলার পরে ঘাসের মাথায় শিশির ...
অচিনপুরের দেশে: চতুর্থ পর্ব

অচিনপুরের দেশে: চতুর্থ পর্ব

পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় ও গৌতম সরকার   (পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায়) চায়ের প্রসঙ্গে চাবাগানের দেশের মানুষের চাপাতার কথা মনে পরে গেল। সব চায়েতেই কি লপচু বা মকাইবাড়ী তকমা ...
অভিনেতা হৃতিক নাকি বাঙালি হৃতিক ?

অভিনেতা হৃতিক নাকি বাঙালি হৃতিক ?

হৃত্বিকের জন্ম জন্ম: ১০ জানুয়ারি, ১৯৭৪ সালে। চলচ্চিত্র পরিচালক রাকেশ রোশনের পুত্র হৃতিক বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবং এক দক্ষ নৃত্যশিল্পী হিসেবেও খ্যাতি অর্জন ...