“কোন এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের বয়ঃপ্রাপ্ত কন্যার বিয়ে দেনা-পাওয়ার জন্য ভেঙে গেলে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা পারিবারিক সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার জন্য তার মাতাল ও দুশ্চরিত্র ভ্রাতুস্পুত্রের সাথে বিয়ে দিতে মনস্থ করেন। তেঁতুলের রস খাইয়ে ছেলেকে প্রকৃতিস্থ করা হলেও জমিদার কন্যা এহেন দুশ্চরিত্র ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হল না। যাহোক শেষ পর্যন্ত বলপূর্বক তাকে বিয়ের মজলিশে বসানো হল। কাজি সাহেব বহুবার তাকে ‘হুঁ’ বলার অনুরোধ করলেও মেয়েটি নিশ্চুপ থাকল। এমন সময় তার একজন সঙ্গী তার হাতে খুব জোরে চিমটি কাটলে সে ব্যথায় ‘উহু’ বলে উঠল। মেয়েটির ‘উহু’ শব্দটিকে ‘হুঁ’ শব্দে পরিণত করে তার বিয়ে সম্পন্ন করেন।” -এটি তৎকালীন নারীদের দুরবস্থার কথা, আর যিনি এভাবেই তার লেখনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছিলেন, তিনি হলেন বাঙ্গালী নারী জাগরনের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।
.
আজ এই বাঙ্গালী মহিয়সী নারীর জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী। ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে বেগম রোকেয়ার জন্ম হয়। নারীশিক্ষা বিস্তার আন্দোলনে তাঁর কঠোর আত্মত্যাগের ফলে বাঙালি মুসলিম সমাজে নারীশিক্ষা প্রসারের প্রচেষ্টার সফলতা তিনি বেঁচে থাকতেই পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষার মাধ্যমে নারী সমাজকে আধুনিক ও প্রগতিশীল করাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য।
.
বেগম রোকেয়া ১৯২৬ খ্রিঃ বঙ্গীয় নারীশিক্ষা সমিতির সম্মেলনে শিক্ষাবিস্তারে তার দীর্ঘ ২৬ বছরের সংগ্রামের কথা উল্লেখ করেন। শিক্ষা যদি জাতীর মেরুদন্ড হয়, তাহলে স্ত্রীশিক্ষা নিশ্চিতভাবে এর একটি অবিচ্ছেদ অঙ্গ। তিনি সমাজ ও রাজনীতির অঙ্গনে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমান সুযোগ সৃষ্টির জন্য আন্দোলন করেন।
.
প্রতিবাদী রোকেয়া নারী স্বাধিকার ও সমঅধিকারের প্রবক্তা ছিলেন। পুরুষশাসিত কূপমন্ডুক সমাজের গন্ডি থেকে অবরুদ্ধ মুসলিম নারীকে মুক্ত করতে যে মহতী প্রয়াস তিনি করেন, তা তার অসাধারণ প্রতিভা ও সমাজ সচেতনাতারই পরিচায়ক।
.
বেগম রোকেয়া কোনদিন হীনম্মন্যতায় ভোগেননি। পশ্চাৎপদ মুসলিম নারী সমাজের অগ্রগতির জন্য শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে তিনি শুধু চিন্তাভাবনাই করেননি, তার স্বপ্নের রূপায়নে বাস্তব পদক্ষেপও গ্রহণ করেছেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন যে, নারী শিক্ষার প্রসারই অধঃপতিত নারী সমাজকে উন্নত করার প্রধান উপায়। তাই নারীশিক্ষা বিস্তারের জন্যে তিনি দুই দশকের বেশী সময় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যেও তিনি সোচ্চার ছিলেন। বৈচিত্রময় প্রতিভার অধিকারিণী বেগম রোকেয়া বাংলার মুসলিম সমাজের এক বিরল ব্যক্তিত্ব।
.
নারী কল্যাণ কামনায় নিবেদিত প্রাণ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৯৩২ খ্রীস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর শুক্রবার অকস্মাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
সহকারী শিক্ষক,ইন্দুরকানী এম ইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়,ইন্দুরকানী পিরোজপুর ।