বেশ্যা বাড়ির মাটি

বেশ্যা বাড়ির মাটি

আশিক মাহমুদ রিয়াদ

শারদপ্রাতে, বাতাসে মিষ্টিঘ্রাণ
আকাশে ওড়ে সাদা মেঘ,
ধু ধু কুয়াশা ঘেরা প্রান্তরে
মর্ত্যলোকে নামলেন দেবী!




চারদিকে ছড়িয়ে গেলো সুঘ্রাণ,
ধুপ-ধুনোর গন্ধ রাঙালো মেঠোপথ,
দেবী তোমার চরণে অঞ্জলি
আলোর রাঙা প্রভাত চঞ্চল..

কপাট খুলতেই কানে এলো,
“কে এলেন? খদ্দের? নাকি জদ্দের?
কঠিন গলায় ভেসে আসলো,
বেশ্যা বাড়িতে দিয়েছো, চরণ
আর কি আসি? এ নরকে?
আসি শুধু একটু নিতে মাটি!
চ্যাটুর্জে পাড়ার নিমাই আমি!
অকাল সময়ে এসেছি
অকালবোধনের নিতে মাটি!




মরণ! খদ্দের নেই সারাদিন!
সদাইয়ের দোকানে কতঋণ!
কার্তিকের বাতাস বাণে,
নরকের মাটিও দেখি হয় দামী।

হাত জোড় করে নিমাই বলে,
কি করবো বলো মা!
অকালবোধণে যে দরকার গৃহস্থের মৃত্তিকা!
এ মাটি যে আজ খাঁটি!




ফিক করে হাসেঁ ভাণু,
বিড়বিড় করে বলে কি সব!
ওখানে দাঁড়িয়ে কেন?
আয় ভেতরে আয়,
কই রে কই গেলি সব?
চ্যাটুর্জে পাড়ার নিমাই এসেছে
ব্লাউজ টাইট করে উঠোনে আয় সব!

প্রাঙ্গণ হয় হাসিতে গড়াগড়ি,
নিমাইয়ের চতুর্দিকে তাদের গড়াগড়ি,
কেউ কেউ বলে, এ নিমাই তো আমাদের খদ্দের নয়
কঁচি জুয়ান ছেলে, কেউ একজন ঘরে নিয়ে যা
খাওয়া মুড়ি বাতাসা, যদি খেতে চায় দুধ
খাওয়া তাও, এ যে আমাদের নারায়ণ আজ!




কিরে? শোয়া-টোয়ার মতলব আছে নাকি?
নিমাই হয়ে হতভম্ভ, কি যে বলেন মা ঠাকুরণি!
আমি এসছি শুধু নিতে মৃত্তিকা, বেশ্যা বাড়ির মাটি ছাড়া
সাজে না তো মহামায়া!
দেবীর আছে নয়টি রুপ,
নিমাই এর কথায় সবাই গুপচুপ!




নারীদের বেশ্যা বানায় তো পুরুষরাই,
অপবিত্র তবে আমাদের জাত!
মহামায়া তো তোমরাই,
তাহলে দাও আমায় তোমাদের গেরস্থের মাটি!
নিয়ে পথে হাটি, মায়ের বাকি আছে যে সাজ।
মাটি টুকু নিয়ে বিদায় নেই তবে আজ?




যাবি তবে শোন, চাটুজ্জে বাবুকে বলিস তবে
যদি নিতে হয় এ বাড়ির মাটি, আসতে হবে তার।
যদি না আসে, এ শহরে আর বেশ্যা বাড়ি নেই যে
সেখানের মাটি নেবে?

নিমাই হয়ে হতভম্ভ, মাথায় দিয়ে হাত!
চ্যাটুজ্জে বাবু কি আর আসতে পারি?
তার হাতে কত কাজ, তা ছাড়া আছেও তো তার সম্মান
কত শহরে ঘোরে, কত বাবুদের সাথে ওঠাবসা।
এখানে এলে যদি তিনি হন কোনঠাসা?




পাশ থেকে ফিক করে হেসে বলে ওঠে এক নারী,
আঁধার রাতে গাড়ি করে আসে, সোমলতার ঘরে-
খায় গড়াগড়ি, আরও হয় কত চুম্মাচাটি।
কিরে জানিস নাকি?

কথা শুনে হতবিহ্বল নিমাই,
জ্বলে ওঠে রেগে, কোন কারণে এসেছে সে আজ
বেশ্যা বাড়ির চৌকাঠে? বাবুকে নিয়ে এতবড় কথা?
বাবু সে তো তার ইশ্বর, পেটে দেয় খাবার।
খবরদার! বাবুকে নিয়ে নয় একটা বাজে কথা
আমার বাবু প্রভুর সমান, তোরা হলি বেশ্যা।




এগিয়ে আসে বেশ্যা বাড়ির রাণী।
কি বললি তুই? বেশ্যা তো আমরাই
তোর বাবু হলেন ধোয়া তুলসি?
চুলের মুঠি ধরে রাণী, ব্যাথায় কাঁকিয়ে নিমাই।
তোর বাবু এসে প্রতিরাতে, এ ঘরে ও ঘরে ঢোকে!
শোয় তো সেই আমাদের সাথে,
দিনের বেলায় আসলেই কি তার?
সম্মান ভাঁগাড়ে জোটে?




ঐ দ্যাখ আঁঠারো বছরের নিরুপমা!
সবে হয়েছে বেশ্যা, তোর বাবু চেয়ছে সুধারঞ্জন
কচি হরিণের মাংশ। ভোগ করে যদি এত তেজ হয়?
দিনের বেলায় না এসে রাতের বেলায় এসে?
শোন তবে তুই, এক টুকরো মাটি পাবিনা তুই
এই বাড়ির থেকে!

নিমাই এবার কেঁদে, হাটুগেড়ে, হাতজোড় করে-
মা-মাগো! তোমরাই তো দেবী।
অসুর হলাম আমরাই,
ভোগ করে তোমাদের বানাই দেই বেশ্যা!
ক্ষমা করো এ অধমকে, বাবু আমার কাছে প্রভুর সমান
যদি এসো এগিয়ে, দাও তবে বেশ্যাবাড়ির মাটি।
তোমরাই যে দেবী ভূষণ, আমরাই যে পাপি।

চোখে আসে জল, জ্বলজ্বল মহারাণীর।
ক্রোধের কন্ঠে বলে সে, তোর আর দোষ কিরে?
তুই তো অধম কর্মী। দিতে পারি মাটি যদি তুই রাখিস আমার কথা
ঐ যে দেখ, নতুন রাণী, বয়স হলো আঠারো।
তোর সাথে যদি তাকে মুক্তি দিতে পারিস!
বেঁচে যাই আমরা!




প্রতিরাতে সে ছটফট করে, যন্ত্রণা ব্যাথার জ্বালায়।
পুরুষের ভোগে সে, রক্তাক্ত হয়! পেটের জ্বালায় মরে।
সন্ধ্যে এলেই গায়ে আসে জ্বর, সারারাতই পোড়ে!
মাটির সাথে আজ নিয়ে যাবি ওকে, বাঁধবি ওকে তোর সাথে-
দেবী করে রাখবি ওকে, রাখবি যত্নে স্নেহে।




তা কি আর হয় মা? বিনীত সুরে বলে কানাই!
আমার যে পাত্রী ঠিক আছে বিয়ের,
পূজো গেলেই লগ্ন এলেই হবে বিয়ে
তাকে কিভাবে দেই ফিরিয়ে?
তার চেয়ে তোমরা আমায় আশির্বাদ করো মা
পরের জন্মে যেন জন্মাই বেশ্যা হয়ে!
তোমাদের আর কি পাপ? আমরাই তো পাপ কামাই।
দে তবে এই বেলায় একটুকু মাটি,
আমি গরিব, বড়লোকের চাকরখাটি

 

 

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
রহস্য গল্প - অতল বুড়ি

রহস্য গল্প – অতল বুড়ি

নাঈমুর রহমান নাহিদ সকালের নাস্তা সেরে রাইসা ও সামিহা বাড়ির পাশের বেড়া দেয়া পুকুরপাড়টায় পা ডুবিয়ে বসে গল্প করছিল। ছুটিতে সামিহার বাড়িতে বেড়াতে এসেছে রাইসা। ...
ছোটগল্প -  ত্রিকালের চাকা

ছোটগল্প – ত্রিকালের চাকা

পার্থসারথি স্যার, আসসালামু আলাইকুম। কন্ঠটা বেশ পরিচিত মনে হলো। পেছন ফিরে তাকাতেই রিক্সাওয়ালা রফিক মিষ্টি হেসে জিজ্ঞ্যেস করলো- কেমন আছেন স্যার?- মুখে মাস্ক পরে থাকায় ...
অচিনপুরের দেশে: পর্ব ২

অচিনপুরের দেশে: পর্ব ২

    (গৌতম সরকার)  রাত্রের দুঃস্বপ্ন কেটে অনিশ্চিতপুরে সকাল এলো নীলকণ্ঠ পাখির ডানায় ভর করে, চারদিকে আলোর রোশনায় দিনবদলের সঙ্কেত। ঝলমলিয়ে ওঠা জীবনগানে অমৃতসুধা যেন ...
ষোলই ডিসেম্বর

ষোলই ডিসেম্বর

ড. মির্জা গোলাম সারোয়ার পিপিএম  লাখো শহীদের আত্নত্যাগে এদেশ স্বাধীন হয়, বীর বাঙালি এদেশের জন্য বুকের রক্ত দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা জীবন দিয়েই স্বাধীন করে দেশ, বিশ্বের ...
সাদাকালো মহাকাল

সাদাকালো মহাকাল

জীবনের গল্প – আদিল মাহফুজ রনি    শুক্রবার, বেলা দুপুর দুইটা। জুম্মার নামাজ শেষ করে মফিজ উদ্দিন বাড়ির উঠোনে এসে দাঁড়ালো। তার বাড়িটা পড়েছে সৈয়দ ...
া (আ-কার)

া (আ-কার)

আ-কার (া) আ-কার হলো স্বরবর্ণের একটি সংক্ষিপ্ত রূপ। অ-ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণের সাথে ব্যাঞ্জনবর্ণের সংযুক্তি হলে পূর্ণরূপের বদলে সংক্ষিপ্ত রূপ ধারণ করে। স্বরবর্ণের এ ধরণকেই কার ...