মহীতোষ গায়েন
ভোরের আজান সেরে আব্বাজান বলেছিল–
দেখে নিস খুকি,এবারের খাল ধারের ঐ চিলতে
জমি টুক্ আমরা সরকারের কাছ থেকে পাট্টা পাব…
আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে,
নিকোনো উঠোন হবে,বেহেস্তে যাবার আগে
সেখানেই পুঁতে রাখবো স্বাধীনতার পতাকা,
তুই কিন্তু মানা করতে পারবি না।
ভাগচাষি খুরশিদ মিঞার হৃদয়ে একবুক আশা,
বড় ছেলে আবুবক্কর এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা
এম.এ’র ছাত্র,ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি তার রক্তে,
খুকি তহমিনা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দেখভাল করে,
আশা পূরণের ছাড়পত্র বুকে নিয়ে একগাল হেসে
খুকি আব্বাজানের কপালে বিশ্বাস আর শ্রদ্ধার চুম্বন
এঁকে দিল—পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছটাতে বসে থাকা
পাখিটি মিষ্টি সুরে গান গেয়ে উঠলো।
“আমরা শুধু হিন্দুত্ব মানি না,আমরা রামকে শ্রদ্ধা
করি,মহম্মদকেও শ্রদ্ধা করি,যারা হিন্দুত্বের দোহাই
দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধায় তাদেরকে আমরা
ঘেন্না করি…।”সমাবেশে এসে কথাগুলি আবুবক্করের
মনে বেশ দাগ কেটেছিল।
সেদিন ছিল প্রকৃতির রুদ্ররোষ,ঝোড়ো হাওয়ায়
মিশে যায় স্বপ্নগাঁথা সংগ্রাম…
মন্দিরে তখন পবিত্র প্রার্থনা, মসজিদে আজান,
গীর্জায় উপাসনা….
পতাকা হাতে মানুষের মিছিলে,বিজয়ের সেই গানে
হাজারো আবুবক্কর,মল্লিকা,ক্রিস্টোফার,এ মিছিল
শপথের মিছিল; অতিমারি মুক্ত হয়ে ঘুরে দাঁড়াবার
মিছিল,ঐক্যবদ্ধ,সংগ্রামী মিছিলে সেই চেনা সুর…
এ লড়াই বাঁচার লড়াই,সাম্যের লড়াই,উন্নয়নের লড়াই।