স্ট্যান্ডার্ড বাংলাদেশ ডেস্ক
সম্ভাবনার হাতছানি দ্বীপ জেলা ভোলায়। এখন পর্যন্ত দেশের মূল ভূখন্ডের সাথে সড়ক যোগে বিচ্ছিন্ন দেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা। দক্ষিণের এই জেলাটি বাংলাদেশকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে। প্রমত্তা পদ্মা সেতুর পরে তাইতো সরকারের মেগাপ্রকল্পের অংশ হতে যাচ্ছে ভোলা-বরিশাল সেতু। একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরেই মূল ভুখান্ডের সাথে সড়ক যোগে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ জেলা ভোলা৷
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বিভিন্ন গৌরবজ্বল ইতিহাসের স্বাক্ষী ভোলার প্রবীণ রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ। তোফায়েল আহমেদ এর অপূর্ণ ইচ্ছা ভোলার কালোবাদর ও তেতুলিয়া নদীর ওপারে নির্মিত হোক ভোলা বরিশাল সেতু। এবার কি তাহলে ঘুচছে ভোলাবাসীর দুঃখ? ২০২৪ সালেই তারা কি স্বাক্ষী হতে চলেছে নতুন এক স্বপ্নজয়ের ইতিহাসের?
এ সম্পর্কে আমাদের ভিডিও দেখুনঃ
সম্প্রতি সংসদের প্রথম অধিবেশনে ভোলা-বরিশাল সেতু সম্পর্কে সড়ক ও সেতু মন্ত্রীর কাছে একটি বিল উত্থাপন করা হয়। সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ভোলা বরিশাল সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে বলেছেন,’ভোলা বরিশাল সেতুটি পদ্মা সেতুর চেয়েও বড় হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে সেতুটির ফিজিবিলিটি টেস্ট বা সম্ভাব্যতা যাচাই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এখানে অনেক টাকার দরকার। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরস্থিতির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। ভোলা-বরিশাল সেতুটির নির্মাণ পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই শেষ পর্যায়ে। সেতুটি নির্মাণের জন্য ফান্ড জোগাড় হলেই শুরু হবে নির্মাণ কাজ।
২০২৩ জুন মাসে ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণের সম্ভবতা যাচাই করা হলেও নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় নতুন করে সম্ভাবতা যাচাইয়ের কাজ হাতে নিয়েছে সেতু মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল সেতু প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন প্রভাব নিরুপণের জন্য সরেজমিনে পরিদর্শন এবং স্থানীয়দের সথে মতবিনিময় করেছে সেতু বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল।
দ্বীপ জেলা ভোলাকে বরিশালের সঙ্গে যুক্ত করতে তেঁতুলিয়া নদীর ওপর দিয়ে দেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার।বাংলাদেশ যখন বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপে রয়েছে তখন ব্রিকস ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত চীন ও রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এনডিবি) কাছে পাঁচটি সেতু নির্মাণে ঋণ চেয়েছে সরকারছে। যে ৫টি সেতুর জন্য এনডিবিতে ঋণ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, তার একটি হলো বরিশালের সঙ্গে ভোলার সংযোগ স্থাপনে একটি সেতু (কালাবদর ও তেঁতুলিয়া নদীর উপর প্রস্তাবিত। এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) জানিয়েছে, তারা সেতু নির্মাণের জন্য জরিপ করেছে এবং সেতুর সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করেছে। সেতুটি নির্মিত হলে দক্ষিণের এই দুটি জেলার মধ্যে যাতায়াতে সময় কম লাগবে এবং ভোলা থেকে গ্যাস সরবরাহ করা সহজ হবে।
ভোলা-বরিশাল সেতুর কথা চলছে বেশ দীর্ঘদিন ধরেই। গত জুন মাসে জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে ভোলা-বরিশাল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তেঁতুলিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও সাবেক মন্ত্রী, ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ। বর্ষীয়ান এই নেতার একটিই অপূর্ণ ইচ্ছা। ভোলাবাসীর জন্য একটি সেতু উপহার দেওয়া, সেতুটি নিঃসন্দেহে ভোলাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের সোপান।
বেশিরভাগসময়ই গ্যাস ক্ষেত্র সমুদ্রের তলদেশে আবিস্কার হলেও বাংলাদেশের জন্য বার বার সুখবর আসছে। কারণ স্থলভাগেই পাওয়া যাচ্ছে গ্যাসের ক্ষেত্র। শুধু ভোলা নয় এর আগেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া গিয়েছে গ্যাসের ক্ষেত্র।
ভোলায় এত সুবিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ থাকার স্বত্ত্বেও এখন পর্যন্ত পাইপ লাইনের গ্যাস থেকে বঞ্চিত বরিশালবাসী। তবে সে দুঃখ ঘুচছে অচিরেই, ২০২৪ সালেই সুখবর পাচ্ছেন ভোলাবাসী। দেশের মূল ভূখন্ডের সাথে সড়কযোগে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে ভোলা। এবং সেই সাথে ভোলার গ্যাস এবার পৌছে যাবে বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-বাগেরহাট সহ খুলনা পর্যন্ত। এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ। তবে সেতুর মাধ্যমে গ্যাস সরবারহ করা হবে না বরিশাকে। বাংলাদেশের জ্বালানী মন্ত্রণালয় ভাবছে ভিন্ন কথা, পাইপলাইনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস নিয়ে যাওয়া হবে বরিশালে। সম্প্রতি ভোলা সফর করে বিষয়টি জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী।
এদিকে ভোলায় নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে আরও একটি সেতুর। যেটি ভোলা-লক্ষীপুর নামে পরিচিত। ভোলা-লক্ষ্মীপুর সংযোগে একটি সেতু এবং ২৪কিমি সড়ক সম্প্রাসারণের পর চট্টগ্রামের সাথে খুলনা পর্যন্ত ২০৫ কিমি দূরত্ব কমে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন নিশ্চিত হবে। তবে সে স্বপ্নের প্রথম বাস্তবায়ন হচেছ ভোলা-বরিশাল সেতু আর পরেরটা হবে ভোলা-লক্ষ্মীপুর সেতু। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ‘কনস্ট্রাকশন অব ভোলা ব্রিজ অন বরিশাল-ভোলা রোড ওভার দ্য রিভার তেতুলিয়া অ্যান্ড কালাবদর’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৭ সালে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশের নদী সমুদ্র বন্দর সমূহ হচ্ছে, ১। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর। ২। খুলনা জেলার মংলা সমুদ্র বন্দর। ৩। পটুয়াখালী জেলার পায়রা সমুদ্র বন্দর।
ভোলা বাসীদের স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে শীঘ্রই। নদীমাতৃক বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলে ধীরে ধীরে সংকোচিত হচ্ছে ফেরী সার্ভিস। পদ্মা সেতু, পায়রা সেতু, বেকুটিয়া সেতুর পর নির্মাণ ও উদ্বোধনের পর, নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে ভোলা বরিশাল সেতু।