আশিক মাহমুদ রিয়াদ
সিজন-১ এ দর্শকের ব্যাপক জনপ্রিয়তার পরে এবার এলো মহানগর সিজন-২। এই সিজন নিয়ে দর্শকের আগ্রহ এতটাই বেশি ছিলো যে মহানগরের সিজন-২ এর জন্য নির্মাতাকে বেশ চাপেই রেখেছিলেন দর্শকমহল। তবে সেই জোয়ারকে কাজে লাগিয়েছেন নির্মাতা। বলাই বাহুল্য, প্রথম সিজনের সাথে রগরগে স্লো-বার্ণ ট্রিটমেন্টের স্টোরি টেলিং দিয়ে মুগ্ধ করেছেন নির্মাতা আশফাক নিপুণ।
পুরো ওয়েবসিরিজ ডাউনলোড করতে হলে দেখতে হবে ভিডিওটি। ভিডিওটির একটি পার্টে বর্ণনা করা হয়েছে কিভাবে ডাউনলোড করবেন এই ওয়েবসিরিজটি। শুধু এই ভিডিও নয়, নিচের ভিডিওতেও একটি পাসওয়ার্ড আছে যেটি আপনাদের ফাইল ডাউনলোড করতে দরকার হবে। তাই দুইটি ভিডিও মনোযোগ সহকারে না টেনে দেখুন।
একটি আবদ্ধ কক্ষে ওসি হারুণকে রাখা হলে তিনি হাতের চাপড় দিয়ে সেখানের অফিসারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এর পর জিজ্ঞেসাবাদ অফিসার যখন এলেন, টেবিলের এপাড় ওপাড়ে যেন ভাঙার শব্দে তালমাতাল হয়েছে রগরগে টান টান সংলাপ। জিজ্ঞেসাবাদ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু। আর ঐ প্রান্তে ছিলেন মহানগরের পরিচিত ওসি হারুন। মানে মোশারফ করিম। তাই মহানগরের সিজন-২ দেখতে বসলে দুইটা কথা ভুলে যাবেন,
এক. আপনার সাথে সিরিজ চলাকালীন সময়ে বাইরের দুনিয়ার কোন যোগাযোগ নেই। যেন আপনি সিরিজের একজন। আপনার উৎকন্ঠার দুটি চোখ স্ক্রিণের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে। গল্প যত পুড়ছে, সংলাপ যত বাড়ছে ততই বাড়ছে আপনার মনযোগ।
দুই. খেলাটা শুরু যখন করেছেন, শেষটা আপনাকেই করতে হবে।
একজন নির্মাতার স্বার্থকতা তখনই, যখন তিনি তার নির্মাণ দিয়ে রূপক অর্থে প্রতিবাদ জানাতে পারেন। যে সাহসী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন সিরিজের নির্মাতা – আশফাক নিপুন। তার মেকিংয়ের জাদুতে বুঁদ হয়েছেন দর্শকেরা, তাইতো তিনি প্রত্যেকটা সিকোয়েন্সে, প্রত্যেকটা মাইক্রো সেকেন্ডে দর্শকদের হতাশ না করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
ওসি হারুণ পছন্দ করেন গিনিপিগদের নিয়ে খেলতে। তবে এই খেলার অন্য একটা লেভেল আছে। প্রত্যেকটা সংলাপে যিনি চিন্তামুক্ত। ভেবে চিনতে কথা বলেন, বিনাপ্রয়োজনে একটা কথা খরচ করতেও যিনি দায়বদ্ধ তিনিই বলেন- দুইটা কথা মনে রাখবেন। কিন্তু এবারের সিরিজে তার ব্যাতিক্রম। ফজলুর রহমান বাবুর চোখে যে ক্রোধের চাহুনি তিনি ক্লাইম্যাক্সে এনেছেন, যতটা নার্ভাসনেসে শুরুতে তিনি ছিলেন তার থেকে যেন আরও কয়েকগুন নার্ভাসনেস আর ক্রোধ তিনি রিমান্ড অফিসারের চোখে ঢেলে দিয়েছেন। ২০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ওসি হারুণ জিতেছেন বার বার, তার ডিকশনারিতে নেই হারার কোন ইতিহাস। তিনি জানেন হারুন কখনো হারেন না।
সিরিজটিতে প্রত্যেকটি এপিসোডে নির্মাতা আমাদের দেশের সিস্টেমের নিভৃতে লুকিয়ে থাকা অন্ধকারে আলো ফেলার চেষ্টা করেছেন। সিস্টেমের অলিতেগলিতে থাকে অন্ধকার, সেই অন্ধকারের লোলুপ ভূত গ্রাস করে অসহায় সহজ-সরল মানুষদের। শেষবার এমন প্রতিবাদ অনেকে করলেও, আমার কাছে ব্যক্তিগত ভাবে যে নামটি মাথায় ঘুরছে সেটি জহির রায়হান। ঐ যে একটা কথা আছে না, ‘সত্যিকারের মানুষ হইতে হইলে তোমার লাগবে, শরীর জুইড়্যা কলিজা’
মোশারফ করিম, ফজলুর রহমান বাবু, আফসানা মিমি ছাড়াও ছিলেন বেশ কয়েকজন শক্তপোক্ত অভিনেতা-অভিনেত্রী। যাদের প্রত্যেকের অভিনয়বাণে মুগ্ধ না হয়ে আপনার উপায় নেই। যেন প্রত্যেকটা স্ক্রিণিং পিরিয়ডের সাথে তাল মিলিয়ে তারা এত নিপুণভাবে অভিনয় করেছেন যা নিপুনের নির্মাণ ছাড়া খুব বেশি একটা দেখা যায় না। নিপুন কাজ করতে পছন্দ করেন অভিজ্ঞদের নিয়ে, তাই তো তার নির্মাণে থাকে নিখুতের ছাঁপ।
মোশাররফ করিম,আফসানা মিমি,ফজলুর রহমান বাবু,শ্যামল মাওলা,বৃন্দাবন দাস এদের অভিনয়,ডায়লগ ডেলিভারী, মেথডিক্যাল অ্যাক্টিং নিয়ে কোন কথা বলার দুঃসাহস আমাদের না থাকলেও, “দিব্য” নামের ছেলেটাকে নিয়ে কিছু অবশ্যই বলতে হবে, জাস্ট ব্রিলিয়ান্সির পরিচয় দিয়েছেন তিনি। যতদূর জানা যায়, তিনি বৃন্দাবন দাসের পূত্র।
সিরিজটি যথেষ্ট সংলাপ নির্ভর। ভিজ্যুয়াল স্টোরি টেলিংয়ে যতটুকু এফোর্ট ছিলো তাতে দর্শক ঝিমিয়ে পড়বেন না বলেই আশাবাদ। সিকোয়েন্স টাইম স্লো হওয়ার কারণ এটি স্লো বার্ণের স্টোরি। নির্মাতা চেয়েছেন স্লো-বার্ণের সাথে সংলাপের ধুম্রজাল উঠাতে। তাই মহানগর দেখতে বসতে হলে আপনাকে নিরিবিলি এবং মুক্ত সময় নিয়ে বসতে হবে।
সিরিজটির বিজিএম, টাইটেল মিউজিক আর সাউন্ড ইফেক্ট নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। মহানগরকে যেন শব্দজব্দে সাজিয়েছেন জাহিদ নিরব। মহানগরের টাইটেল ট্রাক শুনলে মনে হবে আরে! এ তো বাংলাদেশী ক্রিয়েশন। কালার গ্রেডিং, সিনেমাটোগ্রাফি জাস্ট এনাদর লেভেলের।
আর ক্যামিও হিসেবে যে অভিনেতা ছিলেন তার নাম জানলে চোখ কপালে উঠবে আপনার। ওপারের অণির্বাণকে এপাড়ের কোন কাজে এতটা তাড়াতাড়ি দেখতে পারবো সেটি নিছক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই ছিলো না এতদিন। মহানগর যেন সব শক্তিশালী অভিনেতাদের একত্রিত করেছে, ভালো গল্পের প্রয়োজনে।
ঠিক এভাবেই যেন বাংলা সিরিজ আমাদের গর্ব হয়। মানুষ যাতে জানে, এদেশেও সিস্টেমের ভাঁজে ভাঁজে লুকানো শুধু ভূত নয়। আছে ভালো গল্পও। যে গল্পের উত্তাপে ঝলসে যেতে পারে বিদ্বগ্ধ সময়।