ছাইলিপি.কম /৩০.০৮.২০২২
আদিমসভ্যতার শুরুর দিকে নিজেকে অন্য জন্তুর থেকে সাবধানে রাখার জন্য মানুষ গুহায় বসবাস করতো। শতাব্দির পর শতাব্দিতে মানুষের বসবাসে এক আমূল পরিবর্তন এসেছে। সিভিলাইজেশনের ফলে দিন দিনে বিশ্বয়নের এই যুগে মানুষ বসবাস করছে আকাশচুম্বি অট্টালিকায়! তবুও যাপিত জীবনের নানা ব্যাঘাতে রাতের ঘুম হারাম হয় অনেকেরই। কিন্তু তারা কি জানেন যে, চিরতরে ঘুমিয়ে গেলেন বিশ্বের নিঃসঙ্গতম শেষ ‘গুহা মানব’ ।
ব্রাজিলে সভ্যতার সঙ্গে যোগাযোগহীন একটি আদিবাসী গোষ্ঠীর শেষ সদস্যটি মারা গেছেন। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ২৩ আগস্ট নিজের কুঁড়েঘরের বাইরে একটি হ্যামক থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লোকটি, যার নাম জানা যায়নি, তিনি গত ২৬ বছর ধরে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করেছিলেন। সভ্যতার সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় মৃত ব্যক্তির নাম জানা যায়নি। বিগত ২৬ বছর ধরে তিনি সম্পূর্ণ একাকী জীবনযাপন করছিলেন। মনে করা হয়, তিনিই ছিলেন বিশ্বের নিঃসঙ্গতম ব্যক্তি।
ব্রাজিলের এই আদিবাসী সদস্য বিশ্বের কাছে ‘ম্যান অফ দ্য হোল’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কারণ তিনি তার বসবাসের স্থানে অনেকগুলো গভীর গর্ত খুঁড়েছিলেন, সেই গর্ত ব্যবহার করে প্রাণীদের ফাঁদে ফেলে শিকার করতেন তিনি। আর বাকিগুলো তার লুকোনোর জায়গা ছিল বলে ধারণা করা হয়। তার মরদেহে কোনো সহিংসতা বা আঘাতের চিহ্ন পাননি কর্মকর্তার। তার বাসস্থানে ছিল না কোনো অনুপ্রবেশের চিহ্নও। তাই অনুমান করা হচ্ছে, ৬০ বছর বয়সে স্বাভাবিক কারণেই মৃত্যু হয়েছে তার।
বলিভিয়ার সীমান্তবর্তী রন্ডোনিয়া রাজ্যের তানারু আদিবাসী এলাকায় বসবাসকারী একটি আদিবাসী গোষ্ঠীর শেষ সদস্য ছিলেন তিনি।
১৯৭০ এর দশকের গোড়ার দিকে পশুপালকরা নিজেদের চারণভূমি বাড়াতে জঙ্গলের জমি দখলের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আর এ কারণেই সে সময়ে ওই ব্যক্তির সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
এরপর ১৯৯৫ সালে তার গোত্রের অবশিষ্ট ৬ সদস্য অবৈধ খনি শ্রমিকদের আক্রমণে নিহত হন। একমাত্র তিনিই সেই হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ব্রাজিলের আদিবাসী বিষয়ক এজেন্সি (ফুনাই)-এর কর্মকর্তারা ‘ম্যান অফ দ্য হোল’-কে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ শুরু করেন। ২০১৮ সালে ফুনাইয়ের সদস্যরা জঙ্গলে গিয়ে তার একটি ভিডিও ধারণ করতে সক্ষম হয়। ভিডিওতে তাকে কুঠার সদৃশ কিছু দিয়ে একটি গাছ কাটতে দেখা যায়। এরপর থেকে তাকে আর কখনও দেখা যায়নি।
তার বসবাসের জায়াগায় ফুনাই সদস্যরা খড় দিয়ে তৈরি ঘর এবং তার খোড়া কিছু গভীর গর্ত দেখতে পায়। কিছু গর্তের নীচে বন্যপ্রাণী ধরার ফাঁদ ছিল। এ কারণেই বাকিগুলোকে তিনি লুকানোর জন্য ব্যবহার করতেন বলে ধারণা করা হয়। তার ঘর এবং ক্যাম্পসাইটে পাওয়া নমুনা থেকে জানা যায়, তিনি ভুট্টা, ম্যানিওক, পেঁপে ও কলার মতো ফল-ফসল রোপণ করতেন।