আশোক এলাহি
মুরগি যেমন ডানার নিচে আগলে রাখা ছানা,
আচঁলের নিচে আগলে রাখা তিনিই হলেন মা।
মা যে আমার এই পৃথিবীতে সবচেয়ে প্রিয়জন।
সুখে-দুঃখে তিনি মোদের করে নেন আপন।
দুঃখের সময় ভাগ বসিয়ে মন করে যে শীতল,
তার হাসিটা সূর্যের থেকেও অনেক বেশি কোমল।
আমার মা যে আমার নিকট চাঁদের থেকেও অপরুপ।
আমার হাসিতে খুশি তিনি, এটাই তাহার সুখ।
শিশুকালে ঘুমের ঘরে শুনাতেন চাঁদ মামার গান,
ভালোবাসার উৎস তিনি, তিনিই আমার প্রাণ।
যখন আমি ছোট বেলায় মায়ের ঘরে যেতাম,
গরম ভাতে ঘি মাখিয়ে, মজা করে খেতাম।
চুলের মাঝে আলতো করে তেল মাখিয়ে দিতেন, ডান পাশেতে সিঁতি করে স্কুলে পাঠাতেন।
কু-নজরকে ডিঙ্গানোর জন্য কত কি করেছেন,
কাজল দিয়ে কপালের কোণে টিপ বানিয়ে দিতেন।
বিকেল বেলায় সাজিয়ে দিলে, যেতাম খেলার মাঠে।
খেলা শেষে স্নান করিতাম পুরানো খেয়া ঘাটে।
মাঝে মাঝে আমার খোঁজে যেতেন তিনি ঘাটে,
ধরতে পারিলে উত্তম-মধ্যেম পড়িতো আমার পিঠে।
গ্রীষ্মকালে ধানের ফাঁকে, সোনালি মাঠে, ঘুড়ি উড়াতাম।
মায়ের ঝাড়ুর শলা ভেঙে ঘুড়ি বানাতাম,
মা যে তখন রেগে গিয়ে আমায় বকিতেন।
রাগ করে যে তখন আমি সন্ন্যাসী সাজিতাম।
পরিবার যদি অসু্স্থ হয়, অংশীদার হন মা,
মা যদি অসুস্থ হয়, কেউ ফিরেও তাকায় না।
কলুর বলদের মতোই তিনি খাটেন সংসারে,
তার অবদান চাপা পড়ে, থাকে অগোচরে।
বৃদ্ধাশ্রমে হাজারো জীবন কাটিতেছে ধুকে ধুকে,
মায়ের অবদান ভুলে গিয়ে, তোমরা কি থাকিবে সুখে ?
এখন আমি যুবক হয়েছি, উঠেছে আমার গোঁফ,
বয়সের বাড়ে মা যে এখন হয়ে যাচ্ছে নিশ্চুপ।
হারিয়ে গেল ঘুমের ঘরের চাঁদ মামার ঐ গান,
স্মৃতি গুলো জড়িয়ে আছে পাহাড়ও সমান।
এখন আমার চুলের মাঝে দেয়না কেউ সিঁতি করে,
খাওয়ার জন্য ডাকে না কেউ, ঐ আঁধার রান্না ঘরে।
শিশুকালের সময় গুলো আসবে কি আর ফিরে ?
হারিয়ে গেল সোনালী অতীত, সময়ের চাপা তলে।