মুক্তিযুদ্ধের গল্প – নর্তকী

মুক্তিযুদ্ধের গল্প - নর্তকী

জোবায়ের রাজু 

 

সজলের কাছ থেকে প্রথম যেদিন প্রেমপত্র পেল মিতা, সেদিন শাকিলকে আবার মনে পড়ে গেল। এই ছেলেটা দিনের পর দিন মিতার পেছনে সময় নষ্ট করেছে। অবশেষে একদিন শাকিল তার কাছের বন্ধু জাহাঙ্গীরকে দিয়ে মিতার হাতে পেঁৗছে দিয়েছে মনের সমস্ত আবেগ মেশানো সেই প্রেমপত্র। সেটি পড়ে মিতা হঁাড়ে হঁাড়ে উপলব্দি করল শাকিলের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা। সেই সাথে ভয়ও। ভয়টা হচ্ছে মিতার আসল পরিচয় জেনে শাকিল যদি তাকে প্রত্যাখ্যান করে! এত গভীরভাবে চিন্তা না করে শাকিলকে একদিন মিতা জানিয়ে দেয় সে একজন নর্তকী। যাত্রাদলে নিয়মিত নাচ করার পাশাপাশি কোন সাংস্কৃতিক জলসায় তার নাচের ডাক পড়লে চঞ্চলা দুটি ঘুঙ্গুর বঁাধানো পায়ের নৃত্য মুদ্রায় দর্শককে মাতিয়ে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা। এসব খবর শাকিলকে জানাতেই সে মুখ ফিরিয়ে নেয়। হয়তো শাকিল ভেবেছে একজন নর্তকীকে কোনভাবেই জীবনের সাথে জড়ানো যায় না। আর তাতে মিতা বুঝে নেয় শাকিল তাকে ভালোবাসেনি, ভালোবসেছে তার রুপের কামিনীয়তাকে। যদি সত্যি ভালোবাসতো, তবে মিতার নর্তকী পরিচয় জেনেও তার পাশেই থাকত। 

আজ আবার সজল এসেছে তার জীবনে। সজলও শাকিলের মত মিতার নর্তকী পরিচয় জেনে অবহেলায় দূরে সরে দঁাড়াবে নাতো! রুপের লাবণ্যতা দিয়ে অন্যকে জাদু করার ক্ষমতা মিতার আছে বলেই তো শাকিল সজলরা মিতাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে এগিয়ে আসে। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্নময়ী প্রেয়সী একজন নর্তকী, পর পুরুষের সামনে কোমর দুলিয়ে নাচে, এমন একটা জঘন্য ঘটনা কি শাকিল বা সজলরা মেনে নেবে? এসব ভেবে ভেবে চিন্তার মহাসাগরে তলিয়ে যায় মিতা। 

সজলকে অবশ্য ভালোই লেগেছে তার। বেশ সুপুরুষ সে। শিক্ষিতও নাকি অনেক! শিক্ষিত বলেই যে মিতার আরো বেশী ভয়। কারন শিক্ষিত কোন ছেলেই জেনে শুনে একজন নর্তকীর প্রেমে পাগল হবে না। সজল মিতার প্রেমে পাগলই হয়েছে। তা না হলে রাত জেগে ভালোবাসার লম্বা চিঠিটি সে মিতাকে কেনই বা লিখে মোমিনের মাধ্যমে পাঠাবে। 

 

চৌধুরী বাড়ির সামনে দিয়ে যে মেঠোপথটি চলে গেছে পশ্চিম দিকে, তার মোড়েই আচমকা সজলের সাথে দেখা হল মিতার। মিতার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকার আগেই সজল বলল ‘আমার আহ্বানে হঁ্যা না কিন্তু কিছুই বলোনি।’ লজ্জায় রক্তিম না হয়ে মিতা অকপটে বলল ‘আমার পরিচয় জানলে আপনি দূরে সরে যাবেন। কেননা আমি একজন নর্তকী। হাজার জনের সামনে নাচবার ইতিহাস আছে আমার। এ যে আমার এক খারাপ পরিচয়।’ সজল তীক্ষ্ন স্বরে বলল ‘তুমি নাচ করো এটা আমি জানি। কিন্তু তোমার যে আরো একটি বড় পরিচয় আছে, সেটাও আমি জানি। সেজন্যই তো তোমাকে আমি মন তেকে চাই।’ অবাক হয়ে মিতা প্রশ্ন করে ‘আরো একটি পরিচয়? কি?’ সজল ম্লান হেসে বলল ‘ তুমি একজন মুক্তিযোদ্ধার কন্যা। এ পরিচয় ক’জনের আছে?’ নিরব হয়ে গেল মিতা। সজল তার সম্পর্কে তাহলে সব খবর জানে? 

 তুমি মুক্তিযোদ্ধার কন্যা বলে তোমাকে ভালোবেসে আমি ভাগ্যবান হতে চাই। তোমার নর্তকী পরিচয় আমার কোন সমস্যা না।

তবুও যে আমি নর্তকী। আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবার চিকিৎসার খরচ চালাতে আমি নেচে পয়সা আয় করি। বাবা ৭১ সালে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। প্রাকবাহিনীর হাত থেকে দেশকে রক্ষায় বাবারও ভুমিকা ছিল। অথচ আজ বাবার কত দুর্দিন যাচ্ছে। বাবার মত অনেক মুক্তিযোদ্ধা আজ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কেউ তাদের খবর রাখছেন না। আমি নাচ শিখেছি। ভালো ভালো অনুষ্ঠানে আমাকে নাচতে ডাকা হয়। অনেক সম্মানিও দেয়। সেটা দিয়ে বাবার চিকিৎসার খরচ বহন করি। কিন্তু আড়ালে অবডালে লোকে আমাকে ‘নর্তকী’ বলে অপবাদ দেয়। এবার আপনিই বলুন আমার মত নর্তকীকে ভালোবেসে নিজের সম্মান নষ্ট করবেন? 

না মিতা, নিজেকে এতো ছোট ভাবছো কেন? আমি যে কোন ভালো পেশাকে সম্মান করি। তুমি নেচে বাবার জন্য টাকা আয় করো। তুমিতো মহৎ কন্যা। আমি এই মহৎ কন্যাকে সারা জীবনের জন্য পেতে চাই। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই মিতা। প্লিজ না বলোনা। 

সজলের কথা শুনে হা করে তাকিয়ে রইল মিতা। তার চোখে পানি চলে এলো। কেবল দুঃখে নয়, সুখেও মানুষ কঁাদে। মিতা আজ বড় সুখে কঁাদছে। 

 

আমিশাপাড়া, রাজু ফার্মেসি, নোয়াখালী ।

 

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
২১শে ফেব্রুয়ারি

২১শে ফেব্রুয়ারি

গৌতম সরকার মায়ের ভাষা বুকে নিয়ে তোরা করেছিলি হারাকিরি তোদের সমাধিতে ফুল ফুটে আছে ২১শে ফেব্রুয়ারি। আগুল জ্বলেছে দিকে দিকে দেশে হত্যা হয়েছে ভাষা, ধর্ম, ...
পথের মায়া

পথের মায়া

 সন্তোষ কুমার শীল দীর্ঘ ছুটি শেষ। ভেবেছিলাম সন্ধ্যার দিকে বেনাপোলগামী প্রথম বাসে চড়ব। যথাসময়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে বরিশাল পৌঁছেছিলামও। কিন্তু বাসে উঠতেই কি যে ...
বঙ্গবন্ধু

বঙ্গবন্ধু

মোঃ খোর্জাতুল ইসলাম চৌধুরী। হে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গলায় আপনি রেখে গেছেন অবদান। আপনার ডাকে বাঙ্গলার মানুষ নিজেকে করে দিয়েছিল উজাড় তাইতো আপনি বঙ্গবন্ধু বাঙ্গলার। ...
ঈশ্বরের দয়া নির্দয়তা  এবং  রবীন্দ্রনাথ

ঈশ্বরের দয়া নির্দয়তা  এবং  রবীন্দ্রনাথ

  মিরাজুল হক বিষয়টা পুরাতন । তবুও তা নতুন , আমার  মতো অনেকেরই কাছে । মানুষের  জীবন একটি  মহাজাগতিক ভ্রমণ ; তার  গতিপ্রকৃতি চলে আঁকা ...
মঙ্গলবার বিকেলে এলো শনিবার বিকেলের ট্রেলার

মঙ্গলবার বিকেলে এলো শনিবার বিকেলের ট্রেলার

২০১৬ সালে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনার ছায়া অবলম্বনে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তৈরি করেছেন সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’। মুক্তির আগে পদে পদে ...
The Incredible Stock Market Product I Can’t Live Without

The Incredible Stock Market Product I Can’t Live Without

Cursus iaculis etiam in In nullam donec sem sed consequat scelerisque nibh amet, massa egestas risus, gravida vel amet, imperdiet volutpat rutrum sociis quis velit, ...