যেদিন গেছে ভেসে

যেদিন গেছে ভেসে

ভালোবাসার কবিতা – প্রিয় রহমান আতাউর 

 

প্রায় তিন দশকেরও আগে ছেড়ে এসেছি –

প্রাণের ক্যাম্পাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। 

মতিহারের প্রতিটি ঘাসে চিকচিক করে উঠতো

শিশির কণা। কী উদ্দাম উদ্দীপনার নব্বইয়ের দশক!

সোহরাওয়ার্দী হল থেকে মমতাজউদ্দিন কলাভবন –

স্ট্যাডিয়ামের পথ দিয়ে প্রতিদিন হেঁটে চলা

আবুভাইয়ের ক্যান্টিন, বাবলা তলা-

শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা- আমাকে প্রতিনিয়ত ফিরিয়ে

নিয়ে যায় ত্রিশ বছর আগের দিনগুলোতে! 

 

দর্শন বিভাগে যাওয়ার আগে ঢুঁ মেরে যেতাম

শহীদুল্লাহ কলাভবনে; 

বন্ধু সীমা রহমানের দেয়ালিকা’য় কার কবিতা

স্থান পেলো কিংবা কোথাও থেকে রায়হান সেলিমের 

গান ভেসে আসছে কিনা – অথবা বিজন কিংবা আমিরুলের গণসঙ্গীত -এসব খোঁজ নিতেই

ক্লাসের সময় পেরিয়ে যেতো।

 

অতি যত্নে গড়া নাজিম মাহমুদ স্যারের ‘স্বনন’, আমতলায় হাসান আজিজুল হক স্যারের বক্তৃতা  ফেলে – ক্লাসে যাওয়ার মত নরাধম আমি নই। 

চোখে ভাসে জুলফিকার মতিন স্যারের মুখ থেকে উদ্গীরিত ক্যাপস্ট্যান সিগারের ধোঁয়া! 

আমার সিম্বোলিক লজিকের প্রথম পৃষ্ঠায় নিটোল

এক গ্রামের ছবি এঁকে কাজল বলেছিলোঃ ‘পৃথিবী একদিন সুন্দরদের বাসযোগ্য হবেই।’

তোকেও মনে রেখেছি কাজল!

 

এখন যখন ভোর হয়

ক্রমাগত বেড়ে যায় হাঁটুর মালাই চাকির ব্যথা, মধুমেহ রোগ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করি – তবু সেদিনের –

শাহ মখদুম ট্রেনের শব্দে চমকে উঠি

কাকে সি অফ করতে যাবো –

দেবাশীষ, ডালিয়া, রবি, সানজিদা না শেলীকে? 

কখনো কখনো হল থেকেই হাত নাড়িয়ে বিদায় জানিয়েছি ওদের। 

 

বিমানে উড়ে এসেছিলেন পূর্ণেন্দু পৈত্রী, রাজশাহীতে- কী এক অনুষ্ঠানে! দেখেছি তাঁকে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে – কী পরিপাটি, কী গম্ভীর! 

জয়ন্ত দা আর রীআ’পার কণ্ঠের কথোপকথনের 

সংলাপগুলো আজও গেঁথে আছে মনে!

তাঁরাই যেনো চিরায়ত – শুভঙ্কর ও নন্দিনী! 

 

জানিনা যুবেরী ভবনের সামাদী স্যার আজ কোথায়?

তাঁর ছিলো সেতার শুনার বাতিক।

ইংরেজী বিভাগের মুক্তার আপ্যায়নে কলিজার সিঙারা আজও আমাকে তাড়া করে। 

গঞ্জের আলী বিদেশে আর দীপু এখন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অপু জগন্নাথে। 

 

বিকেলে তালাইমারি থেকে চলে যেতাম প্রমত্তা পদ্মা’র পাড়ে বন্ধু বান্ধবীসহ  – ঝাপসা চোখে ঠাহর হ

হতো ওপারে মুর্শিদাবাদ! 

আহা, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের প্রিয় জন্মভূমি!

কাজলার কালুমামা, আমাদের হলের কাশেমভাই

তোমাদের ভুলিনি আমরা!

 

দু’বাংলার কবিতা উৎসব – বন্ধু জিল্লুর রহমান আর ঐ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েটা- আজিরা বানু লিলি- যে আমাকে দিয়েছিলো একটি লাল গোলাপ! কীইনা আড্ডা হতো ক্যাম্পাসে! 

 

এখন কত ব্যস্ততা আমাদের! 

চাকুরি, সংসার, নিত্যদিনের হাটবাজার কতকিছু। 

এখনো চোখে ভাসে বাবলা তলা, রেল লাইন, উষ বিপনী আর ম্যাটিনি শো’র বর্ণালী হল-

ওখানেই দেখেছিলাম স্মিতা পাতিলের ” দর্দ কা রিস্তা”

চোখের জলে বুক ভাসিয়েছিলাম!

কখনো কি আর ফিরে পাবো –

আমাদের যেদিন গেছে ভেসে?

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
তোমার গায়ে হলুদে

তোমার গায়ে হলুদে

অমিত মজুমদার আমার ঘরে বাঘ এসেছে তোমার দেহে কুমীর কেটে খাল দাঁড়িয়ে আছি মাঝ আকাশে দেখতে পাচ্ছি আপেল রাঙা গাল। একটু না হয় দোলই খাবো ...
গল্প- দস্যি রাগ

গল্প- দস্যি রাগ

আহমেদ বিন মুখতার  অনেক খোঁজার পরও রাগের কারণ খুঁজে পায় নি নিপা। বা পার্শে কাত হয়ে এদিক সেদিক মন দৌড়াচ্ছিলো সে।  সকাল থেকে মনের গতি ...
অপার্থিব পত্রমিতালী

অপার্থিব পত্রমিতালী

রাহাত আহম্মেদ বিকেল বেলা ছাদে বসে পাখিদের ঘরে ফিরা দেখতে বড্ড বেশি ভালো লাগে। ভালো লাগে কিচিরমিচির শব্দ আরো বেশি ভালো লাগে তাদের সারিবদ্ধভাবে ঘরে ...
জলের স্বপ্ন

জলের স্বপ্ন

মহীতোষ গায়েন জল চাই,বিচ্ছেদ চাই না; পুরানো বিবাদ মুছে ফেল, নীল আকাশে ডানা মেলে দিয়ে পাখিরা বাসায় ফেরে প্রেমে,অপ্রেমে। সারাদিন মুখ লুকিয়েছি অসুখে, জানি না ...
শিরোনামহীন - ৬৯ / গোলাম কবির

শিরোনামহীন – ৬৯ / গোলাম কবির

গোলাম কবির কেনো এতো সরে থাকো, আনমনে কি যেনো ভাবো, শীতের শীর্ণ নদীর মতো  হয়ে থাকো ম্রিয়মান, কষ্ট গুলো লুকিয়ে রাখো কোন গাছের কোটরে! কবিতার ...
নেগিটিভ মার্কেটিং কি? এর সুবিধা - অসুবিধা (Pepsi vs Coca-Cola)

নেগিটিভ মার্কেটিং কি? এর সুবিধা – অসুবিধা (Pepsi vs Coca-Cola)

ছাইলিপি ডেস্ক নেতিবাচক বিপণন, যা “আক্রমণ বিজ্ঞাপন” নামেও পরিচিত, একটি বিপণন কৌশল যা একটি প্রতিযোগীর অফারকে হেয় করার মাধ্যমে একটি পণ্য বা পরিষেবার প্রচারের সাথে ...