পরিচ্ছন্ন আকাশে থেকে এক ফালি চাঁদের আলো টিনের ফুটো দিয়ে পড়েছে ঘরের মেঝেতে। কয়েকটি ফুটো মিলেমিশে সেখানে সৃষ্টি হয়েছে অদ্ভুত এক জলছাপ। আবদ্ধ ধর, ঘন রাতে দূর থেকে ভেসে আসে শেয়ালের ডাক। নদীর স্রোতের ঢেউ আছড়ে পড়ে তীরে, দূর থেকে ভেসে আসে স্টিমার কিংবা জাহাজের ভেঁপু। আবদ্ধ কামরায় ডেকে ওঠে টিকটিকি, বাড়ে ঘন নিশ্বাসের শব্দ। দুটো শরীরের তোড়জোড় চলছে বেশ কিছুক্ষণ ধরে, চাপা মেয়ে কন্ঠে ভেসে আসছে মৃদু গালির শব্দ। ‘আরও জোরে দে! আরো জোরে, আমায় শেষ করে দে। আমায় মাইর্যা ফ্যালা বুইড়া ভাম’ পুরুষটির জোড় শেষ হয়ে যায়, ঘন নিশ্বাসের প্রকোপ ধুম্রজালে, টিনের ফুটো দিয়ে আসা চাঁদের আলোয় আবছা আবছা বোঝা যায়। মেয়েটি উঠে উলঙ্গ শরীরে কাপড়ের প্যাচ দিয়ে বুকে টাইট ব্লাইজের বোতাম আটকে দেয়। পুরুষটি জড়িয়ে নেয় কোমড়ের লুঙ্গি।
-একটু পানি খাওয়া মাগি। তোর শইল্যের লগে কি আর আমি শক্তিতে পারি? তুই হইলি উন্মাদ খা%কি।
-মেয়েটি রাগী কন্ঠে বলে, নিজে উইঠ্যা খাইয়া ন্যান। আপনে বুড়া হইসেন তয় আপনার কোমড়ের জোড় আর মেশিনের জোড় এহনো শক্ত আছে। হেইডা আমি ভালো কইর্যাই জানি।
পুরুষটি এবার মেয়েটির চুলের গোছা ধরে নিজের মুখের কাছে মেয়েটির মুখ নিয়ে আসে। ঘর্মাক্ত গাল আর ঠোট চেটে মেয়েটির পাতলা ঠোটে লম্বা একটি চুমু দেয়। মেয়েটির দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। পুরুষটি বুঝতে পারে তার পৌরষসত্ত্বা আবারও জেগে উঠেছে। তবে মেয়েটি এবার তাকে সায় দেয় না, হাত দিয়ে কোন মতে পুরুষটির কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে লাফ দিয়ে মেঝেতে পরে। এবার লাইট জ্বালায়, লাইটের আলোর জ্বলকানীতে চোখে আলোর আচমকা ঝাপটা পেয়ে মুখের উপর হাত দিয়ে সে আলো প্রতিহত করার চেষ্টা করে পুরুষটি। মেয়েটি তখন শাড়ি গোছাচ্ছিলো, গালে লিপস্টিকের মাখামাখি। আর ঘামের স্রোতে গালের স্নো-পাউডার লেপ্টে বিবর্ণ এক চেহারা ধারণ করেছে। পুরুষটি এক চোখে, দুটো চোখ বড় করে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকে। ব্লাউজের কপাট জুড়ে তখন মেয়েটির উত্তপ্ত যৌবন যেনে ফেঁটে পড়ার অবস্থা।
‘রাইত’ ম্যালা হইয়া গ্যাছে। এবার বাড়িত যান চেয়ারম্যান সাব!’ লোকে জানাজানি হইলে একটা বাজে অবস্থা ঘইট্টা যাইব।
-পুরুষটি খাট থেকে মেঝেতে পা ফেলে মেয়েটির দিকে আগায়। মেয়েটির কানের পাশের চুলে টান দিয়ে বলে, ‘আমার কথা তোর ভাবা লাগবো না মাগি’
চুলের টান খেতেই মেয়েটি ব্যাথায় কাঁকিয়ে উঠে, নিজেকে ছাড়িয়ে একটূ দূরে দাঁড়িয়ে সে বলে, তা না ভাবা লাগবো। আপনার খোঁজ আপনেই ভাল জানেন।
ঘর লাগোয়া বাথরুম থেকে নিজেকে শুদ্ধ করে লোকটি ঘরে ফিরে আসতেই দেখে মেয়েটি বানের বাটায় মিষ্টি পান সাজিয়ে বসে আছে।
ঘরের কপাট খুলতেই মেয়েটি পিছন থেকে ডাক দেয় পুরুষটিকে। যাওনের আগে একটা পান খাইয়া যান চেয়ারম্যান সাব। আর কবে আইবেন। তার তো কোন ঠিক ঠিকানা নাই।
দরজা খুলতেই বাইরে শুনশান নিরবতা। ঘরের কোণে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে রসু মিয়া। রসু মিয়া আজগর চেয়ারম্যানের সাগরেদ। চেয়ারম্যান সঙ্গে সঙ্গে থাকে সারাদিন। রসু মিয়ার কাছে যেতেই, চেয়ারম্যান বলে-
‘নটির পুত!’ এহানে তোর কি? তোরে কইছি একটু দূর থিকা ঘুইরা আইবি। তা না কইরা! তুই এইহানে ল্যাঙটা মাগির মতো খাড়াইয়া আছোস। এইটা কি ভালো কথা?
রসু মিয়া মাথা নিচু করে আজগর সাহবের কথায় সায় দেয়। তার মাথা নাড়ানোর ভঙ্গিতে সে জানায়, মোটেও ভালো কথা না।
কথা শেষ করে সামনে এগোতেই! একটি ইদুর চিঁচিঁ করে ঘরের বেড়ার ফাক দিয়ে ভেতরে ঢোকে। আজগরের চোখ যায় সেদিকে।
বিড়বিড় করে বলে, ‘ইদুর যখন আছে, তখন সাঁপও আছে।‘
*
আজগর সাহেবের সাথে প্রায়ই রসুমিয়া নদী বানুর ঘরের কাছে আসে। কিন্তু সমস্যা হলো, আজগর মিয়া ভিতরে ঢুকলেও রসু মিয়া আর ঢোকে না। তার ঢোকার কথাও না! কারন নদী বাণু হইলো গিয়া, আজগর চেয়ারম্যানের বান্ধা খা%কি। তবে বেড়ার ফুঁটো দিয়ে সে দেখে নদীর সাথে আজগরের রঙ্গ! নিজের অজান্তেই নিজের পৌরষদন্ডের ওপর হাত দিয়ে সেটিকে এলোপাথাড়ি চাঁপাচাপি করে। এতেই আপাতত রসুর সুখ। চেয়ারম্যানকে বাইকে চড়িয়ে ক্লাস ছেড়ে দিয়ে গ্রামের রাস্তায় যেতে যেতে ভাবে, সেও একদিন নদীকে ভোগ করতে চায়। তবে আজগরের জিনিস খাওয়া কি এত সহজ নাকি?
মাঝরাতে আকাশের চাঁদ ঢলে পড়েছে। স্নিগ্ধ ভেজা বাতাস বইছে৷ নদীর ঢেউ পাড়ে এসে আছড়ে পড়ছে৷ আকাশে মিটিমিটি তারা জ্বলছে। দু একটা উলকা খসে পড়ছে৷ সবাই তখন ঘুমিয়ে আছে, জেগে ওঠার কোন তাড়া ছাড়াই। তবুও অনেকেই জেগে ওঠে,প্রকৃতির নিয়মে কিংবা কেউ কেউ গোটা রাত জেগে থাকে।
নিজেদের প্রথম মধুর রাতটা এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে ভাবতে পারেনা সদ্য বিবাহীত দুই দম্পত্তি। বুকের ভেতরটা তখন হাঁসফাস করে।অচেনা অনুভূতি আর ভালোবাসায় টইটুম্বুর এই রাত।
ছোট্ট শিশুটা হাতরে হাতরে মাকে খুঁজছে। মাকে হাতের নাগালে না পেয়ে কেঁদে উঠছে,তার কাজ এখন করে মাকে জাঁগিয়ে তোলা,অবুঝ নিষ্পাপ শিশুটি কাঁদতে শুরু করে। মা বিরক্ত হয়ে ঘুমের ঘোরে বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করছে। কাঁচা ঘুম ভেঙে যায় ছোট্ট শিশুটির কান্নায়,মা জেগে ওঠেন। শিশুটিকে শান্ত করে,বুকে জড়িয়ে নিজের আদর মেখে দেয়৷ বাঁচ্চার কান্নার শব্দে বাবারও ঘুম ভাঙে, সে বিরক্ত হয়ে মুখ কাচুমাচু করে পিঠঘুরিয়ে অন্যদিকে ফিরে শোয়। ঘুম ভাঙে বৃদ্ধর, তার হাতে বেশি সময় নেই, গোটা জীবনটা এক পলকেই যেন কেঁটে গেলো। বৃদ্ধ ঘুম থেকে ওঠে,প্রথমেই সে খোদার নাম নেয়। শরীরটা ধীরে ধীরে অসাড় হয়ে আসছে। শেষ গন্তব্য খুব সন্নিকটে! হাতরে হাতরে ঘরের আলো জ্বালায়,ফজরের নামাজ পড়তে হবে। এখনো আজান হয়নি অবশ্য।
মধ্যরাতে তখনো নদীতে ব্যস্ত জেলেরা। লাল সিগন্যাল বাতিটা প্রায় নিভু নিভু। ব্যাটারি শেষ হয়ে এসেছে৷ আর কতই বা জ্বলবে? নৌকার পাশ ঘেয়ে চলে যায় বড় বড় জাহাজ! বাবার সাথে মাছ ধরতে আসা ছেলেটি ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে জালটানে৷ মাছ ওঠে না আর, দু একটা ছাড়া।
শেষ রাতে এসে যৌনকাতর তপ্ত শরীরটা নেতিয়ে পড়ে কোন নারীর ওপর। অবৈধ সম্পর্ক মিলিত দুটি দেহ ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
মেয়েটি গাঁয়ে কাথা পেঁচিয়ে নেয়। পুরুষটি হাতে লুঙ্গি জড়িয়ে নেয় কোমড়ে, গায়ে দেয় শার্ট।
পুরুষটি আবারো তাকায় নারীটির ভেঁজা শরীরের দিকে। ঘামে ভেজা উতপ্ত শরীটাকে আবারো ছুঁতে ইচ্ছে করে। দরজা খুলে চুপি চুপি হাটতে শুরু করে। কেউ দেখার আগেই চলে যেতে হবে। সূর্যের আলো ফোঁটার আগেই বাড়িতে পৌছাতে হবে। যাওয়ার আগে মানিব্যাগ থেকে টাকাগুলো ছুঁড়ে মারে খাঁটে।
আলো আঁধারীর রাত্রীর গা বেয়ে চলে কত ঘটনা। নিশুতি পবণে ঘুম ভাঙে পাখিদের। সমুদ্রজলের গা বেয়ে জ্বলজ্বল করে সকালের রোদ ওঠে। আরও একটি কর্মব্যস্ত দিনের কার্যক্রম, আরও একটি ভাগ্য বদলের দিন । সমুদ্র তটে নদীর মোহনার কাছাকাছি জেগে ওঠে একটি চর। এই চরে নদী মরে, শকুন ওড়ে মৃতদেহের আশেপাশে। সকালের ঝিলমিলের রোদে টলমল করে শঙ্খচিল। ভাটায় জাগে চর, যে চরে ওরে শঙ্খচিল। মৃতদেহটি ভাসতে ভাসতে নবচরে এসে ঠেকে যায়। মৃদু ঢেউয়ে দুলতে থাকে । চর শুকিয়ে যায়, একটি শঙ্খচিল এসে বসে পাশের ভেসে আসা ডালে। নতুন জাগা এ চরের নাম শঙ্খচিল বালুচর। এ চর শুধু মৃতদের। এ চর অপার্থিব! নিয়ম-অনিয়মের বেড়াজাল থেকে মুক্ত। যারা যায়, তারা ঘুরে ফিরে আবার আসে; অশোক শোকে মাথা নত করে ।
[প্রিয় পাঠক, গল্পটির প্রথম পর্ব আপনার কাছে কেমন লেগেছে? কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। প্রতি শুক্রবার একটি করে পর্ব প্রকাশ হবে। গল্পটি আপনার কাছে সর্বপরি কেমন লাগলো? মন্তব্যের ঘরে জানান। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল]