নির্মল ঘোষ
দ্বিপ্রহরের শেষ লগ্ন,
হঠাৎ আকাশ জুড়ে মেঘের ঘনঘটা।
রিমঝিম বৃষ্টিতে আপ্লূত কবিমন।
বিশ্বময় যখন মৃত্যুর মিছিল
অচেনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ভীত চারিপাশ।
এমন সময় জানি না
কোন সে দুঃসাহস হলো আমার।
পাকা রাস্তার দু’ধারের ধুলোগুলো,
সবে বৃষ্টির জলে মাখামাখি শুরু করেছে।
আমি বেরিয়ে পড়লাম বৃষ্টিতে ভিজতে।
খালি পায়ে নরম তুলতুলে মাটির স্পর্শ
আমাকে আবেগি করে তুলছে সীমাহীন।
কেউ একজন ডাকলো আমায়,
আমি বুঝতেই একটা লাল টকটকে রক্ত জবা।
বৃষ্টির জলে স্নান করে অপেক্ষা করছে।
হয়তো পূজিবে স্বল্প ক্ষনে।
আমাকে বললো হে অকৃতজ্ঞ কবি,
আমি বিচলিত হলাম।
এতটা অকৃতজ্ঞ কি করে হতে পারো?
কি করে ভুলতে পারো আজকের
এমন বিভীষিকাময় দিন?
আমাকে দেখো ১৯৭৫ সাল থেকে
হৃদয় জুড়ে দরদরে রক্ত বহন করছি।
হ্যাঁ,এই রক্ত জাতির পিতার রক্ত।
এই রক্ত বঙ্গমাতার রক্ত।
দেখো আমি আজও কতটা যত্নে রেখেছি,
কিশোর রাসেলের বুকে ফোঁটা বুলেটগুলো।
আর তোমরা ভুলে গেলে রেসকোর্স ময়দান।
ভুলে গেলে বাংলার স্বাধীন ইতিহাস।
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলাম।
রক্ত জবা আমাকে বললো –
আমাকে নিয়ে চলো শহীদ মিনারে।
আমি শহীদ মিনারের পাশে এসে
ফুল হাতে নিয়ে দাড়িয়ে নিশ্চুপ।
অঝোরে বৃষ্টির মধ্যে আমি একা,
কেউ নেই চারিপাশে।
শহীদ মিনার থেকে একটা রক্তাক্ত ইট
খুলে পড়ল নিচে।
একজন ভাষা-শহীদ আমাকে বললেন,
এ ফুল আজ আমাদের নয়।
যিনি আমাদের অতৃপ্ত আত্মার তৃপ্তি দিয়েছেন।
এনে দিয়েছেন গৌরবান্বিত স্বাধীনতা।
আজ তোমরা দেয়ালে একটা ছবি টাঙিয়ে
সব দায়িত্ব থেকে সরে গেছো।
আমি রক্ত জবাকে প্রশ্ন করতেই,
রক্ত জবা উত্তর দেন,দেখেছো কবি
আমি এটাই দেখাতে চেয়েছিলাম।
বাহান্নের অতৃপ্ত আত্মার মুক্তি ঘটেছিল একাত্তরে।
আর পঁচাত্তরে ঘটেগেলো বাঙালির লজ্জা।
আমি ফিরে এলাম আমার ঘরে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মুরতি পানে
অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষন।
অপরাধী আমি যখন ফুলটা এগিয়ে নিলাম।
জাতির জনক আমাকে বললেন,,,
দুঃখ করোনা কবি, আমি জানি
আমার বীর বাঙালি অকৃতজ্ঞ নয়।
আমি আছি তোমাদের মাঝে
আমি আছি প্রতিটি কবিতার মাঝে।
গল্প উপন্যাসের প্রতিটি পাতায়।
আমি গদগদকণ্ঠে তাঁর গলে মালা পড়িয়ে,
বললাম শ্রদ্ধাঞ্জলি,তুমি শ্রেষ্ঠ বাঙালি।।।