জোবায়ের রাজু
হঠাৎ ফেসবুক থেকে উদাও হয়ে গেল রনি। ওকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। বেশিরভাগ সময়ে ফোন বন্ধই থাকে। ও সাধারণত এমন না। ফেসবুকে হোক আর ফোনকলে হোক, নিয়মিত আমার খবর রাখে। দিনে অন্তত দুই করে হলেও আমার খবরাখবর রাখতে রনির তুলনা সে নিজেই।
সেই রনি হঠাৎ একেবারে নিরব হয়ে গেল। না পাই ফেসবুকে, না পাই ফোনকলের ওপারে। কী হয়েছে! কোথায় গেল এমন প্রাণ চ ল ছেলেটি! রনির অনপুস্থিতিতে যখন টানা ১৫ দিন পার হল, ঠিক ১৫ দিন পর সেদিন রোদপড়া দুপুরে রনির সাথে কলেজ রোডে হঠাৎ দেখা। রোদে পোঁড়ে, গরমে ভিজে কী দারুণ ফকফকা চেহারাটি কী মলিন দশা করেছে রনি!
‘দোস্ত, এতোদিন কোথায় ছিলি?’
‘ঢাকায়।’
‘হঠাৎ বলা কওয়া ছাড়া ঢাকায়?’
‘বেশ ঝামেলায় পড়েছিরে।’
‘কী হয়েছে?’
‘চাকরী খোঁজার দৌড়াদৌড়ি তো আছেই। তারমধ্যে ছোটবোন কনাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করালাম।’
রনির কথায় খানিক অবাক হলাম। ওর ছোটবোন কনাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করালো মানে কী! আমি তো জানি কনা আর্টেসের স্টুডেন্ট। ঢাকা মেডিকেলে কেবল সায়েন্সের স্টুডেন্টরাই ভর্তি হতে পারে। রনি তরতাজা একটি চাপা মারলো! ও সম্ভবত ভেবেছে আমি জানি না যে ঢাকা মেডিকেলে কেবল সায়েন্সের শিক্ষার্থীরাই ভর্তি হতে পারে। অন্যান্য বন্ধুদের কাছে প্রায়ই শুনি রনির নাকি সুকৌশলে চাপা মারার একটি অভ্যাস আছে। আমি কখনো তা বিশ্বাস করতাম না। আজ নিজচোখে দেখলাম রনির চাপা মারা কোন লেভেলের।
‘কিরে, কিছু বলছিস না যে!’
‘তো রনি, কনা এখন কোথায়?’
‘বললাম না ওকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করালাম।’
‘কনা তো আর্টসে পড়তো। ঢাকা মেডিকেলে তো শুধু সায়েন্সের শিক্ষার্থীরাই ভর্তি হতে পারে।’
‘হা হা হা।’
‘হাসছিস যে?’
‘আরে বোকা, কনার ডেঙ্গজ্বর হয়েছে। তাই ওকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করালাম।’
রনির কথা শোনে আমার দম ফাটানো হাসি এলো। ও বলেছে এক, আর আমি ভেবেছি আরেক। রনি আমার ভুল বোঝার ব্যাপারটি বুঝতে পেরে অবিরত হাসছে। তাতে আমার খানিকটা লজ্জাবোধ হল।
আমিশাপাড়া, নোয়াখালি ।