রহমতুল্লাহ লিখন
এক
এখন আমার কঠিন তরল বায়বীয় লক্ষ্য
১
আমি আনন্দিত বিমোহিত,
আপনার পা চেটে চরম পুলকিত।
জীবন এখন স্বার্থক শোভিত,
দয়া করে কাছে টেনে করেন বাধিত।
২
খবর খাই, খবর পড়ি,
খবর বানাই, খবরে হয় বাড়ি গাড়ি।
দেখে শুনে বুঝে গণ মানুষ ছেড়ে,
শহুরে দালানের সিমেন্ট পাথর ধরি।
৩
গরীব মরলে আমার কি!
সকালের নাস্তায় কত পদ,
কে কার সাথে দেখছে রথ,
খোঁজ না রাখলে জমবে কি!
৪
চলুক যাত্রা বেধড়ক মাত্রা,
সত্য বলে কোন সে ফাতরা।
আমি বাঁচলেই বাপের নাম,
শ্বাস যতদিন পা চাটাই এখন কাম।
দুই.
পঁচা গলা আহা! কি সুন্দর জীবন
রহমতুল্লাহ লিখন
খাচ্ছেন, ঘুরছেন,হাসছেন, ঘুমাচ্ছেন
আর কি কিছু চাচ্ছেন?
ও মা, মুক্তি? ওটা বাদ গেল যে,
আহা! মুক্তি মানেই তো তিন বেলা খাওয়া,
একালের বুদ্ধিজীবীর বাণী,
ভূরিভোজনটাই তো সবচেয়ে বড় পাওয়া।
তাহলে বইয়ের পাতায় যে পড়েছিলাম,
মুক্তি, স্বাধীনতা ভিন্ন জিনিস জেনেছিলাম।
ঐসব শুধু এক্সাম আর বইয়ের ভাজেই রাখুন।
এখন শুধু আরামে আয়েসে চায়ের কাপে বিকেলের রোদ,
পঁচতে থাকা বিবেকটারে ঘষে ঘষে মাখুন।
কিন্তু আরাম পাচ্ছি না কেন?
বেঁচে থাকাকে মনে হচ্ছে চলমান
ময়লার ভাগাড়ের দূর্গন্ধে মোড়া যেন তেন।
আরে না! চোখ বন্ধ করুন। ঘরেই আছে সুখ,
চারিদিকে দেখছেন না,
পা চেটে বিদ্যানদের আহা! কি হাসি মুখ।
তাহলে বায়ান্ন,উনসত্তর,একাত্তর?
আবার মনে টনে ঐগুলো আনেন কেন?
পেয়েছেন তো গনতন্ত্রের রোদ্দুর।
না হয় একটু কথা বলা বারণ,
মুক্ত চিন্তাকে করে দিয়েছি বিস্মরণ।
ওহ! যাক, তাহলে আর খটকা লাগার সমস্যা নাই।
মনে এখন এসেছে বুঝ,
উড়তে চাচ্ছে যারা, তাদের খাঁচায় থাকাই শ্রেয়।
বাইরে সব আধ গলা লাশ দিন কাটাচ্ছি,
গুন গুন করে নিজেরই গালি শোনাচ্ছি।
নিরব শিক্ষার ঝিকমিকি আলোয়
মরে গিয়ে সুন্দর জীবন পাচ্ছি রোজ ।
তিন.
চির সুলতানের সুলতাননামা
ক্ষীণস্রোতা স্বচ্ছ জলের চিত্রা নদীর পাড়ে,
বোহেমিয়ান জীবনের মোড়ে মোড়ে,
সোদা কাদা মাটির গন্ধ মেখে
প্রকৃতি রেখেছে তোমারে আদরের দুলাল করে।
কৃষকের ক্লান্তদিন, কৃষানীর স্বপ্নের বিভোরতা-
দেখেছ ধ্যানমগ্ন মহিমায় আপন স্বাধীনতা।
আরাধনার তৃপ্তিতে আপ্লুত হয়েই শিশু স্বর্গের সূচনা,
কারণ বুঝেছিলে তারাই করতে পারে
এক সুস্থ জাতির রচনা।
তোমার কৃষক হাড় জির জিরে নয়,
যাদের কাঁধে দেশ তারা বলিষ্ঠ পেশিবহুল হয়।
গ্রামবাংলার খেটে খাওয়া মানুষ,
শ্রমিক, কৃষাণ, এদেশের কাদাজলের ফানুস
সাথে সেই মাঠ, প্রান্তর, সবুজ ধানক্ষেত,
যেখানে জমি কর্ষণরত চাষী, রাখালেরা বাঁশীর সুরে মগ্ন,
উৎসব পর্বণে মত্ত বাঙালী নেই জাতি ভেদ।
জেলে মাছ ধরায় ব্যস্ত, গৃহস্থালীর কাজে
পল্লীবালা, মাছকোটা, ধানবোনায় ব্যস্ত সুখী পরিবার
দিন শেষে তারা কুপির আলোতে হুর পরী সাজে।
কুঁড়েঘর, উঠোন, খড়ের পালা, কলাগাছের সারি, অলস
দুপুরে গৃহিনীরা গল্পে ব্যস্ত। গোধূলী বেলায় তাদের কাখে কলস।
সারি সারি তাল, নারকেল গাছ, বনজঙ্গল, নদীতে
পালতোলা নৌকা, মাঝির ভাটিয়ালী সুর,
জাল দিয়ে মাছ ধরা, গুনটানায় ব্যস্ত মাল্লা,
নদীর ঘাটে কলসীতে জল আনতে গ্রাম্য বধূর সলাজ চাওয়া,
সবখানেই ছিল তোমার তুলির ছোয়া।
আপামরের জীবন যুদ্ধ দেনা পাওনাই ছিল
তোমার কাছে শ্বাসত ভালোবাসাই ছিল প্রধান,
তুমি আমাদের মানসপটের সদা রাজত্বের সুলতান।