লুনা রাহনুমার- চারটি পরমাণু গল্প

লুনা রাহনুমার- চারটি পরমাণু গল্প

১. ফাঁস

লোকটি ফাঁস নিয়েছে গলায়। কলা গাছের মতো মোটা লোকটি সিলিং ফ্যানের কোমরে লুঙ্গি পেঁচিয়ে ঝুলে পড়েছে।
লোকে বলে, পুরুষ মানুষকে লড়তে জানতে হয়। আত্মহত্যা করে কাপুরুষে।
বেঁচে থাকতে লোকটি খুব সাহসী ছিল। কিন্তু ফুলশয্যার রাত থেকে একের পর এক ব্যর্থতা, পুরুষত্ব প্রমাণে অক্ষমতা, প্রেমিকার উদাসীনতা, সংসারের দরোজা জানালা ভেঙে প্রেমের নিঃশব্দ প্রস্থান …. আর কত সইতে পারতো সে!
অনঙ্গ সুখের নিবিড় আলিঙ্গন পেলো না লোকটি এই জীবনে। মৃত্যুর সাথেই মাখামাখি হউক তবে। মুক্তি দিয়ে গেলো সে প্রাণের মানুষটিকে: মেয়েটি অন্তত বেঁচে থাক আত্মহত্যার চিন্তা না করে।

২. আওয়াজ

– কুসুমের মা, কতদিন কইছি সন্ধ্যা বেলাত ঘর ঝাড়ু দিবা না।
– ক্যান, আন্ধাইরে আফনের গাঞ্জার পোটলা ফালাই দিমু ডরাইতাছেন?
– সন্ধ্যাবেলা ঘর ঝাড়ু দেয়া অলক্ষ্মীর কাজ, বাপ মায় কিছুই শিখায় নাই?
– ঘরে যদি সোনা দানা থাকতো, আন্ধাইরেও চিলিক মারতো। এই ঘরে মুরগির পাখনা আর উঠানের শুকনা পাতা ছাড়া আর কিছুই নাই।
– তাও তুই কথা শুনস না। তোরে আমি তালাক দিলাম।
– আইজ রাইতের কাস্টমার ম্যালা দামি। ময়লা ঘরে রাইত কাটায় না। কাইল সকালে যদি টেহা পাইতে চান তাইলে অক্ষন আফনের গাঞ্জার পোটলা লইয়া গঞ্জের মাঠে চইল্যা যান।

৩. জীবনকাল

ঝুনঝুনিটি হাতে নিয়ে খুব সাবধানে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে ছোট্ট অনিকেত। সদ্য হাঁটতে শেখা অশক্ত পা দুটি টলমল করে উঠে।
সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে অনিকেত দৌড়োতে শিখে। স্ফুলিঙ্গের মত একটুখানি নিজের অস্তিত্বের জানান দিতেই আবার টলে উঠে পা দুটি। অনিকেতের নরোম কোমল শিশু শরীরটি বুড়িয়ে গেলো। টানটান মসৃন চামড়া কুঁচকে গিয়ে ঔজ্বল্য হারিয়েছে। ঝুনঝুনি হাতে সিঁড়ি বাওয়া অনিকেত পৌঁছে গিয়েছে সিঁড়ির শেষ ধাপে। সিঁড়ির পাশে লোহার রেলিংটা আঁকড়ে ধরলো সমস্ত শক্তি দিয়ে।
এবার তার এই জগতে বিচরণকাল শেষ হলো। মহাকালের হিসেবে এই যাত্রাপথ কতটুকু দীর্ঘ ছিল? হয়তো এক মিলিসেকেন্ড, এক মাইক্রোসেকেন্ড, অথবা এক ন্যানোসেকেন্ডেরও কম!

৪. নিন্দুক

একটি ডালে ছয়টি পাখি। দুইটি পাখি মনের আনন্দে উড়ে উড়ে গান গায়, বাকিরা মুখ টিপে হাসে আর বিচার করতে বসে দুইজনের ভেতর কে বেশি ভালো গাইছে।
দুইটি পাখি প্রতিনিয়ত নিজেকেই দেখে, নিজেকে শোধরায়। তারপর পরিতৃপ্ত মনে উল্লাসভরে নিজেরই জীবন যাপন করে।
চারটি পাখি ওদেরকে দেখে। চারটি পাখি নিজের জীবনের অপ্রাপ্তিগুলো কিছুতেই মানতে পারে না। তারা সুখ খোঁজে অন্যের আনন্দিত মুখে কাদা ঢিল ছুড়ে।
 

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
ফ

ফ বাংলা ভাষার বাইশতম ব্যাঞ্জনবর্ণ হলো- ফ। ফ অক্ষরটি বাংলা বর্ণমালার তেত্রিশতম অক্ষর। ফ এর সাথে যখন আ যোগ হয়(+) তখন – ‘ফা’ হয় আবার ...
মঙ্গলবার বিকেলে এলো শনিবার বিকেলের ট্রেলার

মঙ্গলবার বিকেলে এলো শনিবার বিকেলের ট্রেলার

২০১৬ সালে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনার ছায়া অবলম্বনে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তৈরি করেছেন সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’। মুক্তির আগে পদে পদে ...
কবিতা- তিনটে বাঁদর

কবিতা- তিনটে বাঁদর

 সেকেন্দার আলি সেখ   লাফাচ্ছিলো তিনটে বাঁদর মনের সুখে দিঘির পাড়ে তিনটে বাঁদর লাফাচ্ছিলো একটা বড় ষাঁড়ের ঘাড়ে l   মোটা বাঁদর শান্ত হলেও হাত-সাফাইয়ের ...
লাশ

লাশ

ফাহিম পবন যে গুলিতে শব্দ নেই… গানপাউডার এর কোন গন্ধ নেই, বারুদ হীনতায় যে বুলেট শুন্য, সেই একটা গুলি চললেই কেবল দুইটা লাশ। এ লাশ ...
The Top 11 Traits Health Ceos Have in Common

The Top 11 Traits Health Ceos Have in Common

Cursus iaculis etiam in In nullam donec sem sed consequat scelerisque nibh amet, massa egestas risus, gravida vel amet, imperdiet volutpat rutrum sociis quis velit, ...
The Incredible Stock Market Product I Can’t Live Without

The Incredible Stock Market Product I Can’t Live Without

Cursus iaculis etiam in In nullam donec sem sed consequat scelerisque nibh amet, massa egestas risus, gravida vel amet, imperdiet volutpat rutrum sociis quis velit, ...