বাংলাদেশীদের রক্তে রক্তে যে বিপ্লব, সেটি আবারও প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। যদি বলা হয় বিপ্লবের রঙ কি তাহলে বলতে হবে, বিপ্লবের রং লাল সবুজ। বাংলাদেশীরা তাই এখন গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় অণুকরণীয় হয়ে উঠেছে। কারণ কোটা আন্দোলন থেকে শুরু করে সরকার পতনের আন্দোলন, সব মিলিয়ে ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের জনগণ তাদের শিরদাড়া আরও একবার উঁচিয়ে দেখিয়েছে। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশের এমন অগ্রগতি দেখে নতুন কূটনৈতিক কৌশল অবলম্বন করছে ভারত। ড. ইউনূস নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বভার নেওয়ার পর সীমান্তে নীরাবতা ভেঙেছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ গুলি বর্ষণ করেছে বিজিবি। তারপরেই যেনো আগুন লেগেছে ভারতীয় মিডিয়ায়, এরপরই মোদি ফোন দিয়েছে ড. ইউনূসকে। সমর্থন জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি।
প্রশ্ন যখন ভারতকে অশান্ত করার ঠিক তখনই উঠে আসবে একটি নাম। লুৎফুজ্জামান বাবর, যিনি বিএনপির আমলে সরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বিখ্যাত একটি ডায়ালগ আজও বেশ ভাইরাল, উই আর ওপেন। উই আর লুকিং ফর শত্রুজ।
কথিত আছে,
লুৎফুজ্জামান বাবর ভারত সরকারের কাছে একটা আতঙ্কের নাম। লুৎফুজ্জামান বাবর সেভেন সিস্টারে বিদ্রোহী দল বানিয়ে দিয়ে ভারতে অস্থিতিশীল করে দিয়েছিলেন। চীন-পাকিস্তান মিলে ভারতকে যতটুকু ক্ষতি করতে পারেনি তার চেয়ে বেশি লুৎফুজ্জামান বাবর করতে পেরেছেন। ২০০৪ সালে তিনি ১০ ট্রাক ভর্তি অস্র-গোলাবারুদ, রকেটের লঞ্চার নিয়ে ভারতে পাঠাতে চেয়েছিলেন। তখন তারা নিজেদের দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু করে। অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম ও মেঘালয় মূল ভারত থেকে আলাদা হতে চেয়েছিল। আর সেখানের আন্দোলনকারীদের ১০ ট্রাক অস্ত্র সরবরাহ করতে চেয়েছিলেন এই লুৎফুজ্জামান বাবর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করতে পারেননি।
বাংলাদেশ তিন দিক থেকে ভারত দ্বারা পরিবেষ্টিত। তবে বাংলাদেশের কারণে ভারতের ৭টি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য দেশটির মানচিত্র থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব দিকে থাকা এই রাজ্যগুলো হলো মেঘালয়, ত্রিপুরা, আসাম, মিজোরাম, মনিপুর, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচল প্রদেশ। এই সাতটি রাজ্যকে একসাথে বলা হয় সেভেন সিস্টার্স। এই সাতটি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিলিগুড়ি করিডোর দিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত হয়েছে। এই ভূখণ্ডের আকৃতি মানচিত্রে দেখতে অনেকটা মুরগির ঘাড়ের মতো বলে, একে চিকেন্স নেক বলা হয়।
সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলো ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে কৌশলগতভাবে খানিকটা দুর্গম হাওয়ায় উপমহাদেশের রাজনীতিতে এই অঞ্চলের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের একটি বক্তব্যের জের ধরে, সেভেন সিস্টার্স হঠাৎ করেই বেশ আলোচনায় উঠে এসেছে।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার ২০০১-২০০৬ সালে ক্ষমতায় থাকার সময় যেসব ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন এবং সরকারের মধ্যে প্রবল অস্বস্তি তৈরি করেছিল তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ১০ ট্রাক সমপরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ অস্ত্র ও গোলাবারুদের চালান আটক করা হয় ২০০৪ সালের পহেলা এপ্রিল রাতে। দুটি বড় ট্রলারে করে এসব অস্ত্র সমুদ্রপথে আনা হয় চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার জেটিতে।
সেই ঘটনার পরে ভারতের কর্মকর্তারা মনে করেছিলেন, এতো বড় আকারে না হলেও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অস্ত্র ঢুকেছে। দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের বিষয়টি চোখে আঙুল দিয়ে সেটি দেখিয়ে দিয়েছে।
এদিকে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে শীঘ্রই মুক্তি পেতে যাচ্ছেন, লুৎফজ্জামান বাবর। বাবরের মুক্তির দাবিতে ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে হচ্ছে সমাবেশ।লুৎফুজ্জামান বাবরের মুক্তির বিষয়টি এখন চলমান প্রক্রিয়ায় আছে। লুৎফুজ্জামান বাবর কেন ভারতের কাছে আতঙ্কের নাম? সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। গ্রেফতার হওয়া লুৎফুজ্জামান বাবরের নজর ছিলো, ভারতের সাত বোনের দিকে। কথাটি শুনতে খারাপ মনে হলেও, বাবর চেয়েছিলেন ইন্ডিয়ার সেভেন সিস্টার্সে নিজেদের ঘাটি বাণাতে, এমনটাই উঠে এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে, বাবর কি একই আশা করবেন? প্রশ্নটা থেকেই যায়।