চলে গেলেন কার্তিকের শেষ রাতে-
উচ্ছিষ্টভোগী কাকগুলো ডেকে চলেছে তখনো
কা কা রবে! ঝিঁঝিঁ পোকারাও ছেড়ে গেছে ফনি মনসার ঝোপ!
দীপাবলি রাতে পাতিহাঁসের মাংস খাওয়ার
ইচ্ছে ছিল তাঁর – আর ধনে পাতা দিয়ে সর্ষে ফুলের বড়া; সাথে আন্ধেরি বিলের টেংরা মাছের ঝোল।
আরেকটু ফলসার চাটনি হলেও মন্দ হতোনা!
বিপত্নীক মানুষ তিনি – জীবনে কখনোই রান্না করেননি- ছোটছেলের বউ রাসুই তাঁকে –
রেঁধে বেড়ে খাওয়াতো।
টিনের চাল ঘেঁষে বড়ই গাছে আপাদমস্তক
ফুল ধরেছে – সামনে ধানক্ষেত।
কালিজিরা ধানের কুঁড়িতে মৌ মৌ ঘ্রাণ!
কার্তিকের এই মধ্য দুপুরেও মৌমাছির গুঞ্জন ;
বড় ভালো লাগতো তাঁর!
ও পাড়ার হাবুদের গাব গাছে কতবার ঘুঘুর-
ডাক শুনেছেন তিনি!
এই তো দু’দিন আগেও – রাতের কুয়াশার ধবল হিমেও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন ঘোষদের –
আখক্ষেতে বাবুইয়ের ঝাঁক!
দু’গরুর বয়স তিনি কাটিয়েছেন শুধু লেখালেখি করেই- কী নিখুঁত দর্শনে নিমগ্ন ছিলেন তিনি!
তিনি যেনো সেই তান্ত্রিক সাধক- কাপালিক –
লেখকখ্যাতিও ছিলো তাঁর আকাশ ছোঁয়া!
রাজা ইডিপাসের মত জীবনকে কখনোই নিরর্থক
মনে হয়নি তাঁর – অথচ –
সবকিছু ফেলে আজ চলেছেন মহাযাত্রায়-
মনে পড়ে গেলো তাঁর সেই কথা-
‘মানুষকে কখনো সখনো বিবাগী হতে হয়।’
মায়ার বন্ধন মানুষকে আঁকড়ে ধরে রাখে-
অথচ তাঁকে যেতে হয়।
জানাজা শেষে সফেদ পাঞ্জাবি পরা খতিব হুজুর
সাদা কাফনে মোড়ানো বয়সী দেহটি কবরে নামান;
একটি শিমুল পাতা খসে পড়ে ডাল থেকে –
বিগলিত কণ্ঠে দোয়া পড়েন –
মিনহা খালাকনা কুম ওয়া ফিহা নুইদিকুম…
মাটির তৈরি তুমি; অতএব মাটিতেই ফিরে যাও –
আসছি আমরাও।
বড় নির্বাক আমি!
শীতের দুপুরেও ঘামতে থাকি, ভাবি-
কী নির্মম অনন্তযাত্রা মানুষের!
হোক সে বিখ্যাত কবি, সাধক, ধর্মগুরু – রাজাধিরাজ
কিংবা ভিখিরি – বেলা শেষে কেবলি সম্বল তাঁর-
সাড়ে তিন হাত জমি!