লোকটির চলে যাওয়া- প্রিয় রহমান আতাউর   

লোকটির চলে যাওয়া- প্রিয় রহমান আতাউর   
চলে গেলেন কার্তিকের শেষ রাতে-
উচ্ছিষ্টভোগী কাকগুলো ডেকে চলেছে তখনো
কা কা রবে! ঝিঁঝিঁ পোকারাও ছেড়ে গেছে ফনি মনসার ঝোপ!
দীপাবলি রাতে পাতিহাঁসের মাংস খাওয়ার
ইচ্ছে ছিল তাঁর – আর ধনে পাতা দিয়ে সর্ষে ফুলের বড়া; সাথে আন্ধেরি বিলের টেংরা মাছের ঝোল।
আরেকটু ফলসার চাটনি হলেও মন্দ হতোনা!
বিপত্নীক মানুষ তিনি – জীবনে কখনোই রান্না করেননি- ছোটছেলের বউ রাসুই তাঁকে –
রেঁধে বেড়ে খাওয়াতো।
টিনের চাল ঘেঁষে বড়ই গাছে আপাদমস্তক
ফুল ধরেছে – সামনে ধানক্ষেত।
কালিজিরা ধানের কুঁড়িতে মৌ মৌ ঘ্রাণ!
কার্তিকের এই মধ্য দুপুরেও মৌমাছির গুঞ্জন ;
বড় ভালো লাগতো তাঁর!
ও পাড়ার হাবুদের গাব গাছে কতবার ঘুঘুর-
ডাক শুনেছেন তিনি!
এই তো দু’দিন আগেও – রাতের কুয়াশার ধবল হিমেও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন ঘোষদের –
আখক্ষেতে বাবুইয়ের ঝাঁক!
দু’গরুর বয়স তিনি কাটিয়েছেন শুধু লেখালেখি করেই- কী নিখুঁত দর্শনে নিমগ্ন ছিলেন তিনি!
তিনি যেনো সেই তান্ত্রিক সাধক- কাপালিক –
লেখকখ্যাতিও ছিলো তাঁর আকাশ ছোঁয়া!
রাজা ইডিপাসের মত জীবনকে কখনোই নিরর্থক
মনে হয়নি তাঁর – অথচ –
সবকিছু ফেলে আজ চলেছেন মহাযাত্রায়-
মনে পড়ে গেলো তাঁর সেই কথা-
‘মানুষকে কখনো সখনো বিবাগী হতে হয়।’
মায়ার বন্ধন মানুষকে আঁকড়ে ধরে রাখে-
অথচ তাঁকে যেতে হয়।
জানাজা শেষে সফেদ পাঞ্জাবি পরা খতিব হুজুর
সাদা কাফনে মোড়ানো বয়সী দেহটি কবরে নামান;
একটি শিমুল পাতা খসে পড়ে ডাল থেকে –
বিগলিত কণ্ঠে দোয়া পড়েন –
মিনহা খালাকনা কুম ওয়া ফিহা নুইদিকুম…
মাটির তৈরি তুমি; অতএব মাটিতেই ফিরে যাও –
আসছি আমরাও।
বড় নির্বাক আমি!
শীতের দুপুরেও ঘামতে থাকি, ভাবি-
কী নির্মম অনন্তযাত্রা মানুষের!
হোক সে বিখ্যাত কবি, সাধক, ধর্মগুরু  – রাজাধিরাজ
কিংবা ভিখিরি – বেলা শেষে কেবলি সম্বল তাঁর-
সাড়ে তিন হাত জমি!

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
আমার বনস্পতি সময় ও চটি দুঃখ

আমার বনস্পতি সময় ও চটি দুঃখ

I দ্বীপ সরকার   আমার কোন দুঃখ দেখাবার মানুষ নাই ভেতরকার ক্ষত বরং অক্ষতই থেকে যাক চুলচেরা বিশ্লেষণ করে শরীরকে জানতে চেয়েছি শরীর শুধু বিনয়ী ...
অণুগল্প- জানাজা

অণুগল্প- জানাজা

আনোয়ার রশীদ সাগর   ধীরে ধীরে আমার জানাজার প্রস্তুতি চলছে। শ’খানিক লোক জানাজায় দাঁড়িয়েছে। সামনে ঈমাম সাহেব,পিছনের লোকগুলো আমার চেয়ে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে আছে ফাঁকা ...
অণুগল্প- মন ঘুড়ি উড়া

অণুগল্প- মন ঘুড়ি উড়া

  আরণ্যক   মাঝে মাঝে শুকনাে পাতায় খসখস শব্দ উঠে—তখন ধীর পা হেঁটে যায় ক্যান্সাসের দক্ষিণে—ছায়া দীর্ঘ হয়ে একসময় সন্ধ্যা নামে টিলা চূড়ায় কমরেডরা ফর্সা ...
অচিনপুরের দেশে: ষষ্ঠ পর্ব

অচিনপুরের দেশে: ষষ্ঠ পর্ব

  পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় এবং গৌতম সরকার   গৌতম সরকার: বৃষ্টি এখন অনেকটা ধরেছে। চারদিক ঘন অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। টর্চ আনা হয়নি, এখন এই কাদাপথ হাতড়ে ...
জোবায়ের রাজুর দু'টি গল্প [আজ রবিবার, পুত্র]

জোবায়ের রাজুর দু’টি গল্প [আজ রবিবার, পুত্র]

জোবায়ের রাজু রকি আমার দশ বছরের ছোট। একটাই ভাই আমার। বোন নেই। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। মেজো মামার বড় মেয়ে লামিয়ার সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক ...
শরৎ জোসনার রাত - বিপিন বিশ্বাস

শরৎ জোসনার রাত – বিপিন বিশ্বাস

বিপিন বিশ্বাস   প্রাণময় সতেজ জীবন বাতাসে নাচে, কাশফুলে দুলে, শ্বাস-প্রশ্বাসে খেলে অনন্ত ব্রহ্মের  সাথে পরম সৌন্দর্যে।   শরৎ জোসনার রাতে মা দুর্গার পা স্পর্শ ...