প্রীতির গায়ের গন্ধ [পর্ব-০৪]
[গত পর্বের পর থেকে । গত পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।]
‘স্যার, হোয়্যাট ডু ইউ নিড?’
‘আ হোয়াইট ইউনিকর্ণ’, জবাব দেয় শ্বেত বর্ণের লালচে চুলের পঞ্চাষোর্ধ লোকটি!
সাদা শার্ট, কালো-প্যান্ট আর গলায় নীল টাই পড়া লোকটি কিঞ্চিত ইতিবাচক হাসি দিয়ে বলে, ‘ওকে স্যার! উই উইল ম্যানেজ! হোট ইউ ওয়ান্ট। টেক রেস্ট! হ্যাভ আ সুইট নাইট’। শ্বেত বর্ণের লোকটির নাম হ্যারি, জার্মান নাগরিক এই বিদেশী বাংলাদেশে এসেছে একটি ব্রিজের কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে।
সাদা শার্ট পড়া লোকটি হোটেলের কামড়া থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে, একটি ডায়মন্ড গাউন পড়ে ঢোকে লোকটির কামড়ায়। মেয়েটির মুখের গড়নের সাথে ডায়নামিক মেকাপ যেন মেয়েটিকে আরও লাস্যময়ী করে তুলেছে। মেয়েটির পনিটেইল চুল, ঠোটে লাল ওয়াটার-প্রুফ লিপস্টিক, চোখে কৃত্রিম পাপড়ি (আইলেশ)
মিষ্টি কন্ঠে বলে, ‘মে আই কাম ইন?’
শ্বেত বর্ণের লোকটি বলে, ‘ওহ! হো হো! ইয়েস প্লিজ’
মেয়েটি এগিয়ে যায় বিদেশী সেই লোকটির কাছে! লোকটি শুয়েই থাকে।
শোয়া থেকে এবার উঠে বসে! মেয়েটির কানের পাশে আস্তে করে হাত রাখে। মেয়েটি নিচের ঠোটটা উপরের দাতের সাথে স্পর্শ করে কেমন একটা শীৎকার দেয়।
শ্বেত বর্ণের লোকটির এবার মেয়েটির ঠোটের দিকে নিজের ঠোটটি এগিয়ে দেয়।
‘ফিসফিসে কণ্ঠে বলে, আর ইউ হর্ণি বেবি?
মেয়েটি মাথা নাড়ায়,ইয়েস! ইউ আর টু মাচ সেক্সি!
‘দেন লেটস গেট সাম ফান’
মেয়েটির গলায় চুমু দিয়ে মেয়েটির গাউনের অর্ধেকটা খুলে ফেলতেই, হ্যারি ভীষণ অবাক হয়। মেয়েটির গা থেকে অদ্ভুত একধরণের ঘ্রাণ আসছে। এটা কি কোন পারফিউমের ঘ্রাণ? গলার নিচ দিয়ে মেয়েটিকে চুমু দিতে শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে সেই চুমুর পরিণতি গড়ায় মেয়েটির সারা অঙ্গে। মেয়েটি কামুক হয়ে ভীষণ উত্তেজিত শব্দ করে। হ্যারি ধীরে ধীরে আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
এভাবে চলে দুটি নগ্ন শরীরের দোলাচল। কতক্ষণ মেয়েটি থাকে ছেলেটির নিচে, মেয়েটি আবারও উঠে আসে ছেলেটির উপরে। বিদেশী লোকটি ভীষণ আনন্দ পায়। মেয়েটির চোখের দিকে তাকালেই যেন শরীরের ভিতর থেকে নিজের জমানো পৌরষ সত্ত্বা আরও প্রবলভাবে যেগে ওঠে। মেয়েটির ঠোট এগিয়ে নেয় হ্যারির ঠোটের দিকে।
দুটি দেহের উত্তপ্ত ফাগুণ রাঙে সে রাতে! শেষবার হ্যারি মেয়েটিকে বলেছিলো, ডু ইয়্যু নিড সাম জ্যুস? মেয়েটি মাথা নেড়ে সায় দিয়েছিলো – ইয়েস।
*
হোটেলের কামড়া থেকে বেড়িয়ে প্রীতি সোজা হেটে যায় এক্সিট গেটের দিকে। এক্সিট গেট থেকে বেরোবার আগে অবশ্য সে নিজেকে আয়নায় বেশ কয়েকবার পরোখ করে দেখেছিলো। কোথাও কোন সমস্যা আছে কি না! জার্মান লোকটিকে সে যতটা হিংস্র ভেবেছিলো লোকটি তার থেকেও ভীষণ কোমল ও লাজুক। সে অনুপাতে দেশের লোকগুলো বড্ড হিংস, তাদের ছোঁয়ায় কোন আর্ট নেই। তারা ইরোটিক বোঝে না, বোঝে না রোম্যান্স কাকে বলে। তারা মেয়েদের জামা-কাপড় ছাড়া দেখলেই ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পরে নিজের শরীরের সর্বৎস ঢেলে দিতে। সে কারণেই তারা বেশিদুর এগোতে পারে না। অথচ জার্মান লোকটি কত স্বাচ্ছন্দ্যে প্রীতিকে ইরোটিক ওয়েতে ইম্প্রেস করেছে। প্রীতিকে সম্পূর্ণ উত্তেজিত করেই তবে নিজের ক্রোধ প্রীতির শরীরে ঢালতে চেয়েছে।
হোটেল থেকে বের হয়ে ঠিক যখনই সিএনজিতে উঠতে যাবে ঠিক তখনই পিছন থেকে প্রীতির নাম ধরে ডাক দেয় কেউ একজন!
-‘এই যে প্রীতি!’
প্রীতি পিছন ফিরে তাকাতেই তার কেমন অস্বস্তিবোধ হয়। ভীষণ রাগ হয় নিজের প্রতি!
সেই কেউ একজন তমাল। প্রীতির কাছে এগিয়ে আসতেই প্রীতি ঠোটদুটো প্রসরণ করে সেই হাসি হেসে তমালকে বলে, ‘কোথায় যাচ্ছ তমাল?’
-তমালও ফিকে হেসে বলে, আমি যাচ্ছিলাম না কোথাও। আমার বাসা এখানে! দেখলাম তুমি যাচ্ছো। ডাক দিলাম। কোথাও যাচ্ছো?
প্রীতি মৃদু হেসে বলে, বাসায় যাচ্ছি।
তমাল হেসে বলে, আচ্ছা যাও তাহলে………………।
প্রীতি সিএনজিতে উঠে বসতেই তমাল সিএনজিওয়ালাকে ভাড়া জিজ্ঞেস করে সিএনজি ভাড়া দিয়ে দেয়। প্রীতি এতে জোড়াজুড়ি করে। এক পর্যায়ে প্রীতি বলে, আচ্ছা তুমি চলো আমার বাসায়!
তমাল বলে, আজ থাক অন্য একদিন যাব ।
প্রীতি এবার কিঞ্চিত অভিমানের গলায় বলে, চলো না হলে কিন্তু আমি রাগ করবো।
তমাল সিএনজিতে উঠে বসে! প্রীতির পাশে। সিএনজির গতি বেড়ে যায়, মৃদু বাতাস শেষে আসে বসন্ত শেষে ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটা। শহুরে বাতাসে বসন্তের মিষ্টতা পাওয়া যায় না। তমাল চোখ বন্ধ করে লম্বা নিশ্বাস নেয়, প্রীতির গায়ের গন্ধ!
তমাল চেষ্টা করেও সে গন্ধ উপলব্ধি করতে পারে না। তার নাকে ভেসে আসে ড্রেনের উটকো পঁচা গন্ধ, ডাস্টবিনের নোংরা গন্ধ।
৬.
প্রীতির বাসায় এসেই – তমালের ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায়। প্রীতির মা গত ৭ বৎসর যাবৎ প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। তার রুমে ঢুকতেই তমালের গা গুলিয়ে বমি আসলেও ঠিক আসে না। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে এনে, রুমে কিঞ্চিত উঁকি দিয়ে বলে, কাকি কেমন আছেন?
-আঁধশোয়া অসুস্থ মহিলা তমালের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে প্রায় দেড় মিনিট সময় নেয়।
-তমালকে দেখে সে চিনতে পারে না। ঘাড়টা আবার ঘুরিয়ে নেয়। তমাল এতে ভীষণ অপমানিতবোধ করে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। প্রীতি আসে, তমালকে ঠেলে রুমে ঢুকে যায়। নোংরা কাঁথা-কাপড় সরাতে সরাতে প্যারালাইজড মা’কে বলে… ‘মা’ ওকে চিনতে পেরেছো? আমরা সিরাজগঞ্জে থাকতে ও আমাদের বাসার পাশে ছিল…ওর নাম তমাল। প্রীতির মা এবার বিরক্তির স্বরে প্রীতির মাথায় একটি চাটি মারে…প্রীতি ভুলে গিয়েছিলো এই রুমে একজন পুরুষ মানুষ আছে। আর পর-পুরুষের সামনে প্রীতির মা নিজেকে উলঙ্গ হতে দিতে কখনো চায় না।
প্রীতি তমালকে চোখের ইশারা দিয়ে বলে..তুই আমার রুমে গিয়ে বস!
প্রীতির রুমে আসতেই তমাল মুগ্ধ চোখে রুমটা অবজার্ভ করে। এই রুমটা ভীষণ পরিপাটি….বিছানা দেখলেই ঘুম চলে আসে। মাথার কাছে রাখা বড় একটি টেডি বিয়ার। আর বামপাশে..রাখা কোলবালিশ। মাথার কাছে বালিশের ওপরে রাখা একটি নকশি কাঁথা। তমাল এগিয়ে যায় বিছানার দিকে…..নকশি কাথাটি হাতে নিয়ে নিজের নাকের কাছে ধরতেই অদ্ভুত একটা সম্মোহনী শক্তি জেগে ওঠে। এক নিশ্বাসে চোখের সামনে ভেসে ওঠে শৈশবের সব পুরণো স্মৃতি! সেই আবেগ। বুকে দুরু দুরু অনুভূতি!
(চলবে)………..!
পরের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।