১৮+গল্পপ্রথম পাতাপ্রথম শারীরিক সম্পর্কের গল্পভালোবাসার গল্পশারীরিক প্রেমের গল্পসর্বশেষ

প্রীতির গায়ের গন্ধ [পর্ব-০৫]

আশিক মাহমুদ রিয়াদ

[গত পর্বের পর থেকে। গত পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন]

[দ্রষ্টব্য-গল্পটি যেহেতু ফিকশনাল রোমান্টিক স্টোরি সেহেতু গল্পটি পুরোটা পড়ার অনুরোধ জানাই।]

প্রীতির বাসায় এসেই – তমালের ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায়। প্রীতির মা গত ৭ বৎসর যাবৎ প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। তার রুমে ঢুকতেই তমালের গা গুলিয়ে বমি আসলেও ঠিক আসে না। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে এনে, রুমে কিঞ্চিত উঁকি দিয়ে বলে, কাকি কেমন আছেন?
-আঁধশোয়া অসুস্থ মহিলা তমালের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে প্রায় দেড় মিনিট সময় নেয়।
-তমালকে দেখে সে চিনতে পারে না। ঘাড়টা আবার ঘুরিয়ে নেয়। তমাল এতে ভীষণ অপমানিতবোধ করে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। প্রীতি আসে, তমালকে ঠেলে রুমে ঢুকে যায়। নোংরা কাঁথা-কাপড় সরাতে সরাতে প্যারালাইজড মা’কে বলে… ‘মা’ ওকে চিনতে পেরেছো? আমরা সিরাজগঞ্জে থাকতে ও আমাদের বাসার পাশে ছিল…ওর নাম তমাল। প্রীতির মা এবার বিরক্তির স্বরে প্রীতির মাথায় একটি চাটি মারে…প্রীতি ভুলে গিয়েছিলো এই রুমে একজন পুরুষ মানুষ আছে। আর পর-পুরুষের সামনে প্রীতির মা নিজেকে উলঙ্গ হতে দিতে কখনো চায় না।
প্রীতি তমালকে চোখের ইশারা দিয়ে বলে..তুই আমার রুমে গিয়ে বস!



প্রীতির রুমে আসতেই তমাল মুগ্ধ চোখে রুমটা অবজার্ভ করে। এই রুমটা ভীষণ পরিপাটি….বিছানা দেখলেই ঘুম চলে আসে। মাথার কাছে রাখা বড় একটি টেডি বিয়ার। আর বামপাশে..রাখা কোলবালিশ। মাথার কাছে বালিশের ওপরে রাখা একটি নকশি কাঁথা। তমাল এগিয়ে যায় বিছানার দিকে…..নকশি কাথাটি হাতে নিয়ে নিজের নাকের কাছে ধরতেই অদ্ভুত একটা সম্মোহনী শক্তি জেগে ওঠে। এক নিশ্বাসে চোখের সামনে ভেসে ওঠে শৈশবের সব পুরণো স্মৃতি! সেই আবেগ। বুকে দুরু দুরু অনুভূতি!



*
বাবা মারা গেলেন হঠাৎ করেই। একরাতে মায়ের সাথে অভিমান করে বেড়িয়ে গেলেন ঘর ছেড়ে। এরপর চার-পাঁচদিন ধরে কোন খোঁজ পেলাম না। আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করেও বাবাকে পেলাম না।বাবা ফোনটাও বাসায় রেখে গিয়েছিলেন। এর চারমাস পর একদিন রাত বারোটার দিকে ফোন আসে! ফোন ধরেই মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়…খাটের কোণে মাথার সাথে বাড়ি লেগে বাজেভাবে ইঞ্জ্যুর্ড হয়। মা’কে হাসপাতালে ভর্তি করাই। এদিকে বাবার মৃত্যুর খবর ভেসে আসে। রেললাইনের পাশে বাবার ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে আছে। আমার সেদিনই ভীষণ মরে যেতে ইচ্ছে করেছিলো জানিস তমাল। শুধু মায়ের কারণে আমি বেঁচে আছি।বাবার মরোদেহটাও আমি দেখতে পারিনি। বাবাকে রেলওয়ে গোরস্থানে দাফন করে দেয় সেখানের লোকজন। মা’ যখন একটু সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরে তখন আমার কিছুই করার নেই। গোটা আকাশ যেন ভেঙে পড়েছে আমার মাথায়। নিজেকে ভীষণ একা মনে হয়!

প্রীতির চোখ থেকে জল গড়ায়! তমাল কাছে টেনে নেয় প্রীতিকে।

প্রীতির সাথে যে লোকটিকে দেখেছিলো তমাল। সে লোকটি প্রীতির হবু বর নয়। প্রীতির ক্লাইয়েন্ট! অবশ্য তমাল জানে না যে প্রীতি নিজের লাস্যময়ী চেহারা আর শরীর বিক্রি করে নিজের মায়ের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করে।

৭.
তমালকে তার পরিবারের লোকজন টুকু বলে ডাকে। তমালের সৎ বোনের বাসা থেকে বেড়িয়ে রাস্তা ধরে হাটতেই ফোন বেজে ওঠে, প্রীতির গলা-

-কোথায় তুই?, মিষ্টি গলায় জিজ্ঞেস করে প্রীতি।
-এইতো বাংলামোটরে রাস্তায় হাটছি।
-আচ্ছা শোন, তুই ডিরেক্ট যমুনা ফিউচার পার্কে চলে আয়। কতক্ষণ লাগবে আসতে?
তমাল বলে, জ্যাম আছে তো। কতক্ষণ লাগবে জানি না।



তমালের পকেটে যমুনা ফিউচার পার্কে যাবার মতো টাকা নেই। ফোনেও মাত্র অল্প কিছু টাকা আছে। তমালের বন্ধু নিগ্রো রুবেলকে ফোন দেয়..মাসের শেষ। রুবেলের কাছেও টাকা থাকার কথা না। রুবেলকে ফোন দেওয়ার পরে রুবেল জানায় তার কাছে নিজের চলার মতই টাকা নেই, তাও আশ্বাস দেয়। অন্য কোন বন্ধুর কাছ থেকে ম্যানেজ যদি করতে পারে তাহলে তমালকে সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে দেয়।

কিছুক্ষণ বাদে আসে প্রীতির ফোন,
-তুই ওখানেই দাড়া। আমি আসছি।

যমুনা ফিউচার পার্কের একটি ক্লথ শপে গিয়ে প্রীতি তমালকে বলে, তোর যা যা ভালো লাগে তুই নিয়ে নে। তমাল ভেবে পায় না কিছু। সে পছন্দ করার মতো একটা গেঞ্জি নিয়েছে নিজের জন্য!

প্রীতি কিছুক্ষণ বাদে এক গাঁদা জামা কাপড় নিয়ে এসে দেখে তমালের হাতে শুধুমাত্র একটি গেঞ্জি ছাড়া আর কিছুই নেই। জামাকাপড়গুলো কাউন্টারে রেখে আবার ফেরত আসে তমালের দিকে। মিষ্টি রাগ দেখিয়ে বলে, কিছু পছন্দ হচ্ছে না এখান থেকে?
(তমাল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।)

চল এখান থেকে। পাশের শপে যাই।

তমালের হাতে যে ব্যাগের বোঝা তা সামলাতে তার কষ্ট হয়ে যাচ্ছে তা বোঝা যায়। প্রীতির হাতেও ব্যাগের বোঝা। তমাল সারাজীবনে এতগুলো জামাকাপড় পড়েছে কি না তা তার জানা নেই। বাবা টাকা পাঠালে সে টাকা দিয়ে বন্ধু রুবেলকে নিয়ে নিউমার্কেটে গিয়ে সস্তায় কিছু জামা-কাপড় কিনেছে।

প্রীতি যে গাড়িটিতে এসেছে সেটি হলদে কালারের টয়োটা এসইউভি! মডেলটা ঠিক আন্দাজ করতে পারে না। গাড়ি ড্রাইভ করছে প্রীতি নিজেই। সে এই গাড়ি কোথায় পেলো তমাল তা জানে না। প্রীতি অবশ্য ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। কে জানে! সে হয়ত বড় কোন চাকরী করছে।

ঢাকা থেকে বেড়িয়ে ওরা চলে যায় নারায়নগঞ্জের দিকে। কোন একটি রিসোর্টে। তমাল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কোন অদ্ভুতুড়ে ভাবনায় বুঁদ হয়ে আছে।




*

রিসোর্টের একটা ঘর নিয়েছে ওরা! তাহলে কি এক কামড়াতে থাকবে? প্রীতি যৌবনের প্রতিটি ভাঁজ তমালের চোখে ধরা দিয়েছে। তমালকে এখন অবশ্য প্রীতির থেকে ভীষণ নিচু মনে হয়। প্রীতির লাস্যময়ী চেহারা আর ফুঁটে ওঠা যৌবন যেন তমালকে নিমিষেই গ্রাস করে ফেলতে পারে।
-আমি ফ্রেশ হতে গেলাম। তুই একটু রেস্ট নে।
রুমের সাথে এটাচ বাথরুম। প্রীতি জামা-কাপড় নিয়ে ঢুকলো বাথরুমে। তমাল এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো বাথরুমের দরজার দিকে। বাথরুমের শাওয়ারের জল পড়ার শব্দ হচ্ছে। তমাল নিজের অভন্ত্যরে এক অদ্ভুত ক্ষুধার উন্মোচন উপলব্ধী করতে পারছে। বুকে যেন কেউ একজন জোরে জোরে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করছে। জানলা দিয়ে আসা বাতাসের ঝটকায় তমালের চুল গুলো নড়ে উঠলো। এ বাতাস যেন~ফিসফিস করে বলে গেলো, পৃথিবী এখানে শান্ত এবং শান্তিপূর্ণ।

ধীরে ধীরে কমে এলো বাথরুমের পানি পড়ার শব্দ। খট করে বাথরুমের দরজা খুলে প্রীতি শুধু গলাটা বের করে, তমালকে বললো- আমার ল্যাগেজের মধ্যে আমার তোয়ালেটা আছে। ওটা একটু দিবি? তমাল শরীরে যেন অন্যরকম এক শক্তি অনূভব করলো। প্রীতির তোয়ালেটা প্রীতির দিকে এগোতে এগোতে মনে মনে চাইলো প্রীতি যেন তাকে সেদিনের মতো হ্যাঁচকা টান দিয়ে বাথরুমের ভেতরে নিয়ে নেয়। আর প্রীতির সর্বাঙ্গে যে মাদকতা আছে সেটি গ্রাস করে ফেলে তমাল। এক-পা দু-পা করে তমাল এগিয়ে যায় বাথরুমের দরজার দিকে। প্রীতির হাত ভেজা। সে হাত বাড়ি টয়েল নিয়েই খট করে আবারও দরজা বন্ধ করে দেয়……এখানেই ঘটে তমালের এক বিষন্য দুপুরের উপখ্যান।



প্রীতি ফ্রেশ হয়ে গোলাপী রাঙা টয়েল দিয়ে নিজের বুকের অর্ধেকটা ঢেকে বের হয়। প্রীতির ফর্সা দেহ আর মেকাপ ছাড়া চেহারায় যেন এক ভিন্ন ধরণের মাদকতা আছে। যে মাদকতা যে কোন পুরুষের নার্ভ দূর্বল করে দিয়ে পৌরষস্বত্তাকে প্রবলভাবে উন্মাদিত করে তুলতে পারে। তমাল অবশ্য বাথরুমে গিয়ে চোখ বুজে প্রীতির গায়ের গন্ধ পাওয়ার জন্য লম্বা একটি নিশ্বাস নেয়। সে নিশ্বাসে সুগন্ধি সাবানের সাথে তমালের নাকে ভেসে যায় অদ্ভুত সম্মোহনী এক ঘ্রাণ। যে ঘ্রাণে শৈশবে তমাল আহত হয়েছিলো। যে ঘ্রাণ শৈশবে তমালকে দায়িত্ববান পুরুষ বানাতে চেয়েছিলো। তমাল অবশ্য হেয়ার কন্ডিশনার দিয়ে নিজের পৌরষবোধের ক্ষুধা মিটায়। যখনই তার শরীর থেকে বসন্তে নতুন করে উৎপন্ন রস নির্গত হয়। ঠিক তখনই দরজায় টোকা পড়ে প্রীতির।

– ছেলেদের ফ্রেশ হতে এত সময় লাগে? কি করিস এখনো?
তমাল উঠে গোসল সেরে বের হয়। প্রীতি ততক্ষণে ফ্রেশ ড্রেস পরে নিয়েছে। প্রীতি কি তবে টয়েলটা ছেড়ে তারপরে জামাকাপড় পড়েছে?
তমালের মাথায় চলে জন্মান্তরের নৃশংস ক্ষুধার নগ্ন আক্রোশ।

 

[চলবে]………

[গল্পটি যারা এতদিন পড়েছেন। তাদের কাছে বিশেষ অনুরোধ। গল্পটি আপনাদের কাছে কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না। ] 

 

পরের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

এই লেখাটি শেয়ার করুন
ছাইলিপির ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

ছাইলিপির কথা

লেখালিখি ও সৃজনশীল সাহিত্য রচনার চেষ্টা খুবই সহজাত এবং আবেগের দুর্নিবার আকর্ষণ নিজের গভীরে কাজ করে। পাশাপাশি সম্পাদনা ও প্রকাশনার জন্য বিশেষ তাগিদে অনুভব করি। সেই প্রেরণায় ছাইলিপির সম্পাদনার কাজে মনোনিবেশ এবং ছাইলিপির পথচলা। ছাইলিপিতে লিখেছেন, লিখছেন অনেকেই। তাদের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। এই ওয়েবসাইটের প্রতিটি লেখা মূল্যবান। সেই মূল্যবান লেখাকে সংরক্ষণ করতে লেখকদের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। কোন লেখার মধ্যে বানান বিভ্রাট থাকলে সেটির জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। ছাইলিপি সম্পর্কিত যে কোন ধরনের মতামত, সমালোচনা জানাতে পারেন আমাদেরকে । ছাইলিপির সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। ছাইলিপির নতুন সংযোজন ছাইলিপির ইউটিউব চ্যানেল Chailipi Magazine। সাবস্ক্রাইব করার আহ্বান।

error: কপি করা থেকে বিরত থাকুন ! বিশেষ প্রয়োজনে ইমেইল করুন [email protected]