প্রীতির গায়ের গন্ধ [পর্ব-০৭]
গত পর্বের পর থেকে। গত পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
সুদীপা আমি আর এ কাজ করতে চাই না! বিষন্য গলায় বলে প্রীতি। সুদীপা অবাক হওয়ার গলায় বলে, ‘কেন করতে চাস না? এই বাজারে তোর প্রাইসটা তুই নিজেও জানিস! এখান থেকে পিছনে গেলে পস্তাবি।‘
প্রীতি এক চোখ ক্রোধের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘য়্যাম নট প্রোডাক্ট, আর কত বিক্রি করবো নিজেকে? লোকেদের সাথে শুয়ে শুয়ে জীবনটা পার করে দেব?’
সুদীপা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হাসিমুখে বলে, ‘তুই যা ভালো বুঝিস, লাইফ তোর ডিসিশানও তোর’
বাইরে কড়া রোদ, রোদের উজ্জ্বলতা এতটাই তীব্র খালি চোখে তাকাতে গেলে চোখ ছোট হয়ে আসে। প্রীতির চোখে সানগ্লাস, প্রীতির পড়নে যে ড্রেসটি সেটি ভীষণ আকর্ষণীয় বলে রিক্সাওয়ালা থেকে শুরু করে সব স্তরের মানুষ প্রীতির দিকে একনজর তাকিয়ে যাচ্ছে। যেন প্রীতি ঢাকার রাস্তার লিবার্টি অফ লাস্ট! শহুরে পুরুষের ভীষণ বিক্ষুব্ধ হয়ে থাকে। শহর মানেই এরকম, অসুস্থ মানুষ।
প্রীতি কিছুক্ষণ দাড়াতেই তমাল এসে পরে, তমালের গায়ে লাল পাঞ্জাবি। পায়ে চামড়ার একজোড়া জুতো। তমাল একটি রিক্সা ডাক দেয়, ওরা দুজন রিক্সায় চড়ে বেড়িয়ে যাওয়ার আগে এক চায়ের দোকানদার বলে ওঠে, ‘এই চ্যাঙরা হইলো এই মাগীর নাগোর’ কথাটা কানে পৌছোয় তমালের, তমাল রিক্সা থেকে নেমে বৃদ্ধ চায়ের দোকানদারকে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে কানে কানে বলে আসে, ‘তোর বিচি কাইটতা দোকানের সামনে ঝুলাইয়া রাইখা দিব, মাদারচোদ’ প্রীতি কিছু বুঝে উঠতে পারে না। রিক্সা চলা শুরু করে। প্রীতি তমালকে বলে, মারলি কেন লোকটাকে?
তমাল বন্ধ করা নিশ্বাস ছেড়ে বলে, ‘মারবো না তো কি করবো? শুয়োরটাকে পুতে ফেলে রাখতে পারলে খুশি হতাম’
প্রীতি খিল খিল করে হাসে, তমাল বিব্রত দৃষ্টিতে প্রীতির দিকে তাকায়। প্রীতির এ অনার্থক হাসির কারণ তমাল বুঝতে না পেরে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রীতি তমালের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, ‘বড় হয়ে গিয়েছিস অনেক। শোন তোকে একটা কথা বলার ছিলো। চল রমনা পার্কে হাটতে হাটতে বলা যাবে’
চৈত্রের কড়া রোদ আর অসহ্য গরমে লেকে কিছু বাচ্চা গোসল করছে। তমাল এতক্ষণ ধরে হাটতে হাটতে তাই লক্ষ্য করছিলো। ছোটবেলায় কত এমন করেছে! প্রীতি তমালকে ডাক দিতেই তমালের বুকটা হঠাৎ অজানা কারণে মোচড় দিয়ে ওঠে। প্রীতি তমালকে বলেছিলো, তমাল অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। এ কথাটি তমালকে ভীষণ ভাবে নাড়া দিলো। কেমন অন্য ধরণের অনুভূতির সঞ্চার ঘটলো তমালের হৃদয়ে।
প্রীতি তমালের দিকে তাকিয়ে হাসে। তমাল এতে ভীষণ বিব্রত বোধ করে। তমালের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়! প্রীতিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-তুমি আমাকে দেখে হাসছো কেন? আমি জানি আমার চেহারা জোকারের মত।
-প্রীতি এবার স্নিগ্ধ হাসির সাথে তমালের গাল টেনে বলে, তুমি মোটেও জোকারের মতো না। তুমি যথেষ্ট হ্যান্ডসাম।
-তাহলে হাসছো কেন?
প্রীতি হঠাৎ কথার বাঁক নেয়,
-তমাল তোর কি সেদিনের কথা মনে আছে?
-কোনদিন?
-মনে করে দেখ, একদিন সন্ধ্যেবেলায় তুই ঘরে শুয়ে ছিলি।
-আমার মনে পরছে না।
-ছোটবেলার কথা।
তমালের এতক্ষণ যে সেদিনের কথা মনে পড়ছিলো না এমন না। তমাল ইচ্ছে করেই প্রীতির কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছে। প্রীতি এবার দীর্ঘশ্বাস টেনে বলে, সত্যি আমরা বড় হয়ে গিয়েছি। তমাল প্রীতির দিকে তাকায়, তার স্নিগ্ধ চেহারায় হঠাৎ করে আসে বিষন্য মেঘ।
কিছুদূর হেটে একটি বট গাছের নিচে বসে প্রীতি তমালকে বলে,
-তমাল
-হুম।
-একটা কথা বলবো?
-বলো
-রাগ করবি না তো?
– না!
-আমায় বিয়ে করবি?
তমাল অবাক হয়ে প্রীতির দিকে তাকায়। প্রীতির চোখে একরাশ শূন্যতা। যেন অনেকদিন যত্ন না পাওয়া একটি ফুল গাছ। যেখানে গাছটিকে একটু পরিচর্যা করলেই গাছটি আবারও ফুলে ফুলে সমরোহ হবে।
তমাল এবার কোন কথা বলে না। বসা থেকে উঠে বসে প্রীতির হাতটেনে বলে, চলো! এখানে আর ভালো লাগছে না। প্রীতির চোখে এবার আষড়ে বৃষ্টি নামার আগের ন্যায়ে ঘন অন্ধকার জড় হয়। একটু পড়েই কয়েক ফোঁটা জল চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে। তমাল হাটতে থাকে, তার পিছু পিছু আসতে থাকে প্রীতি। প্রীতি চোখের জল লুকানোর জন্য ভীষণ চেষ্টা করে। সময় বয়ে যায়, অসহ্য গরমে কখন যে দক্ষিণ আকাশে কালো মেঘ জমেছে তা খেয়ালই করতে পারে না ওরা দুজন। এক ঝাপটা বাতাস আসে ! বাতাসে উড়ে আসে ধুলোবালি। ওরা সেই বাতাসের মধ্যে হাটতে থাকে, প্রীতির ভীষণ ইচ্ছে হয় এখনই তার সাথে এমন কিছু হোক যেটা তাকে গ্রাস করে নিক চিরকালের মতো। ফুটপাত ধরে হেটে যায় ওরা দুজন, ওদের পাশ থেকে ছুটতে থাকে বাস-গাড়ি। ঝড় আসার আগে মানুষ ভীষণ উদ্বস্ত হয়, দমকা হাওয়ায় উড়ে যাওয়ার ভয়ে।
[গল্পটির প্রথম কিস্তি এখানেই শেষ হলো, সেই সাথে জানাচ্ছি যে, দ্বিতীয় কিস্তি খুব শীঘ্রই আসবে। গল্পটির প্রথম কিস্তি পড়ে আপনাদের কেমন লাগলো তা জানাতে পারেন। গল্পটির দ্বিতীয় কিস্তি আপনারা কবে চান, তা সম্পর্কে জানাতে পারেন কমেন্ট বক্সে। এ ছাড়াও এরকম আরও রোমান্টিক গল্প নিয়মিত পড়তে ডানপাশের বেল বাটনে ট্যাপ করে সাবস্ক্রাইব করে নিতে পারেন। যুক্ত হতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে।]
[লেখককে সমর্থন জানাতে, লেখকের পেইজে গিয়ে মেসেজ করতে পারেন।]