রক্তরস [চতুর্থ পর্ব]
চৌকাঠ পেরিয়ে ঘরে ঢুকলেন মুসলেম উদ্দিন। সকালের আলো ফোঁটা শুরু করেছে। পাখি ডাকছে,আকাশের দিকে তাকালে এখনো অস্পষ্ট আধ ফালি চাঁদ দেখা যায়৷ আর কিছুক্ষণ পর সূর্য উঠবে। আরো একটি দিন জীবন থেকে মুছে যাবে। জীবনের জন্য কি নির্দিষ্ট সময় আছে? যার বয়সের সীমারেখা যত! কেমন হতো যদি সবাই এক বয়সে মারা যেত? প্রকৃতি শুণ্যস্থান পছন্দ করে না,আনমনা হয়ে ভাবলেন মুসলেম উদ্দিন। শ্লমা জড়ানো গলায় ডাকলেন তার ছেলেকে, ‘মোতালেব? ও মোতালেব? এত বেলা কইরা ঘুমাইয়া থাকিস না বাপ! উঠ নামাজ পড়। মোতালেব গাঢ় ঘুমে মগ্ন। মোসলেম উদ্দিন আবার ডাক দেয়,তবে এবার তার পূত্রবধুকে৷”বৌ মা? ও বৌ মা? ওঠো। নামাজ পড়ো,এমন কইরা ঘুমাইলে চলব? ‘ কারো কোন সাড়া শব্দ নেই।
মোসলেম উদ্দিন কোরআন শরীফ পড়তে শুরু করেন।সুর করে পড়েন। চোখে আজকাল কম দেখেন তিনি, তবুও ঝুঁকে পড়েন। আল্লহা পাকের কালাম পড়তে হয় যে নির্ভুলভাবে।
হাঁস মুরগি ডাকাডাকি করছে। কোরআন তেলওয়াতের শব্দে ঘুম ভাঙে জামিলার। স্বামী তার তখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ঘুমাচ্ছে ছ’মাসের নবজাতক শিশুটি। কি মায়া মুখ দুজনের। ছেলেটাও হয়েছে বাপের মতো। নাক চোখ মুখ সব বাপের মতো হয়েছে৷ জামিলা তার স্বামীর গায়ে হাত রাখে, আবার ভাবে ঘুমাচ্ছে না হয় ঘুমাক আরেকটু৷ নবজাতক ছেলেটার খাতা ভিজে আছে কিনা দেখে নেয়। ভিজে গেলে ঠান্ডা লেগে যাবে,তারপর জ্বরটর বাঁধবে।
চুলগুলো কোন রকম বেঁধে জামিলা নামে খাট থেকে। বৃদ্ধ শশুর তখন সুর করর কোরআন তিলওয়াত করছে।জামিলা আগে যায় হাঁস মুরগির খোপের দিকে। হাঁস মুরগি বের হয় খোপ থেকে। সব থেকে বড় মোরগটি উড়ে গিয়ে টিনের চালে বসে,তারপর ডাক দেয়। ‘কুক্কুরুকু কুউউউউ’
***
সকাল বেলা ভাঙাচোরার শব্দে ঘুম ভেঙেছে আজগর খানের। তিনি এতক্ষণ মহা বিরক্ত হয়ে শুয়েছিলেন। সকালবেলা এই ভাঙাচোরার শব্দ। তিনি মুখ খিচিয়ে, বিড়বিড় করে বললেন, ‘শুয়োরের বাচ্চাটা বড্ড চ্যাতছে। দমন করা দরকার। তিনি খাট থেকে উঠে, লুঙিটা টাইট করে কোমড়ে বেঁধে নেন। তারপর হন হন করে হাটা দেন। কিছুক্ষণ পরে আর্তনাদ শোনা যায়। তবে এই আর্তনাদে কান্না নেই, আছে হাঁসি। অট্টহাসিতে ফেটে পরে খান মঞ্জিল। সব নিস্তব্ধ হয়ে যায়। শুধু অট্টোহাসির শব্দ শোনা যায়। আমগাছে বসা কাক উড়ে যায় কা কা করতে করতে।
শাড়ির আচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদে আফরোজা বেগম। কাজের মেয়ে মর্জিনা মাথা নিচু করে,কিছুক্ষণ বাদে মাথা জাগিয়ে বলে,’আম্মা চা দিমু, চা খাইবেন?’ আফরোজা বেগম ধমক দিয়ে বলেন,’এইখান দিয়া যা হারামজাদি, এখন আমার চা খাওয়ার সময়? যা কুত্তি! চোখের সামনে দিয়ে বিদায় হ। ‘
“ও ঘরে হাঁসি থামছে না, মোটা বেতের লাঠির বাড়ির শব্দ শোনা যাচ্ছে। “আজগর খান দাত মুখ খিচিয়ে পেটাচ্ছেন মানষিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে। তার ছেলে হাঁসছে। হাসির সাথে সাথে গালি দিচ্ছে। সেই গালিতে আজগর উদ্দিনের মেজাজ আরো খারাপ হচ্ছে। তিনি আরো পেটাচ্ছেন, বুড়ো হয়ে গিয়েছেন। এই বয়সে এত মারধর কড়া যায় না। মারধড় করতে গেলেও শক্তি লাগে৷
ছুটে আসেন আফরোজা বেগম। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন,’মাইরা ফেলেন। জনমের তরে শেষ কইরা দেন। মারেন। আল্লাহ গো! আমারে কি জীবন দিলা আল্লাহ। ‘ আজগর উদ্দিন মুখ খিচিয়ে বলেন,’এইখান দিয়া যা হারামজাদী। তিনি তার হাতের বেতের লাঠি ছুড়ে মারেন। লাঠি তার গায়ে লাগে না। ‘তিনি সরে যান।
মোসলেম উদ্দিন তার নাতীকে কোলে নিয়ে বসে আছেন। তার নাতীর সাথে খুনসুটিতে ব্যস্ত তিনি। ছোট বাচ্চাটি কখনো কেঁদে উঠছে। আবার কখনো হাঁসছে। তার ছোট ছোট দাঁত দেখা যাচ্ছে।
বাঁচ্চাটি কাঁদছে। মোসলেম উদ্দিন গোলা উঁচিয়ে তার পূত্রবধুকে ডাঁকছেন। বৌ মা, নাতীরে নাও। ক্ষিধা লাগছে মনে হয়!
জামিলা এসে কোলে নেয় ছোট্ট শিশুটিকে। মোসলেম উদ্দিন বলেন,’বকুল মাইয়াডায় খালার বাড়িতে যাইয়া উঠলো। ওরে খবর দাও, কত দিন বেড়াইবো আর? বাড়িতে থাকলে তোমার কাজে সাহায্যও তো করতে পারে। জামিলা বেগম বলে, ‘বেড়াইতেছে বেড়াক না। বিয়া হইয়া যাওনের পর কি আর বেড়াইবার সুযোগ পাইবো?’ মোসলেম উদ্দিন বিরক্ত হয়ে বলে,’এই কথা কইলে কি হইব?লেখাপড়া নাই ওর? কয়বার পরিক্ষা দিয়াও এসএসসিতে ফেল কইরা বইসা রইলো। এইবারও তো দিছে। পাশ করে কি না কে জানে।”
জমিলা গুন গুনিয়ে গান গাইছে। মোসলেম উদ্দিন পুকুরে গোসলে ব্যস্ত। যোহরের ওয়াক্ত হয়ে এসেছে। নামাজে যেতে হবে। আচমকা জামিলা বেগম চমকে ওঠে। বটিতে তার হাতের আঙুল কেটে যায়।
“আরে বকুল! তুমি আইলা? আওয়ার আগে জানাইবা না? কেমন আছো?”
বকুলকে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে জামিলা।
বকুল বলে,”আইলাম তো ভাবি,তোমার সংসারে আবার ভাগ বসাইতে।”
জামিলা বলে, “যাও! তোমার সব আজগুবি কথা। এই সংসার কি শুধু আমার? ”
বকুলের চোখ যায় জামিলার, “কাঁটা আঙুলের দিকে। ভাবি তোমার আঙুল কাইট্টা গেছে মনে হয়৷ রক্ত বাইর হইতাছে।একটু সাবধানে তরকারী কাঁটবা না?’ দেখি দেখি! হাতটা দাও। বকুল আঙুলটা মুখে পুড়ে নেয়। ‘ জামিলা বলে, ‘আরে আরে কি করো আঁইশটা হাত তো। ‘ বকুল বলে, ‘হউক যাইয়া আঁইশটা ফাইশটা, তুমি তো আমার ই ভাবী আর কারো তো আর না। ‘ জামিলা বেগম ননদের এমন মমতা দেখে হাঁসে।’
বিকেলের রোঁদ পড়েছে জমিলার মুখে৷ সে আড়ামে চোখ বুজে আছে। জামিলার মাথা বিলি করে দিচ্ছে বকুল। জামিলা চোখ বন্ধ রেখেই বললেন, ‘আচ্ছা বকুল,তোমার নাম কেন বকুল রাখলো?’
বকুল হাঁসে, ‘কি কও ভাবী আমার নাম বকুল রাখবে না তো কি রাখবে?’
জামিলা বেগম চোখ খুলে আবার বন্ধ করে বলে, ‘সেটা তো বলি নাই, বলছি তোমার নাম বকুল রাখলো কেন?’
বকুল হাসতে হাসতে বলে, ভাবী,ঘুরাইয়া ফিরাইয়া তুমি কিন্তু একই প্রশ্ন করলা। ‘
জামিলা বেগম এবার চোখ খুলে বকুলের দিকে তাকায়,’আরে মাইয়া! আমি কইছি তোমার নাম বকুল রাখলো কেন? ঘটনা টা কি?’
বকুল খিল খিল করে হাসতে হাসতে বলে, ‘আচ্ছা আচ্ছা কইতাছি। তুমি এখন আরাম কইরা বসো তো।
জমিলা আরাম করে বসে। বকুল আনমনা হয়ে বলে,’আম্মায় বাইচ্চা থাকতে তারা জিগাইছিলাম,আমার নাম বকুল রাখার কারন কি? আম্মায় কইলো- আমগো বাড়ির দক্ষিণ পাশে নাকি একটা বড় বকুল ফুল গাছ আছিলো৷ আম্মার আব্বার লগে বিবাহ হইয়া যখন এই বাড়িতে আসেন,তখন তার বয়স পনেরো কি ষোল। আম্মায় খুব বকুল ফুল পছন্দ করতেন। একদিন বকুল ফুল গাছে পাতা ঝইড়া যায়৷ হঠাৎ কইরা মরা যায় বকুল গাছটা। আমি জন্ম হওয়ার পরে আম্মায় আমার নাম শখ কইরা বকুল রাখেন। ‘ বকুলের চোখ ভিজে ওঠে৷ জামিলা বেগম চোখ খুলে তাঁকিয়ে দেখে। এই মেয়েকে কাঁদলে এত সুন্দর লাগে সেটা আগে জানতো না জামিলা বেগম। কী অপূর্ব চেহারা মেয়েটির। কী সুন্দর আঁখি যুগল!
জামিলা বকুলের চোখের জল মুছে দেয়,বাহুডোরে জড়িয়ে নেয় মমতা মেখে৷
****
খান মঞ্জিল নিরব হয়ে আছে। চেয়ারম্যান আজগর উদ্দিন বসে আছেন বারান্দায়। আজ তিনি পরিষদে জাননি।শরীর ভালো লাগছে না।সকালে বেশি মারধর করতে গিয়ে কোমড়ে ব্যথা পেয়েছেন। আজগর সাহেবকে এলাকার মানুষজন অজাগর চেয়ারম্যান বলে ডাকেন। ত্রানের চাল লুটপাট,গম চুরি চাল চুরি সহ বেশ কয়েকটা মামলা থানায় ঝুলে আছে। এখানে যে পুলিশ কর্মকর্তারা আসে তারা প্রথম দিকে গরম থাকেন আজগর সাহেবকে নিয়ে। আজগর সাহেব আবার তাদের সঙ্গে বেশ উঠাবসা করেন। কিভাবে কিভাবে তারা আর আজগর সাহেবের মামলা নিয়ে ঘাটেন না।
মামলার ফাইলগুলোতে ধুলো পরে যায়।
এলাকার লোকে তাকে “অজাগর” চেয়ারম্যান ডাকার কারন তার ভুড়ি। তার ভুড়ি দেখলেই মনে হয় আস্ত একটা চালের বস্তা তিনি পেটের মধ্যে রেখে দিয়েছেন। এই এলাকায় তার এক মাত্র প্রতিদ্বন্দী আজিজ মাষ্টার৷ অবশ্য সে শুধু একবারই তার প্রতিদ্বন্দি করেছিলো।নির্বাচনের পরের বছর আজিজ মাষ্টারের জমিজমা অধিকাংশ নদী ভাঙনে নদীতে বিলিন হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে আজগর সাহেবও আফসোস করেন এই এলাকায় তার প্রতিদ্বন্দি না থাকায়।
আজিজ মাষ্টারের অবশ্যি জনপ্রিয়তা বেশি।আজিজ মাষ্টারের পূর্ব পুরুষ জমিদার। টাকা ছাড়া এ দুনিয়া অচল। টাকা থাকলে মানুষ কেনা যায় টাকা দিয়ে ৷ আজিজ মাষ্টারের সে টাকা নেই৷
আজিজ মাষ্টার কাজের ছেলে মনিরকে ডাকলেন। মনির ছুটে এলো।
আজগর সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন,’এতক্ষণ কই ছিলি হারামজাদা? এত ডাকাডাকি করা লাগে কেন? কানে কি তুলা দিয়া রাখছোস?’ মনির মাথা নিচু করে বলে,’আপনার ডাক শোনার সাথে সাথেই আমি ছুইট্টা আইছি। আপনারে শুধু একবারই ডাক দিতে শুনছি।’
আনগর সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন,’চুপ কর কুত্তার ঘরের কুত্তা ! যা আমার চোখের সামনে দিয়া। ‘মনির হাঁটা দেয়। চেয়ারম্যান গলা উঁচিয়ে বলে,’ঐ বদের বাচ্চা,যাইতে বললাম আর হাঁটা দিলি? রামছাগল,গাধার ঘরের গাধা। ‘
মনির আবারও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
আজগর সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন,’আমার জন্য এক কাপ কড়া চা বানাইয়া নিয়া আসবি। আর তার আগে এক প্যাকেট সিগারেট নিয়া আসবি। দশ মিনিটের বেশি এক মিনিটও যেন ব্যায় হয় না। ‘ মনির মাথা কাত করে মনিবের কথায় সায় দিলো। সে দাঁড়িয়ে আছে, সে যাবে কি না ভাবছে।আবার যদি হাটা দেয় চেয়ারম্যান সাহেব তাকে এনে আবার ধমক দিতে পারেন। এই আতংক নিয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে। চেয়ারম্যান ঘাড় ঘুরিয়ে তাঁকালেন আমগাছটার দিকে। আনমনা হয়ে গেলেন। দুটো শালিক বসে আছে। জোড়া শালিক দেখা ভালো না খারাপ এ ব্যাপারে শৈশবে অনেক কথা শুনেছেন। তবে এখন ঠিক মনে করতে পারছেন না ভালো নাকি খারাপ।
ছোটবেলা থেকে তিনি আজিজ মাষ্টারকে চোখে দেখতে পারেন না। আজিজ মাষ্টারের বাবা এবং আজগর সাহেবের বাবা দুই সৎ ভাই ছিলেন। তাদের মধ্যে পারিবারিক ব্যবধান তৈরী হয় অনেক আগে থেকেই৷ ছোটবেলায় কলেজের ভিপি নির্বাচনে আজিজ মাষ্টার প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলেন আজগর সাহবের সাথে। আজিজ মাষ্টার সেবারও জিততে পারেনি। ছোটবেলায় আজগর সাহেবকে মেরেছেন আজিজকে মাষ্টারকে। একবার তো নদীতে চুবিয়ে মেরে ফেলার উপক্রম। আজগর সাহেবের ভালো লাগে এসব ভাবতে।
চেয়ারম্যান ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন মনির তার সামনে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। তিনি ভুরু কুঁচকে বললেন,’এর মধ্যে চা বানানো শেষ? কই তোর হাতে চায়ের কাপ নাই।’
মনির কাচুমাচু খেয়ে বলল,’আমি এইখান থেইকা নড়ি নাই চেয়ারম্যান সাব,আফনে যদি আমারে ধমক দেন।
চেয়ারম্যান মনিরের এমন হতবুদ্ধি দেখে,’গলার জোড়ে ধমক দিলেন। জোড়া শালিক দুটো উড়ে গেলো। মনির মাথা নিচু করে হাঁটা দিলো। ধমক দিতে গিয়ে চেয়ারম্যানের গলার শিরায় টান লেগে ব্যথা পেয়ে হাত দিয়েছেন গলায়। বিড়বিড় করর বললেন,’এমন বদের বদ,হতচ্ছাড়া,সাচ্চা গাধেকা বাঁচ্চা।
চেয়ারম্যান সাহেব বসে আছেন পুকুরের পাড়ের বৈটকখানায়৷ তার শরীর ভালো যাচ্ছে না আজকাল। সেদিন মনিরকে ধমক দিতে গিয়ে গলার রগে যে টান লেগেছে সেটা এখনো সারে নি।
পুকুরের পাড় ঘেসে বাড়ির পিছনের রোড দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো রনি। চেয়ারম্যান সাহেব বললেন,’যাচ্ছিস কোথায়? ‘ রনি হাতদুটোকে পিছন মোড়া করে বলল,’যাই ঘুইরা আসি। ‘ চেয়ারম্যান বলল,’তোর নামে থানায় কেস কান্ড ঝুইলা আছে। ঝামেলা যা করছোস বহুত। আর করিস না। আমার কানে যেন আর কোন ঝামেলার কথা না আসে। ‘
রনির ঠোটের কোনে হাঁসির রেখা ফুটে উঠলো। যেন সে বাবার কথাকে গ্রাহ্য করেনি। রনি বলল,’আব্বা আপনার পিছনে যে মামলা গুলা আছে ঐগুলা সামলান আগে। নিজে পাপী হইয়া অন্য কাউরে পূন্যের কথা শোনানো উচিত না। ‘
চেয়ারম্যান রগচটা হয়ে জবাব দিলেন,’নেমকহারাম জন্ম দিছি একটা। কুত্তারবাচ্চা আমার সামনে দিয়া বিদায় হ৷ দুরে গিয়ে মর। ‘
রনির মুখে আবারও হাসির রেখা ফুঁটে উঠলো,সে বলল,’আব্বা, নিজের মুখের থুতু আকাশে ছিটাইলে নিজের মুখেই পড়ে। আপনি আমারে যে গালি দেবেন, সব আপনার গায়ে লাগবে।এই যে একটু আগে কুত্তার বাচ্চা কইলেন। তাইলে কি আপনি..?’
চেয়ারম্যান রাগন্বিত হয়ে ধমক দিতে গেলেন। আবারো গলার রগে টান খেলেন সজোরে। এবার ব্যথায় বসে পড়লেন।
রনি হনহন করে হাঁটা দিলো পুকুরের পাড় ঘেষে। চেয়ারম্যান ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে বললেন,’নেমক হারাম পয়দা করছি৷ মর তুই, গাঙ্গের জোয়ারে ভাইস্যা যা। ‘
মাথার উপরে সিলিং ফ্যান ঘুরছে, অসহ্য গরম পড়েছে আজকাল। গরমে টেকা যায় না। চৈত্রমাসের অসহ্য গরম।
লোকজন খুব একটা আসে না আজকাল। যে গরম পড়েছে এতে গায়ে কাপড় রাখাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চালান ও আসে না ঠিকঠাক মতো। এইরকম চলতে দেওয়া যাইবো না।
ফ্যান বন্ধ হয়ে গেলো,ইলেক্ট্রিসিটি চলে গিয়েছে৷ পান খেয়ে ঘোল্লায় ধরেছে। পিকদানি তে পিক ফেলছে নদীবানু। সব থেকে খারাপ খবর হচ্ছে তার কাছে বড় চালানের লোকজন আসছে না। চালান না আসলে চোতাও আসবে না। দরজায় ধাক্কা দেওয়ার শব্দ হলো। নদী বানু চেঁচিয়ে উঠে বলল,’কেডা? এই দুপুর বেলা? ‘ ওপাশ থেকে শ্লমা জড়ানো গলায় একজন বলল,’চোতা লইয়া আইছি খোল। ‘
নদী বানু বলল,শইল্যে কাপড়ের ঠিক নাই, এখন দরজা খুলবার পারুম না। গরমে বাঁচি না। ‘
ওপাশ থেকে রাগন্বিত হয়ে কেউ একজন বলল,’খোল মাগি! দরজা খোলার আগেই কাপড় খুইল্ল্যা বইয়া আছোস ক্যা?’
নদী বানু উঠে দরজা খুলে বলল,’বাপের খোঁজ নাই একসপ্তাহ পোলায় আমার হাজির! ওরে আমার কাছে পোলা!
রনি শার্টের বোতাম খুলছে , নদীর এমন কথা শুনে বলল,’খবরদার নটির ঘরের নটি! আমারে পোলা কইয়া ডাকবি না। নটির বেটি নটির মতো থাক। ‘
নদী রনির গায়ের কাছে ঘেষে গলায় মধুর সুর এনে বলে,’ওরে আমার ভাতার! এত রাগ হয় কেন?’ রনি নদীর উত্তপ্ত শরীরের দিকে চোখ বোলায়।নদী বানুর মুখ থেকে ভকভক করে জর্দার ঘ্রান বের হয়। শিহরণ বয়ে যায় তার সারা দেহে।নদীর গা থেকে মিষ্টি ঘামের গন্ধ বের হয়। রনি নাক দিয়ে ঘ্রান নিতে যায়। নদী ফিসফিসিয়ে বলে,’সেই তো দুই বাপ বেটা এসে এই নদীতেই ডুব দিস,আর কিছু বললেই দোষ? রনি দুরে সরে যায় হঠাৎ করে৷ নদীবানু খিলখিল করে হাসে। যে হাঁসি নদীর ঢেউ আছড়ে পড়ার শব্দের মতো।