শেষ গল্পের শুরু

শেষ গল্পের শুরু

কুমিরাং কুমির

বিশ্বাস কর মেয়ে! তাের সাথে প্রতিটিবার যখন কথা বলি তখন ঠিক বুকের মধ্যেখানে এক ধরনের কম্পন অনুভূত হয়, ঠিক কম্পন নয় আবার কম্পনও বটে। এ এক ধরনের  অসাধারণ সুখকর অনুভূতি। আর হ্যাঁ শোন, মেঘাচ্ছন্ন দিনে গোধূলি বেলায় তুই যখন তোর খোলা চুল নিয়ে ছাদে গিয়ে বৃষ্টির অপেক্ষা করিস তখন তােকে অসম্ভব সুন্দর লাগে। আরও অপরূপ লাগে যখন তাের চোখে মুখে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে আর তুই হেসে উঠিস আকাশ পানে চেয়ে। তখন ইচ্ছে হয় তােকে শূন্যে তুলে নিয়ে একসাথে ভিজি আর দুজনে উচ্চস্বরে হেসে উঠি। আবার কখনো ইচ্ছে হয় তাের সাথে হেঁটে যাই বহুদুর দুরান্তে। সত্যি বালিকা তুই অপরূপা। তােকে বিশেষায়িত করার জন্য এখনও কোন শব্দ আবিষ্কার হয় নি রে পাগলি। বড়, বড় ভালবাসি তােকে।সব কল্পনা যখন স্বপ্নে দেখা যায় সত্যি তা সুখকর।আমি তোমার নিষ্ঠুরতা ভালবাসি। তুমিও বাবা আমার ধ্বংসযজ্ঞ। 

স্নিগ্ধ…অঅঅঅ………(একটি আর্তচিৎকার কিংবা…… 

স্নিগ্ধাকে সেই কলেজ লাইফ হতে পছন্দ করে স্নিগ্ধ। কলেজে কখনো কথা বলে নি ওর সাথে। কতবার মনে মনে ভেবেছিল মেয়েটিকে একটিবার হলেও বলবে, এই মেয়ে, শোন হ্যাঁ! তুমি, কেমন আছাে? কি খবর! খুব সহজ কিছু প্রশ্ন কিন্তু কখনো বলা হয়নি। সহজ কথা সহজে বলা যায় না। সেকশন অদল বদল খেলায় কিভাবে যেন

তিন মাস তারা একই সেকশনে ছিল। তারপর শুধু সিড়ি কিংবা করিডোরে এক চিলতে দেখা, সামান্য সাক্ষাতেই স্নিগ্ধের মনে এক টুকরো হাসি চুমু খেত। যাক দেখা তাে পেলাম, এই বেশ। সিগ্ধাকে তার খুব ভালাে লাগে, সব ভাললাগা আসলে ভালোলাগা না। কিন্তু স্নিগ্ধ যেন বুঝেও বুঝতাে না, ভালাে লাগা আর বাসার

গোলচত্বরে কেটে যায় কলেজ জীবন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করে স্নিগ্ধ, এক গাদা ভালাে বন্ধু, মন্দ শত্ৰু কতকিছুই তার জীবনে আসে কিন্তু সবই যেন ফ্যাকাশে রঙ, কাউকেই তেমন ভালো লাগে না।তাছাড়া ক্লাসও তেমন বেশি হয় না। একদিন তার দলছুট সঙ্গীদের সাথে ভিন্ন।ডিপার্টমেন্টে ক্লাসে স্নিগ্ধকেই হারিয়ে ফেলে। সামনে বসা মেয়েটা কি স্নিগ্ধা? একি!

বাস্তব নাকি অবাস্তব কোনাে দুঃস্বপ্ন। একটু এগিয়ে গিয়ে যখন তাকালাে, স্নিগ্ধের নিশ্চিন্ত জোড়া চোখ যেন এক টুকরো মুখের পানে চেয়ে থাকতে চায় সহস্র জীবন! 

মুখটাকে ফেসবুকে হাজারাে মুখের ভিড়ে খুঁজেছে লাখােধিকবার, মনে মনে হয়তো মিলিয়ন বার। স্নিগ্ধের সঙ্গীরা অন্যান্য মেয়েদের পাশাপাশি স্নিগ্ধার সাথে কথোপকথন করল বেশ কিছুক্ষণ কিন্তু স্নিগ্ধ শান্ত চোখে সহস্র জনমের জন্য তৃষ্ণা নিয়ে শুধু তাকিয়েই রইল। ক্লাসে শেষে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ঠেলে বলেই ফেলল, তুমি কি আমাদের কলেজে ছিলে না? আসলে এই প্রশ্নটা সে করতে চায় নি, এই মেয়ে তুমি কি জানো তোমার চোখ দুটো খুব বিচ্ছিরি, তবুও এই চোখ জোড়া কতবার খুঁজেছি তুমি কি তার ধারণা রাখ? তুমিও এও জানাে না যে তোমাকে আমি…না সব প্রশ্ন করতে চাইলেও করা যায় না। স্নিগ্ধা তাকে চিনে ফেলল। মনে মনে চেয়েছিল হয়তো স্নিগ্ধার

নম্বরটি নিতে কিন্তু পারলো না। অন্য বন্ধুদের কাছ থেকে ফেসবুক আইডিটা নিয়ে নিলো ঠিকই। তারপর রিকুয়েস্ট একসেপ্ট এর নোটিফিকেশন স্নিগ্ধকে খুশির জোয়ারে দুলিয়ে দিল কিছুক্ষণ। অতঃপর ফেসবুকে চলতে থাকে ফর্মাল কথাবার্তা। স্নিগ্ধের ধারণা হয়, মেয়েটি হয়তো তার ভালো লাগা বুঝতে পেরেছে। কথায় কথায় সে নিশ্চিন্ত হয়ে নিল ওর কোন বয়ফ্রেন্ড নেই এবং ব্যাপারটাতে স্নিগ্ধ যেন নীরব সুখ অনুভব করল। স্নিগ্ধারা তিন বোন, বাবা ব্যবসায়ী, কঠিন আদমি। দু’জনার কথাবার্তা ভালই চলছে।স্নিগ্ধ বারবার তার বেস্ট ফ্রেন্ড হতে চাইলেও স্নিগ্ধা নামের মেয়েটি সায় দেয় না, অনিশ্চিত এক উত্তর দেখা যাক।

-তুমি অনেক রাগী তাই না? স্নিগ্ধা বলে, হয়তো বা। 

-আচ্ছা এমন কি কখনো হয়েছে যে কোনো সুবোধ বালক তোমাকে শান্ত স্বরে বলেছে-ভালোবাসি? 

-না,কেউ না। ভয়েই করে না।

– হুম, যেচে থাপ্পর কে খেতে চায়। এভাবেই কথা চলে, সামান্য রসিকতা। 

ঈষৎ খুনসুটি। তবুও স্নিগ্ধা কেন জানি স্নিগ্ধ কে বন্ধু ভাবে না! হয়তো ভাবে তবে বুঝতে দেয় না। মেয়েরা বেশ জটিল সাইকোলজি নিয়ে জন্মায়। তাদের চ্যাট গুলো বেশিরভাগ রাতেই হতে থাকে একটা সময়ে স্নিগ্ধাও কিছুটা ফ্রি হয়। বেশ ভালো। এরপর বেশ কিছুদিন পর.. স্নিগ্ধ বুঝতে পারে তার চত্বর ঘােরা শেষ, অর্থাৎ ভালোলাগাটা ভালোবাসারই সর্বনাম হয়ে ছিল এতদিন, এখন তা বিশেষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিন সে বলে, তোমাকে কলেজ লাইফ থেকে দেখে আসছি, কেন জানি খুব ভালো লাগে। ভালোবাসা শব্দটা কোনো এক কারণে গোপন থেকে যায়। তবে কিছুদিন পর স্নিগ্ধার ইনবক্সে মেসেজ পাঠায় সে,

-আজ আমার এই তৃষ্ণা কাতর দু চোখ নিয়ে আমি চেয়ে থাকি তোমার পথের পানে। পড়ন্ত বিকেলের কল্পনায় এসেছিলে মনের আয়নায় বৃষ্টি ভেজা সেই গোধূলি বেলায় ভেবে নিয়েছিলাম তোমায়-আমায় খােলা আকাশের নিচে ছাদের উপরে লাল শাড়ি আর সাদা পাঞ্জাবিতে। রংধনু মাখা সেই সন্ধ্যেতে বলেছিলাম তোমায় ভালােবাসাে কি আমায়? আমার কাঙ্ক্ষিত চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিয়েছিলে আমায় ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরলে আমায় আর বিচরণ করলে হৃদয়ের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে তােমার শরীরের সেই মিষ্টি ঘ্রান ভালোবাসি বলবার সেই মিষ্টি কণ্ঠস্বর পাগল করা গোলাপি ঠোঁটের আভার সেই স্নিগ্ধ হাসির সাথে আলতো করে একটু চুমু খাওয়া কখনো যাবে না ভোলা ভালোবাসবে কি আমায় ?

Pretty, I think I’m in love with you. 

মেসেজটা স্নিগ্ধা দেখেও চুপ রইল। কিন্তু কিছু বলে না। বেশ কিছুক্ষণ……… সে বলল, দেখ এই অনুভূতিটা তাে আর জোর করে কারও মধ্যে আসে না। আমার মধ্যে এমন কোনাে অনুভূতি নাই, I am SORRY.

-হুম… থ্যাঙ্কস্ ফর দি রিপ্লাই। আর সামনাসামনি দেখা হলে একটা থাপ্পড় দিয়ে দিও। এরকম ভয়ানক কাজের জন্য।

 -থাপ্পড় মারার কিছু নাই..। স্নিগ্ধ নিজেকে নির্বোধ মনে করতে লাগল, শুধু কবিতা পাঠালেই হতাে। এভাবে কেউ কাউকে প্রপোজ করে নাকি। কি বড় বোকামি সে করল। নিজেকে নিজেরই থাপ্পর দিতে ইচ্ছে করছে। যাইহােক, তাদের কথা চলতে থাকে। বেশ ফ্রি হয়ে যায় দুজনে। তোমার নাকটা বাঁকা,দাঁত হলুদ- এই টাইপ খুনসুটি। ৩১ ডিসেম্বর, বছরের শেষ দিন। স্নিগ্ধের হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ। স্নিগ্ধা গোলাপ পছন্দ করে। স্নিগ্ধের জামার পকেটে একটি ছোট বাক্স। এসব বক্সে সাধারণত আংটি থাকে। হ্যাঁ তাই ঠিক। স্নিগ্ধা ওর পাশে দাঁড়ানো। বেশ

কিছুক্ষণ তারা চুপচাপ দাঁড়িয়ে। টিউশনির খরচ দিয়ে কেনা গিফট গুলো স্নিগ্ধাকে দেয়ার জন্যই কেনা কিন্তু স্নিগ্ধার সোজাসাপটা উত্তর ফ্রেন্ড হিসেবে আমাকে কেউ এভাবে কিছু দেয় নি, সাে তুমিও দিবানা। 

-নিলে কি হবে বাবা, ফ্রেন্ড হিসেবেই তো দিচ্ছি।

-নিতে পারবাে না। 

-নিবা না? না ই কি তোমার শেষ উত্তর? স্নিগ্ধা আবারও বলল, না। বলতে কোন কষ্ট হলাে তার। স্নিগ্ধ ফুলের তােড়াটি ফেলে দিল, বুক পকেট থেকে কালাে ছোট্ট বাক্সটিও ফেলে দিল। মাটিতে পরতেই একটা চকচকে কিছু একটা চকচকে বেরিয়ে গেল। স্নিগ্ধের চোখ ভিজে যেতে লাগল। ছেলেদের কান্না খুবই বেখাপ্পা জিনিস। তুমি বাসায় যাও স্নিগ্ধা, ভারী কন্ঠে স্নিগ্ধের অস্পষ্ট ভাষা। স্নিগ্ধা পুরাে ব্যাপারটা সামলে নেবার আগেই স্নিগ্ধ দ্রুত বেগে বেশ দূর চলে গেল।

স্নিগ্ধ…অঅঅঅ.. স্নিগ্ধা চিৎকার স্বরে বলছে আমি তোমাকে সত্যিই তোমাকে ভালােবাসি। সত্যিই। একটা ট্রাক দ্রুতবেগে হর্ন দিতে দিতে ফুটপাতের দিকে এগোচ্ছে।

অতঃপর তারা খালি পায়ে হাঁটে, আকাশ ছিড়ে বৃষ্টি পরে,দুজনে হাতে হাত রেখে বৃষ্টিতে ভিজে আর পাগলের মত হাসে, নীল শাড়ির আঁচল পিচের সাথে চুমু খায়, বাস্তব অবাস্তবের মাঝামাঝিতে গল্পটা থেমে যায়।

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
জোবায়ের রাজুর দুটি গল্প

জোবায়ের রাজুর দুটি গল্প

অকৃজ্ঞ  রিনা খালাকে মাঝে মাঝে আমার আধা পাগল মনে হয়। মাঝে মাঝে কি সব অদ্ভুত আচরন করেন। এ বয়সে তার নাকি শখ হল নাচ শেখার। ...
বাংলার রূপ

বাংলার রূপ

 ইমরান হোসাইন   এই বাংলায় হয়েছিল যে দেখা কথা ছিল হবে আবার দেখা , এই বাংলা রয়ে যাবে চিরকাল তুমি রবে না একা । আবছা ...
কথা

কথা

মহীতোষ গায়েন যদি বলো শুধু কথা বলে কি লাভ হবে? আসলে সব কিছু লাভ দিয়ে বিচার হয় না,তাছাড়া কখন কিভাবে কাকে দিয়ে  কি লাভ হবে ...
কবিতা- একাকী আলিঙ্গন

কবিতা- একাকী আলিঙ্গন

তন্ময় ঘোষ   যে কাঁধটা আর ভরসা করে না সেই হাতটা এখনো দেখা যায় চোখের পাশে কালশিটে দাগটা, ধর্ষণ যখন নিশ্চিত- নিতেই হবে ওই কলঙ্কের ...
সূর্য দীঘল বাড়ি

সূর্য দীঘল বাড়ি

জোবায়ের রাজু আমিন সাহেবের মন খারাপ। চিরকাল সুস্থ সবল মানুষটার শরীরে আজ এই রোগ তো কাল ওই রোগ ধরা পড়ছে। হার্ট, প্রেসার, শ্বাসকষ্টের পর সর্বশেষ ...
The Top 11 Traits Health Ceos Have in Common

The Top 11 Traits Health Ceos Have in Common

Cursus iaculis etiam in In nullam donec sem sed consequat scelerisque nibh amet, massa egestas risus, gravida vel amet, imperdiet volutpat rutrum sociis quis velit, ...