শেষ চিঠি

শেষ চিঠি

 তাসফীর ইসলাম ইমরান

মনবালিকা,

অনেক স্বপ্ন ছিল করোনা যুদ্ধ চলাকালীন বৈরী সময়ে তোমার সঙ্গে ম্যাসেঞ্জারে গুটুর গুটুর করব। তোমার মন আকাশে রঙিন সুতোয় ঘুড়ি ওড়াব। আমি তোমাকে ইনিয়ে-বিনিয়ে কত কি লিখতাম। তুমি তার একটিরও জবাব দিতে না।

পাগলের প্রলাপ মনে করে হেসে উড়িয়ে দিতে। সাড়ে চার হাজার ম্যাসেঞ্জারের মধ্যে তোমার ম্যাসেঞ্জারটাই আমায় খুব করে টানত। সারাক্ষণ উবু হয়ে পড়ে থাকতাম তোমার ইনবক্সে।

তোমার ইনবক্সের সবুজ বাতি আমায় সুইট সিক্সটিনের স্বপ্ন দেখাত। তুমি তার কিছুই বুঝতে না। অথবা বুঝেও না বোঝার ভান করতে। কিংবা কখনো কখনো ইচ্ছে করেই এড়িয়ে যেতে আমায়। তোমার একটু হাসি, একটু মিষ্টি কথা আমায় স্বর্গ সুখ এনে দিত।

এমন করতে করতে একদিন খুব ভাব হলো তোমাতে আমাতে। সম্পর্কটা যখন খুব মাখামাখি পর্যায়ে ঠিক তখন পাহাড় হয়ে দাঁড়াল করোনা। দুজন ছিটকে পড়লাম দুদিকে। অনির্দিষ্টকালের জন্য দূরে সরে গেলাম আমরা।

তোমার যখন ঠাণ্ডা-কাশি শুরু হলো ঠিক তার কিছু পরে আমারও। তুমি সেরে উঠলে। আমার আর সেরে ওঠা হলো না। আমার ঠাণ্ডা-কাশি, গলাব্যথা বাড়তে লাগল।

এ কথা জানিয়ে ম্যাসেজ দেয়ার পর পরই তুমি আমায় ব্লক করে দিলে। কারণ এছাড়া তোমার আর কোনো পথই খোলা ছিল না। আমার ছেলেমানুষী তোমাকে বড্ড পীড়া দিত। তাই হয়তো আমার কাছ থেকে বাঁচতে তুমি আমায় ব্লক দিলে। এরপর আমি আর তোমাকে খুঁজে পাই না। আজন্মের মতো হারিয়ে ফেলি তোমাকে। আমাকে দেয়া ফোন নম্বরটাও তুমি বদলে ফেলো, পাছে তোমায় আমি খুঁজে বের করি।

 

শরীরটা দিন দিন আরো খারাপ হতে থাকে। তারপর অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ধরা পড়ে করোনা। শরীরের করোনা যতটা না কষ্ট দেয়, মনের করোনা তার চেয়ে বেশি কষ্ট দেয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে শেষ হয়ে যাই আমি। ইচ্ছে করেই আর ওষুধ খাই না। ওষুধ খেলেই আমি সেরে উঠব। আর সেরে উঠলেই তোমাকে মনে পড়বে, মনে পড়বে তোমার ম্যাসেঞ্জারকে। শত চেষ্টা করেও তোমার ম্যাসেঞ্জারের মায়া কাটাতে পারি না।

জীবনে বহুজনকে ভালো লেগেছে, বহুবার ভালো লেগেছে। তোমার মতো এত ভালো কাউকে লাগেনি। কখনো লাগেনি। অসুস্থ শরীর নিয়ে আজও আমি ঘুম চোখে তোমার আইডি খুঁজে বেড়াই, খুঁজে বেড়াই তোমার ইনবক্সের সবুজ বাতি। যদিও জানি এ বাতি আমার নয়, কখনো আমার হবে না। তবুও অহেতুক ভালো লেগে যায় কাউকে কাউকে।

প্রেমেতো আমি কম পড়িনি। কিন্তু এমন তুমুল তাড়না কখনো অনুভব করিনি কখনো। কারো প্রেমেই নয়। যদি সত্যি আমি মরে যাই, আমার জন্য একটুও কি তোমার মন কেমন করবে না? এক ফোঁটা জলও কি গড়িয়ে পড়বে না আমার কফিনের ওপর?

না পড়–ক, আফসোস নাই। আজ আমার করোনার জন্য তুমি আমায় ত্যাগ করলে। তোমার করোনা হলে কি আমি পারতাম তোমায় ত্যাগ করতে? মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও আমি হাসতে হাসতে গিয়ে জড়িয়ে ধরতাম তোমায়। না হয় করলামই মৃত্যুকে আলিঙ্গন। বিধাতা আমায় সে সুযোগও দিল না। আমারও দেয়া হলো না ভালোবাসার পরীক্ষা।

আমি এখন একা একটি রুমে অবরুদ্ধ। চিকিৎসা চলছে সেরে উঠব কিনা জানি না। যদি মরে যাই আমাকে ক্ষমা করো। আর যদি কোনোভাবে বেঁচেই যাই তাহলে আরেকবার অন্তত তোমার মুখোমুখি বসে ধোঁয়া ওঠা এককাপ গরম চা খেতে চাই।

মনবালিকা, খাওয়াবে তো আরো এককাপ ধোঁয়া ওঠা চা? নাকি করোনা যুদ্ধের যোগাযোগহীনতায় তুমি আমাকে পুরোপুরি ভুলে গেছ। যদি সত্যিই মন উঠে যাই তবে আর কখনোই তোমাকে আমার মুখও দেখাব না। আমার মন বাগানের পুরোটাই আজ তোমার দখলে।

মনবালিকা, আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। কিছুই আর দেখতে পাচ্ছি না। সব কেমন যেন ঘোলাটে আর অস্পষ্ট হয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে আমি মরে যাচ্ছি। আর বুঝি কখনো দেখা হবে না, আর বুঝি কখনই তোমার পাশে বসে আমার চা খাওয়া হবে না।

মনবালিকা, আমায় ক্ষমা কর। কি ভয়ঙ্কর জ্বালানোই না জ্বালিয়েছি তোমায়। আজ শেষ বেলায় খুব অনুশোচনা হচ্ছে। তবুও তোমার হাত ধরে ক্ষমা চাওয়া হলো না। হলো না আরো অনেক কিছুই।

ভালো থেকো মনবালিকা।

 

ইতি

তোমার অনাদরে ঝরে যাওয়া

করোনা বালক।

 

শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ সার্ভে প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়।

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
ছোট গল্প - বাপের বাড়ি

ছোট গল্প – বাপের বাড়ি

ডঃ গৌতম সরকার গঙ্গার দিক থেকে একটা হাওয়া এসে চিতার আগুনটাকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। এদিকটায় কোনো আলো নেই। দূরে ডোমের এক কুঠুরি ঘরটায় একটা অল্প পাওয়ারের ...
অণুগল্প - বোহেমিয়ান

অণুগল্প – বোহেমিয়ান

তারেকুর রহমান বাহিরে একটু তাকিয়ে দেখ একটা ল্যাম্পপোস্ট ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। অথচ পৃথিবী ঘুমিয়ে, চারদিকে নিস্তব্ধতা। কিন্তু ঐ ল্যাম্পপোস্টটার দাঁড়িয়ে থাকায় একটুও ক্লান্তি নেই। আমি ...
পাঁচটি কবিতা

পাঁচটি কবিতা

মুহাম্মদ রফিক ইসলাম কবিতাঃ (০১) প্রেম, শাড়িতেও বোনা যায়  অনাবৃষ্টির কোলে শালুক বোনা মাঠ। রোদ্দুর চিরে উত্তরীবায়ু পাখনা ম্যালে। ব্যাঙের নাকে গন্ধ মেঘ! মেঘ ওড়ে, বিড়ালপায়ে হাঁটে ...
বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতে; মা'কে নিয়ে যে গানগুলো হৃদয় ছুঁয়ে যায়!

বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতে; মা’কে নিয়ে যে গানগুলো হৃদয় ছুঁয়ে যায়!

আশিক মাহমুদ রিয়াদ আজ মা দিবস। মা-ছোট্ট একটি শব্দ। কিন্তু এই শব্দের পরিধি কিংবা বিস্তৃতি কি বিশাল। সৃষ্টি শুরু থেকে এই শব্দটি শুধু মধুর নয়,ভালোবাসার,আবাগের,ক্ষমতার ...
ভিন্টেজ রেডিও

ভিন্টেজ রেডিও

আশিক মাহমুদ রিয়াদ গলির মাথায় তিনতলা বাড়ি! আকাশ থেকে নেমে আসা মেঘের ফালি। শহরের রাস্তাগুলোতে অন্ধকার কান্না করতে পারে না। ভেজা রাস্তায় স্ট্রিট লাইটের আলোয় ...
হেমন্তের গান - সোমা মুৎসুদ্দী

হেমন্তের গান – সোমা মুৎসুদ্দী

 সোমা মুৎসুদ্দী    হেমন্তের আগমনী গান,  জুড়িয়ে দেয় সবার প্রাণ।  সবুজ মাঠে কৃষকের হাসি,  দেখতে আমি বড়ো ভালোবাসি।  নতুন ধানের এলো মৌসুম,  পিঠে ও পুলি ...