ফাল্গুনী খান
ডিভোর্স এর ৩ বছর পর আবার নীল এর সাথে অনুর দেখা।অনু ভেবেছিল ওকে দেখার পর তার তেমন কোন অনুভূতি কাজ করবে না।
কিন্তু না দেখতেই কেমন যেন হয়ে গেলো।অস্থির হয়ে উঠলো, কি করবে বুঝতে পারতে ছিল না। কখনো ভাবেনি অনু নীলের সাথে ওর আবার দেখা হবে।নীল যেন দেখতে না পায় তাই তাড়াহুড়ো করে শপিং মল থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু পারলো না।নীল পিছন থেকে এসে অনু বলে ডাক দিল।মেয়েটির নাম আনিকা। নীল ভালবেসে অনু বলে ডাকতো আর নীল এর নাম নীলয়, তাকেও ভালবেসে অনু নীল বলে ডাকত।অনু ডাক শুনে থমকে গেল।অনু ভাবলো নামটা তার আজও মনে আছে। পিছনে ফিরে অনু নীলকে জিজ্ঞেস করলো “কেমন আছো নীল?” নীল উওর দিল “ভালো আছি” “তুমি কেমন আছ?” অনু উত্তর দিল “ভালো”। তারপর কিছুক্ষণ কথা বলার পর দুজনে চলে গেলো।বাড়ি যাবার পর দুজনেরই তাদের পুরানো স্মৃতি কথা মনে পরে গেলো।দুজনের চোখে পানি। দুজন দুজনকে ভালবেসে বিয়ে করেছিল। বাড়ীর লোক প্রথমে মেনে নিতে চায়নি দুজনে মানায়। তারপর খুব সুন্দর করে বিয়ে হয়।বিয়ের প্রথম তারা খুব ভালো ছিল কিন্তু যখন তারা তাদের কর্মে ব্যাস্ত হয়ে পরলো কেউ কাউকে সময় দিতে পারতো না।নীল এর কাজের চাপ আরো বেড়ে যায়।এমন প্রতিদিন তাদের বিভিন্ন ছোট ছোট বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতো, দুজনের প্রতি দুজনের অসহ্য আর ঘৃণা জন্মালো।এই সমস্যা তাদের বিচ্ছেদ ঘটায়।তারপর যে যার মতো থাকতে শুরু করে এভাবে ৩ বছর কেটে যায়।কেউ আর বিয়েও করেনি।কিন্তু আবার দেখা তাদেরকে খুব এক না বলা যন্ত্রণায় ভোগালো।৭ দিন পর নীল অনুকে মেসেজ দিল ” কেমন আছ?” অনুও স্বাভাবিক ভাবে উওর দিল। কিছু খন কথা বললো।এভাবে আবার তাদের মাঝে যোগাযোগ শুরু হলো।নীল করলো। আবার বন্ধুতো হলো। দুজনেই বুঝেছিল তারা কেউ কাউকে ছেড়ে একা থাকতে পারবে না।নীল আবার বিয়ের প্রস্তাব দেয় অনুকে। অনুকে মেয়েও নেয়। বাড়ীর লোককে আবার রাজি করায় তারা।আবার শুরু হয় বিয়ের আয়োজন, বিয়ের সাজ,আলোকসজ্জা, গান বাজনা। বিয়ের দিন বউয়ের সাজে অনু বসে আছে নীলের জন্য, হঠাৎ এক ফোন, ফোনের ওপার থেকে একজন বলছে বরের গাড়ীর দূর্ঘটনা হয়েছে, বর হাসপাতালে ভর্তি। হাত থেকে ফোনটা অনুর পরে যায়। এক দৌড়ে নিচে নেমে গাড়ী নিয়ে বের হয়ে যায়। নিয়তির কি করুন খেলা অনুর গাড়ীও এক্সিডেন্ট করে। সে রাস্তায় পরে আছে গাড়ীর নিচে ওদিকে নীল মৃত্যুসজ্জায়।দুজন দুই জায়গায় বসে মৃত্যু সাথে লড়ছে কিন্তু তাদের মন এক স্থানে।দুজনে মারা যায়।দুজন আবার নতুন করে শুরু করতে চেয়েছিল।বর-কনে তৈরি ছিল, আয়োজন ছিল,ছিল না শুধু তাদের মিলনের স্থানটা।সেটা হয়তো ওপারেই ঠিক হয়ে আছে। দুজনের কবর পাশাপাশি একি স্বপ্ন, একি পথ ধরে হাটা শুধু মানজিল টা ধরতে পারল না। আগেই কাচের মতো স্বপ্ন টা আবার ভেঙে গেলো।