এক কাপ চা
জোবায়ের রাজু
আকরাম তার ফেসবুক আইডির নাম দিয়েছে আকরাম খান। চার মাস আগে তার সাথে পরিচয় আমার। প্রথমে আপনি, পরে সম্পর্ক গভীর হতে হতে আপনি থেকে আমাদের সম্পর্ক ‘তুমি’তে গড়ায়। ঢাকার ছেলে আকরাম ওর চাকরির পোষ্টিং নিয়ে আমাদের জেলা সদরে এসেছে। কি একটা কম্পানিতে সে কর্মরত। জেলা সদরে আসার তিনদিনের মাথায় একদিন অনলাইনে বলল ‘আমি তো তোমাদের এখানে চলে এসেছি। একদিন দেখা করো।’ আমি রাজি হলাম।
যথা সময়ে খাড়া দুপুরে জেলা সদরে গিয়ে আকরামকে কল দিলাম। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে দারুণ স্মার্ট এক সুপুরুষ আমার সামনে এসে দাঁড়াল আকরামের পরিচয় নিয়ে। সাক্ষাতÑমোলাকাত হয়ে গেল ফেসবুকের কাঙ্খিত মানুষটার সাথে। প্রথম সাক্ষাতেই বুঝে গেলাম আমার বন্ধুটির ভিতরে এক আন্তরিক মানুষ বাস করে। তা না হলে আমাকে নিয়ে পাশের অভিজাত রেস্টুরেন্টে বিশাল এক ভোজ দিবে কেন? বিরিয়ানি, খাঁসি, মুরগীর বিশাল বিশাল রানের দিকে তাকিয়ে আমি হাজার হাজার মাইল দূরের আমেরিকা শহরের জুকারবার্গকে ধন্যবাদ দিই। বেচারা ফেসবুক আবিষ্কার না করলে আজকের ঢাকার কোথাকার আকরাম আমাকে এই রেস্টুরেন্টে এত এত খানা পিনা…। ও মাই গড! আকরাম বলল সে নাকি এ রেস্টুরেন্টে রোজ রোজ এগুলি খায়। ও আল্লা গো, এ কোন ধনীর দুলালের সাথে পরিচয় হল!
বিদায় নেয়ার সময় আকরাম বেশ দরদ কণ্ঠে বলল ‘ফ্রেন্ডস্, মাঝে মাঝে এসে আমার সাথে দেখা করবে। দেখা না করলে কিসের বন্ধুত্ব? হা হা হা।’ আকরামের অট্টহানির রেশ আকাশে বাতাসে মিশে গেল। ধন্যবাদ মাই ফেসবুক আইডি। তুমি না থাকলে কোথায় পেতাম এমন সোনার মানুষ?
বিদায় নিয়ে বাড়ি চলে আসলাম। কিন্তু মন পড়ে রইল আকরামের কাছে। ও আমাকে এত এত খাওয়ালো যে আমি মনে মনে লোভী হয়ে উঠলাম।
লোভ সামলাতে না পেরে দু দিন পর আবার খাড়া দুপুরে সদরে গেলাম আকরামের কাছে। ওমা! এবারও একই রেস্টুরেন্টে নিয়ে উচ্চমার্গীয় ভোজ। আবারও মুরগীর রান, বিরিয়ানি। ঝাক্কানাক্কা অবস্থা।
এই ভোজের তিনদিন পর আবারও সেই উন্নত রেস্টুরেন্টের খানা পিনার কথা মনে আসতেই জিবে জল এসে গেল। আবারও খাড়া দুপুরে আকরামের মুখোমুখি হতে গেলাম। আবারও একই রেস্টুরেন্টে আহŸান। কিন্তু পরিবর্তন এলো খাবারের ম্যানুতে। সামান্য সবজী আর মুগডাল দিয়ে আপ্যায়ন করে আকরাম বিদায় দিয়ে দিল আমাকে।
ঠিক সাতদিন পর একই লোভে খাড়া দুপুরে সদরে গেলাম আকরামের কাছে। আমি এত ঘন ঘন খানাপিনার লোভে এখানে আসি, সেটা বোধ হয় আকরাম খানিকটা টের পেয়েছে। তা না হলে আমাকে নিয়ে উক্ত রেস্টুরেন্টে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকবে কেন?
আমি আর আকরাম মুখোমুখি বসে আছি। সে খাবারের অর্ডার দিচ্ছে না। এদিকে ক্ষুদায় আমার পেট ছোঁ ছোঁ করছে। রেস্টুরেন্টের একজন বয় এসে বলল ‘কি খাবেন স্যার? কাচ্চি বিরিয়ানি দিব?’ কাচ্চি বিরিয়ানির কথা শুনে আমার জিভে জল চলে এলো। আকরাম ক্ষীণ গলায় বলল ‘না, দু কাপ চা দিন।’ বয় হাসি মুখে চা আসতে চলে গেল। আকরাম নিচু স্বরে বলল ‘ফ্রেন্ডস্, আমি এখন দুপুরে এক কাপ চা খাই কেবল। শরীর কমাতে এই সিদ্ধান্ত।’ আমি গলা নামিয়ে বলল ‘ও আচ্ছা।’
উন্নত রেস্টুরেন্ট থেকে খাড়া দুপুরে শুধু এক কাপ চা খেয়ে দুজনে বের হয়ে এলাম। কিসের লোভে এলাম আর কি খেলাম! ধুর!
আকরাম আমার চালাকি বুঝে গেছে বলে গা থেকে ভুত তাড়াতে এক কাপ চা নীতি অবলম্বন করেছে। হায়! ভাবলাম আমিই দুনিয়ার সেরা চালাক। এখন দেখছি আমার চেয়েও দুনিয়ায় আরও বড় চালাক আছে।
এরপর থেকে ফেসবুকে আকরামের সাথে আমার সম্পর্কে ভাটা পড়ল। আমার কোন পোষ্টে সে আর আগের মত লাইন কমেন্ট দেয় না। অনলাইনেও নক করলে ম্যাসেস সিন করে না। সিন করলেও রিপ্লাই দেয় না।
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী।