অণুগল্পগল্পপ্রথম পাতাসর্বশেষসাপ্তাহিক সংখ্যা

অণুগল্প- নেশা | আদিল মাহফুজ রনি

|আদিল মাহফুজ রনি

 

তারিনের সাথে আমার রিলেশনের একবছর পূর্ণ হলো আজ। বলা যায় প্রেম পর্বের ফার্স্ট অ্যানিভার্সারি। এই দিনটা উদযাপন করার ক্ষেত্রে মেয়েরা বেশ আদিখ্যেতা দেখায়। তারিনও তার ব্যতিক্রম নয়। তার প্ল্যান হলো, অ্যানিভার্সারি উপলক্ষে সারাদিন রিকশা করে ঘুরে বেড়ানোর। রিকশায় ঘুরতে নাকি তার অনেক ভালো লাগে। প্ল্যান অনুযায়ী তাই আমরা বেরিয়ে পড়ালাম।

সারাদিন ঘুরেফিরে সময় কাটালাম। এটা সেটা কেনাকাটাও হলো। দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে গেল। আমরা রিকশা দিয়ে একটা লেকের সামনে চলে এলাম। উদ্দেশ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে কিছুটা সময় কাটানো। 

লেকের দু’ধারে সবুজ ঘাস জন্মেছে। দেখে মনে হয় সবুজ রঙের কার্পেট বিছিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা দুজন, লেকের ধারে ঘাসের উপর বসলাম। এখানে পরিবেশ খুব শান্ত। দু-একটা পাখির আওয়াজ ভেসে আসছে কানে। 

হঠাৎ তারিন প্রশ্ন করলো,

রিশান, তুমি কি যেন একটা কথা বলতে চেয়েছিলে আজ?

তুমি কি সত্যিই সেকথা শুনতে চাও?

পাল্টা প্রশ্ন করি আমি। 

হ্যাঁ শুনতে চাই। 

মাথা নেড়ে উত্তর দেয় তারিন। আমি কিছুক্ষণ তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি। সেও উৎসুক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখটা হাসি হাসি। তবে সে হাসি স্থায়ী হয় না বেশিক্ষণ, 

আমি খুব শান্ত ভঙ্গিতে বলি,

এই এক বছরের সবটাই ছিল অভিনয়। আমি মন থেকে তোমাকে কখনো ভালোবাসিনি। 

 

কথাটা শুনে স্তম্ভিত হয়ে যায় তারিন। কথাগুলো বিশ্বাস হচ্ছে না তার। সে কি ভুল শুনেছে? তারিন ক্লান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

কি বলছো তুমি?

সত্যিই বলছি। 

দৃঢ়চিত্তে উত্তর দেই আমি। উত্তর শুনে খানকিটা কেঁপে উঠে তারিন। কষ্টে হয়তো ভেতরটা পুড়ছে তার। মূহুর্তেই চোখ বেয়ে নামে অশ্রুধারা। আমি দেখতে পাচ্ছি তার মনের কোনে কালো মেঘের আনাগোনা। আমার কিন্তু খুব স্বস্তি লাগছে। নিজেকে খুব হালকা লাগছে। 

বছর চারেক পূর্বে, ঈশিতাও আমাকে এইভাবে কাঁদিয়েছিল। মেয়েটাকে সত্যিই ভালোবেসেছিলাম। বলেছিলাম, কখনো ছেড়ে না যেতে। কিন্তু সে চলে গেল। আমি সেদিন অনেক কাঁদলাম। আজ যেমন করে তারিন কাঁদছে ঠিক সেভাবে। কান্না একসময় থেমে গেল। তারপর আমি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করলাম। ঈশিতা চলে যাওয়ার পর আমাকে অদ্ভুত এক নেশা পেয়ে বসলো। মানুষ কাঁদানোর নেশা। আজ তারিন এই নেশার শিকার হয়েছে। কাল অন্য কেউ হবে। আমি চাই কেউ আমার জন্য কাঁদুক। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদুক। কান্না শীতল করে আমার ক্ষতবিক্ষত হৃদয়। কান্নার শব্দে অন্যরকম এক নেশা আছে। এটা আমাকে মাতাল করে। এই নেশার পুনরাবৃত্তি চলবেই!

আমি উঠে গিয়ে ফেরার পথ ধরি। মেয়েটা এখনো বসে বসে কাঁদছে। তাতে কি আসে যায়? আমার ফিরতে হবে। বড্ড তাড়া আমার।

 

 মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ, চতুর্থ বর্ষ।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

ইমেইলঃ [email protected] 

এই লেখাটি শেয়ার করুন
ছাইলিপির ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

ছাইলিপির কথা

লেখালিখি ও সৃজনশীল সাহিত্য রচনার চেষ্টা খুবই সহজাত এবং আবেগের দুর্নিবার আকর্ষণ নিজের গভীরে কাজ করে। পাশাপাশি সম্পাদনা ও প্রকাশনার জন্য বিশেষ তাগিদে অনুভব করি। সেই প্রেরণায় ছাইলিপির সম্পাদনার কাজে মনোনিবেশ এবং ছাইলিপির পথচলা। ছাইলিপিতে লিখেছেন, লিখছেন অনেকেই। তাদের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। এই ওয়েবসাইটের প্রতিটি লেখা মূল্যবান। সেই মূল্যবান লেখাকে সংরক্ষণ করতে লেখকদের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। কোন লেখার মধ্যে বানান বিভ্রাট থাকলে সেটির জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। ছাইলিপি সম্পর্কিত যে কোন ধরনের মতামত, সমালোচনা জানাতে পারেন আমাদেরকে । ছাইলিপির সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। ছাইলিপির নতুন সংযোজন ছাইলিপির ইউটিউব চ্যানেল Chailipi Magazine। সাবস্ক্রাইব করার আহ্বান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করা থেকে বিরত থাকুন ! বিশেষ প্রয়োজনে ইমেইল করুন [email protected]