ভালোবাসার গল্প – পৃষ্ঠা ১৭
তাহারাত সিকদার
তখনো মেয়েটি হাত ছাড়েনি। খুব শক্ত করে টেনে ধরে রেখেছে। বাম হাত একটা পাক খেয়েছে কিন্তু কোনোভাবেই যেন ওদের আলাদা করা যাচ্ছেনা। পুরো শরীর টা মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নিস্তেজ হয়ে গেলো। শরীরটা একেবারে থেঁতলে দিয়ে চলে গেছে। আমার হাত থেকে চায়ের কাপটা পরে ভেঙে গেল। চা খানি গড়িয়ে রক্তে গিয়ে মিশেছে। তবুও রক্ত তার নিজের রঙে অটুট।
পৌনে একটা বেজে, রোজকার রুটিনে তাকিয়ে এখন আমার চা খাওয়ার সময়। কিছু মানুষ চা খাওয়া একদমি পছন্দ করেনা আবার কারোর কাছে এটা একটা নেশা। তবে আমার কাছে ব্যাচেলার জীবনের রুটিন মাত্র। জানিনা সবাই পছন্দ করে কিনা, তবে আমার এই মধ্য দুপরে চা খাওয়াটা বেশ ভালো লাগে। সুর্যের প্রচন্ড তাপে ঘামে ভেজা শরীরে রাস্তার ধুলো জমে একাকার। ঠিক সেই মুহূর্তে এক কাপ কড়া রং চা আদা লেবুর সাথে কাপ থেকে উঠতে থাকা ধোয়া, আহ ভাবতেই একটা ভালোলাগা এসে যায়।
পনেরো মিনিট ধরে বসে আছি কিন্তু এখনো দেখা পেলাম না। আজ হঠাৎ কি হলো? বড়োই অদ্ভুত ব্যাপার। এমন তো কখনো হয়নি। একটু দুশ্চিন্তায় পরে গেলাম।
ওরা আবীর, মায়া। মেডিকেলে পড়াশোনা করছে। রোজ একসাথে যাওয়াআসা। চোখে পরেছিলো দুজনের হাসি। যা থেকে ওদের পরিচয় আমার ডায়রিতে। কি কথা বলে, যে দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে এত সুন্দর ভাবে হাসে? যদি ব্যাপার টা ধীরগতিতে উপস্থাপন করা যেতো তবে যেকেউ নেশাগ্রস্ত হয়ে যেতো। অবশ্য এই নেশাটা হলো ওদেরকে জানার কৌতুহল মাত্র। যা আমাকে ওদের সম্পর্কে জানতে খুবি আগ্রহী করেছিলো।
পৌনে একটা থেকে একটা। রোজ এই সময়টাতে কলনীমোর চায়ের দোকানে অপেক্ষা করলেই ওদের দেখা পাওয়া যায়। এইতো হাটতেছে খুব গল্পে বিভোর, দুজন কথা বলার মাঝে হেসেই চলেছে। ওদের ভাবনায় হয়তো চারপাশ শূন্যতায় মুখরিত। ইচ্ছে করছে আমিও ওদের গল্পে ডুবে যাই, খুঁজতে চাই হাসির রহস্য, বুঝতে চাই দুজনের চোখ কি বলে একে অপরকে। হয়তো লিখতাম তবে ওদের মনের গহীন ভাব।
নাহ।। ওদেরকে জানার কৌতুহল যেন দিনদিন বেড়েই চলেছে।
মামা চা ঠান্ডা হয়ে গেছে তো ৷ ভাবনায় ইতি টানলাম । আরে হ্যা তো। আসলে মামা একটু অন্য ভাবনায় চলে গেছিলাম আপনি আমায় আরেক কাপ চা বানিয়ে দিন। আর এই কাপ নিয়ে যান। হাতঘড়িতে তাকিয়ে ০১:১০ । (মামা চা নেন) ধন্যবাদ দিয়ে সামনে তাকাতেই আবীর মায়া। ঠিক রাস্তার ওপারে। বাহ ওরা সারাক্ষণ এইভাবে হাসতেই থাকে? ফুটপাত থেকে দুজনে নামলো। ওরা চা খাবে? বাহ ভালোই হবে। আজ তাহলে খুব কাছথেকে ওদের গল্প শুনতে পাবো। দারুণ মজা হবে আজ। ঠিক তখনি আবীরের উপর থেকে সম্পূর্ণ গতিবেগ নিয়ে একটা ট্রাক খুবি নমনীয়তায় চলে গেলো। মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় নিলো।
ছেলেটার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। কাঁদছেনা। একফোঁটা জল নেই চোখে। আসবেনা কান্না। কিভাবে কাঁদবে, প্রাণ থাকতেও যার মনের মৃত্যু ঘটে তার কান্না আসবেনা।
চা আজ নিরানন্দে পরিপূর্ণ।
আর ছুঁবোনা তোমায়।
সদর, পিরোজপুর।