গল্পপ্রথম পাতাসর্বশেষসাপ্তাহিক সংখ্যা

ছোটগল্প – শেষ মুহুর্ত

নাঈমুর রহমান নাহিদ

রক্তে রঞ্জিত হয়ে আছে পুরো মেঝে। আমার নিথর দেহ অসহায়ভাবে পরে আছে ফ্লোরে। সদ্য কাটা শিরা বেয়ে টপটপ করে ঝরে পরছে দেহের অন্তিম রক্তবিন্দুগুলো। আমি ঘোলা চোখে দেখছি সব। আমার থেকে কেবল এক হাত দূরেই বেহুঁশ হয়ে পরে আছে মা। বাবা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পায়চারি করছেন পুরো ঘরে। অনবরত কেঁদে চলেছেন তিনি। হঠাৎ হঠাৎ দু’হাত দিয়ে চুল চেপে ধরে চিৎকার করে উঠছেন। মাথার চুল টেনে ছিঁড়তে চাইছেন যেন। কঠোর বাবার এমন রূপ আমার বড্ড অপরিচিত। তার মধ্যেও আবেগ থাকতে পারে, তার চোখ বেয়েও জল গড়াতে পারে তা আমার জানা ছিলনা। তখন থেকে কাউকে ফোন করার চেষ্টা করছেন বাবা। অ্যাম্বুলেন্স বোধহয়। আমাকে বাঁচানোর সেকি প্রচেষ্টা তার! 

মায়ের এখনো জ্ঞান ফিরেনি কেন! কিছু হয়ে গেল না তো মায়ের! দিদি মায়ের মাথায় পানি দিচ্ছে। আর একটু পরপর আমার দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছে। মা যেন নড়ে উঠল। জ্ঞান ফিরেছে বোধহয়। হ্যাঁ, ঐতো উঠে বসেছে। আমাকে দেখেই দৌড়ে আমার কাছে এসে বসল। শেষমুহুর্তে মায়ের স্পর্শ পেতে খুব ইচ্ছে করছিল। যাক ইচ্ছেটা পূরণ হলো তবে। মাথাটা কোলে তুলে নিয়ে বিলাপ বকছে মা। বাবা এখনো পাগলপ্রায় অবস্থায়। কিছুতেই তার ভিতরের উত্তেজনাটা চাপিয়ে রাখতে পারছেন না। অ্যাম্বুলেন্সের লোকটা এখনো ফোন ধরেনি। প্রয়োজনের সময়ই মোবাইল ফোনগুলো অপ্রয়োজনীয়রূপ ধারণ করে। আমার দিকে যেন তাকাতে পারছেনা বাবা।

আমি অচেতন শুয়ে বিদায়ের প্রহর গুনছি। মা আমার পাশে বসে অঝোরে কাঁদছেন। দিদি যেন ভাষা হারিয়েছে। বাবা অধিক শোকে পাথর হওয়ার প্রমাণ দিচ্ছেন। অথচ যার জন্য আত্মহত্যা করলাম সে কোথায়? আদৌ কি সে আসবে আমার জন্য মায়া দেখাতে? নাকি সে হাঁফ ছেড়ে বাঁঁচবে আপদ বিদায় হলো ভেবে? সেকি পাবে আমার মৃত্যু সংবাদ? জানতে পারবে তার ভালোবাসায় বিভোর কেউ তার অবহেলায় টিকতে না পেরে যবনিকা টেনেছে তার জীবনের? হয়ত না। তাহলে কেন নিজেকে শেষ করলাম আমি! ছোট থেকে পরম আদর আর যত্নে তিলে তিলে আমাকে বড় করে তোলা বাবা মায়ের কথা কেন একবারো ভাবলাম না? কে আমাকে অধিকার দিল আমাকে নিয়ে দেখা তাদের স্বপ্নগুলোর গলা টিপে হত্যা করার?

বড্ড বাঁচতে ইচ্ছে করছে এখন আমার। সকল আত্মহত্যা করা মানুষগুলোর কি তাদের জীবনের এই শেষমুহুর্তে আমার মত বাঁচতে ইচ্ছে করে? হয়ত করে। কিন্তু ততক্ষণে যে বড্ড দেরি হয়ে যায়। আমারো যে বড্ড দেরি হয়ে গেছে।

চোখটা খুলে গেল হঠাৎ। সুইসাইড নোট লিখতে বসে টেবিলে মাথা রেখে ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ লেগে গিয়েছিল টের পাইনি। চোখের কোণে ভিজেভাব অনুভব করছি। আধলেখা সুইসাইড নোটটা দলা করে ঝুড়িতে ফেলে দিলাম। আমার যে বড্ড বাঁচতে ইচ্ছে করছে। আমার যে বাঁচতে হবে। সময় ফুরিয়ে যাবার আগেই।

 

 ইসলাম নগর, মাতুয়াইল, ঢাকা।

এই লেখাটি শেয়ার করুন
ছাইলিপির ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

ছাইলিপির কথা

লেখালিখি ও সৃজনশীল সাহিত্য রচনার চেষ্টা খুবই সহজাত এবং আবেগের দুর্নিবার আকর্ষণ নিজের গভীরে কাজ করে। পাশাপাশি সম্পাদনা ও প্রকাশনার জন্য বিশেষ তাগিদে অনুভব করি। সেই প্রেরণায় ছাইলিপির সম্পাদনার কাজে মনোনিবেশ এবং ছাইলিপির পথচলা। ছাইলিপিতে লিখেছেন, লিখছেন অনেকেই। তাদের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। এই ওয়েবসাইটের প্রতিটি লেখা মূল্যবান। সেই মূল্যবান লেখাকে সংরক্ষণ করতে লেখকদের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। কোন লেখার মধ্যে বানান বিভ্রাট থাকলে সেটির জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। ছাইলিপি সম্পর্কিত যে কোন ধরনের মতামত, সমালোচনা জানাতে পারেন আমাদেরকে । ছাইলিপির সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। ছাইলিপির নতুন সংযোজন ছাইলিপির ইউটিউব চ্যানেল Chailipi Magazine। সাবস্ক্রাইব করার আহ্বান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করা থেকে বিরত থাকুন ! বিশেষ প্রয়োজনে ইমেইল করুন [email protected]