সম্ভোগ
আশিক মাহমুদ রিয়াদ
একটি বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা, নভেম্বরের বৃষ্টি ঝড়ছে আকাশ থেকে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত শীত ঠেসে পড়া বৃষ্টিতে কোথাও কোথাও দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ লোকজন মারা গিয়েছে।মফস্বল শহরের ধারে কাছের একটি হাইওয়েতে দুর্ঘটনায় মারা গেছে কয়েকজন। বিমল সিগারেট টানতে টানতে একা পথে হাটছে অন্যমনস্ক হয়ে। শহরের অট্টালিকাগুলো তারদিকে চেয়ে রয়, সে তাকায় অট্টালিকাগুলোর দিকে। হঠাৎই বাজ পড়ে! কিছুটা ভীতবিহ্বল হয় বটে!
হরিনাথ বাবুদের গেট পেড়িয়ে, পুকুরের পাশ থেকে হেটে লম্বা সুপাড়ি বাগান ধরে কিছুদূর হাটলেই নদী । নদীর নাম নির্মগ্না। এই নদীর নাম অদ্ভুত! নদীর সাথেও মিশে আছে অদ্ভুতুড়ে গল্পগুজব। তবে এসব গায়ে লাগায় না বিমল। সে ঘোরে থাকে, থাকতে হয় । নদীর পাড় ধরে লম্বা ধানিজমি পেড়িয়ে লাশকাটা ঘরের রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটে সে। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, দিনের মতো পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে সব। আরেকটু হাঁটলেই সেই বাড়িটা। বিমল গেটখুলে বাড়ির ভেতরে ঠোকে, পুরানো পরিত্যক্ত বাড়ি!
দোতালার সিড়ি বেয়ে উঠেতে গিয়ে বিমল কান্নার শব্দ পায়। মনটা বিষিয়ে ওঠে বড্ড৷ তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে দোতালায় উঠে ডানদিকে ছ’কদম হেটে দরজা খুলে ঢুকতেই দেখে সে কাঁদছে। বিমল দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়। সিগারেট ধরায়, শ্লমা জড়ানো গলায় বলে, কাঁদছিস কেন? ওপাশ থেকে কোন উত্তর আসে না! সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বলে, কি হয়েছে বলবি? নাকি আমি চলে যাবো?
ওপাশ থেকে নারীকন্ঠে জবাব আসে, তুই কি আমাকে ভীষণ ভালোবেসেছিলিস?
বিমল আবারো সিগারেটে লম্বা টান দেয়। গলা কাঁকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, না।
এবার শোনা যায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ।
আমি তোকে ভালো না বাসলে এতরাতে এ ঘরে আসতাম না সঞ্চিতা! আমি তোকে ভীষণ ভালোবাসি।পাগলের মতো। মেয়েটির নাম সঞ্চিতা। বিমল কবিতার লাইন আওড়ায়!
পথ হারিয়ে! পেরিয়ে কয়েক ক্রোশ!
অশোক নক্ষত্র পানে ছুঁটে পঞ্চক্রোশ!
ভরদুপুর, সন্ধ্যেরাত পেড়িয়ে মধ্যরাত
তোর শরীর সম্মোহনের আক্রোশ!
কে করে তোর রক্তপানে সম্ভোগ?
কত দিন এলো গেলো,
কত রাক্ষস মরে গেলো!
আমি গেলাম ভালোবেসে,
হিংস্র একা পশুর মত।
বিমলের জিভ আটকে যায়! সিগারেটে আরও একটা লম্বা টান মারে। ফিসফিসিয়ে বলে শুয়োরটাকে শেষ করে দিয়ে এসেছি সঞ্চিতা। সঞ্চিতা বলে, ও আমায় আবার সম্ভোগ করবে! বিমলের মাথা আটকে যায়! সঞ্চিতা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে তাকায়। তার ঝলসানো মুখখানা বিমলের অনেকদিনের চেনা। আজ তাকে ভীষণ অচেনা লাগে। বিমল চোখ বোজে, বুকে দীর্ঘশ্বাস চেপে রয়। ধীরে ধীরে বলে ওঠে, তুই এটা করতে পারিস না সঞ্চিতা! নিজের শরীরকে এভাবে শেষ করতে পারিস না। “আমায় ক্ষমা কর বিমল”, কাঁদতে কাঁদতে বলে সঞ্চিতা। পরের জন্মে তুই আমার হবি, এ জন্মে আমায় মুক্তি দে। আজ তোর ভীষণ কষ্টের দিন। আজ আমার শরীর ছাড়ার দিন। আজ আমার নির্বাসনের দিন!