অণুগল্পআরওগল্পপ্রথম পাতাপ্রবন্ধসর্বশেষ

সাদা রংয়ের স্বপ্ন

আশিক মাহমুদ রিয়াদ 

ঘুমে চোখ পিটপিট করছে। বাড়িতে বসে অলস সময় কাটাচ্ছি। কলেজ নেই! বন্ধুদের সাথে আড্ডা নেই,ক্লাস নেই, দৌড়ঝাপ নেই। সব যেন হঠাৎ করেই সাদা পৃষ্ঠা হয়ে গেল। যেখানে কি লিখব সেটাই জানি না। শুধু সাদা পৃষ্ঠার পাতা উল্টাই।এক ঘেয়ে দিন যাপনকে মাঝেমধ্যে অসহ্য লাগে। তবুও এভাবেই চলতে হবে। ফেসবুকের টাইমলাইন ঘুরি! উপন্যাসের পাতায় চোখ বোলাই এতেই দিন কাটে।চোখে ঘুম জমিয়ে রাখি। মফস্বলে বড় হয়েছি। এখানেই কাটছে করোনাকালের এই দিবস-রজনী। দিন-রাতকে যেন সব এক মনে হয়। কিচ্ছু ঠিক নেই। মাঝেমধ্যে বুক ভারী হয়ে ওঠে। লম্বা দীর্ঘশ্বাস নেই।স্বস্তি পাই না। কোথায় যেন বিষাদ জমে আছে।
দুই হাজার বিশ সাল কে একটি দিন ভাবলে ভুল হবে না। এটি একটি দূঃস্বপ্নের দিন।

গতবছর ডিসেম্বরের দিকে শুনলাম চিনের উহান শহরে কোভিড-১৯ নামে একটি ভাইরাস প্রানঘাতী হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। উহান শহর লকডাউন করা হয়েছে৷ মানুষ মারা যাচ্ছে। তখন ভাবতাম আমরা বোধয় ভালোই আছি। কিন্তু মাস কয়েকের ব্যবধানে গোটা বিশ্বে করোনা ভাইরাস থাবা বসালো। ফেব্রুয়ারীতে ছাদে উঠে আকাশ দেখতাম।বরিশাল শহরটা আলো ঝকঝকে। মধ্যরাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। শিরশিরে ঠান্ডা বাতাস। কল্পনারা মাথায় উকি দিতো। আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবতাম,আকাশটা কত বিশাল। মানুষের মন এরকম বিশাল হতে পারে না? মানুষের স্বপ্ন.. বিশাল হতে পারে না? একটা মানুষ কতটুকু স্বপ্ন দেখে? প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন আর আশা কি আকাশের মতো বিশাল? বিস্তৃত, অসীম?

ফজরের নামাজ পড়ে বাড়ির সামনের রাস্তায় পায়চারি করি। বেশ স্নিগ্ধ একটি সময়। ছোট রাস্তাটা ধরে কিছুদূর হাটলেই মহাসড়ক। খুলনা-বরিশাল হাইওয়ে। রাস্তা তখন বেশ ফাকা থাকে। আকাশ থেকে ঝুপ করে নামে বৃষ্টি। ঝিরঝিরে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বাসায় ফিরি। সামনের মাঠটায় কেউ ফুটবল খেলে না এখন। বর্ষাকালের এই সময়ে মানুষজন ফুটবল নিয়ে মেতে থাকতো।হৈ-হুল্লোড়, গোল,চেঁচামিচি,মাইকের শব্দ। এখন তাও নেই। সব কেমন নিশ্চুপ, মাঠে পাখিদের বিচরণ। দু একটা গরু-ছাগল ঘাস খায়।
দুটো শালিক মাঠে জমে থাকা পানিতে স্নান করে। কি মধুর দৃশ্য! তাও ভালো। ওদের স্নান করা দেখি। আরো একটি শালিক হাজির হয়েছে। আনমনে ভাবি,ওদের স্নান করা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা কি উচিত হচ্ছে? কে জানে! চোখ ঘুরিয়ে নেই।

জানলার গ্রীলে দুটো পিপড়া মুখোমুখি! কথা বলছে?পিপড়াদের কথা যদি শোনা যেত। কি নিয়ে আলোচনা করছে ওরা? চিন-ভারত সীমান্তের কথা? কে জানে! আকাশ থেকে ঝুপ করে বৃষ্টি নামে। আষাঢ় মাস! অবিরত বারিধারা ঝরতে থাকে। এই সময় করোনা ভাইরাসের এমন প্রকোপ না থাকলে নিঃসন্দেহে কচিকাচা কিশোরেরা মাঠে ফুটবল খেলতো।
ফুটবল খেলে কাঁদামাখা শরীর নিয়ে ঝাপ দিতো নদী অথবা আশেপাশের কোন পুকুরে। আমার শৈশব কেঁটেছে দারুণ মধুর! বর্ষাকাল ছিলো আমাদের ফুটবলের খেলার প্রিয় সময়। কেউ মেসি! তো কেউ রোনালদো। রাতে আকাশে মেঘের আড়ালে চাঁদ লুকায়। কখনো কখনো চাঁদ দেখা যায় না। মেঘে ঢাকা থাকে আকাশ। ঝুপ করে বৃষ্টি নামে। ব্যলকনিতে গিয়ে বৃষ্টি দেখি। হাত বাড়িয়ে ছুঁই!

বর্ষাকালের এই সময়টা আমার দারুণ প্রিয়। বিশেষ করে টিনের চালে বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজ। এখন আম-কাঠালের মৌসুম। সেদিন আমাদের গাছের একটি মিষ্টি আম খেয়েছি। খেয়ে বুঝেছি নিজেদের গাছের আম আর বাজারের ফর্মালিন দেওয়া আমার মধ্যে তফাত।
সেই আমের সাথে আরো কয়েকটি আমের আটি পুতে রেখেছি মাটিতে। প্রতিদিন সকালে গিয়ে দেখি। কোন আমগাছের চাড়া বের হলো কিনা। অপেক্ষায় থাকি! এই বর্ষায় আমগাছের চারা মাটি ভেদ করে বেরুবে! সেই আম গাছের চারা রোপন করব বাড়ির আশেপাশে।

রাত হলে আকাশে জোৎস্না দেখি! কানে হেডফোন দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকি। হেডফোনে বাজে মিনার রহমানের গান-
সাদা রঙের স্বপ্ন গুলো দিলো নাকো ছুটি,
তাই তো আমি বসে একা!

.

.

লেখা-১৫ জুলাই’২০২০

এই লেখাটি শেয়ার করুন
ছাইলিপির ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

ছাইলিপির কথা

লেখালিখি ও সৃজনশীল সাহিত্য রচনার চেষ্টা খুবই সহজাত এবং আবেগের দুর্নিবার আকর্ষণ নিজের গভীরে কাজ করে। পাশাপাশি সম্পাদনা ও প্রকাশনার জন্য বিশেষ তাগিদে অনুভব করি। সেই প্রেরণায় ছাইলিপির সম্পাদনার কাজে মনোনিবেশ এবং ছাইলিপির পথচলা। ছাইলিপিতে লিখেছেন, লিখছেন অনেকেই। তাদের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। এই ওয়েবসাইটের প্রতিটি লেখা মূল্যবান। সেই মূল্যবান লেখাকে সংরক্ষণ করতে লেখকদের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। কোন লেখার মধ্যে বানান বিভ্রাট থাকলে সেটির জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। ছাইলিপি সম্পর্কিত যে কোন ধরনের মতামত, সমালোচনা জানাতে পারেন আমাদেরকে । ছাইলিপির সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। ছাইলিপির নতুন সংযোজন ছাইলিপির ইউটিউব চ্যানেল Chailipi Magazine। সাবস্ক্রাইব করার আহ্বান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করা থেকে বিরত থাকুন ! বিশেষ প্রয়োজনে ইমেইল করুন [email protected]