ছাইলিপি আর্টিকেল ডেস্ক
বর্তমান সময়ে তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে হ্যাকিংকে যতটা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা দরকার, আমরা অনেকেই তা করি না। হ্যাকিং! অর্থাৎ কোন কিছু চুরি করা। হ্যাকিং শব্দটি ব্যবহার করা হয় ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলোর কোন ডেটা চুরির ক্ষেত্রে। তবে জেনে অবাক হবেন যে, ক্ষেত্র বিশেষে হ্যাকিং এর রয়েছে বৈধতা। তবে ভালো দিকের আছে খারাপ দিকও। কম্পিউটার সিস্টেমের দুর্বলতা কে খুঁজে বার করে সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কম্পিউটার সিস্টেমের এক্সেস নেওয়া বা সিস্টেমে প্রবেশ করে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করাকে হ্যাকিং বলে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে হ্যাকিং করা হয়।
যারা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মানুষ অথবা জনজীবনের ক্ষতি করার জন্য ইলেকট্রিনিক ডিভাইস গুলোতে হ্যাকিং করে থাকে তাদেরকে ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার বলে হয়। ঠিকই এর বিপরীত সঙ্গা হোয়াইট হ্যাট হ্যাকারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সম্প্রতি বাংলাদেশের সরকারি সংস্থাগুলোর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশ প্রবলভাবে হ্যাকিং কিংবা সাইবার অ্যাটাকের ঝুঁকিতে আছে।
আজকের এই ভিডিওতে আমরা আপনাদেরকে জানাবো, হ্যাকিং ঠিক কি কারনে করা হয়? ভবিষ্যত বিশ্বে হ্যাকিং কিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং সর্বশেষ হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায়। ভিডিওটি না টেনে দেখার অনুরোধ রইলো। ভিডিওটি ভালো লাগলে অবশ্যই ভিডিওটিতে লাইক এবং ভিডিও প্রকাশের সাথে সাথে আমাদের চ্যানেল থেকে বার্তা পেতে অবশ্যই চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন।
১৯৯৫ সাল। ইন্টারনেট যাত্রার শুরুর দিকে রাশিয়ান কম্পিউটার প্রোগ্রামার ভ্লাদিমির লেভিন রাশিয়ান সিটি ব্যাংকের টেলিফোন সিস্টেম হ্যাক করে প্রায় ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হ্যাক করেন। লেভিন গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট নম্বর ও পাসয়ার্ড হ্যাক করে এ কাজটি করেন। পরবর্তীতে ইলেক্ট্রিনিক ওয়েতে হ্যাক করা অর্থ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থানন্তরিত করেন। তবে এ ঘটনায় লেভিন বেশিদূর আগাতে পারেননি। একপর্যায়ে তিনি ধরা পড়েন এবং তাকে তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। চার লাখ মার্কিন ডলার ছাড়া বাকি অর্থ উদ্ধার করা হয়।
১৯৯৯ সালে ঘটে বিশ্বজুড়ে আলোচিত আরো একটি হ্যাকিংয়ের ঘটনা ডেভিড এল.স্মিথ নামে এক ব্যাক্তি একটি ম্যালওয়ার ভাইরাসটি তৈরী করেন যেটি ইমেইলের সাথে একটি মাইক্রোসফট ওয়ার্ড সংযুক্তি হিসাবে ভাইরাসটি ছদ্মবেশ ধারণ করে। এটিতে ভুলবশত একবার ক্লিক করলে কম্পিউটারটি ভাইরাসের শিকার হয়। ডেভিড এল স্মিথের ভাইরাসটির দ্বারা সেই সময়ে বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ কম্পিউটার এই ভারাসটির অ্যাটাক হয়েছিলো।
২০১৬ সালে বাংলাদেশের সাইবার সেক্টরে আঘাত হানে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা। তারা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক বিলিয়ন ডলার হ্যাক করার পরিকল্পনা করে এবং এ কাজে প্রায় সফল হতে চলেছিল। কিন্তু ভাগ্যক্রমে ৮১ মিলিয়ন ডলার ছাড়া বাকি অর্থের ট্রান্সফার আটকে যায়।
https://www.youtube.com/watch?v=sey-tGOVfSw&t=8s
প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে সাইবার প্রতারণা সম্পর্কিত একটি তথ্য মতে, সাম্প্রতিক সময়ে উন্নত দেশগুলোয় অন্যান্য অপরাধের হার তুলনামূলক কম হলেও সাইবার অপরাধের হার ব্যাপকভাবে বাড়তে দেখা গেছে। যুক্তরাজ্যের ব্যাংকগুলোর ট্রেড সংস্থা ইউকে ফাইন্যান্সের তথ্যানুযায়ী, গত বছর কর সংগ্রহকারীর নাম উল্লেখপূর্বক ফোন করে প্রতারণার হার যুক্তরাজ্যে দ্বিগুণ হয়েছে।
হ্যাকিং সহ বিশ্বে বেড়েছে সাইবার অতংক।যার প্রথম স্থানে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্যান্য অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং।
হ্যাকিং থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে যা জানতে হবে-
১. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন-
সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত একটি গবেষনায় বলা হয়েছে উইক পাসওয়ার্ডের ব্যবহার একাউন্ট হ্যাকিং এর অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টরা পরামর্শ দিচ্ছেন আলাদা আলাদা অক্ষরের সাথে যতিচিহ্ন অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের সাইন, সংখ্যা ইত্যাদির ব্যবহার করতে হবে। পাসওয়ার্ড যত স্ট্রং, নিরাপত্তা তত বেশি।
২. অপরিচিত কোন লিংকে ক্লিক করবেন না-
ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে হুট করে আসা কোন পরিচিত বন্ধুর মেসেজ যেমন, ‘কোন নামিদামি ব্রান্ডের এই ওয়েবসাইতে কিংবা কোন সিম কোম্পানির ফ্রিতে মেগাবাইট দেওয়ার লোভে সেসব লিংকে প্রবেশ করা যাবে না। এগুলোকে বলা হয় ফিশিং লিংক। কখনো কখনো ক্লিকের সাথে সাথেই হ্যাক হতে পারে আপনার ফেসবুক একাউন্ট।
৩. শুধু বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটে অনলাইন শপিং করুন
অনলাইনে শপিং এখন অনেক জনপ্রিয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে শপিং এর সময় আমাদের ব্যাংক বা কার্ড ডিটেলস সহ অনেক সেনসিটিভ তথ্য আমাদেরকে শেয়ার করতে হয় ওই ওয়েবসাইটের সাথে। এখন আমরা যদি অপরিচিত কিংবা আন-ট্রাস্টেড কোন ওয়েবসাইটে এসব তথ্য শেয়ার করি, তাহলে আমাদের এই ডাটা গুলো হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়াও রয়েছে নানান সতর্কতা , পাবলিক ওয়াইফাই থেকে বিরত থাকুন, সব ধরনের পপ-আপ এডস ইগনোর করুন, জিমেইলে অথবা গুরুত্বপূর্ণ একাউন্টের ক্ষেত্রে দুই স্তরের নিরাপত্তা ব্যবহার সহ বিভিন্ন উপদেশ দিয়েছেন সাইবার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা!
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সাইবার দুনিয়া সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। আমরা নিজেরা সচেতন হলেই কম হ্যাকিং এর ঝুঁকি। নিরাপদে থাকবে আমাদের ব্যাক্তিগত তথ্য।