সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের সম্যক বিচার

সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের সম্যক বিচার

| রহমতুল্লাহ লিখন 

 

সাহিত্য কথাটার আগমনের সূত্র টানতে একজন বুজুর্গ ব্যক্তির নাম আনি। তাঁর নাম পাণিনি। পাণিনি বলেছেন,”সাহিত্য শব্দ হতে হতে বাংলায় সাহিত্য শব্দটি গঠিত হয়েছে। “প্রশ্ন হচ্ছে কিসের সহিত কি মিলেছে। অনেকে মনে করেন সাহিত্যিকের হৃদয়ের সাথে পাঠকের হৃদয়ের মিলন সাহিত্য জন্মায়। রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন মানুষের সহিত মানুষ  মিলেছে,  তাই মানুষের মিলনের ফলেই জন্মেছে সাহিত্য।

সাহিত্যকে কেমন হতে হবে তার রূপ বলতে গিয়ে ভি.আই.লেনিন বলেছেন, “সাহিত্যকে হতে হবে পার্টি সাহিত্য। বুর্জোয়া রীতির বিপরীতে, বুর্জোয়া সাহিত্যিক পদান্বেষণ ও অহমিকা, নবাবী নৈরাজ্য ও মুনাফা শিকারের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক প্রলেতেরিয়েকে পেশ করতে হবে পার্টি সাহিত্য নীতি। ” 

সাহিত্য কী তাহলে? আমি মনে করি সাহিত্য মানে শুধু  কোন বিষয় নিয়ে চমৎকার প্রকাশ ভঙ্গি নয়, বরং সাহিত্য মানে হলো সমাজ নিয়ে, মানুষ নিয়ে সভ্যতার কথামালা, বাস্তবতাকে ভাষার গাঁথুনি দিয়ে একটি নান্দনিক রূপ দেয়া।

সাহিত্যিকদের কাজ কি তাহলে? সাহিত্যিকরা  সমাজের চালচিত্রের বর্ণনাকারক। সমাজকে যদি তারা যথার্থভাবে বর্ণনা না করেন তাহলে কেন তাদের বেইমান বলা হবেনা! সমাজের নিপীড়ণ নিয়ে কথা যদি তারা জোরদার আওয়াজ না তোলেন,  বৈষম্যের  কষাঘাত নিয়ে না হুড়মুড়িয়ে না লেখেন তাহলে বুদ্ধিবৃত্তীয় সামাজিক বিল্পব হওয়া মুশকিল। সাহিত্য পড়ে ঐ সময়ের সঠিক চিত্র জানতে পারা যায় এই বেধ বাক্য মাথায় নিয়ে যদি কোন পাঠক কোন সাহিত্য পড়েন তাহলে তো সঠিক চিত্রের আশে পাশ দিয়ে তাদের প্রবেশ ঘটবে না। এই দায় ভার একান্তই সেই সময়ের সাহিত্যিকদের।

 

সাহিত্যকদের প্রধান কাজ শোষণের বিপক্ষে লেখা। সাহিত্যকদের দায়বদ্ধতা  হলো নিপীড়িত জনতার পক্ষে লেখা। সাহিত্যকে সমাজের একটি শ্রেণির কাছে বন্দী রাখা কোন সাহিত্যকের নৈতিকতা হতে পারে না। সাহিত্যিকরা যদি তাদের কথায় গণমানুষের কথা, কষ্ট, দাবি দাওয়া আনতে না পারেন তাহলে তার সাহিত্য লেখার ঐতিহাসিক কোন মূল্য নেই।

 সামাজিক কোন অবিচার  বা এমন কিছু যা সামাজিক অবক্ষয়ের চিহ্ন বহন করে, এরূপ কিছু হলে প্রথম প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত কাদের। অবশ্যই তা আসবে সাহিত্যিকদের। আরও স্পপষ্টভাবে  বলতে গেলে প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকদের কাছে থেকে। কারণ তাদের মানুষ গ্রহণ করেছে তাদের প্রাণের কথায় প্রকাশক হিসেবে। সমাজ  বিশ্লেষণ,  মানুষের মন, মনস্তাত্ত্বিক কাটাছেঁড়ার ঠিকা নিজ কাঁধে  নিয়েছেন স্বঘোষনা দিয়ে।  প্রশ্ন আসে সমাজের প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকরা তা যথাসাধ্যভাবে করেছেন কি? পাঠক সামান্য মগজ খাটালেই তার উত্তর আবিষ্কার করে ফেলবেন। 

 

অনেকেই বলতে পারেন আমি আমার মত করে রিঅ্যাকশান দেই। আমার ভাষাতেই দেই। যদি আপনার ভাষায় সাধারণ মানুষের মনের ব্যাথার কথা সাধারণ মানুষ বুঝতেই না পারেন তাহলে সেই প্রতিবাদ করে লাভ কি?

 ভাষাকে উন্মুক্ত করুন।  দুর্বোধ্য করে ভাষাকে বৈষম্যের উপকরণ বানাবেন না। আপনার কবিতা, প্রবন্ধ, লেখা পড়তে পি এইচ ডি করা লাগবে যদি তাহলে সেই ভাষা সাধারণের ভাষা নয়। সেই ভাষায় দুঃখী, কাঙালদের কথা মুখোশ বিহীন কন্ঠে উঠে আসে না। আপনার কবিতা সাহিত্য যদি সামাজিক সংকটকে সুন্দর পাশ কাটিয়ে গড়ে ওঠে, ফুল দেয়, ফল দেয়। তাহলে আমি বলব তা হল এক মাকাল ফল।

 

শেষে এতটুকু বলা,  সাহিত্য যারা লেখেন তারা সচেতন, অবচেতন, অচেতনভাবে অমর হতে চান। কিন্তু অমরতা লাভ করতে সমাজকে দূরে ঠেলে কাঁচা বাজারের  দর কষাকষির লেখার মত্ততায় তা হবেনা। অর্পিত দায়িত্ব পালন করুন, নচেৎ আগামীর ইতিহাস আপনাকে ক্ষমা করবেনা, অমরত্ব লাভের চিহৃ শুধু বইয়ের মাঝখানের পাতাতেই থাকবে কিন্তু তা কখনে পাঠক মনে দগ দগে ঘায়ের ব্যাথা হয়ে থাকবে না। তাই সত্য তুলে ধরতে কার্পণ্য করবেন না।

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
একটি বৃষ্টির কবিতা

একটি বৃষ্টির কবিতা

আরিফুল ইসলাম টপ টপাটপ বৃষ্টি পড়ে আকাশ ফুঁড়ে ঐ, বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে বৃষ্টির বাড়ি কই? দমকা হাওয়ায় ঝিরিঝিরিয়ে পড়ছে মধুর সুরে, এমন সময় মন ...
তিনটি কবিতা

তিনটি কবিতা

ক্ষয়িষ্ণু জীবন পেছনে সরে গেছি অনেক দূরে দাঁড়িয়ে পামগাছটা একটা নিষ্প্রাণ মুখ তাকিয়ে থাকি প্রবল আর্কষণে- এভাবে ক্ষয়ে যাই পড়ন্ত বিকেল ঝরা বকুল,নক্ষত্র অথবা অশ্রæর ...
অতিদীর্ঘ পথ- স্বপন শর্মা

অতিদীর্ঘ পথ- স্বপন শর্মা

স্বপন শর্মা . হে অদৃষ্ট সময়- হৃৎপিণ্ডকে বেঁধে রেখে আর কত পথ হাঁটাবে আমায়? মাতাল পল্টন হতে চিলমারীর অতিদীর্ঘ পথে, আমি দেখেছি… ব্রহ্মপুত্রের অতল জলে উপবাসী গাংচিল শীর্ণ ঠোঁটে ...
জহির রায়হানের জন্মবার্ষিকী

জহির রায়হানের জন্মবার্ষিকী

  আজ প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার,ঔপন্যাসিক,গল্পকার এবং জহির রায়হানের জন্মতিথি। ১৯৩৫ সালের ১৯ শে আগষ্ট জহির রায়হান জন্মগ্রহণ করেন ফেনির মজুপুরে৷ মাত্র ১৪ বছর বয়সে কলকাতার নতুন ...
বঙ্গ-রূপসীদের রূপকথার গল্প

বঙ্গ-রূপসীদের রূপকথার গল্প

লেখা- আশিক মাহমুদ রিয়াদ জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী আরেফিন শুভ’র বিপরীতে অভিনয় করেছেন মিশন এক্সট্রিম সিনেমায়। সারাও পেয়েছেন ব্যাপক। এর আগে মীর সাব্বির পরিচালিত ‘রাত জাগা ...
কয়েকটি অণুকবিতা

কয়েকটি অণুকবিতা

মৃধা আলাউদ্দিন ব্যর্থ এ জীবন সন্ধ্যা না ভাই, সমস্ত রাত গেল আমার শুঁড়িখানায় ব্যস্ত ছিলাম নগ্ন নারী, নর্তকীদের চুড়ি নাড়ায়।  নেশা নর্তকীদের নূপুর কিংবা ঢোলের ...