সাহিত্য কথাটার আগমনের সূত্র টানতে একজন বুজুর্গ ব্যক্তির নাম আনি। তাঁর নাম পাণিনি। পাণিনি বলেছেন,”সাহিত্য শব্দ হতে হতে বাংলায় সাহিত্য শব্দটি গঠিত হয়েছে। “প্রশ্ন হচ্ছে কিসের সহিত কি মিলেছে। অনেকে মনে করেন সাহিত্যিকের হৃদয়ের সাথে পাঠকের হৃদয়ের মিলন সাহিত্য জন্মায়। রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন মানুষের সহিত মানুষ মিলেছে, তাই মানুষের মিলনের ফলেই জন্মেছে সাহিত্য।
সাহিত্যকে কেমন হতে হবে তার রূপ বলতে গিয়ে ভি.আই.লেনিন বলেছেন, “সাহিত্যকে হতে হবে পার্টি সাহিত্য। বুর্জোয়া রীতির বিপরীতে, বুর্জোয়া সাহিত্যিক পদান্বেষণ ও অহমিকা, নবাবী নৈরাজ্য ও মুনাফা শিকারের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক প্রলেতেরিয়েকে পেশ করতে হবে পার্টি সাহিত্য নীতি। ”
সাহিত্য কী তাহলে? আমি মনে করি সাহিত্য মানে শুধু কোন বিষয় নিয়ে চমৎকার প্রকাশ ভঙ্গি নয়, বরং সাহিত্য মানে হলো সমাজ নিয়ে, মানুষ নিয়ে সভ্যতার কথামালা, বাস্তবতাকে ভাষার গাঁথুনি দিয়ে একটি নান্দনিক রূপ দেয়া।
সাহিত্যিকদের কাজ কি তাহলে? সাহিত্যিকরা সমাজের চালচিত্রের বর্ণনাকারক। সমাজকে যদি তারা যথার্থভাবে বর্ণনা না করেন তাহলে কেন তাদের বেইমান বলা হবেনা! সমাজের নিপীড়ণ নিয়ে কথা যদি তারা জোরদার আওয়াজ না তোলেন, বৈষম্যের কষাঘাত নিয়ে না হুড়মুড়িয়ে না লেখেন তাহলে বুদ্ধিবৃত্তীয় সামাজিক বিল্পব হওয়া মুশকিল। সাহিত্য পড়ে ঐ সময়ের সঠিক চিত্র জানতে পারা যায় এই বেধ বাক্য মাথায় নিয়ে যদি কোন পাঠক কোন সাহিত্য পড়েন তাহলে তো সঠিক চিত্রের আশে পাশ দিয়ে তাদের প্রবেশ ঘটবে না। এই দায় ভার একান্তই সেই সময়ের সাহিত্যিকদের।
সাহিত্যকদের প্রধান কাজ শোষণের বিপক্ষে লেখা। সাহিত্যকদের দায়বদ্ধতা হলো নিপীড়িত জনতার পক্ষে লেখা। সাহিত্যকে সমাজের একটি শ্রেণির কাছে বন্দী রাখা কোন সাহিত্যকের নৈতিকতা হতে পারে না। সাহিত্যিকরা যদি তাদের কথায় গণমানুষের কথা, কষ্ট, দাবি দাওয়া আনতে না পারেন তাহলে তার সাহিত্য লেখার ঐতিহাসিক কোন মূল্য নেই।
সামাজিক কোন অবিচার বা এমন কিছু যা সামাজিক অবক্ষয়ের চিহ্ন বহন করে, এরূপ কিছু হলে প্রথম প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত কাদের। অবশ্যই তা আসবে সাহিত্যিকদের। আরও স্পপষ্টভাবে বলতে গেলে প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকদের কাছে থেকে। কারণ তাদের মানুষ গ্রহণ করেছে তাদের প্রাণের কথায় প্রকাশক হিসেবে। সমাজ বিশ্লেষণ, মানুষের মন, মনস্তাত্ত্বিক কাটাছেঁড়ার ঠিকা নিজ কাঁধে নিয়েছেন স্বঘোষনা দিয়ে। প্রশ্ন আসে সমাজের প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকরা তা যথাসাধ্যভাবে করেছেন কি? পাঠক সামান্য মগজ খাটালেই তার উত্তর আবিষ্কার করে ফেলবেন।
অনেকেই বলতে পারেন আমি আমার মত করে রিঅ্যাকশান দেই। আমার ভাষাতেই দেই। যদি আপনার ভাষায় সাধারণ মানুষের মনের ব্যাথার কথা সাধারণ মানুষ বুঝতেই না পারেন তাহলে সেই প্রতিবাদ করে লাভ কি?
ভাষাকে উন্মুক্ত করুন। দুর্বোধ্য করে ভাষাকে বৈষম্যের উপকরণ বানাবেন না। আপনার কবিতা, প্রবন্ধ, লেখা পড়তে পি এইচ ডি করা লাগবে যদি তাহলে সেই ভাষা সাধারণের ভাষা নয়। সেই ভাষায় দুঃখী, কাঙালদের কথা মুখোশ বিহীন কন্ঠে উঠে আসে না। আপনার কবিতা সাহিত্য যদি সামাজিক সংকটকে সুন্দর পাশ কাটিয়ে গড়ে ওঠে, ফুল দেয়, ফল দেয়। তাহলে আমি বলব তা হল এক মাকাল ফল।
শেষে এতটুকু বলা, সাহিত্য যারা লেখেন তারা সচেতন, অবচেতন, অচেতনভাবে অমর হতে চান। কিন্তু অমরতা লাভ করতে সমাজকে দূরে ঠেলে কাঁচা বাজারের দর কষাকষির লেখার মত্ততায় তা হবেনা। অর্পিত দায়িত্ব পালন করুন, নচেৎ আগামীর ইতিহাস আপনাকে ক্ষমা করবেনা, অমরত্ব লাভের চিহৃ শুধু বইয়ের মাঝখানের পাতাতেই থাকবে কিন্তু তা কখনে পাঠক মনে দগ দগে ঘায়ের ব্যাথা হয়ে থাকবে না। তাই সত্য তুলে ধরতে কার্পণ্য করবেন না।