সিনেমা- আয়নাবাজি
পরিচালক-অমিতাভ রেজা চৌধুরী
প্রযোজক-জিয়াউদ্দিন আদিল,গাউসুল আলম শাওন।
চিত্রনাট্যকার-গাউসুল আলম শাওন,অনম বিশ্বাস ।
শ্রেষ্ঠাংশে-চঞ্চল চৌধুরী,মাসুমা রহমান নাবিলা,পার্থ বড়ুয়া ।
সিনেমা পর্যালোচনা লিখেছেন- হুমায়রা বিনতে শাহরিয়ার।
২০১৬ সালে আমিতাভ রেজা চৌধুরীর পরিচালিত “আয়নাবাজি” চলচ্চিত্রটি হচ্ছে একটি গোয়েন্দাগিরি ধরনের রোমাঞ্চকর গল্প।আমিতাভ রেজা পরিচালিত প্রথম ফিচারড মুভিই এই “আয়নাবাজি” – অসম্ভব সুন্দরভাবে পরিচালিত এই মুভি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের একটি মাইলফলক হিসাবে বিবেচিত।চরম উত্তেজনায় ভরপুর এই মুভি বাংলাদেশের বাহিরেও বিপুল সারা জাগিয়েছে।ছবিটির শুটিং আনুষ্ঠানিকভাবে ফেব্রুয়ারী ২০১৫ এ শুরু হয়েছিল এবং আগস্ট ২০১৫ এ শেষ হয়েছিল।১৪৬ মিনিটের রহস্য, রোমাঞ্চ, থ্রিলার আর কৌতুহলে ঠাসা সিনেমাটি ২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখে মুক্তি পায়।
শরাফত করিম আয়না / নিজাম সাঈদ চৌধুরী চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী,অসাধু ব্যবসায়ী হিসেবে লুৎফর রহমান জর্জ , হৃদি চরিত্রে মাসুমা রহমান নাবিলা, সাবের – সংবাদ প্রতিবেদক হিসাবে পার্থ বড়ুয়া ,জামিল আহমেদ সাবেরের সেবক হিসাবে অভিনয় করেন।আয়নাবাজির সংগীত পরিচালনা করেছেন অর্ণব, ফুয়াদ, হাবিব ও চিরকুট ব্যান্ড। তাদের গান সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে।বেশ ভাল রিভিউ পেয়েছিল সিনেমাটি সমালোচক এবং দর্শকদের উভয়ের কাছ থেকে ভাল সাড়া পেয়েছে। দ্য ডেইলি স্টারের জাহিদ আকবর এই ছবিটিকে ৫ টির মধ্যে ৪ টি তারকা রেটিং দিয়েছিলেন, বলেছিলেন “ফিল্মটি দর্শকদের তার চরিত্র গুলোর প্রতি সহানুভূতিপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি সরবরাহ করে, যা উজ্জ্বল গল্প বলার সাথে মিলিয়ে দর্শকদের আরও বিমোহিত করে তোলে।” তিনি চলচ্চিত্রটির গল্প, অভিনেতা, চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় এবং “অনর্থক” সিনেমাটোগ্রাফির জন্য প্রশংসা করেছিলেন, তবে চলচ্চিত্রটি দীর্ঘায়নের জন্য সমালোচনা-ও করেছিলেন।
গল্পে আয়না একজন সংগ্রামী অভিনেতা, যে তার ক্যারিয়ারে ব্যর্থ হওয়ার পরে বাস্তব পেশায় তার পেশাটিকে বাচিঁয়ে রাখতে চান। অভিনয়ে প্রাকৃতিক প্রতিভা সমৃদ্ধ আয়না – তিনি একটি বহুমুখী চরিত্রের একজন মানুষ এবং তিনি যে কাউকে চান তার মধ্যে রূপ দিতে পারেন, আসল জীবনেই অভিনয় করে বেড়াতে পছন্দ করেন, যখন যেমন চরিত্র ভাল্লাগে তখন তেমন চরিত্রকে নিজের করে চলতে থাকেন সবার অগচরে। অভিনয় খোদার দান, আয়না পেশা হিসেবেই অভিনয়কে বেছে নেয় বরং ভিন্ন আঙ্গিকে। টাকার জন্য ভুল পথ বেছে নেন আয়না, আর আয়নার আয়নাবাজির খেলা চলতে থাকে মাসের পর মাস, কেউই ধরতে পারে না। বিভিন্ন চরাই-উতরাই পার করে তার খেলা চলতে থাকে, গল্পটিতে ঢাকার অন্ধকার দিক তুলে ধরা হয়েছে , যা শাসক শ্রেণি এবং নগরবাসী গণমানুষের মধ্যে অবিচ্ছিন্ন লড়াইয়ের চিত্র ফুটিয়ে তুলে। যেখানে প্রভাবশালী ধনীরা টাকার যোগ্যতায় মানুষকে কিনে নিতে পারে।গল্পে শরাফত নাচে স্কুলের মালিক, ছোট বাচ্চাদের নাচ শেখায়। পাশাপাশি হৃদি আর শরাফতের প্রেমের কিছু সাবলীল দৃশ্য দেখানো হয়, তাদের রাগ – অভিমান, দুজনের জন্য দুজনার ভাললাগা – ভালবাসা ফুটিয়ে তোলা হয়, যেটা গল্পকে এক সুন্দর রুপ দেয়। বহু বছর ধরেই শরাফতের মাঝে হাজারো অপ্রকাশ্য কাহিনী লুকায়িত ছিল যা শুধু সেই জানে, পরে তা বের হয়ে আসে কাহিনিপটে।
কি করে বের হল তার গোপন তথ্য? কে বের করল? আর শেষে কি হল শরাফত করিম আয়নার দেখতে অবশ্য-ই এই সাস্পেন্স মুভি দেখুন।
১৯তম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ ছয়টি বিভাগে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয় ও তিনটি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে।
আমার দেখা বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের মধ্যে এক সেরা চলচ্চিত্র, আশা করি আপনাদের সবার ভালো লাগবে। দেখার আমন্ত্রণ রইল। ধন্যবাদ।