সুতরাং

সুতরাং

জোবায়ের রাজু

দশ বছর পর এই বাড়িতে ভেজা চোখে আসা ভাই রহমত আলীকে দেখে বুক ভেঙে কান্না আসতে শুরু করলো জাকিয়া বেগমের। পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে দশ বছর আগে ভাই বোনের সম্পর্ক ভেঙে গেছে। দোষটা অবশ্য রহমত আলীরই ছিলো। কৌশল করে তিনি বোনের সকল সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছেন। ভাইয়ের এমন নির্মম আচরণ জাকিয়া বেগম সহ্য করতে না পেরে বাবার বাড়িতে আসা যাওয়ার রাস্তায় আর পা বাড়াননি। দীর্ঘ দশটি বছর বুকে কষ্ট পুষে রেখেছেন। এতেদিন পর আজ সেই ভাইকে দেখে পুষে রাখা সব কষ্ট শীতল হয়ে গেলো। রক্তের সম্পর্ক আসলে এমনই।

বোনের বাড়িতে বিশেষ কাজে এসেছেন রহমত আলী। মেয়ে মিমির বিয়ের নিমন্ত্রণ জানাতে। মিমি বিয়ের উপযুক্ত হয়েছে, এটা জেনে অবাক হলেন জাকিয়া বেগম। হাঁটি হাঁটি পা পা করে বেড়ে উঠা মেয়েটা আজ বিয়ের পিঁড়িতে। এতো বছর ভাই বোনের সম্পর্কে ভাটা পড়ে থাকলেও মিমি কিন্তু যখন তখন হুট করে ফুপুর বাড়ি চলে আসতো। সেটা অবশ্য মিমির কিশোরীবেলার কথা। একটু বড় হওয়ার পর পড়ালেখার চাপে পড়ে ফুপুর বাড়ির সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকলো। তবে ফুপুর বাড়ির পথ একেবারে ভুলে যায়নি মিমি। মাঝে মাঝে আসতো। জাকিয়া বেগমের দুই সন্তান জামিল আর মারিয়ার সাথে খুব সখ্যতা মিমির। প্রতিটি জন্মদিনে জামিল মিমিকে গিফট পাঠাতে ভুল করেনা।

এতেদিন পর ভাইকে দেখে কিছুক্ষণ নিরবে কাঁদলেন জাকিয়া বেগম। চোখের জলের সাথে যেনো এতোদিনের সমস্ত অভিমানগুলি ঝরে পড়েছে।

২.

আগামীকাল মিমির বিয়ে। জাকিয়া বেগম আজ ভাইয়ের বাড়ি যাচ্ছেন। মারিয়া তিনঘন্টা আগে সেজেগুজে বসে আছে। ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আপন মনে সাজছেন জাকিয়া বেগম। জামিল পূর্বের বারান্দার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বড় কান্না পাচ্ছে জামিলের। মিমির অন্য কোথাও বিয়ে হচ্ছে, সেটা জামিলের জন্য খুব কষ্টের। মিমিকে যে সে জীবন দিয়ে ভালোবাসে। কিন্তু দ্বিধা আর ভয়ের কারণে মিমিকে তা কখনো বলা হয়নি। জামিল অনেকগুলি প্রেমপত্র লিখেছে মিমিকে, কিন্তু কখনো মিমিকে দেয়া হয়নি। আবেগ মেশানো সেসব প্রেমপত্র অবলীলায় ঠাঁই পেয়েছে শুধু তোষকের নিচে।

ভাইকে এভাবে নিরিবিলি একা থাকতে দেখে পাশে আসে মারিয়া। মিমির বিয়েতে যাবার কোনো প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না জামিলের মধ্যে।

-তুই যাবি না?

-না।

-কেনো?

-এমনি।

-এমনিতে নয়রে। আমি সব জানি।

-কি জানিস?

-মিমিকে ভালোবাসিস, না?

-ইয়ে মানে…। তুই কিভাবে…

-তোষকের নিচে রাখা সবগুলি প্রেমপত্র পড়েছি আমি। ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয়। মনের মানুষকে মুখ ফোটে বলতে হয় মনের সব কথা। মিমিকে চিঠি লিখেছিস, অথচ সাহসের অভাবে দিতে পারলি না। ভালোবাসলে বুকে সাহস রাখতে হয়।

-মিমি যদি আমাকে ফিরিয়ে দিতো!

-সেটা তখন দেখা যেতো। এখন আর এসব বলে লাভ নেই। রেডি হয়ে নে প্রেমিকার বিয়েতে যেতে। হি হি হি।

মারিয়া হাসছে। তার মনে কত আনন্দ। অথচ বিরহে জামিলের বুকটা ভেঙে যাচ্ছে।

আমিশাপাড়া, নোয়াখালী। 

 

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
মৃধা আলাউদ্দিনের বই : সামনের শীতে মানুষ রৌদ্র হবে

মৃধা আলাউদ্দিনের বই : সামনের শীতে মানুষ রৌদ্র হবে

আল হাফিজ হাজার বছরের বাংলা কবিতার ক্রমবিকাশময় ইতিহাসের দিকে তাকালে বেশ কটি বাঁক বদলের চিত্র খুব সহজেই চিহ্নিত করা যায়। নদীর গতিধারার মতোই যা সতত ...
কবিতা-হে রাষ্ট্র প্রধান

কবিতা-হে রাষ্ট্র প্রধান

সালেহ উদ্দিন সুমন   হে রাষ্ট্র প্রধান ঘোষনা করুন আজ থেকে মানুষে মানুষে, থাকবে না কোন ভেদাভেদ।  যেমন আপনার ঘোষনায় বন্ধ হয়ে যায় বিপনী বিতান, ...
জোবায়ের মিলন'র দু'টি কবিতা

জোবায়ের মিলন’র দু’টি কবিতা

জোবায়ের মিলন ১. রাষ্ট্র ও সম্পর্ক রাষ্ট্র; আমার প্রেমিকার নাম, আমার ভয়ার্ত রাতের সাহসী ওম চুমু খাওয়ার সরাবপাত্র একান্ত অভিসার ফুল। অনুরাগ, বিরাগ ও অভিমানে ...
ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা/ শুভেচ্ছা কার্ড/SMS ২০২৪

ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা/ শুভেচ্ছা কার্ড/SMS ২০২৪

ঈদের চাঁদ দেখা গিয়েছে! [প্রিয় শুভানূধ্যায়ী, ছাইলিপির পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই ঈদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। দারুণ সব ঈদের শুভেচ্ছা কার্ড নিয়ে ছাইলিপি হাজির হয়েছে ...
কেউ পারিনি ওপারে যেতে

কেউ পারিনি ওপারে যেতে

ইব্রাহিম বিশ্বাস সারা রাত জেগে জেগে আমি কাদের আনাগুনা দেখি ওরা কারা ? সবার কাঁধে কাঁধে লাশ হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত নদীর কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে মৌ ...