সূর্য দীঘল বাড়ি

সূর্য দীঘল বাড়ি

জোবায়ের রাজু

আমিন সাহেবের মন খারাপ। চিরকাল সুস্থ সবল মানুষটার শরীরে আজ এই রোগ তো কাল ওই রোগ ধরা পড়ছে। হার্ট, প্রেসার, শ্বাসকষ্টের পর সর্বশেষ যোগ হয়েছে ডায়াবেটিস। শরীরে ডায়াবেটিস ভর করেছে জেনে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। ডায়াবেটিসের মাত্রাটাও বেশি। ডাক্তার সোহরাব বলেছেন ইনসুলিন নিতে হবে। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে ইনসুলিন শরীরে পুশ করা নিয়ে। নিজের শরীরে নিজেই ইনসুলিন পুশ করাটা আমিন সাহেবের জন্যে অস্বস্তিই বটে। সাহসে কুলোয় না। ভয় ভয় লাগে। কিন্তু রোগ মুক্তির জন্যে ওসব ভয় ভীতির তোয়াক্কা না করে ইনসুলিন নিতেই হবে, সেটা আমিন সাহেব বোঝেন।
ছেলে আসিফের ধারস্থ হলেন তিনি। আসিফ বাবার এই সমস্যা সমাধানে আপত্তি তুলল না। রোজ সকালে অফিসে যাবার আগে বাবাকে ইনসুলিন পুশিং করে দেয়। কাজটা ঝামেলার নয় যদিও।
কিন্তু দিন যেতে যেতে এই কাজটি আসিফের কাছে বেশ ঝামেলার মত লাগে। ছেলে অফিসে যাবার আগে আমিন সাহেব ইনসুলিন নিয়ে অধীর আগ্রহে সোফায় বসে থাকেন ইনসুলিন নেয়ার জন্যে। রাতভর ফেসবুকে মগ্ন থাকা আসিফ ঘুম ঘুম চোখে বিছানা ছেড়ে কোনো রকম ফ্রেশ হয়ে নাস্তার পর তড়িগড়ি করে অফিসে ছোটে। বাবার ইনসুলিন পুশিং করে দেয়ার ব্যাপারে মনে থাকে না। ছেলের এই এক ধরনের অবহেলা দেখে আমিন সাহেব আসিফের পথ আগলে দাঁড়ান আর অনুনয় সুরে কাঙ্খিত কাজটি করে দেয়ার আহবান জানান। বাবার আহবানে আসিফ সাড়া দেয় যদিও, কিন্তু চোখে মুখে থাকে বিরক্তি ভাব। যেন বাবা তাকে কঠিন কোনো কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন।
২.
প্রায় বিশ মিনিট ধরে ইনসুলিন নিয়ে ছেলের অপেক্ষায় বসে আছেন আমিন সাহেব। আসিফ ঝটপট বিছানা ছেড়ে অফিসমুখি হতেই আমিন সাহেব আগলে দাঁড়ান। ‘বাবা, আমার ইনসুলিনটা পুশিং করবি না?’ কিন্তু আসিফের যে অফিসের খুব তাড়া। বাবাকে মুখের ওপর বলে দেয়, ‘সময় নেই বাবা। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে।’ বলেই দ্রæতপায়ে চলে যায়। আমিন সাহেব ছেলের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। এমন অভদ্র আচরণ বাবার সাথে করতে পারলো আসিফটা!
আজ আসিফের অফিসের তাড়া বলে বাবাকে ইনসুলিন প্রয়োগ করার সময় নেই, অথচ আসিফের কিশোর বেলায় রোজ সকালে যখন সে বাবার হাতের মাখানো দুধভাত খেতে কান্নাকাটি করতো, আমিন সাহেব ঠিকই অফিসের তাড়াকে গুরুত্ব না দিয়ে ছেলেকে সময় নিয়ে দুধভাত খাইয়ে দিয়ে তারপর অফিসে গিয়ে বসের কটুবাক্য শোনেছেন। সেদিন তিনি পিতৃত্ববোধের কারণে আসিফের মুখে দুধভাতের সাদা লোকমা ভরে দিয়ে অফিসের সময় দেরি হয়ে যাবার কথা না ভেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাবার প্রতি আজ সেই দায়িত্ব পালনে আসিফের এতো অবহেলা। দীর্ঘশ্বাস আসে আমিন সাহেবের।
তিনি বেরিয়ে আসেন উঠোনে। আমপাতার ফাঁক দিয়ে সকালের সূর্যের এক ফালি আলো এসে পড়েছে উঠোনের এক কোণে। এই বাড়িতে এখন আর আগের মত সূর্যের আলো পড়ে না। গাছ গাছালির ডালপালা মেলে দিয়েছে চারপাশ। সূর্য দীঘল বাড়িটি অনেকদিন আলো পায় না। বদলে যাচ্ছে। আমিন সাহেবেরও মনে হতে লাগল আসিফও দিন দিন বদলে যাচ্ছে। বাবার প্রতি তার রূঢ় আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে খুব।

 

 

আমিশাপাড়া, নোয়াখালী

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
সিনেমা রিভিউ - আয়নাবাজি

সিনেমা রিভিউ – আয়নাবাজি

সিনেমা- আয়নাবাজি পরিচালক-অমিতাভ রেজা চৌধুরী প্রযোজক-জিয়াউদ্দিন আদিল,গাউসুল আলম শাওন।  চিত্রনাট্যকার-গাউসুল আলম শাওন,অনম বিশ্বাস  ।  শ্রেষ্ঠাংশে-চঞ্চল চৌধুরী,মাসুমা রহমান নাবিলা,পার্থ বড়ুয়া ।  সিনেমা পর্যালোচনা লিখেছেন- হুমায়রা বিনতে ...
আড়াল থেকে

আড়াল থেকে

সোমা মুৎসুদ্দী   আড়াল থেকেই দিচ্ছো সাহস অহর্নিশি  আড়াল থেকে আগের মতো  বলছো তোমায় ভালোবাসি  হারানো সেই  দিনগুলোকে  চাইলে কি আর ফিরে পাওয়া যায়  ছোট্ট ...
লুনা রাহনুমার দুটি কবিতা

লুনা রাহনুমার দুটি কবিতা

প্রেম  অভিযোগগুলো তোলা থাক (আজ) অনুযোগের খাতা বন্ধ;  হৃদয়ে হৃদয় জড়িয়ে দুজন –  হয়ে যাবো প্রেমে অন্ধ।   মাতোয়ারা হই আমরা এসো চাঁদের আলোতে সিক্ত; ...
সংকেত- মহীতোষ গায়েন

সংকেত- মহীতোষ গায়েন

মহীতোষ গায়েন   গাছের পাতায় আবার অভব্য চাপ, হাওয়ায় ভাসে হুমকির ভেঁপু,সাপুড়েরা প্রস্তুত করছে ঝাঁপি,অম্লান আলোয় অপেক্ষায় থাকে জর্জরিত সমাজ।   সিদ্ধ সারস্বতরা বেসুরো গাইছে ...
শৈশব স্মৃতির কোটরে বন্দী যে সময়

শৈশব স্মৃতির কোটরে বন্দী যে সময়

আসিফ আফনান পিয়াল টিপটিপ করে টিনের চালে কত শত  বৃষ্টির ফোটা আছড়ে পড়ছে। নিচে পাত্র রাখা! একেকফোঁটা বৃষ্টিতে পূর্ন হবে পাত্র। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি, ...
মাতৃভাষা

মাতৃভাষা

ছোটন গুপ্ত কুলিমজুর কবিতা হয়-  জানান তা নজরুল, দিনবদলের বোধন চেনান – সুকান্ত নির্ভুল। টুকটুকে লাল সকাল দেখান – সুভাষ মুখুজ্জে, নীরেন লেখেন,রাজার পোষাক নেই যে ...