স্রোতের টানে

স্রোতের টানে

রেবেকা সুলতানা রিতু

মাথার উপর খাঁ-খাঁ রোদ্দুর।হঠাৎ মাথার উপর দিয়ে চিল উড়ে যায়।চারিদিকে নিস্তব্ধতা। তীব্র বন্যা আর নদী ভাঙনে মানুষের মুখে-চোখে  তার ছাঁপ বিদ্যমান। বড় বকুল গাছটার নিচে বসে আছে সাহেরা বানু ও সাদ্দাম হোসেন। বন্যায় হারিয়েছেন নিজ বাড়ি-ঘর আর সঙ্গে একমাত্র নাতিকে।সাহেরা বানু নীরবে আঁচল মুখে চেপে কেদেঁই যাচ্ছেন। সাদ্দাম হোসেন একদৃস্টিতে তাকিয়ে আছেন নদীর টলমলে জলের পানে।

এইতো কাল অব্দি তার সব ছিলো আর আজ নিঃস্ব।নাতিকেও রক্ষা করতে পারলেন না।মরার পর কি জবাব দেবে মৃত মেয়ের কাছে।

গত বছর যেদিন মেয়েটা শ্বশুড় ঘর থেকে চলে এলে নাতিকে নিয়ে, আর্থিক অনেটনে থাকা স্বত্তেও সাদ্দাম হোসেন ফেরাতে পারে নি। বাপের ঘাড়ে চেপে বসে বসে খাচ্ছে এই চিন্তায় মেয়েটা মারা গেলো। হাহাকার সেদিনও তার বুকের আকাশে ছেয়ে উঠেছিলো। আর আজ হারিয়ে ফেললেন নাতি কে। মস্ত দুনিয়ায় নিজেকে একা মনে হচ্ছে সাদ্দাম হোসেনের। মেয়ের  আকুতিভরা শেষ বাক্য কানে বেজে চলেছে,”বাপে,আমার ছাওয়ালরে দেইখা রাইখো।”

পারে নি সাদ্দাম হোসেন কথা রাখতে। নদীর বেশ দূরেই তাদের বাস ছিল। রাতের আধাঁরে  বন্যা চুপিচুপি এসে নাতিকে নিয়ে গেলো তার মায়ের কাছে। বুড়ো-বুড়িকে কেন আল্লাহ বাচিঁয়ে রেখেছে, এই যেন এখন আক্ষেপ। 

তীব্র ভাঙন ধেয়ে আসছে বকুলপুর গ্রামের বকুল গাছের দিকে। অসাড় হয়ে বসে আছেন দুই প্রাণ। সব হারিয়ে কিছু বাকি নেই আর হারাবার আর তাদের। স্রোতের টানে ভেসে যেতে চায় তারা মেয়ে আর নাতির কাছে। কিছুদূরেই বসে ছিলেন  আজম মিয়া।তার পাশে রহমান মিয়া। তাদের পাশে শত মানুষ। বকুলপুরের বকুল গাছটাই যে এখন তাদের শেষ সম্বল। পুরো গ্রাম চলে গেছে নদী গর্ভে।ভাগ্যের জোড়ে বেচেঁ আছে যারা তাদের বুকে বয়ে যাচ্ছে তীব্র আরেক বন্যা।যার আঘাতে নিজের মৃত্যু কাছে আসলেও অন্যের ক্ষতি হবে না। হঠাৎ জলের প্রচন্ড শব্দ।ভেঙে পড়লো বকুল গাছ।শেষ চিহ্নের সমাধি। একে-একে চলছে বকুলপুরবাসী,গন্তব্য অজানা।মাথা গোঁজার ঠাঁই চাই যে।নতুন সংসার, নতুন গ্রাম আবার গড়তে হবে যে। স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া এক গ্রামকে আবার গড়ে উঠতে হবে হয়তো আবার কোনো এক বকুলপুর হয়ে।

 

কুড়িগ্রাম সদর

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
বই রিভিউ - থ্রি এ এম

বই রিভিউ – থ্রি এ এম

বইয়ের নাম- থ্রি এ এম (থ্রি এম সিরিজের প্রথম বই) ধরন-থ্রিলার লেখক-নিক পিরোগ বই পর্যালোচক –আবির জয়। প্রচ্ছদ ছবি-তাসনিম তূর্জ। নিক পিরোগ এর লেখা ‘থ্রি ...
বাঙলা ভাষার স্তুতি

বাঙলা ভাষার স্তুতি

আযাদ কামাল রক্ত-শপথে নির্ণীত অ,আ,ক,খ… আমার প্রিয় বর্ণমালা আমার ভাষা-চেতনার ভেতর বাহিরে নতুনের প্রেরণা। কী যে দ্যুতিময়!কী যে প্রাণময়! ভাষাশহিদের ভাষা প্রণয়। বর্ণবিভায় বিমোহিত বিশ্ববাঙালি আমার ...
তোপধ্বনি- হুসাইন দিলাওয়ার 

তোপধ্বনি- হুসাইন দিলাওয়ার 

হুসাইন দিলাওয়ার  কে যেন দরজায় কড়া নাড়ছে ।  ঠক ঠক ঠক ঠক । বেশ ধৈর্য্য ধরে মৃদু মৃদু আঘাতে কড়া নাড়ছে । মজার ঘুমটা অবেলায় ...
দুর্গা প্রতিমা তৈরীতে কেন দরকার হয় পতিতালয়ের মাটি?

দুর্গা প্রতিমা তৈরীতে কেন দরকার হয় পতিতালয়ের মাটি?

বেশ্যা বাড়ির মাটি শারদপ্রাতে, বাতাসে মিষ্টিঘ্রাণ আকাশে ওড়ে সাদা মেঘ, ধু ধু কুয়াশা ঘেরা প্রান্তরে মর্ত্যলোকে নামলেন দেবী! চারদিকে ছড়িয়ে গেলো সুঘ্রাণ, ধুপ-ধুনোর গন্ধ রাঙালো ...
বাবার প্রতি ভালোবাসা "

বাবার প্রতি ভালোবাসা “

বাবা, তুমি জন্মদাতা, ভোলা যাবেনা তোমার কথা।   বাবা, তোমার কাছেই হাঁটতে শিখি, শিখি চলা-বলা, সারাটি দিন কাটতো আমার, জড়িয়ে তোমার  গলা।   বাবা, শ্রদ্ধা ...
বৃষ্টি পড়ে

বৃষ্টি পড়ে

শ্যামল বণিক অঞ্জন   বৃষ্টি পড়ে শহর জুড়ে গ্রাম জনপদ কাছে দূরে। বৃষ্টি পড়ে গাছের শাখায় সিক্ত পাখির রঙিন পাখায়। বৃষ্টি পড়ে নদী মাঠে খাল ...