হাইড্রোপনিক ঘাসে পুষ্টি আবার এ ঘাসেই ঝুঁকি!
যারা শহরে থাকেন তাদের জন্য খরগোশের জন্য ঘাস ম্যানেজ করা কঠিন ব্যাপার। তাই ব্যালকনিতে হাইড্রোপনিক ঘাস চাষ করা অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। এ ছাড়াও শুকনো মৌসুমে গ্রামেও ঘাস পাওয়া কঠিন৷ কারণ ঘাস রোদে পুড়ে খড় হয়ে যায়। তাই যারা শহরে থাকেন তাদের পোষা প্রাণীর জন্য এ ঘাস চাষ করতে পারেন। এ ঘাস চাষের পদ্ধ্বতি অত্যন্ত সহজ। তবে এ ঘাস তৈরীতে বিড়ম্বনাও আছে, আধাঘন্টা/দুইঘন্টা পরপর পানি দিতে হয়। ঘাস বড় হওয়ার প্রসেসটাও সপ্তাহ দুইয়ের কাছাকাছি৷ আবার এ ঘাস বেশি খেলে পটি পাতলা হয়৷ যে কারণে এ ঘাস কতটুকু খাওয়াবেন সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে৷ এ ঘাসকে বলতে পারেন ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো’। সাধারণত গম ও ভুট্টা দিয়ে হাইড্রোপনিক ঘাস উৎপন্ন করা যেতে পারে৷ গম ঘাসের চেয়ে ভুট্টা ঘাস কিঞ্চিত ভালো। এ ঘাসে ফাঙ্গাস ধরে, যা খরগোশের জন্য প্রাণনাশের কারণও হতে পারে৷ তাই ঘাস তুলে পরিস্কার পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে পানি ঝড়িয়ে খেতে দিবেন। বেশি করে ঘাস ধুয়ে রোদে শুকিয়ে হ্যে তৈরী করে নিলেও সবচে ভালো হয় ৷ আপনার বানি সুস্থ থাকুক৷ ওরা অসুস্থ হলে তো আমাদেরই ঘুম উড়ে যায়।
এ ঘাস চাষ পদ্ধতি খুবই সহ্জ এবং সাশ্রয়ী:
চাষ পদ্ধতি :
বাজার থেকে কিনে আনা গম ভালোভাবে ধুয়ে একটি পরিস্কার পাত্রে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে৷
ভিজিয়ে রাখার পরে একটি কালো কাপড়ে ১২ ঘন্টা একটি অন্ধকার ঘরে রাখতে পারেন অথবা সরাসরি ২৪ ঘন্টা পর ছিদ্রযুক্ত ট্রে-তে বিছিয়ে দিয়ে উপরে কালো কাপড় অথবা পাটের বস্তা দিয়ে আধাঘন্টা-দুইঘন্টা পরপর পানি স্প্রে করে দিতে হবে৷ খেয়াল করতে হবে কোনভাবেই যাতে গমের ওপর দেয়া কাপড়টি শুকিয়ে না যায়। দুদিন পরে কাপড় গমের উপর থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরে গম থেকে অঙ্কুর বের হবে৷ এরপর ঘাস বড় হওয়ার আগ পর্যন্ত পানি স্প্রে করতে হবে৷ সব মিলিয়ে দশ দিন পরে খাওয়ানোর উপযুক্ত হবে৷ আর বিস্তারিত জানতে ইউটিউব কিংবা গুগলে সার্চ করতে পারেন৷
হাইড্রোপনিক ঘাস গরু ছাগল খরগোশ কিংবা মুরগির জন্যেও অত্যন্ত সুষম পুষ্টির ঘাস। তবে এ ঘাসে রয়েছে ঝুকি, চাষপদ্ধতিতে না জানলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এ ছাড়াও ফাঙ্গাস আক্রমণ হওয়া এ ঘাস যদি না ধুয়ে প্রাণীকে খেতে দেওয়া হয় তাহলে বিষক্রিয়ার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। দুগ্ধবতি গাভীর জন্য এ ঘাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
‘গাভীর মুখে দিলে ঘাস
দুধ পাবেন বারো মাস
হাইড্রোপনিক ঘাস কি ও কেনো : মাটি ছাড়া শুধু মাত্র পানি ব্যবহারকে ঘাস চাষ করাকে হাইড্রোনিক ঘাস বলে। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। অপরদিকে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতেও মেধাবী জাতি গঠনে প্রচুর পরিমাণ দুধ ও মাংস উৎপাদন করা প্রয়োজন। দুধ ও মাংস উৎপাদন করতে হলে গাভীর জন্য প্রচুর পরিমাণে কাঁচা ঘাসের প্রয়োজন। আমাদের দেশের অনেক খামারির ঘাস চাষের জমি নেই এবং আবার কিছু খামারি আবাদি জমিতে ঘাস চাষ করতে ও চান না। অথচ প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি ওজনের একটি গাভীকে দৈনিক ১৫ থেকে ২৫ কেজি কাঁচা ঘাস দিতে হবে। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করতে জমির প্রয়োজন হয় না তাই ইচ্ছা করলেই সব খামারি খুব সহজেই এ পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করে গরুকে খাওয়াতে পারেন। এ ঘাস বাজারের দানাদার ও মাঠের সবুজ ঘাসের প্রায় সব পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। তাছাড়া উৎপাদন খরচও খুবই কম। (প্রতি কেজি ১.৫০-২.০০ টা.)
চাষের স্থান : ঘরের ছাদ, ঘরের ভেতরে, নেটহাউস, পানির টানেল, বারান্দা, খোলাজায়গায়, প্লাস্টিকের বালতি, পানির বোতল, মাটির পাতিল, ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।
ব্যবহৃত বীজ : ভুট্টা, গম, ছোলা, সয়াবিন, খেসারি, মাষকলাই এবং বার্লি।
চাষ পদ্ধতি
হাইড্রোপনিক ঘাসের উপকারিতা;
সবুজ ঘাস উৎপাদনের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
স্বল্প জায়গায়, অল্প পরিসরে অধিক ঘাস উৎপাদন করা যায়।
আঁশ জাতীয় খাদ্যের শতকরা ৪০ থেকে ৫০ ভাগই হাইড্রোপনিক ঘাস খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়। ১০ থেকে ১৫ ভাগ দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। দুধের ফ্যাট ও এস এন এফ শতকরা ০.৩ থেকে ০.৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়।
এ ঘাস শতকরা ৯০ ভাগ হজমযোগ্য পক্ষান্তরে এই বীজের দানাদার খাবার মাত্র শতকরা ৪০ ভাগ হজমযোগ্য।
রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার নেই।
এ ঘাসে দানাদারের চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি পরিমাণের ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি বিদ্যামান।
গর্ভধারণের হার বৃদ্ধি পায় কারণ এ ঘাসে ভিটামিন ই সেলিনিয়াম, ভিটামিন এ পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যমান।
শতকরা ২৫ ভাগের অধিক ঘাসের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
এ ঘাস আঁশ উদ্ভিজ আমিষ, নানাবিধ ভিটামিন ও খনিজ লবণের উৎস।
এ ঘাস সারা বছরই চাষ করা যায়। মাটিবাহিত রোগ হবে না। কীটপতঙ্গ আক্রমণের সম্ভাবনা নেই তাই কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না।
দানাদার খাবারে যে এন্টিনিউট্রিশনাল ফ্যাকটস হিসেবে ফাইটিক এসিড থাকে সেটাকে দূরীভূত করে রুমেনের চঐ কমায় ফলে শরীরের ইমিউনিটি ও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে।
পরিকল্পিতভাবে চাষ করা যায় (ছোট/বড়)।
এটি লাভজনক ও মানসম্পূর্ণ ফসল।
অধিক রসালো ও পরিপাচ্য হওয়ার কারণে দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
এটি অধিক পরিবেশ উপযোগী।