আশিক মাহমুদ রিয়াদ
দুপুর বেলা খেয়ে দেয়ে একটু গা এলিয়ে দিয়েছি বিছানায়৷ চোখ বুজে কানে হেডফোন লাগিয়ে ঝাকানাকা একটা গান শুনছি আর মাথা ঝাকাচ্ছি সাথে আমার শরীরটাও দুলছে। আমার দাদী এসে আমার এই কর্মকান্ড দেখে ঝপাং করে বিছানার ঝাড়ু দিয়ে আমাকে মারলেন। কেন মারলেন বুঝতে পারলাম না৷ ঝাড়ুর বাড়িতে আমার গান শোনা থমকে গেলো৷ ঝাড়ু দিয়ে একটা না কয়েকটা বাড়ি দিলেন। আমি হতবম্ব চোখে দাদীর দিকে তাকাতে-ই দাদী আতংকিত গলা বললেন, “দাদু তুই ঠিক আছিস তো? তোর কিছু হয়নি তো? ডাক্তার ডাকব?” আমি রাগন্বিত হয়ে বললাম, “ফাজলামো পেয়েছো? এতক্ষণ ঝপাং ঝপাং করে ঝাড়ুর বাড়ি দিয়ে এখন কিনা তোমার এই সহনভূতি? দাদী উলটো রাগী গলায় আমাকে ধমকালেন, ” আমি তো তোকে কারেন্টের হাত থেকে বাঁচালাম। ” আমি বললাম,”কারেন্ট? কোথায় কারেন্ট?” দাদী বললেন,” কেন ঐ যে তোর কানে। তারের মতো। আর তুই তো কারেন্টে শক খাওয়ার মতো করছিলি৷ আমার বুঝতে বাকি রইলো না৷ কেন ঝপাং ঝপাং করে ঝাড়ুর বাড়ি খেলাম। এই জন্যেই হয়ত গুরু জনরা বলেন- এইসব জিনিষ কানে লাগাইলে অকাল কান যাবে। কিন্তু আজ কান যাওয়ার বদলে আমার গেল পিঠের ছাল।
আরও পড়ুন – সেরা বাংলা হাসির গল্প সংকলন (২০২৩)
সেদিন রাস্তায় হেডফোন কানে দিয়ে গানের তালে তালে হেলতে দুলতে রাস্তা পার হওয়ার সময় কুত্থেকে এক ফটোসাংবাদিক এসে আমার ছবি তোলা শুরু করলো। ভাবলাম সেলিব্রেটি হয়ে গেছি হয়ত। আমি রাস্তার মাঝখানে সুন্দর করে এক্সপ্রেশন দিয়ে দাড়ালাম৷ হঠাৎ এক অটোওয়ালার গালির আওয়াজ পেলাম।, ‘অই ভাই,খাইয়া দাইয়া কাম নাই? রাস্তার মাঝখানে দাড়াইয়া আছোস ক্যান?” আমি হেডফোন কান থেকে খুলে বললাম,’কী হয়েছে? আপনি এত রেগে যাচ্ছেন কেন?’ এক কথায় দুই কথায় অটোওয়ালার সাথে তর্কাতর্কি শেষে এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়ে গেলো। আমার মুখ কেটে গেলো, ঠোট কেটে গেলো।
বেশকিছু দিন পরের ঘটনা। কলেজ থেকে হেডফোন কানে দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। বাবাকে দেখলাম লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন।কেন তিনি এই ভর দুপুর বেলা লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন সেটা আমার জানার কোন আগ্রহ নেই৷ কলেজ থেকে এসেছি বলে আমি খুব ক্লান্ত৷ বাবার কাছে যেতেই তিনি লাঠি দিয়ে সজোড়ে আমাকে মারলেন৷ মাথার চুলগুলো বড় বড় ছিলো বলে তিনি চুল ধরে আমাকে টানতে টানতে ঘরের ভিতরে নিয়ে গেলেন। তারপর বললেন,’রাস্তাঘাটে মাস্তানি করো? এই দেখ তোর ছবি সহ আজকে পেপারে তোর নামে খবর বেড়িয়েছে। দেখ হারামজাদা!’
হেডফোনের এই বিড়ম্বনায় আমি নিজেই একসময় বিরক্ত হয়ে হেডফোন ব্যবহার করা বাদ দিয়ে দিলাম৷আমার গার্লফ্রেন্ড ইয়ানা হেডফোনের পাগল। তার কাছে সবরঙের হেডফোন আছে। প্রতি ছয় মাস পর পর আমার তাকে হেডফোন গিফট করতে হয়। তারকাছে গেলে আমাকে হেডফোন কানে গুজে বসে থাকতে হয়৷ আমি একদিন কড়াকড়ি ভাবে বলে দিলাম,”এরকম হেডফোন প্রেম আমার দরকার নেই।” ইয়ানা খুব রাগ করেছিলো আমার কথায় । অতঃপর আমাদের ব্রেকাপ হয়ে গেলো। আজকাল আর হেডফোন ব্যবহার করি না;একেবারেই করি না।