“২০ বছর পরে আবার দেখা”

"২০ বছর পরে আবার দেখা"

ফাল্গুনী খান

সদ্য কিশোর থেকে
যৌবনে পা দিলাম
হাজারো রঙে এই পৃথিবী
দেখা শুরু করলাম
বন্ধুদের সাথে আড্ডা
জমে উঠলো চায়ের টঙ্কে
দেরি করে ঘরে ফিরলে রাতে
শেষ হতো মায়ের বকুনিতে

বৃষ্টি পছন্দ ছিল না
পছন্দ ছিল না তার আমেজ
গ্রীষ্মে বাতাস খেয়ে
বা শীতে আলসেমিতে
দিন কাটতো ঘরেতে

হটাৎ বেলা শেষে
ফিরছি ঘরের উদ্দেশ্য
পা একটু বেশি দৌড়ে ওপর ছিল
মাথায় ছিল মায়ের বকুনির কথাগুলো
আচমকা ধাক্কা লাগলো
এক স্নিগ্ধ কোমলী নারীর কাধে
ক্ষমা চাইতে চাইলাম তার মুখপানে
মনে হলো আকাশে বিদ্যুৎ চমকালো
তার রূপের ঝলকে

অপরূপ রুপ তার
দেখে মন হলো উদাসীন
মায়ের বকুনির কথা ভুলে
পা দুখানি চললো তার দুয়ারে
দু-তিন রাত চললো
শুধু সেই এলোকেশীর ভাবনাতে

আবার দেখার ইচ্ছেতে
ছুটলুম সেই পথেতে
নামলো বৃষ্টি
মেজাজটা হলো খিটমিটে
হঠাৎ কে যেন নামলো
টেক্সির দুয়ার খুলে

লাল শাড়ী কালো পাড়
খোলা চুল চোখে কাজল আর
ছোট একটা টিপ
এক পায়ে নূপুর
অন্য এক হাতে চুরি
সেদিন প্রথম ভালো লেগেছিল বৃষ্টিকে
মনে গেথেছিল তার আমেজ
সাহস করে গিয়েছিলাম তার পানে
চেয়ে রয়েছি অপলক দৃষ্টিতে

সাত দিনের মাথায় গেলাম বন্ধুর বাড়িতে
গিয়ে দেখি সেখানে বসে আছে
সেই অপরূপ কন্যাটি
বন্ধু কে জিজ্ঞেস করলাম
কে হয় এই কন্যা
দূর সম্পর্কের বোন বলে
পরিচয় করিয়ে দিলো আমার বন্ধুটা

পছন্দ হয়েছে সেই কন্যাকে
জানালাম বন্ধুর মাধ্যমে
অন্যের সাথে তার মন আদান-প্রদান
হয়েছে বহুদিন আগে

ভাগ্য আমার খারাপ এটা মেনে নিলাম
তিন দিন ঘরের দার দিয়ে ছিলাম
বুঝিয়ে ঘর থেকে বের করে
বাপ – মা পড়তে পাঠালো দূরে
ভেবেছিলাম সেখানে গিয়ে
ভুলে যাবো সেই কন্যাকে
পড়ার দিকে মন দিলাম
দূরের দেশে গিয়ে
কিন্তু প্রতি রাতে দেখি তারে
কন্যাটি আমার স্বপ্নে আসে

এভাবে পড়া শেষ করে চাকরি নিয়ে
বারো বছর পর ফিরলাম
মা দেখেশুনে বিয়ে দিলো
নিষেধ করলাম না
আট বছর সংসার জীবন
ভালোই চলছে দিনকাল
কিন্তু সেই বৃষ্টির আমেজ
আজও মনকে বলে বেলা শেষ

সেদিন ময়রার দোকানে
মিষ্টি কিনতে গিয়েছিলাম আমি
হঠাৎ কে যেন পিছন থেকে বলে
কেমন আছেন নন্দনাল চক্রবর্তী?
কেপে উঠলো ভিতরটা
পিছন ফিরে দেখি
এই তো সেই আমার
স্বপ্নের রাজকন্যাটা

বিশ বছর পর দেখলাম তাকে
কি বলবো ভেবে জিজ্ঞেস করেছিলাম
বিশ বছরে পরিবর্তন হওনি দেখি
সে বললো চিনেছেন আমাকে
বললাম সব ভোলা যায়
কিন্তু প্রথম ভালবাসা
ভোলা যায় কি সখী

হেসে দিয়ে বললো
কেমন আছে বাড়ীর সবাই?
বললাম বিশ বছর ধরে আমার মন বাদে
ভালোই আছে সবাই এই চক্রবর্তী পাড়ায়

জিজ্ঞেস করলাম
তোমার কি খবর সুধা
স্বামী -সন্তান নিয়ে ভালোই আছে
বললো আমাকে যার ডাক নাম চন্দ্রমল্লিকা

আসি বলে চলে গেলো
বৃষ্টি আবার নামলো
বৃষ্টি দেখে হেসে বাড়ি এলাম
বললাম তোর আমেজ থাকুক
বিশ বছর না মৃত্যুর আগ পর্যন্ত

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
কবিতা-নিঃশব্দে কেউ

কবিতা-নিঃশব্দে কেউ

|আফসানা মীম   আমি যখন মনমরা হয়ে আকাশ দেখবো তখন নিঃশব্দে কেউ আসুক ঠিক যেমন দখিনা হাওয়া বয়ে যায়, চুপিচুপি আনমনে দিগবিদিক হয়ে! বৃষ্টি ভেজা ...
বই পর্যালোচনা- ক্যাপ্টেন থমসনের গুপ্তধন

বই পর্যালোচনা- ক্যাপ্টেন থমসনের গুপ্তধন

বইয়ের নাম-ক্যাপ্টেন টমসনের গুপ্তধন। লেখক-সৌরভ মুখোপাধ্যায়। ধরণ-এ্যাডভেঞ্চার। প্রকাশকাল-২০১২ বই পর্যালোচনা- আবির জয়  . . . সৌরভ মুখোপাধ্যায়ের লেখা “ক্যাপ্টেন থমসনের গুপ্তধন” এক অনবদ্য গল্প। লেখকের ...
কবিতা সমাজ বাঁচায় 

কবিতা সমাজ বাঁচায় 

I আহমাদ আব্দুল্লাহ নিলয় আমার অতীতের কাছে একদিন সবায়কে নিয়ে যাবো। কেমন ছিলাম আমি, কেমন ছিলো রাত্রিযাপন। মদের সাথে পানির সমন্বয়হীনতা কিংবা সমাজতন্ত্রের সাথে পুঁজিবাদ ...
বই পর্যালোচনা: ভার্জিনিয়া উলফ :দ্য লাইটহাউস (বাতিঘর)

বই পর্যালোচনা: ভার্জিনিয়া উলফ :দ্য লাইটহাউস (বাতিঘর)

শিবাশিস মুখোপাধ্যায় অ্যাডলিন ভার্জিনিয়া উলফ nee স্টিফেন 1882 সালে লন্ডনে একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একটি সাহিত্যিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশে বেড়ে ওঠেন। তার ...
বাগানবাড়ি রহস্য  | শাহরিয়ার আবিদ 

বাগানবাড়ি রহস্য | শাহরিয়ার আবিদ 

|শাহরিয়ার আবিদ    জিসানের ছোট থেকেই বড় হওয়া পর্যন্ত পুরোটা সময় কাটে তার চট্টগ্রাম  শহরে।  গ্রামে যাওয়া হয়। তবে খুব কম ৷ জিসানের এ যান্ত্রিক ...
ক্ষুদে যোদ্ধা

ক্ষুদে যোদ্ধা

জহিরুল ইসলাম বৃষ্টি ভেজা মধ্যরাত!শুনসান নিরবতা আর জমকালো অন্ধকারে গুটি গুটি পায়ে জঙ্গলের পথ ধরে হেঁটে চলছে একদল ক্ষুদে যোদ্ধা।আবীর,অভি,অনল,অনিক আর আদনান পাঁচ তরুণ একসাথে ...