কথায় আছে অসৎ-নারী, নেশা, তাস তিলে তিলে সর্বনাশ। তবে শুধু নেশা আর তাসকেই সর্বনাশ বাদে নারীকে সর্বনাশ ভাবার কোন উপায় নেই। পুরুষের ভোগ বিলাসের জন্য নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে’, এমনটাই ধারনা শাহিনের। শাহিন বহুবার বহু নারীর কাছে হেরেছে। তবুও সে হাল ছাড়েনি, বিয়ের বয়স পড়ে যাচ্ছে । ঠিক কি কারণে শাহিন বিয়ে করছে না? অদ্ভুত কারণে! এসব কথা ভাবলে তার গা গুলিয়ে আসে, পেটের তলায় অদ্ভুত এক চাপ অনুভব করে সারা শরীর জুড়ে বয় অস্বস্তি।
একবার বাড়িতে ফেরার সময় এক পতিতালয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো তার। অসম্ভব লাস্যময়ী সেই যৌনকর্মীর বয়স ২৫-৩০ এর কাছাকাছি। মেয়েদের জীবনে দুটি সময়ে দেহের ফুল জন্মায়, প্রথমটি বয়সন্ধিতে আর দ্বিতীয়টি যৌবে! এমন কথা হয়ত কখনো কোন মণিঋষি বলেছিলেন। সেই পতিতাপাড়ার মেয়েটির নাম ছিলো লাবণ্য! তার চেহারার যেমন রূপ, সেরকম তার কথাতেও ধার।
‘শুনেন মিয়া ভাই! আফনারা শহরের মানুষ এইখানে আসেন দেহের জ্বালা মিটাইতে। কোন প্যারেশান হওয়ার দরকার নাই। আপনার হাতে সময় আছে, কিন্তু আমার হাতে সময় নাই, আমার দরকার টাকা। হেইডা আসা করি আফনে বুঝবার পারছেন?
শাহিন সারা মাসেরবেতন নিয়ে এসেছে। তার সাথে বোনাসের টাকাও আছে। যৌনতার বিধ্বংসী নেশায় সে ক্ষাণিক ভেবে মাথা নাড়ায়, আমার কোন অসুবিধা নেই। এরপর তারা ঘন্টা প্রতি চুক্তিতে যায়। ঘন্টা প্রতি দু হাজার টাকা। এমন এক খদ্দের পেয়ে লাবণ্যও বেশ আনন্দিত হয়ে বলে,
-আফনে কি এখনই কামে লাইগা পড়বার চান?
-তোমার সাথে ক্ষাণিক গল্প করি, ‘উত্তর দেয় শাহিন।
-আফনে করবার পারেন আমার অসুবিধা নাই।
মেয়েটির পড়নে সাদা স্যালোয়ার কামিজ, উত্থিত যৌবনের অর্ধেকটা ফুটে উঠেছে মেয়েটির বুকে, চোখে কৃত্রিম পাপড়িগুলো তাকে অসম্ভব সুন্দরী করে তুলেছে। আর ঠোটে লাল লিপস্টিকের আর্টে পুরুষের ভেতরের ক্যানভাসের রঙতুলি একটু হলেও নাড়া দিয়ে উঠবে। আধশোয়া অবস্থায় গল্প করার একপর্যায়ে শাহিন মেয়েটির কানের পাশে পড়ে থাকা চুলগুলোকে কানের ফাঁকে গুজে দিতেই মেয়েটি অদ্ভুত এক শব্দ করে লম্বা এক নিশ্বাস নেয়, সেই নিশ্বাসের উত্থান-পতনে তার সারা দেহ দুলে উঠে। এবার শাহিন নড়ে চড়ে বসে, ডিম লাইটের মৃদু আলোতে চলে দুটো শরীরের জন্মান্তরের অঘোর পাপ। যে পাপের সুখে তারা দুজনই, একে অন্যের শরীরকে নিজের করে নিতে চায়। নারীদেহের ঢেউয়ের দোলের সাথে নিজের শরীর ঠিক রেখে তালে তালে নৌকা বায় শাহিন। দুজনের হাত চলে যায় দুজনার প্রাপ্ত সুখের অস্বেদন মোহনায়, যেখানে কখনো ঘন বর্ষায় নামে ঢাল, অথবা উত্তেজিত সাঁপের মতো ফোঁস ফোঁস করে ওঠে জন্মান্তরেরে এক সুখকর মুর্ছনায়! এভাবেই এগোয় দেহের দেউরির ঝড় বাতাসে ঘণ নিশ্বাসের এক অদ্ভুত সুখকর ঝড়। মেয়েটি উত্তেজিত হয়েছে অথবা অর্থের তাড়নায় নিজের দেহের সবটুকু বিসর্জন দিয়ে নেমেছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কোন সিনেমার এক ঢোকগেলা সিকোয়েন্সে। এভাবেই এগোয় তাদের কাব্যপট। বাইরের রাস্তা থেকে আসা মানুষের শব্দ, রিক্সার টুংটাং আওয়াজ কিছুই যেন কানে পৌছায় না তাদের। তারা হারিয়ে যায় পৃথিবীর এক অপার্থিব সময়। যে সময় মানুষ জন্মের দৌড় শুরু করে। কেউ কেউ এখানেই হেরে যায়, যারা জন্মে তারাই হয়ত মানুষ হয় শারিরিক গঠনে। কেউ হয় পুরুষ, কেউ হয় নারী।
ঠিক ক্ষাণিক বাদেই অট্টহাসির শব্দ। ‘তুই তো খেলা শুরু করার আগেই হাইরা গেলি মাঙ্গির পুত’ শাহিনের বাধভাঙা উজানে হঠাৎ করেই ভাটা পড়ে। এত কম সময়? নিজের বউকে টিকায়া রাখতে পারবি তো? শাহিন এখন পর্যন্ত বিয়ে করেনি অতএব তার বউকে টিকিয়ে রাখার কোন প্রশ্নই আসে না।
মেয়েটি উঠে আলো জ্বালায়, আলোতে নিজেকে অর্ধ-নগ্ন অবস্থায় দেখে শাহিন ক্ষাণিকটা লজ্জা পেয়ে নিজের পড়নের কাপড় গুলো পড়ে নেয়। ‘কি রে! প্যান্ট পড়লি কেন? লজ্জা করে? হা হা হা! অট্টো হাসিতে হেসে ফেলে মেয়েটি। এরপর চুলগুলো বেঁধে লাইট নিভিয়ে আবারো মেয়েটি এগিয়ে আসে শাহিনের দিকে।
শাহিনের কাছাকাছি এসে কানে ফিসফিস করে বলে, তুই যে পুরুষ! সেইটার প্রমাণ দিবি চল।মেয়েটি আরেক কিস্তি শাহিনকে বাগিয়ে নেয়ার ধান্দায় সম্পুর্ণ উলঙ্গ হয়, পৃথিবীর সব ফুলেদেরও একসময় লজ্জাহীন হতে হয়, ফোটার সাথে সাথেই তাদেরকে কেউ না কেউ গ্রহণ করতে যায় তারা কামুক বলে। মেয়েটির গা থেকে অদ্ভুত এক মায়া জড়ানো গন্ধ বেরোতে থাকে, যে গন্ধে মিশে থাকে অদ্ভুত কোন মায়া। যে মায়ার টানেই পুরুষ সর্বনাশে পরে একবার দু বার বার বার!
সে রাতে বেশ কয়েকবার লাবণ্যের কাছে হেরেছে শাহিন। পতিতালয় থেকে বের হয়ে তার পকেটে ছিলো শুধু বাড়ি ফিরবার টাকা, একটা সিগারেট কিনে রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে ফুড়ফুড় করে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে শাহিনভাবে, ‘এখানে আসাটাই তার কাছে পাপ হয়েছে, অবশ্য পাপ করার পরে সব মানুষই ভাবে সে সব কথা’
৫.
‘আপনি ব্যালকনি থেকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন?’ কেন ?’ মেয়েটির ছুড়ে দেওয়া প্রশ্নে শাহিন ক্ষাণিকটা আহত হয় শাহিন। শাহিনের বিধ্বস্ত চেহারা তাকিয়ে মেয়েটি হাসি লুকিয়ে রাখতে পারে না। শাহিন মাথা উচু করে জবাব দিতে যাবে এমন সময় মেয়েটির হাসি দেখে ক্ষাণিকটা স্বস্তি ফিরে পায়। প্রশ্নের বাণে এবার ক্ষাণিকটা স্রোত এনে শাহিন জবাব দেয়,’ আপনাকে বেশ কয়েকরাতে ব্যালকনিতে দেখে আমি ক্ষাণিকটা কৌতুহলী হয়ে আপনাকে ফলো করি! আপনি গভীর রাতেও ব্যালকনিতে একা একা এসে বসে থাকেন। মেয়েটি এবারক্ষাণিকটা কঠিন গলায় বলে, ‘তাই বলে আমাকে আপনার চোখে চোখে রাখতে হবে?; প্রশ্নটা ঠিক কঠিন হয়ে ওঠে না।
এরপর আলাপচারিতায় দুজনার কথা এগোয় অনেকদূর। মেয়েটি যে শাহিনের ওপর দূর্বল হয়ে আছে তা বুঝতে পেরেই শাহিন সুযোগ নিতে ভোলে না এভাবেই এগোয় একটি প্রণয়ের নতুন প্রেমের কাব্যপটে। বসন্তের বিকেল বেলা, চারদিকে মিষ্টি ফুলের গন্ধে শাহিন মেয়েটিকে প্রস্তাব দেয় ভালোবাসারা! মেয়েটিও তাতে রাজি হয়ে যায় কোন বিলম্ব না করে। আজকালকার মেয়েদের একটি স্বভাব আছে, তারা বার বার ভুল মানুষের প্রেমে পড়ে ধোকা খায় বলেই, গোটা পুরুষজাতিকেই তারা একরকম ভেবে বসে। মেয়েটির নাম নীলিমা। নীলিমা কি জেনে শুনেই একজন ভুল মানুষের প্রেমে পড়োলো? এসব ভাবতে ভাবতেই তাদের প্রণয়ের ব্যপ্তি গড়ায় বছর খানেক।
পরের বছর বসন্তের কথা, চারদিকে মিষ্টতা। সেদিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। নীলিমার আজ দারুণ খুশি লাগছে অদ্ভুত কোন কারণে। শাহিনের ওৎপেতে থাকা জন্মান্তরের ক্ষুধা আজ প্রবলভাবে জেগে উঠেছে, আজই সময়। যেসব দিনে নীলিমাকে নিয়ে অদ্ভুত আলিঙ্গনের গল্প ফেঁদেছে সেসবকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার সময় এসে গিয়েছে।
শাহিনের ফাঁদ নীলিমা পা দেয়, কোন আকাশ পাতাল কল্পনা না করেই। এভাবেই এগোয় তাদের প্রণয়ের নতুন রূপ। শাহিন যখন নিজের পুরোটা নীলিমাকে ঢেলে দিতে যাবে ঠিক তখনই অদ্ভুত এক বিক্ষোভ এসে বাসা বাঁধে নীলিমার শরীর জুড়ে। সম্মোহনের বশ থেকে বেরিয়ে নিজেকে আত্মরক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে সে। শাহিন নিজের পৌরষ্য ক্ষুধা দমিয়ে রাখতে না পেরে মেয়েটির সাথে জোড়াজুড়ি করে। ঠিক তখনই নীলিমা বাঁধা দেয়, এ বাঁধায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শাহিনের তেজী শরীর। শাহিন ভেবে বসেছে, মেয়েটি তাকে ইচ্ছে করেই তার ক্ষুধা বাড়ানোর জন্য বাঁধা নিচ্ছে। ঘন নিশ্বাসের সিম্ফনি খেলা করে অন্ধকারচ্ছন্ন কামরায়। এর সমাপ্তি হয়ে একটি রক্তাক্ত, ফুলের মৃত্যুতে। চাঁপা শীৎকার! রক্তের স্রোত বয়ে যায় বিছানায়, শাহিনের আজ ভীষণ আনন্দ লাগছে। সেই আনন্দের গভীরতায় বুঁদ হয়ে সে খেয়ালই করতে পারে না মেয়েটির শরীর এতক্ষণে নিথর হয়ে গিয়েছে। সে হয়েছে খুনী!
শাহিন যখন তা উপলব্ধি করলো তখন তার আর কিছু করার নেই। মাথায় আসে এলোপাথাড়ি চিন্তা। পাগলের মতো ছুটে বেড়ায়, মেয়েটির নিথর শরীরে বার কয়েক নাড়া দেয়। নিথর দেহ নেড়ে উঠলেও, মেয়েটি চুপ করে রয় জন্মান্তরের মত। মৃত নারীদেহের দিকে চেয়ে লোভ সামলাতে না পেরে আরো বার কয়েক হত্যাযজ্ঞ চালায়, যেভাবে তার পৌষত্বের ক্ষুধায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিলো মেয়েটি। এরপরো শাহিনের উত্থিত পৌরষত্ব যেন কোন ভাবেই মাথা নিচু করে দূর্বল হয়না, এরপর সময় গড়ায়, মৃতদেহ থেকে আসে বিশ্রি উটকো গন্ধ। যে শরীরের ঘ্রাণের মোহে নিজের জাগতিক চেতনা শক্তি হারিয়েছিলো শাহিন। সেই শরীরের উটকো গন্ধে এখন তার নাড়িভুড়ি বেরিয়ে আসছে। এখন কি করবে শাহিন? ভেবে পায় না। বেলা বাড়তেই, গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। লাশটিকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে ফেলে রাখে।
এবার যৌনভ্রম কাটিয়ে জাগতিক সময়ে ফিরে আসে শাহিন। সে এসব কি করেছে? মানূষ হয়ে আরেকজন মানুষকে মেরে ফেলেছে? ক্ষোভ হয় নিজের প্রতি। তখনও নিজের উত্থিত লিঙ্গের দিকে তাকিয়ে এবার রাগ হয় ভীষণ, শেভিং ব্লেড দিয়ে এলো পাথারি ধ্বংসলীলা চলায় সে। রক্তক্ষরণের পরে ভীষণ যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে কখন যে সে অচেতন হয়ে পরে তা জানা নেই তার। এরপর হয়ত শাহিনের ঘুম ভাঙবে নরকের সেই স্তরে যেখানে আত্মার লালসা অবিরামভাবে প্রস্ফুটিত এবং একটি হিংস্র ঝড়ের বাতাসে সর্পিল হয়..! যেখানে সেই সকল আত্মাদের একত্রিত করা হবে, যারা যৌনক্ষুধায় নিজের সত্ত্বাকে হারিয়ে ফেলেছিল। আমি কিংবা আপনিও কি সেই দলে আছেন?
[ গল্পের উপসংহারঃ ‘গল্পটি প্রচলিত গল্পের বাইরে, একটু ভিন্ন! যেহেতু এটেল পোঁকায় খাওয়া ঘুণ ধরা অন্ধকার জগৎ নিয়ে এইগল্প সেহেতু গল্পটি ‘একটি নষ্ট গল্প’ এই নামকরণ করা হয়েছে। এই গল্পটিতে লেখক কোন জাতি বা বর্ণকে ছোট করেননি, সমাজের প্রচলিত একটি গল্পকে পাঠকের সামনে তুলে এনেছেন। গল্পটি যেহেতু কাল্পনিক তাই গল্পটির সাথে বাস্তবিক জীবনে মিল খোঁজা কাকতালীয়। গল্পটির প্রত্যেকটি চরিত্র, স্থান, ঘটনা কাল্পনিক।]
“আপনার সামান্য উৎসাহ আমাদের অনেক বড় করে তুলবে।” সাবস্ক্রাইব করুন – ছাইলিপির ইউটিউব চ্যানেল]